এই নাও তোমাদের গচ্ছিত ধন

লিখেছেন লিখেছেন বদরুল এ হারুন ০৯ মে, ২০১৪, ১২:১৭:২২ দুপুর



সেদিন গভীর নিশীথে মহানবী (সাঃ) হিজরত করেছেন। তাঁর ঘরে তাঁর বিছানায় শুয়ে ছিলেন হযরত আলী (রাঃ) । মহানবীর (সাঃ) কাছে গচ্ছিত রাখা কিছু জিনিস মালিকদের ফেরত দেবার জন্য মহানবী (সাঃ) আলী (রাঃ) কে রেখে গেছেন। হযরত কে হত্যা করতে আসা কুরাইশরা আলী (রাঃ) কে মহানবী (সাঃ) মনে করে সারারাত পাহারা দিয়ে কাটালো। ভোরে তারা হযরতের শয্যায় আলী (রাঃ) কে দেখে ক্রোধে ফেটে পরলো। তারা হযরত আলী (রাঃ) কে তরবারির খোঁচায় জাগিয়ে বললো, “এই মুহাম্মাদ কোথায়?”

নির্ভীক তরুন হযরত আলী (রাঃ) উত্তর দিলেন, “আমি সারারত ঘুমিয়েছি, আর তোমরা পাহারা দিয়েছো। সুতরাং তোমরাই সেটা ভালো জান। হযরত আলী (রাঃ) র উত্তর তাদের ক্রোধে ঘৃতাহূতি দিল। তারা তাঁকে শাসিয়ে বলল, “মুহাম্মাদের সন্ধান তাড়াতাড়ি বল, নতুবা তোর রক্ষা নেই।”

হযরত আলী (রাঃ) ও কঠোর কন্ঠে বললেন,“আমি কি তোমাদের চাকর যে তোমাদের শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য রেখেছি? কেন আমাকে বিরক্ত করছো ?” একটু থেমে আলী (রাঃ) কয়েকজনের নাম ধরে ডেকে বললেন, “তোমরা আমার সাথে এস। তোমাদের জন্য সুসংবাদ আছে।” কথা শেষ করে হযরত আলী (রাঃ) পথ ধরলেন।

যাদের নাম উল্লেখ করলেন তিনি, তারাও তাঁর পিছু-পিছু চললো। তাদের হাতে উলংগ তরবারি। তাদের মনে একটি ক্ষীণ আশা, হয়ত হযরত আলী (রাঃ) তাদেরকে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সন্ধান দিতে নিয়ে চলছেন।

হযরত আলী (রাঃ) এক গৃহদ্বারে গিয়ে দাড়ালেন। পিছনে ফিরে ওদের বললেন, “দাড়াও ,আমি নিয়ে আসছি।” বলে তিনি ভেতরে চলে গেলেন। পেছনের কয়েক জনের অন্তরে তখন ‘কি হবে না হবে’ অপরিসীম দোলা। তাদের মনে আশঙ্কাও । উলংগ তরবারি হাতে তারা পরিস্থিতি মুকাবিলার জন্য প্রস্তুত।

এমন সময় হযরত আলী (রাঃ) বেরিয়ে এলেন। তাঁর হাতে কয়েকটি ধন-রত্নের তোড়া। তিনি তাদের সামনে উপস্থিত হয়ে ধন-রত্নের তোড়া তাদের সামনে ধরে বললেন, “নাও তোমরা নাকি বহুদিন পূর্বে তোমাদের ধন-রত্নাদি হযরত মুহাম্মাদের (সাঃ) কাছে গচ্ছিত রেখেছিলে? ভেবেছিলে গচ্ছিত ধন আর পাবেনা। আজ তিনি তোমাদের অত্যাচারেই মক্কা ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তোমাদের গচ্ছিত সম্পদ তোমাদের হাতে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করে গেছেন। এই নাও তোমাদের গচ্ছিত ধন।”

এই কুরাইশরা যে এত শত্রুতার পর তাদের ধন-রত্ন ফিরে পাবে, সে কথা কল্পনাও করেনি। তাই তারা বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, “সত্যই কি আলা-আমীনের ন্যায় বিশ্বাসী ও সত্যবাদী লোক বিশ্বে আর নেই? তবে কি তিনি সত্য পথেই আছেন? আমরাই ভ্রান্ত পথে আছি? তাঁকে আঘাতের পর আঘাত দিয়ে পেয়েছি নিঃস্বার্থ প্রেমের আহবান, মানুষ হবার উপদেশ। আজ তাঁর প্রাণ নিতে এসে ছিলাম, প্রাণ নিতে না পেরে নিয়ে গেলাম গচ্ছিত ধন-রত্ন আহা ! মুহাম্মাদ (সাঃ) যদি আমাদের ধর্মদ্রোহী না হতেন, তাঁর পদানত দাস হয়ে থাকতে আমার কিছু মাত্র আপত্তি ছিল না।

-আমরা সেই সে জাতি – ১ম খন্ড

বিষয়: বিবিধ

১১৭৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

219547
০৯ মে ২০১৪ রাত ০৮:৪৪
আবু বকর সিদ্দিক লিখেছেন : ভালো লাগলো
219640
১০ মে ২০১৪ রাত ১২:৪১
বদরুল এ হারুন লিখেছেন : ধন্যবাদ।আবু বকর সিদ্দিক।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File