দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও বাঙালি নীরবই থাকে!!
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ১৫ মে, ২০১৪, ০৩:৫৬:৫৬ দুপুর
কদিন আগে এক রাতে বর্তমানের এক টুকরো বাংলাদেশকে দেখে ফেললাম।
আমাদের পাশের প্লটে বিল্ডিং নির্মাণ কাজ চলছে। আবাসিক এলাকা হওয়াতে এখানকার যে কোন নির্মাণ কাজ সাধারনত রাত ১০-১১ টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হয়। নিয়ম যেমন থাকে বাংলাদেশে নিয়ম ভাঙ্গাও হবে এটাও স্বাভাবিক।
রাত সাড়ে ১১ টার দিকে একটা ২০ ফুটি ট্রাক এসে ঢুকল লোহার রডের সাপ্লাই নিয়ে। পর্যাপ্ত শ্রমিক (১০-১২ জন) আর যন্ত্র নিয়ে এলে এই কাজ ১ ঘণ্টায় শেষ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু তারা এলোই ২/১ জন লেবার নিয়ে আর কোন কাটিং যন্ত্র ছাড়া। মধ্যরাত পার হবার পর শুরু হল প্রচণ্ড শব্দ করে রডগুলো আলাদা করা আর অফলোড করা। আধঘণ্টায় থামার লক্ষন না দেখে গার্ড পাঠালাম। শ্রমিকরা জানাল ওরা থামবে না এবং পুরো রাত এভাবে কাজ করবে। ইউরোপিয়ান লীগের খেলা ফেলে রাত ১ টার পর নিচে গেলাম। শব্দ শুনে আশপাশের অনেক ফ্ল্যাটে লাইট জ্বলেছে। অনেকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। কিন্তু কেউ নামেনি।
প্রজেক্টের লোকজনকে ডেকে ভদ্রভাবে বললাম, এত রাতে সবার নিদ্রার ব্যাঘাত হচ্ছে। ওরা কথা দিল আর এরকম হবে না। আবার খেলায় মনোযোগ দিয়েছি। বাঙ্গালির কথা দেয়া আর ...... এক সমান। আধ ঘণ্টা পরই আবার কাজ শুরু হল। এবার আরও জোরেশোরে। উঁকি দিয়ে দেখলাম আরও ১০ জন শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে শব্দ করে কাজ করছে। চাইলেই ওরা এটা আরও নিয়ন্ত্রন করতে পারত। আশপাশের বারান্দায়, জানালায় মুখ দেখা যাচ্ছে কিন্তু নিরব দর্শক। কারো কোন মতামত নেই বা বলার সাহস নেই। আমরা কি আর এমনি এমনি প্রতিটা পর্যায়ে মার খাই!
রাত ২ টার দিকে আবার নামলাম। ১২/১৩ জন শ্রমিক আর প্রজেক্টের ৪/৫ জনের মুখোমুখি হলাম। আশপাশে অনেক নিরব সমর্থক থাকলেও কারো আসার সম্ভাবনা ও নেই। মানুষ যখন ন্যায় আর সত্যের পথে থাকে তখন খুব বেশি কারো দরকার ও হয়না। সবচে বড় সাহস হল, ওরা জানে ওরা অন্যায় করছে। বললাম,
- তোমাদের পরিবার -পরিজন বাসায় ঘুমাচ্ছে?
- জি
- কাজ শেষে তোমরাও গিয়ে ঘুমাবে?
- জি
- এত রাতে শব্দ করে সবাইকে ঘুমাতে না দেয়া ঠিক হচ্ছে?
- জি না।
- আরেকটা শব্দ হলে এখনই পাড়ায় মিটিং ডাকব আর সকালে সিডিএ তে চিঠি দিয়ে তোমাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করিয়ে দেব।
- আর হবে না।
নির্মাণকারী কোম্পানির প্রজেক্ট বসকে ও ফোন দিয়েছিলাম। ফোন বন্ধ। মার্কেটিং এর একজনের সাথে কথা হল। বেশিরভাগ মানুষ যখন অন্যায় করে সে সেটা জানে এবং সহজে তার পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে পারেনা। এই লেভেলটা অতিক্রম করলে অবশ্য সে অনেক উপরে উঠতে পারে এবং নেতাগোছের কিছু হয়।
সত্যিই শ্রমিকরা ফিরে গেল। রাতের বেলা আর শব্দ শোনা গেলো না।
ন্যায় আর সত্যের এই শক্তিটা আমরা জাতীয় জীবনে কখন ব্যবহার করতে পারব, সেই আশায় আছি......।
বিষয়: বিবিধ
১০৪৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন