দৌড়ঃ (শিক্ষামূলক গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ০২ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:০৯:২৮ দুপুর
শিহাবকে আজ গতির নেশায় পেয়েছে। মাত্র মাস দুই হল জন্মদিনে বাবার কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছে নতুন মডেলের পোরশে গাড়িটা। কিন্তু অফিসে কাজের চাপে নিজে ইচ্ছামত চালাতে পারেনি। বাবার কর্পোরেট হাউজটায় গ্র্যাজুয়েট হয়েই যোগ দিয়েছে, এখনো ট্রেনিং শেষ হয়নি। ধনীর সন্তান হলেও সুশিক্ষিত আর ভালো স্বভাবের ছেলে শিহাব।
শুক্রবার রাতে বনানীর এই রাস্তাটা একটু সুনসান থাকে। ডিনারের পর বেরিয়েছে গতির ঝড় তুলতে। জোরে চালালেও চারিদিকে খেয়াল রাখছিল শিহাব। রাস্তার দুই পাশে অনেক এপার্টমেন্ট। এগুলো হতে মানুষজন আর গাড়ি ও বেরিয়ে আসছে। একটা রাস্তা দিয়ে যাবার সময় হটাত গাড়িতে একটা পাথরের ছোট টুকরা এসে পড়ল। জোরে ব্রেক চাপল কষে শিহাব......।। ব্যাক গিয়ার দিয়ে ২০ গজ পিছিয়ে দেখল একটা ছোট ছেলে অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। গাড়ি হতে নেমে গটগট করে হেঁটে বামদিকের বডি চেক করল শিহাব। পিছনের দরজায় একটা ছোট ডেনট, রঙ উঠে গিয়ে অল্প ভিতরে ঢুকেছে পাথরের আঘাতে। নতুন পোরশের এই দাগ দেখে মাথায় রক্ত উঠে গেল শিহাবের। কিছু না ভেবেই ১০-১২ বছরের ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে পাশের এক গাছের সাথে চেপে ধরল।
চিৎকারে গলার রগ ফুলে গেল শিহাবের।
- এই তুই পাথর মারলি ক্যান? এখন এটা ঠিক করার টাকা দিবি তুই। বুঝছিস, যত টাকা লাগে দিবি। তোর বাপ কই?
ছেলেটা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,
- কোন উপায় না দেখে মেরেছি ভাইয়া, মাফ করে দেন। কেউ থামছিল না। কারো হাতে সময় নাই। আমার ছোট ভাই পড়ে গেছে, উঠাতে পারছিনা। বাসা থেকে একটু দূরে চলে আসছিলাম। ওকে একলা ফেলে কাউকে ডাকতেও যেতে পারছিনা। আপনি একটু উঠিয়ে দেবেন?
শিহাব থতমত খেয়ে দেখল অদুরেই একটা ৮-৯ বছরের ছেলে হুইল চেয়ার থেকে পড়ে কাত হয়ে আছে। হাঁটু ছিলে হালকা রক্ত ও বেরোচ্ছে। সম্ভবত কাঁদছেও। শিহাবের মন অনুশোচনায় ভরে যাচ্ছে। কারন জিজ্ঞেস না করেই ছেলেটাকে মারা ঠিক হয়নি। হেঁটে গিয়ে পঙ্গু ছেলেটাকে তুলে বসিয়ে দিল হুইল চেয়ারে। পকেট হতে রুমাল বের করে হাঁটুর রক্তটা মুছে দিল আদর করে। ভালভাবে দেখল আর কোথাও কোন সমস্যা আছে কিনা। পিচ্চি দুজনের মুখেই হাসি ফুটল। তারা ধন্যবাদ দিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দিল। সেই হাসি দেখে শিহাবের মনটা ভাললাগায় সিক্ত হয়ে উঠল। এত খুশি সে পোরশের চাবি পেয়েও হয়নি। গাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে মনে হল, কাউকে উপকার বা সাহায্য করার আনন্দ আসলেই অন্যরকম।
শিহাব তার গাড়ির দাগটা আর কখনই ঠিক করেনি। দাগটা প্রতিদিন তাকে মনে করিয়ে দেয়, যে জীবনে এত দ্রুত দৌড়ানো ঠিক নয়। যাতে আশপাশের মানুষকে ওকে থামানোর জন্য বা সাহায্য চাওয়ার জন্য পাথর মারার দরকার না হয়।
মরালঃ
১/ আমরা নিজেদের নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি বা জড়িয়ে যাই যে আর কারো খবর নেয়ার সময় পাইনা। আশপাশের মানুষজনের জন্য হাতে সময় থাকে না।
২/ আর পুরো পরিস্থিতি না বুঝেই আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই বেশির ভাগ সময়। অন্যের বক্তব্য শুনলে পরিস্থিতি হয়ত ভিন্ন হত বা আমাদের বিচার ও অন্যরকম হত।
৩/ রাস্তায় কাউকে পড়ে থাকতে দেখে বা হাইওয়েতে দুর্ঘটনা দেখে আমরা কজন দাঁড়াই, একটু বুকে হাত দিয়ে বলেন তো?
(বিদেশি ঘটনার ছায়া অবলম্বনে গল্প)
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্বার্থহীন সাহায্য-সহযোগিতা পবিত্র নির্মল আনন্দে অন্তর কে আলোকিত করে,যা অন্য বিষয়ে পাওয়া যায় না।
মরাল উল্লেখ সহ সমাজ সচেতন মুলক গল্পের অবতারণায় অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা.....
খুব সুন্দর শিক্ষামূলক অনুভূতি। কিন্তু এই অনুভুতিতে তাড়িত হয়ে নিজেকে শিহাবের আদলে গড়ে নিতে হবে।
অনেক ভালো লাগলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন