মুক্তা আর আমিঃ সব সম্পর্কের কি নাম হয়?
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ০৮ জুন, ২০১৪, ০৯:৫৮:১৯ রাত
মুক্তা (ছদ্মনাম) এর সাথে আমার সম্পর্কটাকে ঠিক কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় জানা নেই। অসম বয়সী সম্পর্ক বলে অনেকে বাঁকা চোখে দেখতে পারে। এবারের বন্ধু দিবসে আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার ছিল মুক্তার ফিরে আসা। কি যে টেনশনে কেটেছে কটা দিন। বেশ কিছু বিনিদ্র রাত ও গেছে এর মধ্যে। আমাদের সম্পর্কটা বছর দুয়েকের। শুরু থেকে বলি।
২০১১ এর আগস্ট – সেপ্টেম্বর। শরৎ শুরু হবে হবে করছে। অনেকটা বর্ষার শেষ বৃষ্টি, ঝিরঝির করে পড়ছে। চারদিকে একটু সবুজ সবুজ ভাব। চোখের আরাম, প্রকৃতির কান্না দেখে মনটা ভাল হয়ে গেল। গুমোট ভাবটা কেটেছে। এরকম বিকেলে আগ্রাবাদের এক শোরুমে ওর সাথে দেখা। দেখে চোখ ফেরানো কষ্ট হল। বেশি পাত্তা না দিলেই ভাল। দাম বেড়ে যাবে। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি। বেশ ফর্সা, ত্বকে একটু গোলাপি ভাব আছে। মুখটা বেশি আদর লাগলো, কেমন যেন হাসি হাসি ভাব, মন ভাল হয়ে যায়। সামনে থেকে খুব আকর্ষণীয়, পেছন হতে কেমন মন্তব্য করব না, হাজার হোক রোজার মাস সামনেই।
চোখ ঠিক বাঙ্গালিদের মত টানাটানা না, একটু গোলাকৃতি। ক্যাটস আই বলা যায়, রাতে মনে হয় জ্বলজ্বল করবে। বেশ কবার চোখাচোখি হল। মুক্তাকে শুনিয়ে ওর সঙ্গীকে কথায় কথায় বললাম, পরদিন একই সময়ে ফিরব। বাসায় ফিরলেও মন পড়ে রইল ওখানেই। ছটফট করে দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা কাটল। থাকবে তো? নাকি অন্য কারো সাথে ঘুরতে গেছে? আমার সব সন্দেহ অমূলক প্রমান করে মুক্তা আমার অপেক্ষায় ছিল। আমার মাথা হতে বিরাট বোঝা নেমে গেল। সেই থেকে সম্পর্ক শুরু।
আমি এমনিতে খুব বহির্মুখী না। কিন্তু মুক্তা সাথে থাকলে বেড়াতে ইচ্ছা করে। ওর গানের গলা খুব ভাল, হিন্দি / ইংরেজি গান ও গাইতে পারে, মিষ্টি গলায় কথা বলে। লং ড্রাইভে গেলে চমৎকার সময় কাটে। ইচ্ছা করে অনেক দূরে চলে যাই। স্পেনের টেনেরিফে বা আটলান্টিকের ক্যানারি আইল্যান্ড, সম্ভব হলে আর ও দূরে আলাস্কার পর্বতচূড়ায় বরফের মাঝে। জানি সম্ভব না, তাই মনের ইচ্ছা মনেই রয়ে যায়। তবে হ্যাঁ আপাতত বান্দরবন আর কক্সবাজার পর্যন্ত গিয়েছি (এটা কিন্তু সিক্রেট, ঠোটে তালা)। ওকে গিফট দেবার মধ্যে সাড়ে চার হাজার টাকার বিস্কিট কালারের একটা ড্রেস আর দুষ্টামি করে দেয়া একটা বোরখা (হটাত হটাত পরে চমকে দেয়)। মধুর কিছু স্মৃতি ও আছে। শ্যাম্পু আর সাবান দিয়ে............স্নান......... মসৃণ ফর্সা ত্বক............(আর লিখলে ব্যান খাওয়ার সম্ভাবনা আছে)।
আমাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ও হয়। আমি দেশের বাইরে গেলে মুক্তা আমার সাথে যোগাযোগ রাখে না রাগ করে। আধুনিক যুগের হলেও ফেসবুক / ইমেল ব্যাবহার করে না। এই কমাস বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে কাটে। অবশ্য হারানোর ভয় এখন আর আমার নেই। জানি ফিরলে দেখা হবে।
দুটো বছর নির্বিঘ্নে কাটার পর, সুখ আর কপালে সইল না। কিছুদিন আগের কথা। সেদিন কার মুখ দেখে উঠেছিলাম কে জানে? মুক্তা কালুরঘাটের দিকে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। পথে হটাৎ করে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল। ছোটকালে পড়েছিলাম – ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়’। পাশেই একটা ক্লিনিকে ধরাধরি করে নিয়ে গেল। হাতুড়ে ডাক্তার। ফোনে জানলাম রক্ত লাগবে। ওর গ্রুপের রক্ত এখানে পাওয়া গেল না। দুষ্প্রাপ্য টাইপের, ঢাকা হতে ৬ হাজার টাকায় এক ব্যাগ আনালাম।। জ্ঞান ফিরল না। আমার রাতের ঘুম হারাম। নানা দুশ্চিন্তায় মন ভার হয়ে থাকে। ক্লিনিক বদলালাম কাছেই। ডাক্তার আমাকে এবছরের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদটা দিল। আগের ক্লিনিকে বড় ক্ষতি করেছে, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে, লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে। আমার কাছে তখন ওকে বাঁচানোটাই মুখ্য। টাকার দিকে আর তাকাচ্ছিনা। ১২ দিন কোমায় থাকার পর ম্যাচিং করা কিডনি পাওয়া গেল। আরও রক্ত ম্যানেজ করে দিতে হল। দুসপ্তাহ পর জ্ঞান ফিরল।
অপারেশন সফল। প্রায় ২০ দিন পর বাসায় ফিরতে পারল। কাকতালীয় ভাবে সেদিন ছিল বন্ধু দিবস। ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী কিছুদিন সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। সবাই দোয়া করবে আশা করি। ওর স্বাস্থ্য যাতে ভাল থাকে আর আমাদের সম্পর্ক যাতে আরও মজবুত হয়। মুক্তাকে নিয়ে আর বেশি লেখা ঠিক হবে না। কেউ আমার বউকে ফাঁস করে দিলে শেষে আমার সুখের সংসারে আগুন জ্বলবে।
(যারা পরকীয়ার কল্পনায় বিভোর তাদের জন্য ক্লু দিয়ে দিচ্ছি। মুক্তা হল আমার পার্ল (PEARL) কালারের G – AXIO গাড়ী / ড্রেস- সীট কাভার / চোখ – হেডলাইট / ক্লিনিক- গ্যারেজ / ডাক্তার – মেকানিক / রক্ত –গিয়ার অয়েল / কিডনি – গিয়ারবক্স । )
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন