সম্পদঃ (ছোটগল্প)
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ০৬ মে, ২০১৪, ১২:১২:০৩ দুপুর
হুইল চেয়ারে ভদ্রলোককে দেখেই একটু অবাক লাগলো। একটি ডায়াগনস্টিক ল্যাবের ২য় তলায় রোগীদের ওয়েটিং রুম। নামকরা ডাক্তারদের সিরিয়াল পাওয়া আর যুদ্ধজয় করা একই ব্যাপার। সাত সকালে ৫ মিনিটের জন্য মোবাইল অন হয়, এর মধ্যে সব সিরিয়াল শেষ।
বন্ধুকে দেখাব, বসে বসে টিভি দেখছিলাম। হটাত ভদ্রলোককে দেখে এগিয়ে গেলাম। এক কোনে চেয়ারের পাশে বিষণ্ণ চোখে বসে আছেন। কোনকিছুই দেখছেন না। নামিদামি মডেলের গাড়িতে, সহকারি নিয়ে চলাফেরা করতেন। পোশাক- আশাক আর কথাবার্তায় এক ধরনের আভিজাত্য ঠিকরে পড়ত। বেশ সম্পদশালীও ছিলেন। পারিবারিকভাবে পরিচিত অনেক বছর ধরে। মাঝে কয়েক বছর দেখা হয়নি।
- আঙ্কেল কেমন আছেন? চিনতে পেরেছেন? আপনার সাথে কে এসেছে?
মাথা নাড়লেন - 'স্ট্রোক হয়েছিল, মেজ মেয়ে ওষুধ আনতে গেছে'।
- কি সন্মান, ঠাট আর মানুষজন নিয়ে ঘুরতেন। আপনার ছেলেরা কই, ব্যস্ত সবাই? আপনার এই অবস্থা কেন? আপনাকে কিভাবে দেখতাম! আমারতো মনে হত আপনার মত হই।
আমার দিকে কিছুক্ষন ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলেন। কিছু বলতে চাইলেন, ঠোঁট দুটো কেঁপে গেলো। চোখের কোনা বেয়ে ২ ফোঁটা জল গড়িয়ে নামল। বিড়বিড় করলেন,
- আমার মত হইও না.........।
আর কিছু বলতে চাইলেন না। মেজ মেয়ে ওষুধ নিয়ে ফিরেছে। বাবাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
আমার মধ্যে কৌতূহলটা রয়ে গেল। এক আত্মীয়কে জিজ্ঞেস করে যা জানলাম সারমর্ম হল,
ভদ্রলোক উনার ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছিলেন। বউ মারা গেছেন কয় বছর আগে। সব সম্পদ ৩ ছেলে আর ৪ মেয়ের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। নিজের নামে শুধু একটা ৬ তলা বাড়ি রেখেছিলেন যার আয়ে তিনি চলতেন। স্ট্রোক হবার পর বড় ছেলে উনাকে নিজের কাছে নিয়ে যায়। মাস ২/৩ পরই কৌশলে ৬ তলা বাড়িটিও বড় ছেলে নিজের নামে লিখিয়ে নেয়। তারপর থেকে উনার চিকিৎসা আর সবকিছুতেই অবহেলা। সবাই নিজ নিজ সম্পদ ভোগ করলেও একমাত্র মেজ মেয়ে ছাড়া আর কেউ উনার দেখাশুনা করতে রাজি নয়। নানা অজুহাতে সবাই এড়িয়ে গেছে। সুস্থ থাকতে যেটা চাননি, সেই মেয়ের সংসারেই উনাকে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিতে হয়েছে।
পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী। পার্থিব অর্থ -সম্পদ আরও ক্ষণস্থায়ী, ঠুনকো। এগুলো নিয়ে কেউ কবরে না গেলেও এগুলোর পিছনেই আমরা দৌড়াতে থাকি। প্রায়ই আমরা এই সম্পদের মোহে পড়ে কিছু চিরস্থায়ী সম্পর্ককে দূরে ঠেলে দেই, অবজ্ঞা করি। নিজেদের জীবন, আরাম - আয়েশ আর ভোগ বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায় আমাদের প্রায়োরিটি।
মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল।
ফেরার সময় কানে ভদ্রলোকের কথাটা বাজছিল,
"আমার মত হইও না"........................
বিষয়: সাহিত্য
৯৩১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর বলেছেন। এই পৃথিবী কয়দিনের। তারপরো আমরা সামান্য সম্পদ নিয়ে কত কিছুই না করি। আল্লাহ তুমি আমাদের হেদায়েত দাও।
মন্তব্য করতে লগইন করুন