কাঁপুনিঃ

লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ২৭ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৪৭:৩৭ সকাল

আমার এক আত্মীয়কে সপ্তাহে ৩ বার ডায়ালিসিস করতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিডনি সমস্যা। ডায়ালিসিস হল কিডনি কাজ না করলে শরীরের দূষিত তরল টুকু বের করে শুদ্ধ হতে সাহায্য করা। অনেকটা পোর্টেবল কিডনি বলা যায়।

ওখানে পাশাপাশি বেডে বেশ কয়েকজন রোগীকে একসাথে ডায়ালিসিস করা হয়। একজন বয়স্কা (প্রায় ৬০) ভদ্রমহিলা ও আসেন নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে। কিডনি দুটোই অকেজো বেশ কয়েকমাস ধরে। প্রাথমিক আলাপে জানা গেলো, উনার ৩ ছেলে-মেয়ে। একাই থাকেন, স্বামী মারা গেছেন কবছর আগে। ১ ছেলে আর ১ মেয়ে আমেরিকায়, ছোট ছেলে কানাডায়। ছেলে মেয়েরা সবাই ভয়ানক ব্যস্ত ক্যারিয়ার নিয়ে। কেউবা আরও উন্নত জীবনের সন্ধানে। মাঝে মাঝে ফোনে খবর নেয়। নাতি নাতনিরা ঠিকমত নানি বা দাদিকে চিনেও না। টাকার বিনিময়ে কাছের এক আত্মীয় হাসপাতালে আনা নেয়া করে।

ভদ্রমহিলার ব্লাড সুগারের সমস্যা আছে। ডায়ালিসিসের সময় সুগার লেভেল উঠানামা করলে উনার মধ্যে বেশ ভালই কাঁপুনি তৈরি হয়। এটা অবশ্য সবার হয় না, কারো কারো হয়। সেসময় নিকট আত্মীয় কেউ উনাকে জড়িয়ে ধরে রাখতে হয়। কাঁপুনি থামতে থামতে ৩০-৪০ মিনিট বা বেশি সময় ও লাগে। এই সময় সুগারের অনুপাতে খাবার দিলে ও অনেকটা কাজে দেয়। যেমন সুগার কমে গেলে মিষ্টি খাবার দেয়া হয়। কিন্তু এগুলো লক্ষ্য করার জন্য এমন লোকজন লাগে যারা এই রোগীর জন্য কেয়ার করেন।

ডায়ালিসিস শুরু হয়েছে। কিছুক্ষন পর যথারীতি কাঁপুনি শুরু হল। মিনিট দশেক পরে আত্মিয়া ভদ্রমহিলা একটু চা খেতে যাচ্ছেন বলে গায়েব হয়ে গেলেন, ফিরলেন না ঘণ্টাখানেক। দায়িত্ব দিয়ে গেলেন মহিলাকে দেখতে আসা ভাগ্নিকে। ভাগ্নি ২০-২২ বছরের, হয়ত প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে। একটু পরপর মোবাইল চেক করছে। মিনিট দশেক পরেই একটু কাজ আছে বলে একটা কাঠখোট্টা হাসি দিয়ে পালিয়ে বাঁচল।

আমার মনে হল, একটা বয়সের পর মানুষের এরকম প্লেন গায়েব হয়ে, লঞ্চ ডুবি হয়ে, খাদে মাইক্রো উল্টে, বিল্ডিং ধ্বসে কিংবা বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে পৃথিবী হতে হটাত বিদায় নেয়াই ভালো।

মহিলা কাঁপছেন। সাথে কাঁপছে উনার মাতৃত্ব, উনার পরিবার আর সম্পর্ক। কাঁপছে মানবিকতা, সভ্যতা, আধুনিকতা আর আমাদের উন্নত জীবন যাপন......... সর্বোপরি কাঁপছে আমাদের মনুষ্যত্ব......।।

বিষয়: বিবিধ

১১৬২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

213874
২৭ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৩৫
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : জাজাকাল্লা খাইরান.. অনেক সুন্দর হয়েছে ... অনেক ভালো লাগলো পড়ে
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:২৯
162597
আতিক খান লিখেছেন : পড়ার জন্য আর উৎসাহ দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...।। Happy
214295
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : ki jobab dib... Amader somaz akon ''''
kemon zeno hoye gece
donno bad apnake sundo bisoy a likar jnny'''''''
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৩০
162598
আতিক খান লিখেছেন : আমরা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছি। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File