কোরবানির ক্যাচাল
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ০৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:১১:৫৫ রাত
১/ আমাদের প্রতিবেশির চুক্তিকরা কসাই ভেগে গেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় দশাসই শরীর আর দা - ধামা নিয়ে সে উপস্থিত। তার আকার আকৃতি আর সরঞ্জাম দেখে ভদ্রলোক উচ্চমূল্যে রাজি হয়েছিলেন। আমাদের এখানে ১০% রেট চলছে। মানে ৫০০০০ টাকার গরুর জন্য কসাই রেট ৫০০০ টাকা। ভদ্রলোক চুক্তি করেছেন ১৩% টাকায়। তারপর ও সকালে সেই কসাই আরও বড় চুক্তি পেয়ে সরে পড়েছে। তবে বেইমানি করেনি একেবারে। সাব কন্ট্রাক্টে ৪ টা সিজনাল কসাই সে পাঠিয়েছে, যারা কোরবানির সময় কসাই বনে যায়। ২ টা গরুর জন্য অন্তত ৮ জন আসা উচিত ছিল, সেখানে মাত্র ৪ টা ছেলে এসে উপস্থিত। পরে জানলাম এখানেও ঝোল আছে, দায়িত্বটা অফিসের একজনকে দেয়া হয়েছিল, সে সম্ভবত কমিশন খাবার জন্য এই নীল নকশার রূপকার।
সকালে গরু জবাই এর সময় এরা বেশ জমিয়ে ফেলল। আমাদের গরু কাটা শুরু হয়েছে আর এরা গরুই শোয়াতে পারছেনা। ১ জনের কিছু অভিজ্ঞতা আছে আর ৩ জন আনাড়ি। সেই ১ জন গরুর পায়ে দড়ি বেঁধে ফেলতে গিয়ে গলদঘর্ম। দেখাই যাচ্ছে তার পা বাধার কৌশল জানা নেই। ২ বার গরু হাঁটু ভেঙ্গে বসে আবার দাঁড়িয়ে গেল, ৩য় বার গরুর জায়গায় ছেলেটাই গরুর টানে কুপোকাত হয়ে মেঝেতে শুয়ে গেল। বাকি ৩ জন হাত না বাড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে। অবশেষে কজন মিলে গরু ফেলা হল। কিন্তু গরু ফেলেছে উল্টো করে। এখন সিমেন্টের উপর ছ্যাঁচড়ায় এত বড় গরুকে ঘুরাতে দেখে প্রতিবেশী ভদ্রলোক রাগে গজগজ করছেন।
আর উনার বাবা চিৎকার দিলেন,
- আরে, আমার চামড়া নষ্ট করে ফেলছে (মানে, গরুর চামড়া :P ), কোথেকে এগুলোকে ধরে এনেছে!!
উনারা অনেক ভদ্র, আমি হলে অনেক আগেই এগুলোকে বের করে দিতাম। ১২ টার দিকে আমরা যখন সব গুছিয়ে রান্না চড়িয়েছি, ৩ জন তখন মাথা আর পা নিয়ে যুদ্ধ করছে। বাকি ১ জন আবার ওদের আনা একটা রিকশায় পা তুলে ঘুমাচ্ছে। সে নাকি রিকশাটাকে পাহারা দিচ্ছে!! দুপুরে চালের রুটি দিয়ে খাওয়া গরম গরম ফাতেহার মাংস, কলিজা ভুনা আর কাটা মশলার গরুর আইটেম হজম করে বিকালে আসরের সময় নীচে নেমে দেখি মাত্র কাজ শেষ করেছে ৩ জন বিশেষজ্ঞ কসাই।
পরেরবার এদের বুকিং লাগলে জানাবেন!!
২/ বাসার সামনের রাস্তাটা ঢালু। পাশের এক বিল্ডিং এর সামনের রাস্তায় কাটা গরুর রক্ত, ঢাল বেয়ে আমাদের বাসার সামনে জমে আছে। বার কয়েক বলার পর ওরা শুধু নিজেদের বাসার সামনেই পরিষ্কার করে দায়িত্ব শেষ করল। পরে বাধ্য হয়ে নিজেরাই ওদের তৈরি সমস্যা সমাধান করতে হল। পরের জন্য ঝামেলা বাড়ানো হল আমাদের স্বভাবগত।
৩/ গরু একটু আগে কিনে ফেলেছিলাম। মেয়ের সাথে সাধারনত ছাগলের বন্ধুত্ব হয়। এবার হল গরুর সাথে। গরুটা ঠাণ্ডা ছিল, বেশ কবার মাথায় হাত বুলাতে দিয়েছিল। এখন মেয়েকে গরুর মাংস খাওয়াতে পারছি না। আমরাও ছোটকালে এরকম মায়ায় পড়তাম, এখন মহানন্দে গরুর হাড্ডি মাংস চাবাই। মায়া - টায়া এগুলো অভিধানের শব্দ।
৪/ মা-বাবা যাদের বেঁচে আছে আর কোরবানির ম্যানেজমেন্ট পালন করেন তাদের মহা আরাম। আমার মা একাই একশ। দুপুরের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়ে গেল, টেবিলে ৩/৪ পদের রান্না, প্রতিবেশী্র ঘরে রান্নার মাংস আর কর্মচারীদের ঘরে কাঁচা মাংস পৌঁছে গেল। আত্মীয় স্বজনের জন্য রান্না করা মাংসের বাক্স ও তৈরি। আহা, মা বেঁচে থাকুক আরও শত বছর।
অবশ্যই শুধু উপরের কারনে দীর্ঘায়ু কামনা করছি না। আর স্ত্রীর রান্না কলিজা ভুনা, কাটা মশলার ডিশ ও হয়েছিল অমৃতের মত। তবে যারা বিদেশে কোরবানি করতে পারেননি অথবা করলেও মাংস আনার সুযোগ পাননি তাদের প্রতি সন্মান জানিয়ে আর যন্ত্রনা না বাড়াতে কোন রান্নার ছবি পোস্ট করলাম না।
৫/ সারা দেশে ক্রেতার চেয়ে গরুর সংখ্যা বেশি। গরুর প্রজনন ক্ষমতা দেখি এই দেশের মানুষের আয়ের চেয়ে বেশি বেড়েছে অর্থাৎ ব্যাস্তানুপাতিক। বিক্রেতাদের হা হুতাশ দেখে বেশ খারাপই লাগলো। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, শুধু মানুষের আয় আর ক্রয় ক্ষমতা কমছে। আর যারা পশু কোরবানি নিয়ে সুশীল আর পশু ভক্ত সেজেছে, তারা অতিরিক্ত পশুগুলো মাথায় করে রাখতে পারে যাতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা না পায়!! ?
ঈদ মুবারাক সবাইকে!!
বিষয়: বিবিধ
১৫৫০ বার পঠিত, ৪৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
" মা বেঁচে থাকুক আরও শত বছর। "- আলাহপাক কবুল করুক।
দুর্দান্ত লিখনি মন ছুঁয়ে গেলো। অনুপমেয় অনুভূতিতে বিলীন হলাম।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আর গরু কাটাকুটা গ্রামের মানুষগুলাই করেছেন। মাশআল্লাহ মাংসও কেটে কুটা কুটা মানে কিমা বানিয়ে ফেলেছে। যাই হোক তবুও কষাইয়ের অত্যাচার থেকে বাচা গেছে।
এইবার খাসি জবাই দিলাম। গরুর চামড়া নষ্ট হতে দেখলে নিজের চামড়া নষ্ট হওয়ার মতই কষ্ট লাগে।
মানুষ থেকে গরুর প্রজনন বেশি। কথাটি আসলেই সত্য। ভেবেদেখুন গরু বাচ্চা দেয় বছরে একবার একটি করে। ছাগল দুইবার দুইটি করে কখনও তিনটি। কুকুর বাচ্চা দেয় পাঁচ-ছয়টি। তবুও দুনিয়াতে গরু-ছাগলের অভাব হয়না আল্লাহর রহমতে। কুকুর এত বাচ্চাদিলেও সেগুলি এতটা বৃদ্ধিপায়না যে বিপদজনক হবে।
কোরবানীর পশুর মাংশ নিজেরা বানানোতে অন্য এক আনন্দের আমেজ বিরাজ করে মনে,এ ব্যাপারে কিছুটা জানা থাকলে অনাহুত পরিস্হিতি এড়ানো যায়।
ঈদ আয়োজনে অযাচিত বিরম্বনার সুন্দর উপস্হাপনা, অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা....
২/ কবে যে আমরা নিজেদের স্বার্থের পাশাপাশি অন্যের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শিখব!
৩/ আমারো এমন একটা গরু ছিলো। আজও ভুলতে পারিনা তাকে।
৪/ বাবার বাড়ী, শ্বশুর বাড়ী এবং এখন নিজের বাড়ী সব জায়গায় আমাকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। কিছু কিছু মানুষের জন্মই হয় কাজ করার জন্য
৫/
আমি ৪ বার বলার পর ২ বার নিজেদের সামনে পানি মেরেছে, যেটাও এসে জমা হয়েছে আমাদের সামনেই। চাইলে করাতে পারতাম, তবে আর সময় নষ্ট করিনি ১০ মিনিট এর কাজ এর জন্য।
গরুটা কোথায় ছিল, দেশে? :
অন্যভাবেও দেখতে পারেন। আনিস ভাবী সব করে বলেই অন্যরা অলস হয়ে গেছে।
ঈদ মুবারাক
আনিস আমার বাবার নাম। আনিস ভাবী করতে পারতেন না বলেই তো আমাকে করতে হত
@হারি ভাইয়া, থ্যাংক্স আমার পক্ষে বলার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন