সময়ঃ ( ছোটগল্প - সব মায়ের জন্য )

লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ১২ মে, ২০১৪, ০৬:২৪:৪২ সন্ধ্যা

শাওন ঢাকায় খুব ব্যস্ত জীবন যাপন করে। এখনকার কর্পোরেট লাইফে সময় বের করা খুব কঠিন। কাজের ব্যস্ততা, ট্রাফিক জ্যাম, বন্ধু বান্ধব এসবেই কোনদিক দিয়ে সময় চলে যায় টেরই পায়না। ছুটির দিনটা কিছু করতে আর ভালো লাগে না। টিভি দেখে, ফেসবুকিং আর আড্ডা দিয়েই শুক্রবার শেষ। কয়েকমাস হল বাড়িতে গেছে। বেশি দূরে না, চট্টগ্রাম শহরের একটা অদূরবর্তী গ্রাম । বাসে যেতে ৮-৯ ঘণ্টা লাগে। ট্রেনের টিকেট পাওয়াই খুব কঠিন। আর প্লেন ওর জন্য একটু ওভার বাজেট।

আজ মা দিবস। অনেকেই বাসায়, ফেসবুকে আর বিভিন্ন ভাবে পালন করছে। পোস্ট দিচ্ছে, ছবি শেয়ার করছে। শাওন বাসায় গেছে কয়েক মাস। চাইলে যে যেতে পারেনা এমন নয়, নানা কারনে যাওয়া হয়ে উঠে না। মা-বাবাকে দেখেছেও অনেক দিন হয়ে গেল। ফোনে কথা হয়, ভালো আছে। মাস দুয়েক পর ঈদের ছুটিতে যাবার প্ল্যান।

আজকাল খুব ভালো সিস্টেম হয়েছে। ওদের কাছেই একটা ফুলের দোকান আছে। যেখানে টাকা জমা দিলে ওদের চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চ হতে ঠিকানাতে ফুল পৌঁছে দেয়। অফিস হতে একটু অল্প আগে বেরিয়ে ফুলের দোকানে পৌঁছাল শাওন। টাকা আর ঠিকানা জমা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখল বাইরে একটা ১২/১৪ বছরের দরিদ্র কিশোর খুব মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বেয়ে গালে জলের রেখা।

- কিরে, কি হয়েছে। কাঁদছিস কেন?

- মায়ের জন্য ফুল কিনব। দাম বেশি.........।। শাওন আলাপ করে দেখল ওর কাছে ৩০ টাকা আছে। যে ফুলের তোড়া কিনতে চাইছে সেটা ১০০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে শাওন ওকে তোড়াটা কিনে দিল। জিজ্ঞেস করল,

- তোর মা কই থাকে?

- কাছেই। ছেলেটা হাত তুলে দেখাল বড় রাস্তার অন্য মাথায়। শাওন ঘড়ি দেখল। এখনো সন্ধ্যা হয়নি।

- চল, গাড়িতে উঠ। তোকে নামিয়ে দেই। তোর মাকে আজ চমকে দিবি। শাওনের মনটা খুশি খুশি।

ছেলেটা একটা কবরস্থানের পাশে গাড়িটা থামাল। মূল রাস্তার কাছেই একটা নতুন কবর। মনে হচ্ছে সকালেই খোঁড়া হয়েছিল। ছেলেটা হেঁটে গিয়ে সেই কবরের উপর ফুলের তোড়াটা রেখে বসে পড়ল কবরের পাশে।

শাওন এর বুকটা ধড়াস করে উঠল। গাড়িতে উঠেই ফুলের দোকানটায় ফিরল। ফুলটা কিনে নিয়ে এক ছুটে বাসায়।

ওর হাতে সময় নেই। স্যুটকেস গুছিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে হবে। তারপর রাতের ফ্লাইটেই চট্টগ্রাম। সময় থাকতেই মায়ের কাছে পৌঁছাতে হবে ওকে...............।

বিষয়: বিবিধ

১২১৬ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

220701
১২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
নীল জোছনা লিখেছেন : Sad Sad Sad ইস মনের ভিতর কট করে উঠলো। এত আবেগী লেখা আগে কখনো পড়িনি।
১২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
168280
আতিক খান লিখেছেন : মাকে নিয়ে সব কিছুই আবেগের। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন।
220704
১২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩২
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
168281
আতিক খান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
220707
১২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
আঁধার কালো লিখেছেন : জাজাকাল্লা খাইরান.. অনেক ভালো লাগলো পড়ে
১২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
168282
আতিক খান লিখেছেন : ধন্যবাদ,অনুপ্রানিত হলাম। ভালো থাকুন।
220726
১২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৩
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে ... চালিয়ে যান। আরো বেশী বেশী লিখুন
১২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
168291
আতিক খান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ। ব্লগে আরও লেখা আছে, কেমন লাগলো জানাবেন। ভালো থাকুন।
220764
১২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : Sad Sad Sad Sad জীবনটা এত কঠিন ক্যারে.... একটু সহজ হলে কি ক্ষতি হতো।
১২ মে ২০১৪ রাত ০৮:০৮
168313
আতিক খান লিখেছেন : জীবনটা সহজই। আমরাই কঠিন বানিয়ে ফেলি Tongue । ভালো থাকুন।
220805
১২ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৭
নিশা৩ লিখেছেন : অনেক ধন্যাবদ। বুকের মধ্যে কেমন করে উঠলো মার জন্য।
১২ মে ২০১৪ রাত ১১:৫৮
168376
আতিক খান লিখেছেন : ধন্যবাদ, লেখাটা সার্থক তাহলে। ভালো থাকুন।
220943
১৩ মে ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
হতভাগা লিখেছেন : কেন মাকে নিজের কাছে এনে রাখা যায় না ? সমস্যা ?
১৩ মে ২০১৪ সকাল ১১:৫৫
168479
আতিক খান লিখেছেন : নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর। যেমন -১। বাবা-মা দুজন বা একজন শহরে না আসতে চাইতে পারে। ২।অন্য ভাই বোনের দায়িত্ব থাকতে পারে। ৩। গ্রামের/শহরের জমি-জমা সম্পত্তি দেখাশুনার প্রয়োজনে। ৪। বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে সময় দেবার অনেকে থাকে, শহরে কারো কাছে সময় নেই এমনকি সন্তানের কাছেও। ৫। ছেলে বিবাহিত হলে তার বউ বাচ্চারা কিভাবে উনাদের যত্ন নেন সেটাও একটা ব্যাপার। এগুলো কয়েকটা মাত্র। আবার ছেলে খুব আন্তরিক হলে কিছু সমস্যা কাটিয়েও উঠা যায়। এনে ও রাখা যায়। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
221287
১৪ মে ২০১৪ সকাল ০৮:২২
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : ঠেকে শেখার চেয়ে দেখে শেখা ভাল Thinking
১৪ মে ২০১৪ সকাল ১১:৪০
168831
আতিক খান লিখেছেন : ভালো বলেছেন, যারা সেটা পারে তারাই বুদ্ধিমান। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File