শেন জারগেনসেন এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ২৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৩০:৪৫ সকাল
কেমন কোচ শেন জারগেনসেন?
মাত্র ৩৮ বছর বয়সি এই কোচের উত্থান অনেকটা রূপকথার মত। কয়েকটা তথ্য দিলেই পরিষ্কার হবে,
- কখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি এবং মাত্র ২৩ টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন মুলত কুইন্সল্যান্ড, তাসমানিয়া আর ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। দলে অনিয়মিত ছিলেন। মোট উইকেট পেয়েছেন ৭০ টি।
- পেস বোলার ছিলেন এবং মাত্র ৩০ বছর বয়সে অবসর নিয়ে কোচ এর ট্রেনিং নেন। ব্যাটিং এ একমাত্র অর্ধশতক সর্বচ্চ ৫৬।
- কোচ হিসেবে অভিজ্ঞতা, নিউজিল্যান্ডের বোলিং কোচ ছিলেন ২০০৮-২০১০। অক্টোবর ২০১১ তে বাংলাদেশের বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। অক্টোবর ২০১২ তে রিচারড পাইবাস হটাত চলে গেলে ভাগ্যক্রমে সাময়িক প্রধান কোচ হন এবং ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তে স্থায়ি প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পান।
উপরের তথ্য থেকেই দেখা যাচ্ছে শেন এর অভিজ্ঞতা খুবই কম। প্লেয়ার এবং কোচ দুই হিসেবেই। অন্তত যে কোন একটা প্রোফাইল ভালো হওয়া জরুরি।
শেন কি একাই ব্যর্থ?
সেটা অবশ্যই মনে করিনা। কারণগুলো মোটামুটি এরকম,
- শেন এর দেয়া মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত না করা
- ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো, ফ্ল্যাট পিচ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনতা
- বিসিবির ছন্নছাড়া ক্রিকেট ক্যালেন্ডার এবং অসহযোগিতা
এরপর ও বলতে হয় আগের সব কোচ এতসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেই কাজ করেছেন। মোটামুটি সফল হিসেবে আমার কাছে দুজনকে মনে হয়। একজন ডেভ হোয়াটমোর আরেকজন জেমি সিডন্স। ডেভ দলকে জিততে শিখিয়েছিলেন আর সিডন্সের দলে ধারাবাহিকতা ছিল। জয়ের জন্য দল মাঠে নামত। সেসময়ের কোচিং স্টাফরাও যথেষ্ট যোগ্য ছিলেন। বর্তমান দলে বোলিং কোচ হয়ে আসা শেন হয়েছেন প্রধান কোচ আর ফিল্ডিং কোচ হয়ে আসা কোরি রিচারডস হয়েছেন ব্যাটিং কোচ। যার ফলাফল অব্যাহত বিপর্যয়। কোচ পাওয়া না যাওয়া, সিলেকশন কমিটির ব্যর্থতা নাকি অল্প বাজেটে কোচ নেয়া কোনটা এরজন্য দায়ী বিসিবিই ভালো বলতে পারবে।
শেন এর ব্যর্থতা গুলো ............
ফুটবলে যে কোন ব্যর্থতায় কোচের গর্দান যায় সবার আগে। কারন একই প্লেয়ারদের ঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারা, ক্রমাগত ব্যর্থতা আর মিস ম্যানেজমেন্ট। ক্রিকেট ও খুব ভিন্ন কিছু নয়। সিডন্সের হাতে তৈরি দলটা গোছানো ছিল। ল এর হাতে আরেকটু পরিশীলিত হয়েছিল। সেই দলটা কিছুদিন তাই ভালই খেলেছে। একজন কোচের মূল পরীক্ষা সফল একটা দলের জয় পাওয়া নয়, বরং পরাজিত দলকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করা। তখন বোঝা যায় একটা দলের মানসিক সক্ষমতা, দলের গভীরতা ও আত্মবিশ্বাস। শ্রীলঙ্কা সিরিজ, এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপ ধরলে এখানে কোচ ভালভাবেই ব্যর্থ। টানা পরাজয় থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ দল।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে কি ঘাটতি ছিল? বাংলাদেশ দলের দিকে দেখলে দেখা যায়,
- ব্যাটিং সবচেয়ে খারাপ করেছে। দেশের মাটিতে, দেশের পিচে অনেকের ব্যাটিং ই ছিল অপ্রত্যাশিত। আফগানিস্থান আর হংকং এর ম্যাচ দুটো সাক্ষী। চাপে পড়ে ব্যাটিং কলাপ্স করেছে। তামিম, নাসির, রিয়াদ সহ অনেকেই ধারাবাহিক ভাবে ব্যর্থ। রানিং বিটুইন দ্য উইকেট ছিল খুবই দুর্বল। এটা কি ফিটনেস এর ঘাটতি, নাকি মানসিকতার নাকি প্র্যাকটিস এর?
- ফিল্ডিং এ গ্রাউন্ড ফিল্ডিং, ক্যাচিং আর থ্র আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে।
- বোলিং এ স্পিন এটাক ছিল সবচেয়ে দুর্বল। রাজ্জাক, গাজী ক্রমাগত শর্ট বল করা, ভুল লাইনে বা লেন্থে বল করা দৃষ্টিকটু ছিল। আল আমীন মোটামুটি করলেও বাকি পেসাররা চোখে পড়ার মত কিছু করেনি। ইয়র্কার, স্লো বাউন্সার বা পেস ভেরিয়েশনগুলো খুব বেশি চোখে পড়েনি। প্লেয়ারদের সাথে এখানে কোচকে ও দায়ভার নিতে হবে।
- এছাড়াও থিঙ্ক ট্যাঙ্কের অংশ হিসেবে অনেক দুর্বলতা চোখে পড়েছে। টিম সিলেকশন, ব্যাটিং অর্ডার, বোলারদের ফিল্ড সেটিং প্ল্যান ইত্যাদি ইত্যাদি.........।
বাংলাদেশ দল কি এরকম খেলত? দলের মানসিকতা, শরীরী ভাষা বা স্কিল এসময় ছিল নিম্নমুখী। কোচকে এর দায়ভার নিতেই হবে আংশিক হলেও। ২০১৫ এর জন্য নতুন ভাবে শুরু করাই ভালো মনে হচ্ছে।
শেষ কথা......
- সৌরভ গাঙ্গুলিকে এই পোস্টের জন্য যোগ্য মনে করিনা, ওর বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব বা আচরনের জন্য।
- পাক বিরোধী রাজনীতির ভয়ে সাকলায়েনকে আনা হল না। ১০০ দিনের চুক্তি কাজে লাগানো হল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই সুযোগে ওকে বিশ্বকাপে বোলিং কোচ করল। ফলাফল ওরা করল ১৭০আর আমরা বদ্রি/নারিনের স্পিনে ধ্বসে পড়ে ৯৮। এখন বিশ্বকাপের পর আবার ভাবা হচ্ছে ওকে আনার জন্য? বিচিত্র সব কাজ কারবার বিসিবির............।
- ২০১৫ কে লক্ষ্য বানিয়ে আশা করি ভালো ট্রেনার, প্রধান কোচ আর মনস্তত্ত্ববিদসহ কোচিং স্টাফ নিয়োগ দেবে বিসিবি।
খেলোয়াড়রা ভালো করলেই টিভি রাইটস, আরও সিরিজ এগুলো পাওয়া যাবে। ওরা খারাপ করলে বাকি সবকিছুই মূল্যহীন...............।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এরকম হাজারটা হোয়াটমোর , সিডন্স , গ্রীনিজ , ফ্লাওয়ার ব্লান্ডার করে গুলিয়ে খাওয়ালেও কোন কাজ হবে না যদি প্লেয়ারদের মধ্যে হামবড়া ভাব চলে আসে ।
বাংলাদেশের তথা বাংলাদেশের প্লেয়ারদের একটা বেসিক সেন্সে আসা উচিত । যতই বড় বড় দল গুলোর কাছে ১০ উইকেটে বা লক্ষ কোটি রানে হারি না কেন বা শূন্য রানেই অলআউটই হই না কেন ছোট(!) দলগুলোর কাছে হারা যাবে না বা হারার আগেই হারার মানসিকতা দেখানো যাবে না ।
বড় দলগুলোকে হারানোয় সে সন্মান পাওয়া যায় ছোট দলগুলোর কাছে হারার ফলে তা ধূলায় মিশে যায় ।
এরকমই একটা হয়েছিল ২০০৭ এর ওয়ার্ল্ড কাপে । ভারত ও দক্ষিন আফ্রিকাকে হারালেও ঠিকই আয়ারল্যান্ডের কাছে (সুপার এইটে) ধরা খেয়ে যায় ।
আবার একই বছর প্রথম টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারালেও সুপার এইটে গিয়ে আবারও সেই আয়ারল্যান্ডের কাছে ধরা ।
এগুলো খুবই হতাশা জনক রেজাল্ট । এইসব এসোসিয়েটসদের কাছে হারলে বড় দলগুলোর কাছে জেতাটা ফ্লুক বলে প্রচার হয় ।
ফলে আমরা যে এগিয়েছি তা কেউ মানতে চায় না চাক্ষুষ প্রমানের ফলেই ।
এই বাংলাদেশই তো গত বছরের শেষের দিকে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াটোয়াশ করেছিল ।
ঘাপলাটা বাঁধে শ্রীলংকার সাথে ৬৭-৮ উইকেট ফেলেও তাদের ১৮০ রান করতে দিয়ে ১৩ রানে হারার মধ্য দিয়ে । তাদের সাথে ২ টি টি২০ তেও খুব নেরোলি বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে । হেরেছে বলার চেয়ে বলা উচিত ঐ সময়ে কিভাবে জিততে হয় সেটা বাংলাদেশ জানে না । কারণ শ্রী লংকা জিনিসটা দুইভাবেই করে দেখিয়েছে ।
যার ফলে মনোবল নরম হয়ে যায় । এর মধ্যেই একটা হাইপ তৈরি হয় যে, এশিয়া কাপে এই দল আফগানিস্তানের কাছে হারবে ।
যে আফগানিস্তান বাকি দলগুলোর সাথে ১৮০ রানও পার হতে পারে নাই , তারাই করলো ২৫০+রান । তাও আবার ৯৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর।
ঠিক পরের ম্যাচে বাংলাদেশ তাদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান করেও জিততে পারে নি বহু প্রতিক্ষিত পাকিস্তানের সাথে ।
টি২০র সবচেয়ে প্রেসটিজিয়াস ম্যাচ ছিল বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের ম্যাচটি । যার সব চাপই ছিল বাংলাদেশের উপর । আর কি সুন্দর ভাবেই না বাংলাদেশ এই চাপকে চাপা দিয়েছে ।
পরের ম্যাচে নেপালের সাথে জিতে বাংলাদেশ হংকংয়ের সাথে ম্যাচটি একরকম আনুষ্ঠানিকতাই করে ফেলে । পত্রপত্রিকায় ভাব আসে যে সবচেয়ে দূর্বল দল এই হংকংয়ে কি সাইজই না করবে বাংলাদেশ ।
আফগানিস্তান আর নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ বেশ সহজে জিতলেও যেটা চোখে পড়েছে সেটা হল প্লেয়ারদের দাম্ভিকতা পারফরমেন্সের চেয়ে , বিশেষ করে ব্যাটস্ম্যানদের । নেপালের বিপক্ষে তামিমের আউটটা একটু খেয়াল করে দেখুন তো ?
এই দাম্ভিকতাই কাল হয়ে দাড়িয়েছে হংকংয়ের বিপক্ষে । কোথায় আগে ব্যাট করে ২০০ এর কাছাকাছি রান করবে , তা না হয়ে ১০০ ও পার হয় কি না তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় সবাই । কোন রকমে ১০৮ রান করে ।
এর ফলে বাংলাদেশ পড়ে যায় মহা বিপদে । এই ম্যাচের আগে ''কোয়ালিফাই করেই গেছে'' যে ভাব ছিল , ১ম ইনিংস শেষ করার পর তা নিয়ে শংকা শুরু হয় । হংকং যদি ১৩.১ ওভারে জিতে যায় তাহলে নেপাল চলে যাবে ।
হংকংয়ের ইনিংসে আগের দুই ম্যাচে গোল্ডেন ডাক পাওয়া ইরফান যে হারে মারা শুরু করেছিল তাতে একটা পর্যায়ে সবাই ধরেই নিচ্ছিল যে শেষ , সব শেষ ।
পরে আল্লাহর রহমত হিসেবে আসে সাকিব । ৩ উইকেট তো নিয়েছিলই সাথে রানও দিয়েছিল ১০ এর নিচে । ১৩.১ ওভারে যেখানে হংকং জিতে গেলে বাংলাদেশের দফারফা হয়ে যেত , সেখানে হংকং করে ৬৫-৭০ রান ৫ উইকেট হারিয়ে ।
হংকংয়ের এই ৫ উইকেট কিন্তু পরে গিয়েছিল ৫০ রানেই । ৬ উইকেট পরে ৮৩ রানে । শেষ ২৪ বলে দরকার পরে ২৬ রানের , হাতে চার উইকেট । ঠিক এই সময়েই মুশফিক ফরহাদকে এনে সব গুবলেট করে দেয় । সে দেয় ১৫ রান । পরের দুই ওভারে রাজ্জাক ও সাব্বির মোট দেয় ৫ রান , নেয় ২ টি উইকেট ।
রাজ্জাক ও সাব্বিরের করা ১৮ ও ১৯ নং ওভারগুলো একটা আফসোস এনে দেয় যে, ৫০ রানে যখন ৫ উইকেট পড়েছিল তখন এরকম স্পিনার আনলে ৬ ষ্ঠ উইকেট জুটি এতটা থিতু হতে পারতো না । হংকংয়ের ব্যাটস্ম্যানরা স্পিনে স্বচ্ছন্দ ছিল না ।
হংকংয়ের ইনিংসের ১৩.১ ওভারে যখন বাংলাদেশের কোয়ালিফাই না করার শংকা কেটে গেল , তখন বাংলাদেশ চাইছিল কোন রকমে খেলাটা শেষ করতে । ১০৮ রান পুঁজি নিয়েও হংকংয়ের মত দলকে বাংলাদেশ ৫০ রানে ৫ উইকেট ফেলেও জেতার চেষ্টা করলো না তা খুবই কষ্ট দেয় । কারণ এই হংকংকে ৬৭ রানে প্যাকেট করে ৮০ রানে জিতেছিল নেপাল । বাংলাদেশের বোলিং নেপালের চেয়ে ভাল নয়- এটা তো মানতে ইচ্ছে করে না ? ।
তারা তো ৬৭ না হোক , ৮০ ও না হোক অন্তত ১০০ এর ভিতরেও তো হংকংকে আটকে রাখার চেষ্টা চালাতে পারতো ? মূল পর্বে শ্রী লংকা কিন্তু ১১৯ রান করেও নিউজিল্যান্ডকে ৬০ রানে প্যাকেট করেছিল ।
মূল পর্বে বাংলাদেশের যে সব প্রতিপক্ষ ছিল তারা ছিল এক একজন ওয়ার্লড চ্যাম্পিয়ন , হয় ওয়ান্ডেতে না হয় দুটোতেই । বাংলাদেশের খুব আশাবাদী সমর্থক না হলে কেউ চিন্তা করে নি যে গত জানুয়ারী হতে যে পারফরমেন্স বাংলাদেশ দেখাচ্ছে তাতে বাংলাদেশ এদের কাউকে চুবানি দিতে পারবে । পারেও নি , এবং এটাই স্বাভাবিক সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের আলোকেই ।
বাংলাদেশের এই ক্রমাগত ছোট দলগুলোর কাছে হারার ফলে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তাতে লবণ ছিটিয়ে দিয়েছে এসোসিয়েট দেশ নেদারল্যান্ডসের পারফরমেন্স । সাম্পর্তিক সময়ে এদের ওয়ানডে স্ট্যাটাস নাকি নিয়ে নেওয়া হয়েছে ।
সেই নেদারল্যান্ডসই কি খেলাই না দেখাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ! এই খেলা দেখার পর আর কোন টি২০ ম্যাচই আমার দেখতে ভাল লাগে না । মূল পর্বে গিয়ে তারা ইংল্যান্ডকেও চুবিয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের সাথে বাংলাদেশের পারফরমেন্স হিসেব করে দেখলে খারাপই লাগবে । বাংলাদেশে ১০ শে ১০ নিজেদের মাটিতে নেদার ল্যান্ডস্ ১০ শে ৯ এসোসিয়েট দেশ ও ওয়ানডে স্ট্যাটাস হারিয়েও !
এসবের ফলে বাংলাদেশের খেলোয়ারদের মনোবলই হারিয়ে গেছে । তাদের আসলে কোচের চেয়ে মনোবিদই লাগবে বেশী ।
http://eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=22&date=2014-04-25
মন্তব্য করতে লগইন করুন