গল্পঃ নিয়তি (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:০৯:২৫ সকাল

কলটা অফ করতে গিয়ে হাতটা কাঁপছিল আলিয়ার। মোবাইলটা পড়ে গেলো খাটের কোনায়। সেখান থেকে মেঝেতে গড়িয়ে পড়তে দেখেও ধরার চেষ্টা করল না। কি হবে ধরে? মোবাইলটাও জায়েদ এর উপহার ছিল। জায়েদই যখন ওকে ছেড়ে চলে গেলো, মোবাইলটা দিয়ে আর কি হবে।

এরকম কিছু হতে পারে, একটু একটু করে টের পাচ্ছিল আলিয়া। মেয়েদের একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় থাকে। মাস দুয়েক ধরে সবকিছু ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছিল। ওদের বিয়ের আর মাস তিনেক বাকি। আর বিয়ের কথা ভেবে লাভ নেই। একটা টেলিফোন কল। সম্পর্কের সব সুতা ছিঁড়ে গেল।

জায়েদকে পুরো দোষ ও দিতে পারছে না আলিয়া। জায়েদ ও তো একজন পুরুষ মানুষ। সব কিছু চোখ দিয়েই হয়ত বিচার করেছে। ৬ মাস আগে পড়া বাগদান এর আংটিটা খুলে রাখল আলিয়া। ফেরত পাঠিয়ে দেবে। দুই হাত মেলে ধরল চোখের সামনে। শুধু হাতে না অবশ্য, মুখে আর পায়েও আছে দাগগুলো। একটা অদ্ভুত চর্মরোগ হয়েছে মাস দুয়েক ধরে। নানা চিকিৎসায় যাচ্ছে না সেগুলো। একই রকম রয়ে গেছে এখনো। ডাক্তাররাও কোন আশার বানী শোনাতে পারছেন না। আয়নার সামনে দাঁড়ানো ছেড়ে দিয়েছে বেশ কিছুদিন। দেখলে নিজেকেই নিজে চিনতে পারে না।

জায়েদের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করল। জায়েদ কি শুধু ওকেই দেখেছিল? কখনই ওর হৃদয়কে দেখেনি, যেখানে শুধু জায়েদের ছবি আঁকা ছিল। একটা বড় দীর্ঘশ্বাস পড়ল আলিয়ার। চোখের পানি কদিন আগেই শুকিয়ে গেছে। বুঝতে পারছিল কি হতে যাচ্ছে। ৬ বছরের সম্পর্ক কিছু দাগের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেলো। আচ্ছা, জায়েদের যদি এরকম কিছু হত। অনেক চিন্তা করেও মনে হল না, আলিয়া জায়েদকে ছেড়ে যেতে পারত। শুন্য দৃষ্টি নিয়ে বসে রইল আলিয়া।

৩ মাস পর ----------

জায়েদের বিয়ের খবরটা পেয়েছিল লোকমুখে। খুব সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে নাকি বিয়ে হয়েছে। কিছুদিন দাঁড়াবার শক্তি পাচ্ছিল না আলিয়া। আকিব এসে পাশে না দাঁড়ালে কি হত ও নিজেও জানে না। আকিব নিরবে এত বছর ওর পাশে ছিল। আকিবকে ফিরিয়ে দিয়েছিল অনেক বছর আগে। কবে ওর নিজের ও মনে নেই। আকিব সেসব মনে রাখেনি। ওর ভালবাসার মানুষকে ফিরে পেয়েই আকিব খুশি।

আকিব যখন আলিয়ার হাত দুটো ধরে ওর মুখে দিকে তাকায়, আলিয়া নিশ্চিত যে ওর কোন দাগই আকিবের চোখে পড়ে না।

৯ মাস পর --------

একটা ডায়াগনস্টিক ল্যাব এ এসেছে আকিব আর আলিয়া। ওদের বিয়ে হয়েছে মাস চারেক। আকিবের উৎসাহ আর অনুপ্রেরনায় উন্নত চিকিৎসায় আলিয়ার চর্মরোগ ও এখন মিলিয়ে গেছে। কিছুদিন দেশের বাইরেও ছিল বাকিটা দেশে ফলো আপ করেছে। ওরা এখন নিজেদের জীবনের সবচে খুশির সংবাদটা নিতে এসেছে। বাবা-মা হতে যাচ্ছে দুজন। পজিটিভ রিপোর্ট ডাক্তারকে দেখিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে যাচ্ছিল দুজন। গাইনির ডাক্তারের পাশের চেম্বারটাই চর্ম রোগের ডাক্তারের। সেখানে সামনে বসা দুজন কে দেখে থমকে গেলো আলিয়া।

একটা চেয়ারে জায়েদ বসা। পাশের চেয়ারের মেয়েটাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো আলিয়া। বোঝাই যায় একসময় বেশ সুন্দরী ছিল মেয়েটা। জায়েদের স্ত্রী হবে নিশ্চিত। মেয়েটার মুখে হাতে সেই চর্মরোগ, যেটা আলিয়ার হয়েছিল। দুই - তিন গুন বেশি মাত্রায় হয়েছে, তাকানো যাচ্ছে না।

জায়েদ মুখ তুলে তাকাল। আলিয়া আকিবের হাত ধরা, সেই আগের রূপে আর অনেক বেশি হাসিখুশি।

চোখ মিলাতে পারল না, মুখ নামিয়ে নিল জায়েদ। একটা বিশাল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল.........।।

বিষয়: সাহিত্য

১৩৪০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

214238
২৮ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:২৯
রাইয়ান লিখেছেন : অসাধারণ সুন্দর লেখা.... অনেক ধন্যবাদ আপনাকে !
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:২৩
162591
আতিক খান লিখেছেন : উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ। Happy
214279
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : অপূর্ব সুন্দর হয়েছে লেখাটা। আরো বেশী বেশী চাই এমন সত্য ঘটনা।
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:২৪
162593
আতিক খান লিখেছেন : ধন্যবাদ, ইনশাল্লাহ আরও লিখব। Happy
214280
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
egypt12 লিখেছেন : অসাধারণ জীবনটা এমনই...কোন কিছু চাইলেই এড়ানো যায় না Rose
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:২৬
162594
আতিক খান লিখেছেন : কিছুটা ভাগ্য, কিছুটা নিয়তি আর সবার উপরে বিশ্বাস। এইতো জীবন। ভালো থাকুন।
214293
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : গল্পের মাধ্যেমে খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। আসলে আমরা একজন মানুষের বাহ্যিক দিকটাই দেখি। তার ভেতরকার মানুষটাকে খুবই কম দেখি। ভেতরের মানুষটাই আসল মানুষ। আর অসুখ দেবার ও নিরাময় করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর তাই অসুখ হয়েছে বলে এতো দিনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হবে এই ভাবনাটাই ভুল। প্রিয়জনের বিপদে তার পাশে থাকাটাইতো ভালবাসা।
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:২৭
162595
আতিক খান লিখেছেন : চমৎকার বলেছেন। গল্পে এই মেসেজটাই দিতে চেয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
215222
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২৮
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : এমনটা হতে দেখেছি। মানুষ যতই নিয়তিকে অস্বীকার করুক, এর বাইরে সে যেতে পারেনা। বরং এর মধ্য দিয়ে তার নিয়তের পরীক্ষা হয়ে যায়। ভাল লাগল গল্পটা।
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৪৯
163520
আতিক খান লিখেছেন : চেষ্টার পর ও ভাগ্য সহায় না হলে মেনে নেয়াই ভালো। তাতে অন্তত সুখী হওয়া যায়। ২ লাইনেই গল্পটা বলে দিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File