ভারতীয়দের মাঝে বসে একজন বাঙালির বিজয় উদযাপনঃ
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ১৫ জুন, ২০১৪, ০৮:৪২:২৩ রাত
১৮ মার্চ, ২০০৭। আটলান্টিকের বুক চিরে এগিয়ে চলেছে জাহাজ। গন্তব্য আমেরিকা। একমাত্র বিশ্বকাপ যেটা দেশে থেকে লাইভ দেখতে পারিনি। আফসোস সঙ্গী করে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলাগুলোর খবর পড়ি আর স্কোরকার্ড দেখি। তখন জাহাজে ইন্টারনেট ছিল না। খেলাগুলোর ভিডিও রেকর্ড করিয়ে রেখেছিলাম। পরে ছুটিতে গিয়ে মাসব্যাপী বারবার দেখে মনের অতৃপ্তিটা দূর করেছি।
জাহাজে আমি ছাড়া প্রায় ২০ জন ইন্ডিয়ান। পেপসির একটা বিজ্ঞাপন দেশে থাকতেই দেখেছিলাম, ইন্ডিয়া কিভাবে কাপ জিতবে এবং জেতার জন্য অনুপ্রেরনা দিয়ে জিঙ্গেল ইত্যাদি। ইন্ডিয়ান টিমে তখন শচিন, শেওয়াগ, দ্রাভিড, গাঙ্গুলি, জহির খানসহ সব সুপারস্টার। জাহাজের ইন্ডিয়ানরাও মনে মনে কাপ জিতে বসে আছে। এই টিম কাপ না জেতার কোন কারন নাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলা। বাংলাদেশের গ্রুপে ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা আর একটা দুর্বল বারমুডা। তরুন একটা দল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। সদ্য কৈশোর পেরোনো তামিম, সাকিব, মুশফিক খেলছে। এই দল বারমুডার সাথে একটা ম্যাচ জিতে ফিরবে আর অন্যদের সাথে লড়াই করবে এতটুকুই প্রত্যাশা।
জাহাজে আমরা বড় নোটিশ বোর্ডে প্রতিদিন খেলার সুচি আর ফলাফল লিখতাম। সাথে আরও কিছু মজার মন্তব্য। আজকের খেলা ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশ। ইন্ডিয়ানদের চিন্তা ভাবনায় শুধুই শ্রীলঙ্কার সাথে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে কার সাথে খেলা পড়বে সেটা নিয়ে। সকাল থেকেই একটা ব্যাঙ্গাত্মক হাসি মুখে ঝুলিয়ে সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলাফল তো জানাই। বিশেষ করে আমি সামনে পড়লেই কিভাবে আজকে টাইগাররা ধোলাই হবে তার রসাল বর্ণনা। তখন ও বাংলাদেশ কদাচিৎ ম্যাচ জিততো। আশরাফুল ভালো খেললে একটা মিরাকল ঘটিয়ে দিত। বোর্ডে সুচি লেখা ইন্ডিয়া - বাংলাদেশ। খেলার আগেই কেউ একজন ইন্ডিয়ার পাশে জিতে যাবার টিক দিয়ে রেখেছে। ওইটা মুছবে কার সাধ্য।
দুপুরে বন্ধুর ইমেল পেলাম - ইন্ডিয়া ১৯১ করে অল আউট। বাউন্সি পিচে ১৯২ করবে সেই আত্মবিশ্বাস নেই। ইন্ডিয়ানদের একটু মন খারাপ, কিন্তু বাংলাদেশকে ১২০ রানে আউট করে দিবে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। ঘণ্টা দুয়েক পর ভয়ে ভয়ে ফোন দিলাম। ৩ উইকেটে ১০০ পেরিয়েছে। তামিম(৫১) নামের এক নতুন বাঘের বাচ্চা জহির খান কে তুলে তুলে ছয় মেরেছে। আমি তাতেই খুশি। তখনো স্বপ্নগুলো সেভাবে ডানা মেলেনি। আবার ফোন দিলাম, ৪ উইকেটে ১৫০। মুশফিক (৫৬*) আর সাকিবের (৫৩) বীরত্বগাথা। এইবার আমার শুরু হয়ে গেলো হার্টবিট আর টেনশন। বুকের ধকধক নিজেই শুনতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছিল একটা হেলিকপ্টার ভাড়া করে স্টেডিয়াম বা অন্তত একটা টিভির সামনে পৌঁছে যাই। কতক্ষন পরপর ফোন আর আপডেট। ১৫ দিনের ফোনবিল ১ দিনে উঠে গেলো। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, বিজয়ের আর উল্লাসের। বাইরে গিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিলাম। ইন্ডিয়ানরা শুনেছিল কিনা জানিনা, সমুদ্রের স্রোত / আকাশ /বাতাস আর মেঘগুলো নিশ্চয়ই শুনেছিল। এরপরের কদিন আমার কেটেছিল মাথা উঁচু করে আর মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে যেটা ওদের ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলাম।
নোটিশ বোর্ডে গিয়ে বড় বড় করে লিখলাম - "BANGLADESH DEFEATED INDIA BY 5 WICKETS". অধিক আত্মবিশ্বাস আর বাংলাদেশকে আন্ডারএসটিমেট করার খেসারত দিয়েছিল ইন্ডিয়ানরা। সেদিন ১১ জন বাঘ মেরুদণ্ড সোজা করে মাঠ ছেড়েছিল। আর ইন্ডিয়ান রা মাথা নিচু করে। আর যেদিন ইন্ডিয়া শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বাদ পড়ল, তারপর থেকে ক্রিকেট কি জিনিস ইন্ডিয়ানরা যেন কেউ চেনেই না...।।
টাইগাররা সেই দিন আমাদের আবার ফিরিয়ে দিয়েছিল ২০১২ সালের ১৬ মার্চ। এশিয়া কাপে ইন্ডিয়ার ২৯০ তাড়া করে জিতেছিল। আবার ও ওরা মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছে আর আমরা মেরুদণ্ড সোজা করে।
অপেক্ষায় আছি, আবার সেই দিন ফিরে পেতে। বিশ্বকাপ ভুলে মিরপুরে ডুবে থাকতে চাই। তামিম, সাকিবরা জ্বলে উঠুক আর আত্মতৃপ্তিতে ভোগা বিসিসিআই, ভারতীয় খেলোয়াড় আর দর্শকদের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আফসোসে ভুগে মাথা হেঁট হয়ে যাক।
বাংলাদেশ সফর আর টাইগারদের যাতে সহজভাবে নেবার দুঃসাহস ২য় বার না করে............।
বিষয়: বিবিধ
১০৫৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা যারা টেলিভিশনে দেখেছি খেলা শুরুর আগে তথাকথিত বিশেষজ্ঞ!!! ভারতিয় এক অভিনেত্রি যে জিবনে ব্যাট বল হাতে নিয়েছে কিনা বাংলাদেশ সম্পর্কে অপমানজনক উক্তি করে। খেলার পর তার চেহেরাটা এখনও মনে আছে। ব্রাম্মন্যবাদিরা কখনই কারো উন্নতি সহ্য করতে পারেনা।
আর ২০১২ এর সেই খেলার কথা স্মরনীয় আরেক কারণে , ঐ ম্যাচে শচীন সেন্চুরীর সেন্চুরী করেছিল। কিন্তু পরাজয়ের কারণে বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দলের কাছে পরাজয়ের কারণে সেটা ঘটা করে উতযাপন করতে পারে নি ।।
এটা ছিল ভারতের জন্য বাড়া ভাতে ছাইয়ের সমতুল্য
অনেক সুন্দর লিখেছেন । আপনার লেখার হাত আসলেই অসাধারণ । লিখে চলুন ....
মন্তব্য করতে লগইন করুন