কৃতজ্ঞতাঃ অভিযোগে ভরা জীবনে কৃতজ্ঞতার সময় কোথায়??
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ০৪ জুলাই, ২০১৪, ০৬:১০:৪১ সন্ধ্যা
পথ চলতে চলতে এমন অনেকের সাথে আমাদের দেখা হয়, যারা আমাদের চির কৃতজ্ঞ করে রেখে যান। যাদের কোন আচরন বা কর্মে আমরা এমন উপকৃত হই, যা আর সারাজীবন ভোলা সম্ভব হয় না। আমরা কি আসলেই ঠিক ভাবে তাদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি? যেমন,
- একটা ছিনতাই এর কবল হতে কেউ হয়ত আমাকে উদ্ধার করলেন
- আমার মায়ের অপারেশনে কাজকর্ম ফেলে রক্ত দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেউ হয়ত দাঁড়িয়ে আছেন
- দুর্ঘটনার পর সবাই যখন পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে, একজন হয়ত নিজের কাজ ফেলে হাসপাতাল নিয়ে গেলেন।
- এমনকি বাস ভাড়া দিতে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখি, টাকা আনতে ভুলে গেছি। সবাই দাঁত বের করে হাসছে। একজন ভাড়াটা দিয়ে বললেন, 'কোন ব্যাপার না'। ইজ্জতটা বাঁচল।
আমার ছোট ভাইয়ের বয়স তখন এক দেড় বছর। ৩ তলা বাড়ির নিচ তলায় থাকি। ৬ টা ফ্ল্যাট মোট। সেসময় এখনকার মত প্রতিবেশিদের সালাম দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতাম না। তখন অল্প কয়েকজনের মধ্যেই খুবই আন্তরিক সম্পর্ক থাকত। একে অপরের বিপদে পাশে এসে দাঁড়াতেন। এখনো এগুলো আছে, তবে শহুরে এপার্টমেন্ট লাইফে কমে যাচ্ছে বেশ দ্রুত।
ছোট ভাইয়ের প্রচণ্ড ডায়রিয়া। শরীর দ্রুত পানিশুন্য হয়ে যাচ্ছে। ওষুধে কাজ হচ্ছে না। তখন অলিতে গলিতে ক্লিনিক নেই, এত রাতে কোন গাড়ি-ঘোড়াও নেই। মেডিকেল হাসপাতাল বেশ দূরে। আমাদের নিজস্ব গাড়ি ছিল না। রাত আড়াইটার দিকে ছোট ভাই একদম নির্জীব হয়ে পড়ল, নড়াচড়া নেই। আব্বা জায়নামাজে বসে দোয়া করলেন,
- হে আল্লাহ, আমার ১০ বছর হায়াত এই ছেলেকে দিয়ে দাও। তবুও ওকে বাঁচিয়ে রাখো।
আম্মা ৩ তলার মামুন ভাবিকে জানালেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে মামুন আঙ্কেল শার্ট পরে বেরিয়ে এলেন। উনার গাড়ি ছিল। ১৫/২০ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছালেন ছোট ভাইকে নিয়ে। ডাক্তার জানালেন,
- আর আধঘণ্টা দেরি হলে ছোট ভাইয়ের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল না।
তখন ছোট ছিলাম, বুঝি নাই ভাল ভাবে। বাবা-মা হয়ত জানিয়েছিলেন তবুও এই মামুন আঙ্কেলের সাথে দেখা হলে আমি আরেকবার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসতাম। এরকম মানবিকতা এখনো হারিয়ে যায়নি। অহরহই দেখতে পাই। তবে জীবন কেমন জানি যান্ত্রিক আর ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। এসব উপকারী মানুষগুলোকে আমরা যেন ভুলে না যাই, হারিয়ে যেতে না দেই আমাদের জীবন থেকে।
আমার কে জানি মনে হয়, আমরা সবাই চাইলেই অন্তত 'মামুন আঙ্কেল' হতে পারি আমাদের জীবনে। কি পারি না?
-------------------------------------------------------------------------------------------
- উসামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলো, তাহলে তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে।’ ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ শব্দের অর্থ হলো, আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
- অন্য আরেক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি তোমাদের সঙ্গে কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তাহলে তোমরাও তার সঙ্গে কৃতজ্ঞতার আচরণ কর (তাকে কিছু উপহার দাও), যদি কিছু দিতে না পার অন্তত তার জন্য দোয়া কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
বিষয়: বিবিধ
১২৫৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চট্টগ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে কোন বিয়েতে ভালভাবে প্রচুর পরিমানে খাওয়াদাওয়ার পরও মানুষ দোষ ধরে পান দেয়নি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। রামাদান মুবারাক
আপনার সুরে আমিও বলি "কার জন্য কি, কিছু কোথায় আল্লাহ মিলিয়ে রেখেছেন আমরা কেউ জানিনা। আমরা এর সন্ধান পাব সাহায্য করা এবং সাহায্যের প্রতিদান দেওয়ার মাধ্যমে। তবে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন না করলে মুসলিম হিসাবে একটা শূন্যতা এবন মনের গহিনে অতৃপ্তি থেকে যাবে।"
আল্লাহ আপনাকে আমাকে সাহায্য করার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সাহস ও শক্তি দান করুন।
আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন