একজন চা বিক্রেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী........
লিখেছেন লিখেছেন বদরুল এ হারুন ১৭ মে, ২০১৪, ০১:২১:৪৬ রাত
ছয় ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় নরেন্দ্র মোদির শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বেশ কষ্টেই। ১৯৫০ সালে জন্ম। তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সি’র (বর্তমান গুজরাট) মহসানা জেলার ভাদনগরে জন্ম নেওয়া মোদির বাবা দামোদারদাস মুলচাঁদ মোদি ছিলেন একজন চা বিক্রেতা। সংসার চালাতে বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় ভাদনগর রেলস্টেশনে চা বিক্রি করতে হয়েছে মোদিকেও। কিশোর অবস্থায় নিকটস্থ বাস টার্মিনালে ভাইয়ের সঙ্গে চায়ের দোকানও চালিয়েছেন তিনি। সেই নরেন্দ্র মোদি আজ বসতে যাচ্ছেন সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সুবাদে দিল্লির মসনদ এখন মোদির দখলে।
ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে দেখা যায়, শত কষ্টের মধ্যেও পড়ালেখা ছাড়েননি মোদি। ভাদনগরের একটি বিদ্যালয় থেকে স্কুলজীবন শেষ করা মোদি সাধারণ মানের ছাত্র হলেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। স্কুলজীবনে পড়ালেখার পাশপাশি আরেকটি বিষয়ে প্রবল আগ্রহ ছিল মোদির। সেটি হল বিতর্ক। থিয়েটারের প্রতিও অনুরাগ কম ছিল না। ভাগ্যই তাকে রাজনীতির মাঠে নিয়ে আসে। আর বিতর্কের নেশা রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ পথকে মসৃণ করতে থাকে। এবারের লোকসভা নির্বাচনী প্রচারণায় বিতার্কিক হিসেবে তার ‘দক্ষতা’ দেখেছে ভারতবাসী!
মাত্র ৮ বছর বয়সেই রাষ্ট্রীয় সমাজসেবক সংঘ’র (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত হন মোদি। বাকপটুতা আর করিৎকর্মা গুণের কারণে ছাত্রজীবনে ২০-২২ বছর বয়সে আরএসএস’র একজন প্রচারক মনোনীত হন। আরএসএস’র সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থায়ই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও একই বিষয়ে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আরএসএস থেকেই দিল্লির রাজনীতির অন্দরে ঢোকার সুযোগটি পেয়ে যান মোদি। আরএসএস করা অবস্থায় বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে পরিচিত হন মোদি। ১৯৮৮ সালে বিজেপি’র (ভারতীয় জনতা পার্টি) গুজরাট শাখার সাংগঠনিক সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। সেখান থেকেই তার রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক উত্থান। এরপর থেকে আর কখনো পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৯১ সালে ‘একতা যাত্রা’য় মোদির উপস্থিতি ও কার্যক্রম দলের মধ্যে তার ভাবমূর্তি আরও সুসংহত করে। ১৯৯৫ সালে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। তিন বছর পর ১৯৯৮ সালে দলটির জেনারেল সেক্রেটারি হন।
পারিবারিকভাবে মাত্র ১৩ বছর বয়সে যশোদাবেনের সঙ্গে মোদির বাগদান হলেও বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সে। তবে তাদের সংসার করা হয়েছে অল্পদিনই। এতদিন এ বিষয়টি ভারতের হবু প্রধানমন্ত্রী চেপে রাখলেও এবারের নির্বাচনী হলফনামায় যশোদাবেনকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মোদি।
২০০১ সালে মোদির রাজনৈতিক জীবনে এক নাটকীয় উত্থান ঘটে। তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী কেশুবাই প্যাটেল মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ ছিল প্যাটেল সরকারের বিরুদ্ধে। বিজেপি নেতারা তাই সেখানে বিকল্প নেতা খুঁজছিলেন। এ সময় মোদিকে প্যাটেলের ডেপুটি হিসেবে নিয়োগ দিতে চাইলে তাতে সম্মত হননি তিনি। অবশেষে ওই বছরই প্যাটেলের পরিবর্তে মোদিকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয় বিজেপি।
২০০২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর পদে দ্বিতীয়বারের মতো বসেন মোদি। যদিও ওই বছর সংগঠিত গুজরাট দাঙ্গায় মোদির সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। এরপর ২০০৭ সালের নির্বাচনে আবারও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে আসনটা নিজের নামে পাকাপোক্ত করে নেন। এখনও তিনি আছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। এ অবস্থায়ই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামী ২১ মে শপথ নিতে যাচ্ছেন। এরপরই শুরু হবে তার রাজনৈতিক জীবনে আরেক নতুন অধ্যায়।
উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন