শততম পোস্টঃ জুনিয়র মাস্টার শেফ (ছবি সহ মেয়ের রান্নাবান্নার কাহিনী) পর্ব ১
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ১৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৩১:৫৮ সন্ধ্যা
হটাত দেখলাম, পোস্ট সংখ্যা ৯৯ টা, মাত্র ৫ মাস ২৭ দিনে। প্রতি ১.৮ দিনে ১ টা করে পোস্ট। বাবা প্রতিযোগিতা দিয়ে শুরু। কিরকম একটা মায়ার বাঁধনে পড়ে গিয়েছিলাম খেয়াল হয়নি। শততম পোস্ট এর জন্য মেয়ের এই মিষ্টি রান্না করার কাহিনী বেছে নিলাম। অস্বস্তিতে কোনদিন কাউকে পোস্ট পড়ার আমন্ত্রন জানানো হয়নি। নিজে অবসরে কিছু পড়েছি। তবে যারা বেশি লিখে তাদের পড়ার সুযোগ হয় কম। অনেক প্রিয় ব্লগার আছেন এখানে। সবার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। সবার জন্য মেয়ের বানানো স্ন্যাক্স।
পর্ব - ১
জুমানা (মেয়ে,১০ বছর) এসে বলল, পাপা আমি কয়েকজনকে দাওয়াত দিতে চাই। বললাম অসুবিধা নাই, কাকে কাকে দিতে চাও আর মেনু কি চাও মাম্মিকে বলে দাও। তুমি হোমওয়ার্ক শেষ কর। আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে বলল, ‘আমি দাওয়াত দিব, মেনু আমি ঠিক করব আর কুকিং টাও আমি করব’।
বললাম, মামনি তুমি চাও মানুষকে ঘরে ডেকে এনে বেইজ্জত করি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য – ওর রান্নাঘরে প্রবেশ নিষেধ। রান্নাঘরের দরজায় একটা দাগ টানা আছে, দাগটা ভুলেও অতিক্রম করলে কান ধরে একশবার উঠবস। গরম তেল, বটি আর অন্যান্য ধারালো জিনিস হতে দূরে রাখতেই এই সাবধানতা। বলেছি ১২ বছর হলে ও মাঝে মাঝে মাম্মিকে হেল্প করতে পারবে, তার আগে নয়। ও থমথমে গলায় বলল- আমি সব নিজে নিজে করতে চাই। ওর দৌড় মায়ের সাথে কুকিং শো দেখা আর ডাইনিং এ মা কিছু বানালে পাশে বসে দেখা। রমজানে প্রায় অবশ্য দেখেছি রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ইফতারির প্রস্তুতি দেখতে আর রান্নাঘরের মেয়েটা আর মায়ের সাথে গল্প করতে। জুমানাকে ট্র্যাপ করতে বললাম – আমাদের টেস্ট ডিশ বানিয়ে খাওয়াও। পছন্দ হলে অনুমতি দিতেও পারি, সময় ১ ঘণ্টা। ও রান্নাঘরে গেল। ওর মাকে বললাম – গিয়ে একটু নজর রাখ, কি দুর্ঘটনা ঘটায়। ৫ মিনিট পর হাসতে হাসতে ফিরে এল। বলল – জুমানা ওকে দেখতে পেয়ে চেঁচামেচি করে বের করে দিয়েছে। ধৈর্য ধরে বসে রইলাম। ৪৫ মিনিট পর ট্রে হাতে হাজির। খাবার আর পরিবেশন দেখে বিপদে পড়ে গেলাম। ট্যাং, ম্যাগি থাই সুপ (রেডি প্যাকেট), চিকেন অন্থন ও ভেজিটেবল রোল (কুকড চিকেন আর বয়েলড ভেজিটেবল ফ্রিজে ছিল, ওগুলো ব্যবহার করেছে) চিলি আর টমেটো সস দিয়ে নিয়ে এসেছে। আমাদের নতুন রিক্রুট ১৩/১৪ বছরের মেয়েটা ( রান্নায় পুরো আনাড়ি) ওকে সহায়তা করেছে। দাওয়াতে কি না কি কাণ্ড ঘটায় ভয় থাকলেও অনুমতি দিতেই হল।
দাওয়াত পর্ব -
জুমানার দিনটা শুরু হল স্কুল ফাঁকি দিয়ে। আজ ঠিক করেছি কিছু বলব না। দেখি ও কি কি করে। ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে আজ ঈদের দিন। মাকে বলে রেখেছে, দুপুর ১২ টার পর ওকে কিচেন ছেড়ে দিতে হবে। ওর সাথে ১৩/১৪ বয়সী নতুন রিক্রুটটা থাকবে। এর মধ্যে আমাদের লাঞ্চ রেডি করে ফেলতে হবে। বললাম, কাকে কাকে দাওয়াত দিচ্ছ? পাশের ফ্ল্যাটের বান্ধবী ও মা, আট তলার বান্ধবী ও মা এবং ওর ছোট আপু (ছোট নানু, আপু ডাকে) আর উনার দুই ছেলে (ওর কাছাকাছি বয়স)। বাসার সদস্যরা তো আছেই।
১০ টার দিকে এসে বলল – পাপা, মার্কার হবে? কেন, বলতেই এমনভাবে তাকাল আর জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না। ড্রয়ার হতে নিতে বললাম। একটু পর অবশ্য বোঝা গেল। একটা পুরান সাদা জামাকে কেটে এপ্রন বানিয়েছে, মাঝামাঝি শেফের নাম লিখেছে মার্কার দিয়ে। দশটার দিকে আমার মোবাইলটা গায়েব হয়ে গেল। অন্য রুমে দেখলাম সেটা কানে লাগিয়ে ব্যস্তভাবে হাঁটাহাঁটি আর কাউকে বোঝানোর চেষ্টা। বুঝলাম দাওয়াত পর্ব চলছে। আধঘণ্টা পর ম্লান মুখ দেখে জিজ্ঞেস করায় বলল- সবাই ধন্যবাদ দিচ্ছে কিন্তু বলছে অন্য কাজ থাকায় নাও আসতে পারে। রাগী গলায় বলল অসুবিধা নাই, আমরা আমরা খাব। বাচ্চার দুষ্টামি মনে করে কেউ দাওয়াত নিচ্ছে না মনে হয়। ওকে না জানিয়ে ফোন দিলাম, ঘটনা জেনে সবাই আসবে জানাল। মেনু কি জানতে চাইলে উত্তর এল – টেবিলে দেখতে পাবে, সিক্রেট। কিভাবে বানাবে আমাকে একটু বল। উত্তর এল – তুমি কি রান্না কর? নাকি রেসিপি বললে বুঝবে! হুম, কঠিন চিজ।
স্ত্রীকে বললাম, ব্যাক আপ ডিশ রেডি রাখতে। যদি উল্টাপাল্টা কিছু তৈরি হয়, ইজ্জত রক্ষা করতে হবে অন্তত। ও চিকেন কোর্মা আর সাদা ভাত রেডি করে রাখল। একটা কাজ সেরে বাসায় ফিরলাম ৩ টার দিকে। হটাৎ মনে পড়ায় কিচেনে উকি দিলাম। ফ্রিজের কাছে একা দাঁড়িয়ে, হাত ঠাণ্ডা পানিতে চুবান কিন্তু মুখে অভিব্যক্তি নেই। নিশ্চয়ই হাত পুড়েছে? ‘নাহ, মাম্মি বলল হাত ঠাণ্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখতে তাই......।‘ খামোখা কেন বলবে, দেখি হাত টা। ডান হাতের তালুর উপরের পিঠ লাল হয়ে আছে। স্টিম বার্ন, ফার্স্ট ডিগ্রি। রান্নার কি অবস্থা? ‘শেষ, আলু মটর পনির টা হয়েছে কিনা দেখতে গিয়ে ঢাকনা তুলতেই ভাপ লেগেছে’। সুযোগ পেয়ে বললাম – এখন বুঝ কেন মানা করি কিচেনে। ভাবান্তর নেই, ঘণ্টা দেড়েক বরফে চুবিয়ে বারনল লাগিয়ে দিলাম। জ্বলুনি নেই, ফোস্কাও নেই তবে কালচে হয়ে আছে ইঞ্চিখানেক। চামড়া উঠবে ওখান থেকে আগামি ২/৩ দিনে। পাত্তা দিলাম না, জলে নেমে গা ভিজবে না, এটা হয় নাকি? আসল কাজের কি খবর? নির্লিপ্ত – ৪ টা ডিশ রেডি। বললাম - মাম্মি কই? উত্তরে বলল – মাম্মিকে লাগেনি, এগুলো সোজা আমিই পারি। হুম হয় আত্মবিশ্বাস বেশি, না হয় আজকে খবর আছে, ডিনার না বাইরে করতে হয়!!
টিভিতে খেলা দেখতে বসে গেলাম। ৮ টার দিকে মেহমান আসা শুরু করতেই টনক নড়ল। হায় হায়, খাবারের কি অবস্থা? টেবিলে গিয়ে চমকে গেলাম। সব সাজানো। মনে হল – এই মেয়েকে আমি চিনি? ভিতরে ভিতরে ওর প্রস্তুতি টা টের পাইনি তো। নিজেকে দশে দুই দিলাম এই ব্যাপারে। ৪ টা ডিশ বানিয়েছে। সাথে মায়ের রান্না করা চিকেন আর সুপ। ডিশগুলো হল,
১। চিকেন কিমা-আলু পরোটা – এটা ভালই হয়েছে।
২। আলু মটর পনির – মটর আগে সিদ্ধ না করায় একটু শক্ত রয়ে গেছে, আর পনির সময়ের একটু আগে দেওয়াতে কিছুটা গলে গেছে।
৩। বাটার চিকেন – ওর সহকারীর আনাড়ি হাতে কাটা বলে দেখতে এমন হয়েছে। কিন্তু খেতে চমৎকার বলে সবাই অভিমত দিল। আমার কপালে জুটল না।
৪/ ফ্রুটামেল – এটা ওর দেয়া নাম। ফ্রুট জেলি আর কেরামেল এর ডেজার্ট। এটাও আপনাদের মত ডিজিটাল খাবার হিসেবে খেতে হল। সব মেহমানদের পেটে।
আমাদের একটা লাভ ও হল। পাশের বাসার ভদ্রমহিলা লজ্জিত হয়ে বললেন – ঈদে আপনাদের এখানে খেয়ে গেছি, এখন ১০ বছরের বাচ্চার দাওয়াত ও খেলাম, আপনারা আগামীকাল আমাদের বাসায় খাবেন। উনার রান্না অসাধারণ (স্যাম্পল পাই মাঝে মাঝে), ভাল ডিনারের অপেক্ষায় রইলাম।
এখানে অনেক রান্না বিশেষজ্ঞ আছেন, ছবি দেখে মতামত দিতে পারেন।
(২য় পর্বে সমাপ্য)
বিষয়: বিবিধ
২৮০২ বার পঠিত, ৫৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আবেগী হয়ে যাচ্ছি...
আল্লাহর রহমত এমন একটা কন্যা পেয়েছেন। দশ বছর বয়স যথেষ্ট।হালকা কাটাকাটি ও রান্না শিখা শুরু করতে পারে।
আলু-মটর-পনির আমার অতি প্রিয় খাদ্য। আর ছবি দিলে কিন্তু আমার হার্ট এটাক হইতে পারে।
মেয়ের হাতের মজাদার রান্না খেলাম তাকে কিছু দিব না তাই কি হয় ! মামনির জন্য আমার পক্ষ থেকে সামান্য চকলেট
আচ্ছা, ভাইয়া... বইগুলো কি ..... ভাবী .... “আপনার” হয়ে যাওয়ার আগের লেখা? নাকি........ বিয়ের পরে দুইজন মিলেই পাশাপাশি বসে রচনা করেছেন? জান্তে মন চায়..... @আতিক ভাইয়া....
আর হ্যাঁ...... অনুগ্রন্থখানি বউমেলাতে যাওয়ার আগে আমার সৌজন্যে কপিটা যেন আমার হাতেই আসে, খেয়াল রাখবেন
রিপোর্ট পড়ে মনে হচ্ছে বিরাট শেফ হবে জুমানা। ওকে অনেক অনেক আদর ও শুভেচ্ছা
আপনাকেও শততম পোস্টে অভিনন্দন
২য় পর্ব পড়েছেন কিনা নিশ্চিত নই, তাই লিঙ্ক দিলাম -
http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/8963/atique/55399
মন্তব্য করতে লগইন করুন