বৈষম্যঃ (ছোটগল্প)

লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ০৪ মে, ২০১৪, ১২:১৫:০২ দুপুর

চট্টগ্রামের কোন এক অভিজাত এলাকা। একটু পাহাড়ি, গাড়ি না থাকলে হেঁটে উপরে উঠতে হয়। রিকশা সহজে উঠে না। সে সময় খুব কম বাড়ি ছিল সেখানে। বড় বড় বাউন্ডারির ভেতর সুবিশাল সব বাংলো টাইপ বাড়ি। বাড়িগুলো অবশ্য সাধারনত দোতলার বেশি হত না। শুধু একটা পরিবারই কর্মচারীদের নিয়ে বাস করত। ভাড়া নিলে পুরোই নিতে হত। সব বাড়িতেই কম বেশি ২ বা এর বেশি গাড়ি থাকতো। যেহেতু অন্য যানবাহনের নাগাল পাওয়া কঠিন ছিল। বাংলোর সামনে অনেকটুকু বাগান, একপাশে মসৃণ ঢালাই করা ড্রাইভওয়ে।

এলাকার প্রবেশমুখেই রিকশা থেকে নেমে হেঁটে ধীরে ধীরে উপরে উঠছি। এক বন্ধুর বাসায় বিকালের চায়ের নিমন্ত্রন। অফিস শেষে অনেকেই রাজকীয় সব মডেলের গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরছেন। দুপাশের বাড়িগুলো উঁচু দেয়ালের কারনে খুব একটা দেখা যায় না। শুধু গেটের ফাঁকফোকর দিয়ে বাড়ির অনেকটুকু চোখে পড়ে।

একটা পঙ্গু ফকির কিভাবে যেন খোঁড়াতে খোঁড়াতে উপরে উঠে এসেছে। বয়স সবেমাত্র কৈশোর পেরিয়েছে। একটা বাসার গেটের কাছে একটা গাড়ি এগিয়ে আসতে দেখে কিছু পাওয়ার আশায় দাঁড়ালো। গাড়িটা ফকিরের পাশে থামল। দারোয়ান গেট খুলছে। গাড়ির কালো গ্লাস নেমেছে। ভেবেছি একটা হাত বেরিয়ে আসবে, কিছু দেবে এরপর এই দৃশ্যের সমাপ্তি। কোন হাত বের হল না। একটু পর গ্লাসটা উঠে গেলো আর গাড়িটাও ভিতরে ঢুকে গেলো। ফকিরের মুখ দেখে আন্দাজ করলাম নিম্নোক্ত বাক্য তাকে হজম করতে হয়েছে.........।

ঃ এত সাহস তোমার! পাহাড় বেয়েও উঠে এসেছ ভিক্ষা করতে। কিছু করে খেতে পার না? .........।

তারপর হয়ত নিজে নিজে গ্লাস নামাতে নামাতে ....স্বগতোক্তি.. -

ঃ এলাকার দারোয়ানরা করেটা কি? এখানে থেকেও যদি ফকিরদের উপদ্রব সহ্য করতে হয়!! সব কয়টাকে বিদায় করে দেয়া উচিত।

নিমন্ত্রন রক্ষা করে ঘণ্টাখানেক পর ফিরছিলাম।। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। ওই বাসার সামনে এসে দেখি ফকিরটা সেই বাসার উল্টা দিকে ফুটপাতে বসে আছে। মাথা একটু উঁচু করে কিছু দেখার চেষ্টা করছে। দেখে ক্লান্ত লাগছে, কিছু পেটে পড়েনি মনে হয়। কিছু একটা দিলেই একে বিদায় করা যেত, করা হয়নি। ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখার চেষ্টা করছি ও এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখে। গেটের উপর লেখা " কুকুর হইতে সাবধান"।

ভিতরে বাগানে একটা ছোট বাথটাব। দুটো কুকুরকে সেখানে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল দেয়া হচ্ছে। কাছেই প্লেটে কুকুরগুলোর জন্য কিছু খাবার রাখা। মালিকের ছেলে আর সুপারভাইজার জাতীয় কেউ দেখাশুনায় ব্যস্ত। ফকিরটার দিকে তাকালাম। চুলে জট, অনেকদিন চিরুনি পড়েনি। কবে গোসল করেছে ঠিক নেই। মুখ শুকনা। দুপুরে হয়ত পেটে দানা পড়েনি। ভিতরের দৃশ্য দেখে ওর মুখে একটা অদ্ভুত অভিব্যক্তি। সেটা আমার মনে গেঁথে গেলো। কি ভাবছিল, ছেলেটা?

এই জীবনের চেয়ে মালিকের কুকুর হয়ে জন্মালে আদর যত্ন, খাবার বেশি পেতাম? জীবন কখনো কখনো বড়ই নির্দয় আর বৈষম্যে ভরা............।।

ওই এলাকা দিয়ে কিছুকাল পর যাবার সময় দেখলাম, প্রবেশ পথে গার্ড বসেছে। হয়ত ফকিরদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রন করার জন্য। রাস্তার কয়েকটা কুকুর অবশ্য মহা আনন্দে ভিতরে দৌড়াদৌড়ি করছে............।

এই লেখার উদ্দেশ্য অবশ্য ভিক্ষাকে উৎসাহিত করা নয়। আমাদের গনতন্ত্র ও বড়ই অদ্ভুত। যেখানে ধনী আরও ধনী হয়, গরিব আরও গরিব। সামর্থ্যবান মুসলিমরা ঠিক মত যাকাত আদায় করলে, সবাই নিম্ন সামর্থ্যের লোকজনের পাশে আরেকটু দাঁড়ালে মানুষ হয়ত কুকুরের চেয়ে একটু ভালো অন্তত জীবন যাপন করবে। কে বলতে পারে আজকের রাজা কাল ফকির হবে না। মানুষ মানুষেরই জন্য...............।।

বিষয়: সাহিত্য

১০১৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

217220
০৪ মে ২০১৪ দুপুর ১২:২০
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৪ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৫৩
165452
আতিক খান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
217317
০৪ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:২৬
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : এরকম কত অভিজ্ঞতা যে আমাদের ভান্ডারে জমা পড়ছে প্রতিনিয়ত..এবং এখন মানুষের মনুষত্যটাকেই যেভাবে মুছে দেয়া হচ্ছে তাতে সামনে আরো কত জমা পড়বে..
০৪ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৬
165573
আতিক খান লিখেছেন : দিন দিন শ্রেণী বৈষম্য বাড়ছে, চোখ বুজে থাকতে চাইলেও এটাই বাস্তবতা Worried :(
আপনার প্র পিকটা দেখলে অতি দুঃখেও হাসি পাচ্ছে Tongue । ধন্যবাদ।
০৪ মে ২০১৪ রাত ০৮:০০
165608
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : Tongue Tongue
০৪ মে ২০১৪ রাত ০৮:১২
165616
আতিক খান লিখেছেন : Happy
218019
০৬ মে ২০১৪ সকাল ১০:০৯
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : সব সমস্যার গোড়া এক জায়গায়, কিন্তু যেখানে সকল সমস্যার সেটা আমরা না মানার সংকল্প করে সব জায়গায় ধরা খেয়ে চলেছি Sad
০৬ মে ২০১৪ সকাল ১১:১৩
166149
আতিক খান লিখেছেন : এটা মনে হয় পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই। যারা কিছু করতে পারে তারাই ব্যবধানটা কমাতে চাইবে না। আর দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ নেই বলে শ্রেণী বৈষম্য ও দিনদিন বাড়ছে। Sad

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File