বই পড়ার সোনালি দিনগুলো খুঁজে ফিরি

লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:২৩:১০ দুপুর



আমার বই পড়ার অভ্যাস তৈরির জন্য একটা ওয়াল বাল্ব আর রাস্তার লাইটপোস্টের কাছে কৃতজ্ঞ।

আমাদের গেস্ট রুমে দাদি থাকতেন। দাদা মারা যাওয়াতে দাদি একলা হয়ে গেলেন। বাসার সবাই দাদির সাথে থাকার জন্য পুরুষ হিসাবে আমাকে নির্বাচিত করলেন।

ক্লাস সেভেনে পড়ি। সারাদিন ক্লাস, বিকালে খেলা, সন্ধায় টিচার আর হোমওয়ার্ক, রাতের ভাত খেতে খেতে রাত ১০ টা। দাদিকে ফজরের নামাজের জন্য উঠতে হত, তাই জলদি ঘুমিয়ে যেতেন। আমি পড়লাম বিপদে। দাদির টাকায় ধর্মীয় বই আর দস্যু বনহুর কেনা হত। ওগুলো ফ্রি পড়া হয়ে গেল। সাথে অন্যান্য উপহারের জ্ঞান - বিজ্ঞান আর উপদেশমূলক বইটই। ক্লাস এইটে উঠলাম, সবে মাত্র সেবা প্রকাশনীর প্রতি আসক্তি তৈরি হয়েছে। তখন ও তিন গোয়েন্দা, ক্লাসিক এগুলো বের হয় নাই। মুলত কুয়াশা, মাসুদ রানা, সেবা উপন্যাস, রোমান্টিক গল্প এগুলোই। বেশির ভাগ বড়দের খাবার মানে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখা থাকত। যদিও এখন বুঝি যে, এই যুগের সাথে তুলনায় সেগুলো পান্তাভাত। তবুও লিখা আছে, অতএব বাবা-মার হাতে পড়লে আস্ত রাখবে না। তাই দাদির বইয়ের চেস্ট অফ ড্রয়ারে লুকিয়ে টুকিয়ে রাখতাম।

এগুলো পড়ার জন্য সেরা সময় ছিল রাত ১০ টার পর। এই সময়ে আমার বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হল আমার বিছানার সাথে লাগানো জানালার বাইরের ওয়াল বাল্ব আর রাস্তার লাইটপোস্ট। জানালার পর্দা সরিয়ে দিলে, এই দুটোর সম্মিলিত যে আলো বিছানার উপর পড়ত, তাতে বই পড়া যেত। ২/৩ ঘণ্টা পড়ে বই বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে যেতাম। এই বই পড়ে ঘুমানোর অভ্যাস আরও ২ যুগ টিকে ছিল। কিছুক্ষন বই না পড়লে ঘুম আসতো না।

সমস্যায় পড়লাম একদিন রাস্তার লাইটটা নষ্ট হয়ে গেল। সিটি কর্পোরেশন বলে কথা, সহজে ঠিক হল না। শুধু একটা বাল্বে পড়া যাচ্ছিল না। অতএব টর্চ কিনলাম। টর্চের ব্যাটারি কিনতে গিয়ে পকেট খালি। এরপর শুরু হল বাথরুমে গিয়ে সেই লাইটে পড়া। কদিন পর তেলাপোকার আনাগোনায় সেটাও বন্ধ করতে হল। শেষ ভরসা হিসেবে বাইরের বারান্দায় গেট লাইটের আলোয় পড়তে পড়তে কদিন গেল। বড় বড় পাহাড়ি মশার আক্রমনে বারান্দার অভিযানের ও সমাপ্তি টানতে হল একসময়। ভাগ্যিস ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের দয়ায় পুরানো বন্ধু ষ্ট্রীট লাইটটা ঠিক হয়ে গেল। অতএব ব্যাক টু বিছানা।

নাইনে দাদি মারা গেলেন। এরপর রুমটা পুরোই আমার। লাইট জ্বালিয়ে বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাওয়া আর ফজরের সময় বাবার চেঁচামেচি, দরজার ধাক্কা শুনে লাইট অফ করা। মাঝে পড়ার বইয়ের মাঝে রেখে মাসুদ রানা সবার সামনে পড়ার টেকনিকটাও আয়ত্ব করে ছিলাম। ধরা খেয়ে বার দুয়েক গল্পবই ছিঁড়ে ফেলা হলেও রেজাল্ট ভালো থাকায় বাবা-মা আর মাথা ঘামাননি এসব নিয়ে। এর পরের ৪ বছর বই পড়ার স্বর্ণযুগ। গড়ে উঠল বড় সংগ্রহ আর ভরে গেল আলমিরা।

নেশাটা এখন কিছুটা চাপা পড়লেও ভিতরে ছাইচাপা আগুন হয়ে জ্বলছে, মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দেয়। আশা করি আবার স্যাটেলাইট আর জুকারবার্গকে ডিঙ্গিয়ে বইয়ের ভিতর পুরোপুরিই ডুব দিব।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

265024
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
এবেলা ওবেলা লিখেছেন : ভাই আপনি যে সময় এই বই পড়ার কাহিণী লিখেলেন-- সেই বয়স হিসাবে এখন আর আপনার বই পড়ার বয়স নাই -- এখন যেটা আছে সেটা বই লিখার--- কয়টা লিখেছেন জানাবেন আশা রাখছি---
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৪
208670
আতিক খান লিখেছেন : পড়ার কোন শেষ নেই ভাই। জানার ও কোন শেষ নেই। না পড়লে আপনি ভালো কিছু লিখতে পারবেন না। আর আজকাল বই কেউ কিনে না। আপনি কিনার নিশ্চয়তা দিলে বের করব। :Thinking এরচেয়ে ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে লেখা ভাল। ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck
265030
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৬
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৪
208671
আতিক খান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। Happy Good Luck Good Luck
265063
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৭
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি লেখা উপহার দেবার জন্য।
হ্যা, আমাদের সময়ে বই পড়ার একটা ক্রেজ ছিল, যা এখনকার প্রজন্ম ঐ ভাবে উপলব্ধি করবে না। তোমার এই লেখাটি ওদের চেতনায় অনুপ্রেরনার এক চিলতে আলোকরশ্মি হয়ে থাকতে পারে।
তোমার লেখায় আমার বই পড়ার অনেক কিছু বাস্তবে মিলে যায়। সারা রাত বই পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে যাওয়া, ভোরে আব্বার ডাকে লাফ দিয়ে উঠে লাইট বন্ধ করা, মাসুদ রানা পাঠ্য বই এর ভিতরে লুকিয়ে পড়া.. এমনতর অনেক কিছুই সেই নস্টালজিক সময়কে মনে করিয়ে দিচ্ছে এফএম!
তবে এখন চোখের সেই দৃষ্টির প্রখরতা নেই আমার। চশমা দিয়ে পড়তে হয়.. বেশীক্ষণ একটানা পড়তেও পারি না, মাথায় ব্যথা করে।তবুও ইচ্ছেটা সেই আগের মতই রয়ে গেছে।
অনেক শুভেচ্ছা তোমাকে। Rose Rose Rose Good Luck
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫২
208714
আতিক খান লিখেছেন : ইনশাল্লাহ আবার ফিরে আসবে সেই সময়। আমরা বইপোকা প্রজন্ম। এখন মোবাইল/নেট প্রজন্ম। অনেক ধন্যবাদ। Happy Good Luck Good Luck
265082
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
মামুন লিখেছেন : হ্যা, ভালোই বলেছ। 'আমরা বইপোকা প্রজন্ম'!
আবার ফিরে আসুক।
তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ। Rose Good Luck
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪১
208725
আতিক খান লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর, ভালো থাক Good Luck Good Luck
265137
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বইপড়া আমারও শৈশবের প্রতিদিনের কাজ ছিল।
তবে লুকিয়ে বেশি বই পড়তে হয়নাই। মাসুদ রানাও পড়েছি সামনেই তবে পড়ার সময় ছাড়া!!!
ডিজিটাল যুগ এর কথা বলে বই পড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের চেয়ে অনেকগুন বেশি ডিজিটাল হয়েও কিন্তু পাশ্চাত্যে বই পড়া বাড়ছে।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪১
208848
আতিক খান লিখেছেন : ফ্যাশন যেমন ঘুরে ঘুরে আসে, বই পড়াও আসবে। মানুষ একসময় বিরক্ত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়া কমিয়ে দেবে। ইতিমধ্যে কানাডায় দেখি আমার ভাগ্নিরা ফেসবুকে তেমন নেই। এই জোয়ার এখানেও কমবে বলেই মনে হয়। ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck
265206
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:২৫
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : বই পড়ার মাঝে একটা অসাধারণ আবেগ কাজ করে......! মনে হয় যেন যাচ্ছি ঘটনার সাথে সাথে....। সৃতি হয়ে আছে বই পড়ার সময় গুলো।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫৭
208980
আতিক খান লিখেছেন : লেখক ভাল হলে পাঠককে টেনে নিয়ে যান ঘটনার সাথে। শেষ না করে উঠা যায় না। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। Good Luck Good Luck
265569
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩১
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আমাদের বাড়িতে সব ধরনের বই পড়ার পারমিশন ছিলনা। পরিক্ষা না থাকলে রাত জেগে গল্পের বই পড়ায় কোন নিষেধ ছিলনা তবে কি বই পড়ছি তা পড়ার জন্য মায়ের কাছে অনুমতি নেয়া লাগতো।

লেখা ভাল লাগ্ল যদিও তেলাপোকা ছিল Happy Good Luck
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:০৪
209239
আতিক খান লিখেছেন : আপনি যাতে বৃত্তের বাইরেই থাকতে পারেন সেজন্য তেলাপোকাকে রাখি Rolling on the Floor Rolling on the Floor
মেয়েরা মায়ের কথা একটু বেশিই শুনে, লক্ষ্মী মেয়ে দেখা যাচ্ছে। ছেলেদের আইন (ছোটখাট) ভাঙ্গতে আনন্দ লাগে Tongue অনেক ধন্যবাদ Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File