বিয়ে আর লিভ টুগেদারঃ সব মিলে একাকার !!
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ৩০ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:১২:৫৮ সন্ধ্যা
১০-১২ বছর বয়সে ঠিক করেছিলাম বিয়েই করব না। কয়েকটা কারন ছিল এর পিছনে,
- আমার এক পরিচিত বড় ভাইয়ের বিয়ের হলুদ। শীতকাল, মফস্বলের কুয়াশা চারিদিকে। এর মধ্যে বড় ভাইয়ে চ্যাংদোলা করে নিয়ে এসে বসানো হল বাইরের এক মোড়াতে। তারপর মূলত বরের বোন - ভাবীরা মহানন্দে গায়ে-মুখে আঠালো হলুদ মাখাতে লাগলো। এই অত্যাচার শেষ হবার পর আতঙ্কিত হয়ে দেখলাম কয়েকজন বালতিতে করে পুকুরের ঠাণ্ডা পানি এনে দিল গায়ে ঢেলে। বড় বেচারা ঠকঠক করে কাঁপছে। উনার অবস্থা দেখে আমার ও হাঁটু কাঁপতে লাগলো।
- এরপর লুঙ্গি আর ঘরোয়া এক পাঞ্জাবি পরিয়ে স্টেজে এনে বসানো হল। মেয়েপক্ষ এসে পৌঁছালে তাদের দেয়া পাঞ্জাবি, পায়জামা পরানো হবে। অবাক হয়ে দেখলাম শ'খানেক মেহমানের সামনে সেখানেই লুঙ্গি ব্যবহার করে বরকে কাপড় বদলাতে হচ্ছে। এই দৃশ্য আরও কয়েকটা বিয়েতে দেখেছিলাম।
- সবার শেষে রুসমত। বিয়ে পড়ান শেষে বরকে টেনে হিঁচড়ে মেয়েমহলে ঠেলে দেয়া হয়। কনে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকে। সেযুগে বিয়ের আগে বড় কনের দেখা ভাগ্যগুনে হত। ভাগ্য ভাল হলে ছবি দেখানো হত, আর না হলে বরের মা বোন গিয়ে আংটি পরিয়ে দিয়ে আসত। ঘোমটা দেয়া মেয়ের পাশে বরকে বসানোর পর একটা বাটিতে পানি এনে সেই পানিতে অথবা একটা আয়নাতে কনেকে দেখিয়ে বলতে হত অনুভুতি কেমন! বেশির ভাগ উত্তর হত - গোলাপ ফুলেরমত, চাঁদের মত, মমতাজের মত (তাজমহল) ইত্যাদি। যদিও কেউ কখনো মমতাজকে দেখে নাই। আর গোলাপের মত বলা হলে যে কাঁটার আঘাত ও সহ্য করতে হবে সেটাও সবাই চেপে যেত। এই পর্বটায় সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড থাকত আশপাশের অবিবাহিত কিশোরী আর তরুণীরা। এই পর্বটাও এড়াতে বিয়ে না করা ছাড়া উপায় ছিল না।
ভাগ্যিস বড় হতে হতে বিয়ের বিভিন্ন আচার-চর্চাগুলো বদলেছে। আর আজকাল বিয়ের আগেই কনেকে কয়বার দেখা হয় তার ঠিক নাই, কাজেই আয়নায় আর পানিতে দেখানো হাস্যকর।
বিয়ে নিয়ে লিখছি আজ ব্র্যাড পিট আর এঞ্জেলিনা জোলির বিয়ের খবর পড়ে। আচ্ছা এই বিয়ের মাহাত্ম্য কি? ৭ বছর ধরে একসাথে বসবাস, ৩ টা নিজেদের সন্তান আর ৩ টা দত্তক সন্তান পাশে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান। মানুষের মুখের কথার কোন দাম আছে? যত সংখ্যক যুগল একছাদের নিচে বাস করে তাদের অধিকাংশ সম্পর্কই বিয়েতে গড়ায় না। যে জিনিস ফ্রিতে পাওয়া যায় তাঁর জন্য মানুষ এত কষ্ট করে চুক্তিতে জড়াবে কেন? এই ধরনের বেশির ভাগ সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ছেলেরা দায়ী থাকে। কারন তারা দায়িত্ব নিতে চায় না।
কিছু মেয়ে বিশ্বাস করে, কিছু ভালবেসে আর কিছু ট্র্যাপে পড়ে অপেক্ষা করে কখন তাদের বিয়ের ফুল ফুটবে। বিয়েতেই মেয়েদের নিরাপত্তা। সামাজিক এবং আইনগত দুটোই। আমি আমার বক্তব্যের মধ্যে ছোট এক শ্রেণীর আধুনিক মেয়েদের রাখছিনা। ব্যতিক্রম কখনো উদাহরন হতে পারে না। পশ্চিমা সংস্কৃতি যেভাবে আমাদের সমাজে ঢুকে পড়ছে কয়েক বছর পর এগুলো না নিয়মিত ঘটনা হয়ে যায়। ভারতের আধুনিক (!!) শহরগুলোতে ইতিমধ্যে এর ভালই প্রকোপ শুরু হয়েছে। আর আমরা তো ভারতকে নকল করতে সিদ্ধহস্ত !!
একটাই পজিটিভ দেখি এরকম ঘটনার, বাচ্চাগুলো বড় হয়ে অন্তত বলতে পারবে মা বাবার বিয়ে খেয়েছে !!
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ হেফাজত করুক।
০ বিয়েতে দায়িত্ব কি শুধুমাত্র ছেলেদেরই ? ব্র্যাড না হয় দায়িত্ব নিতে চাচ্ছিল না বলে ৭ বছর লেগেছে । জোলি কেন এত সময় নিয়েছে ? এসময়ের মধ্যে তো সে তিন তিন বার মা হয়েছে এবং সাথে আরও তিন তিন জনকে দত্তক নিয়েছে । এসব করলেও কেন সে বিয়েতে বসে নি এই কয় বছর ?
মজা কি শুধু ছেলেরাই পায় এসব করে ?
সহমত তোমার সাথে।
তোমার নতুন লেখা রপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি বেশী অপেক্ষা করিয়ে রাখবে না।
শুভেচ্ছা রইলো অনেক।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
ইমরোজের বাবাকে আল্লাহ পাক শান্তি দিক- আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন