গল্পঃ চোখ
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ২৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:২০:৪৫ রাত
রিনার জগতটা পুরোই অন্ধকার। ছোটকালেই ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে রিনা। বেঁচে থাকার ন্যুনতম ইচ্ছাটাও অনেক আগেই হারিয়েছে ও। সবকিছুতেই মহা বিরক্তি লাগে ইদানিং। সম্ভব হলে পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে বা দোকান থেকে বিষ কিনে খেয়ে আত্মহত্যা করত অনেক আগে। কিন্তু পাহাড় খুঁজে পাবার বা দোকানে গিয়ে বিষ কেনার সামর্থ্য ও ওর নেই। প্রতিটা মুহূর্ত ওর কাছে এক এক যুগের সমান।
ফয়েজ রিনার নিকটাত্মীয়। ছোটকাল থেকে ওকে ভালবাসে। বাসা কাছেই হওয়াতে প্রায়ই এসে রিনাকে সময় দেয়, নানাভাবে সাহায্য করার আপ্রান চেষ্টা করে। রিনা কখনো ফয়েজকে দেখেনি। রিনার বাবা-মা কিছু বলেন না। ফয়েজকে চেনেন বেশ ক'বছর ধরে। আর ফয়েজ এলে রিনার বেঁচে থাকার যে আকুতি সেটা উনারা অনুভব করেন। সামর্থ্যের অভাবে রিনার উচ্চ চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না বলে অপরাধবোধে ভুগেন। দেশের সেরা হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, কেউ চক্ষুদান করলে রিনা এখনো দৃষ্টি ফিরে পেতে পারে। দেখেছেন ফয়েজ ছাড়া আর কারো উপস্থিতি রিনা সহ্যই করতে পারেনা। প্রচণ্ড বিরক্ত থাকে সবকিছুতেই। ফয়েজ নানাভাবে রিনাকে বিয়ের কথা বলে দেখেছে। কিন্তু রিনা কোন করুণা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় না। বলেছে,
- আমি যদি কোনদিন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাই, সেদিনই তোমাকে বিয়ে করব। তার আগে নয়।
ফয়েজ রাগ করে কদিন এলো না। এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুসংবাদ এলো, রিনার জন্য চোখ পাওয়া গেছে। ২ দিনের মধ্যে অপারেশন হয়ে গেলো। ব্যান্ডেজ খুলে রিনা সবার আগে ফয়েজকে দেখতে চাইল।
ফয়েজের গলা শুনতে পেল ও,
- আমাকে দেখতে পারছ? এখন তো আর আমাকে বিয়ে করতে সমস্যা নেই।
শয্যার শেষ মাথায় দাঁড়ানো যুবককে দেখে ভীষণ ধাক্কা খেলো রিনা। যুবকের চোখ দুটো বন্ধ। সম্ভবত দৃষ্টিশক্তি নেই। ফয়েজ আন্দাজে শয্যা ধরে ধরে রিনার পাশে এসে বসল। রিনার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। ও কত কিছু কল্পনা করে রেখেছে। এই ফয়েজকে নিয়ে কিভাবে ও সংসার সাজাবে? সারা জীবন এই দৃষ্টিশক্তিহীন যুবকের সাথে কাটানোর শঙ্কায় ও পাথর হয়ে গেলো। ফয়েজকে বলল, বন্ধু হিসাবে থাকতে চায় বাকি জীবন।
ফয়েজ মুখ ঘুরিয়ে নিল। নাহলে রিনা দেখতে পেত, ওর বন্ধ দুচোখ বেয়ে অনর্গল পানির ধারা নেমে আসছে.........। ফয়েজ রিনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আর কখনো রিনা ফয়েজকে দেখেনি।
হাসপাতাল থেকে রিলিজ হবার সময়, ডাক্তার একটা চিরকুট দিয়ে গেলেন রিনাকে। বললেন, সেই যুবক তোমাকে দিতে বলেছে।
" তোমার চোখ দুটোর অনেক অনেক যত্ন নিও। তুমি দেখতে পাবার আগে, ওগুলো দিয়ে আমি পৃথিবী দেখতাম। আমার কাছে তুমিই ছিলে পৃথিবী। তাই তুমি ছাড়া এই রঙ্গিন পৃথিবীর কোন মুল্য আমার কাছে ছিল না। ওগুলোর বিনিময়ে হলেও তোমাকে পেতে চেয়েছিলাম। তোমার ভালো থাকাই আমার ভালো থাকা"।
মরালঃ আমাদের গোল্ডফিশ মেমরি। খুব দ্রুত অতীত ভুলে যাই। দুঃসময়ের বন্ধু সুসময়ের যে কোন সম্পর্কের চাইতেও হাজার গুন বেশি মুল্যবান।
(একটি বিদেশি অনুগল্পের ছায়া অবলম্বনে )
বিষয়: বিবিধ
৯৭৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন