ছোটগল্পঃ দেশপ্রেম

লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ২৪ মে, ২০১৪, ১২:২৫:৩০ রাত

সামনা সামনি দুটো বাড়ি। একটা রঙ আর পলেস্তারা খসে পড়া জীর্ণ শীর্ণ একতলা বাড়ি, এটাতে থাকেন স্বপন সরকার। মুখোমুখি বাড়িটা বিলাস বহুল না হলেও বেশ অভিজাত একটা ভাব আছে। দোতলা সহ ডুপ্লেক্স করে সেখানে থাকেন বদিউল। এই বাড়িটা হয়েছে বেশি দিন হয়নি। ওশান ব্লু গ্লাস, কাঠের কাজ আর সবুজের সমারোহের জন্য এই বাড়িটা অনেক দূর থেকে চেনা যায়।

বদিউল এর জন্য আজ ঘটনাবহুল দিন। সকালটা শুরু হবে বিজয় দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে। লাল সবুজ একটা পাঞ্জাবি আজকের জন্য আলাদা করে তৈরি করিয়েছেন। কপালে পতাকার মত লাল সবুজের বন্ধনি। মাথার পিছনে গিঁট দেয়া। বউকে ডেকে একটা ছবি উঠালেন। ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়ে যাবেন। সহকর্মীরা জ্বলুক উনার দেশপ্রেম দেখে। রাস্তায় বের হলেন স্টেডিয়ামে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান উপভোগ করে অন্য কাজে যাবেন। একটু গর্বিত ভাব নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছেন। উনার এই দেশপ্রেমের প্রতীক পোশাক আশাক দেখে অনেকেই তাকাচ্ছে। এক চিলতে হাসি ফুটল ঠোঁটে। যাক কাপড়ের টাকাটা উসুল হয়েছে।

মনে মনে উনার আজ শুধুই হিসাব নিকাশ। সরকারী গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তা বদিউল একটা সিন্ডিকেট চালান। গত ৪ বছর সরকার গ্যাসের সংযোগ বন্ধ রেখেছিল। এই সুযোগে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে, আর চুরি করে নেয়া গ্যাসের সংযোগ ব্ল্যাকমেল করে রাতারাতি টাকার কুমির হয়ে গেছেন বদিউল। আজ ছুটির দিন বিকালে এই গ্রুপের বছর শেষের হালখাতা প্রকাশ আর বাকি টাকার ভাগ বাটোয়ারা হবে। উনার অবশ্য এটা নিয়ে কোন সংকোচ নেই। দেশের গ্যাস বিদেশে রপ্তানি করার চেয়ে একজন দেশপ্রেমিক যদি ব্যবহার করে কিছু করতে পারে, তাতেই গ্যাসের ব্যবহার সার্থক। বিজয়ের মাস। আজ রাতে বন্ধুদের সম্পূর্ণ দেশি খাবারের দাওয়াত দিয়েছেন। প্রমান করার ব্যাপার আছে, উনার মধ্যে বাঙ্গালিপনা যে শতভাগ। দেশাত্মবোধক গানের সিডি ও কিনলেন ২ টা। পাড়া প্রতিবেশিদের না শোনালে মনে করতে পারে উনি দেশকে ভালবাসেন না।

স্বপন সরকার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ আর মার্চপাসট মিস করেন না। সরকারী স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসাবে রিটায়ার করেছেন। এখন একই স্কুলের বাচ্চাদের পড়িয়ে দিন কাটে। কিছু আয় রোজগার ও হয়। মনটা খারাপ আর উদাস হয়ে আছে। এত বছরের অভ্যাস। চুপচাপ স্টেডিয়ামের কোনায় গিয়ে বসেন আর যুদ্ধের স্মৃতিচারন করেন। হরতাল আর অবরোধে বাচ্চাদের পরীক্ষা পিছিয়েছে। ১৭ তারিখ ২ টা পরীক্ষা একসাথে। সবার অনুরোধে বিজয় দিবসের সকালটা কাটাতে হবে বাচ্চাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে। মধ্যাহ্নে পড়ানো শেষে বাচ্চাদের এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত গেলেন। কোথাও বাজছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান। অজান্তেই চোখ ভিজে এলো। পেয়ারা গাছের ডাল ধরে গানটা শুনছিলেন। পিছনে দাঁড়ানো উনার স্ত্রী সান্ত্বনা দিলান - মন খারাপ করোনা। তুমি যাদের জন্য সকাল টা সেক্রিফাইস করলে তারাই এই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তোমার শিক্ষা নিয়ে দেখবে ওরা ঠিকই আলোর মশাল জ্বালবে। এইসব হত্যা, নোংরা রাজনীতি, সিংহাসন দখলের লড়াই আর কালোটাকার পেশি শক্তিকে হারিয়ে গড়বে নতুন বাংলাদেশ।

মাথা নাড়লেন স্বপন সরকার। মনটা নতুন আশায় বুক বাধলেন। ফিরে যাবেন এইসময় মুখোমুখি পড়ে গেলেন বদিউলের। পরনে সেই লাল সবুজ পাঞ্জাবি আর কপালে পতাকা......।।

- স্যার, আজকে গেলেন না?

- বাচ্চাদের পড়াচ্ছিলাম। এড়িয়ে যেতে চাইলেন স্বপন।

- কিছু টাকার জন্য অনুষ্ঠানে যাননি? মানুষের কত টাকা দরকার? অবশ্য এর জন্য চাই দেশপ্রেম। বুঝলেন স্যার। আমাকে দেখেন, পুরাই বাংলাদেশ। আপনাদের মধ্যেই যদি দেশপ্রেমের ঘাটতি থাকে বাচ্চারা কি শিখবে বলেন?

বদিউলকে চিনেন ভালভাবেই। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন স্বপন।

বিষয়: বিবিধ

১০১৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

225225
২৪ মে ২০১৪ রাত ১২:৪২
বিদ্যালো১ লিখেছেন : আসলেই দেশপ্রেমের আজ এই করুন অবস্থা। সব দেশদ্রোহীই বড় দেশপ্রেমিক।
২৪ মে ২০১৪ রাত ০১:০০
172397
আতিক খান লিখেছেন : প্রতিদিনই দেশপ্রেমের নতুন নতুন সংজ্ঞা শিখছি Sad ধন্যবাদ।
225250
২৪ মে ২০১৪ রাত ০২:২০
চোথাবাজ লিখেছেন : ধন্যবাদ ভালো লাগলো
২৪ মে ২০১৪ সকাল ১০:০৫
172445
আতিক খান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকুন। Happy
225280
২৪ মে ২০১৪ সকাল ০৫:৪৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো
২৪ মে ২০১৪ সকাল ১০:০৬
172447
আতিক খান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। Happy
225308
২৪ মে ২০১৪ সকাল ০৯:০০
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : এমনটাই তো হচ্ছে, অহরহই!
২৪ মে ২০১৪ সকাল ১০:১১
172448
আতিক খান লিখেছেন : দেখি আর মন খারাপ হয়। এইসব দেশপ্রেমিকরাই ক্যামেরা আর মিডিয়ার সামনে সবার আগে থাকে। সব বুঝেও এদের গলাবাজি বা লোক দেখানো আচরন সহ্য করতে হয়। মানুষ এখন নীতি/ দুর্নীতি, ন্যায়/ অন্যায় তফাৎ করতে পারেনা। ধীরে ধীরে নিয়মে পরিনত হয়ে যাচ্ছে Sad ধন্যবাদ আপা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File