শাড়ির সাথে হিজাব মানে কি হরিনের গাড়ে গাধার মুখ !!
লিখেছেন লিখেছেন সেলাপতি ২৮ জুলাই, ২০১৬, ১০:১৩:৪১ সকাল
মধ্য-পঞ্চাশে এসে আমার চারপাশ আমার কাছে অচেনা, অজানা হয়ে যাচ্ছে। যখন আমার প্রিয় ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াই, তখন মনে হয় আমি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক নগরে পরিভ্রমণ করছি। আমার চারপাশের নারী, কিশোরী, এমনকি বালিকারাও উদ্ভট পোশাক পরে ঘুরছে।
আরে হিজাব দেখলেই গা এমন ভাবে জলে উঠে মনে চায় উহাদের সব খুলে রাস্তায় হাটে । হিজাব ঠেকাতে ঐ......বৃত্তি ছড়া আর কিছুই নাই তাদের
মধ্যপ্রচ্য তোমার আগেই সভ্য হয়েছে মধ্যপ্রচ্য যখন পোষাক পরা শিখেছে তখন তুমি গাছের বাকল পর । তারা যখন পাকা টয়লেট ব্যবহার করে তুমি তখন রাস্তার পাসেই হাগু কর।
একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। ষাট দশকের মধ্যভাগ থেকে সত্তর দশকের মধ্যভাগ যদি ধরি– আমার শৈশব ও কৈশোরকাল– আমার চারপাশে আমি কখনও কোনো হিজাব পরা নারী দেখিনি। হিজাব কী জানতাম না।
আমার দেখা নারীরা (তা-ও বয়স্ক) মাথার উপর শাড়ির আঁচল টেনে দিতেন। আমার নানির মা (সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁকে দেখার) শাড়ির উপর একটি পাতলা ওড়না জড়াতেন। বিবাহিত নারীরা মুরব্বি, বিশেষ করে, শ্বশুরবাড়ির কারও সামেন গেলে শুধু ঘোমটা টেনে নিতেন। অবিবাহিত মেয়েদের মাথা ঢাকার কোনো প্রশ্নই ছিল না। তখন বোরকা পরতেন কেউ কেউ। তবে তা স্বল্পশিক্ষিত, নিম্ন মধ্যবিত্ত আর বিত্তহীন পরিবারের মেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামাঞ্চলেই অবশ্য বোরকার প্রচলন বেশি ছিল। আমাদের বাড়িতে গ্রাম থেকে যেসব নারী অতিথি আসতেন তাদের কেউ কেউ বোরকা পরে এলেও, ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ানোর সময় সেটি ঘরেই রেখে যেতেন।
মোট কথা, তখন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবার ধর্মীয় আচার-আচরণ, পোশাক নিয়ে যতটা না ভাবিত ছিল, তার চেয়ে বেশি চিন্তা করতেন বাঙালি সংস্কৃতি আর শিক্ষা নিয়ে।
একজন মৌলভী এসে কোনোমতে কায়দা, সিপারা বা কোরান শরিফ পড়িয়ে যেতেন। স্কুলের ইসলামিয়াত একটা ক্লাস হত, তবে হুজুর স্যারদের বদন্যতার জোরে নম্বর পাওয়া যেত দু-একটা সুরা আর হাদিস কোনোমতে রপ্ত করে। কোনো কড়াকড়ি ছিল না।
Hijab - 555
ইসলাম ধর্ম সর্বশ্রেষ্ঠ, মুসলমান নারীদের পর্দা করা উচিৎ– এ ধরনের অযাচিত উপদেশ কোনোদিনই শুনিনি। বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি, আজকাল ঢাকার বড় বড় স্কুলের ক্লাস ফোর-ফাইভের ছাত্রীদেরও হিজাব পরার পরামর্শ দেওয়া হয়। খোদ ধর্ম শিক্ষকরাই এটা করছেন।
শুধু মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ নারীরা নয়, সে সময় নারী রাজনীতিবিদদেরও (হাতেগোনা যে কজন ছিলেন) ঘোমটা দিতে দেখা যায়নি। রওশন এরশাদ ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে যখন ঘোমটা দিয়ে জনসমক্ষে আসা শুরু করেন, তখন কোনো কোনো নারী রাজনীতিবিদকে মাথার ওপর ঘোমটা তুলে নিতে দেখি। এর আগে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে ঘোমটা ছাড়াই স্বামীর সঙ্গে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখেছি।
নব্বই দশকে বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর ওড়না গায়ে জড়ানোর যে প্রথা চালু করেন, তখন দেশের অনেক নারী তাঁকে অনুসরণ করলেও, তা বর্তমানে হিজাবের মতো মহামারী আকার ধারণ করেনি। কীভাবে যে হিজাব ধীরে ধীরে আমাদের সমাজে প্রবেশ করল, তা নিয়ে প্রকৃত অর্থে গবেষণা করা প্রয়োজন।
অবশ্যই হিজাব একটি বিজাতীয় সংস্কৃতি। কোনো একজন বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বলেছেন, ‘হিজাব বিজাতীয় হলে জিনস-টপসও বিজাতীয়।’ আমি বলব, হিজাব আমাদের মধ্যে যে বিভাজন ঘটাচ্ছে, জিনস-শার্ট তা করতে পারেনি। হিজাব বলে দিচ্ছে, আমি বাংলাদেশের মুসলিম নারী; হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান বন্ধুদের থেকে আমি পৃথক। বলা বাহুল্য, হিজাব যতটা না ধর্মীয় পোশাক তার চেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক।
যে পোশাক কোনোকালে আমাদের ছিলই না, তার এই ব্যাপ্তি শুধু ধর্মকে একটা রাজনীতিকরণের দিকে নিয়ে যাওয়া নয়, আমাদের সংস্কৃতি লুপ্ত করারও একটা সুপ্ত অভিপ্রায়, যা প্রায় সফলতা লাভ করছে।
আশির দশকের প্রথমার্থে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরুই, হিজাব-পরা একজন শিক্ষার্থীও চোখে পড়েনি। স্কুল আর কলেজের শিক্ষার্থীদের বেলায় তো এর প্রশ্নই উঠে না। আমার বড় মেয়ে যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন তার ক্লাসের এক মেয়েকে হিজাব পরা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। আর এখন তো মনে হয় আঁতুড় ঘর থেকেই নবজাতিকাকে পারলে হিজাব পরিয়ে বের করা হয়!
হিজাবের উদ্ভব গত বিএনপি-জামায়াত শাসিত সরকারের সময়। সে সময়, অনুমান করছি, বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে নারীদের অলিখিতভাবে হিজাব পরার জন্য বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছিল। সেটি আওয়ামী লীগের মতো প্রগতিশীল সরকারের আমলেও চলছে বলে প্রতীয়মান হয়।
তবে আমাদের একজন নারী রাজনীতিবিদ বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যে লাখ লাখ শ্রমিক আছেন, তাঁরাই তাদের পরিবারের নারীদের হিজাব পরতে বাধ্য বা অনুপ্রাণিত করছেন, যা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের কোণে কোণে। কিন্তুু এটাও ঠিক গ্রহণযোগ্য যুক্তি বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
বাধ্যবাধকতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা এ দুই কারণে নারীরা হিজাব পরছেন। পরিবারের চাপে মেয়েরা হিজাব পরছে। পরিবারও যত না ধর্মের কারণে তাদের মেয়েদের হিজাবি বানাচ্ছে, তার চেয়েও বেশি নিরাপত্তাজনিত কারণে। তবে প্রমাণিত হয়েছে এটাও যে, হিজাব মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। সোহাগী জাহান তনুর মৃত্যুই তার প্রমাণ।
ধর্মের কারণে হিজাব পরছে শতকরা কজন? আমার মতে, শতকরা ৩০ জনও নয়। একটি উদাহরণ দিই। এক ডাক্তারের চেম্বারে আমি আর আমার বোন বসে আছি। আমরা দুজন ছাড়া আরও ২০ থেকে ২৫ জন নারী ছিলেন সেখানে; তারা সবাই হিজাবি। মাগরিবের আজান দিল। পাশের কক্ষে মেয়েদের নামাজের জায়গা, ওজুর ভালো ব্যবস্থা। দেখা গেল, হিজাবহীন আমরা দুই বোনই নামাজ পড়লাম। একজন হিজাবি নারীও নামাজের ঘরে গেলেন না।
444
আর স্বতঃস্ফুর্তভাবে হিজাব পরার পিছনে ‘পিয়ার প্রেসার’ কাজ করছে প্রচণ্ডভাবে। মেয়ে স্কুলের কারণে হিজাব পরছে, সে কারণে মা-ও পরছে। মা পরছে দেখে খালা পরছে, খালা পরছে দেখে মামি পরছে। এক বান্ধবী পরছে, অন্য বান্ধবী অনুপ্রাণিত হচ্ছে। স্কুলের সামনে মায়েদের আড্ডায় এসে কোনো নারী হিজাবের বয়ান করল, হিজাব পরার প্রতিযোগিতা শুরু হলো। আর হিজাবকে ফ্যাশনবল করার জন্য বাজারে এসেছে কত একসেসরিজ।
নারীরা শাড়ি পরেও হিজাব ব্যবহার করছে। যারা আলখাল্লা পরছেন, আলখাল্লার নিচে তারা শাড়ি পরছেন না বিকিনি পরছেন, জানার সুযোগ নেই। কিন্তুু শাড়ির সঙ্গে হিজাব, অন্তত আমার কাছে সবচেয়ে বেমানান ও বিদঘুটে কম্বিনেশন বলে মনে হয়। এ যেন হরিণের ঘাড়ের উপর গাধার মুখ!
প্যান্টের উপর লেংটি পড়লেই আধুনিক হবা হাহা আরে আধা তুই প্যান্টের ভিতরেই কি পরেছিস তা কে জানে তলের বিকিনির দিকে এতো নজর কেন
একটি পোশাক শুধু একটি পোশাক নয়; এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক সবকিছই মানানসই হতে হয়। যখন রক্ষণশীল পরিবারের নারীরা হিজাব পরেন, তার কারণ বোঝা যায়, কিন্তুু যখন তথাকথিত প্রগতিশীল ব্যক্তির পরিবারের নারীরা হিজাব গ্রহণ করেন এবং তখন ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ নামে ওই ব্যক্তির নির্লিপ্ততা আমাকে ক্ষুব্ধ করে। তাঁর পরিবারের নারী যদি শর্টস-স্কাট পরতে চান, তখন যুক্তি দেবেন এ পোশাক আমাদের সমাজে যায় না। হিজাব কি আমাদের সংস্কৃতিতে যায়? বাঙালি সংস্কৃতির ধ্বজাধারী ব্যক্তিদের এ ভণ্ডামি হিজাব আরও উৎসাহিত করছে।
বিদেশে হিজাব-পরিহিতা বাঙালি নারীরা আমাকে আরও বেশি পীড়িত করে। কী ভুল প্রতিনিধিত্বটাই না হচ্ছে! একসময় বিদেশে প্রবাসীদের নিজ বাঙালি পরিচয় দেখানোর যে মানসিকতা ছিল আজ সে স্থান দখল করে নিয়েছে ধর্মীয় পরিচয় প্রদর্শন।
এরা বাঙ্গালী না কাঙ্গালী এরা হল সংস্কৃতির ফকির
ষাটের দশকে আমার যে আত্মীয়া অক্সফোর্ডে পিএইচডি করতে এসেছিলেন, ছবিতে তাকে দেখেছি শাড়ি পরে লেকে রো করতে। নব্বই দশকে বিবিসির ঊর্মি আপাকে দেখেছি লন্ডনে শাড়ি পরে অফিস করতে, তিনি তুষারপাতের মধ্যেও শাড়ি পরে লং ড্রাইভ করতেন স্বাচ্ছন্দে। নিনি আপাকে দেখি বুটের সঙ্গে শাড়ি পরে সাবওয়েতে পুরো নিউ ইয়র্ক চষে বেড়াতে। এখন বিদেশে শাড়ি খুব একটা দেখা যায় না, তা বাংলাদেশি হোক, ভারতীয় হোক বা শ্রীলঙ্কান। এখানে পশ্চিমা পোশাক গ্রহণ করাই ‘যস্মিন দেশে যথাচার’ হিসেবে গ্রহণ করা যায়, কিন্তুু হিজাব আর আলখাল্লা? বিদেশে এসে অন্য বিদেশি পোশাক গায়ে জড়ানো!
আমাদের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, বেগম সুফিয়া কামাল এবং সদ্যপ্রয়াত নূরজাহান বেগম কোনোদিনই হিজাব পরেননি। তাঁরা ছিলেন সমাজের নমস্য। নূরজাহান বেগমকে এক সাক্ষাৎকারে হিজাব নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বলেছিলেন, ‘ফ্যাশন! হিজাব এখন ফ্যাশন! দেখ একদিন এ ফ্যাশন চলে যাবে।’
একটি নিদ্রিষ্ট বিষয় নিয়ে পতিতা পন্থিদের গাজালা ভাব থেকেই যাবে ।
কিন্তু আমি উদ্বিগ্ন, সন্দিহান! সত্যি এ ফ্যাশন থেকে আমরা কোনোদিন রেহাই পাব কি না।
আমরা এখন সত্তর দশকের আফগানিস্তান বা ইরানের নারীদের স্বাভাবিক পোশাকের ছবি দেখে অবাক হয়ে যাই। হয়তো নিকট ভবিষ্যতে হিজাববহীন বাঙালি নারীর ছবি দেখে বিশ্বের অন্য প্রান্ত বা নিজভূমির আগামী প্রজন্মের কেউ ঠিক একইভাবে অবাক হয়ে যাবে।
এ দুঃস্বপ্ন থেকে পরিত্রাণ চাই। পরিত্রাণ চাই আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া এ পোশাক থেকে।
http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/37565
বিষয়: বিবিধ
২৮২৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যে পোশাক পড়ে না বা অর্ধনগ্ন থাকে তাকে বরং পোশাক পড়ার নসিহত করুন।
উনার ইচ্ছা করলে সব কাপর খুলে হাটুন!!
লিংক থেকে লেখাটা পড়ে এলাম, মন্তব্যকারীরা ঐ মহিলাকে এক্কেবারে "ধুয়ে" দিয়েছে!!
আহারে বেচারি!!!!
আসলেই আমাদের দেশে ( শুধু বাংলাদেশেরই বা বাঙ্গালী মুসলমানেরাই না )ম্যাক্সিমাম মেয়েই বোরকা বা হিজাব করে ফ্যাশনের জন্য ।
https://www.google.de/search?q=hijab&source;
তবে উনি বাঙ্গালী নিয়ে যে এত কাহিনী করলেন - তার কাছে প্রশ্ন করতে চাই যে - ৫২ তে বাংলা ভাষার জন্য কোন ধর্মের লোকেরা প্রাণ দিয়েছিল ?
আর আমার পরিচয় (শুধু আমার নয় ) হল আমি প্রথমে মুসলমান কি না ? তারপর অন্য কিছু ।
মুসলমান হিসেবে ঝুমাপুও নিশ্চয়ই পরকালে বিশ্বাস করেন । হাশরের ময়দানে আল্লাহ কি উনাকে বাঙ্গালী হিসেবে ট্রিট করবেন , কিভাবে বাঙ্গালী সংষ্কৃতি মেইনটেইন করেছেন - সেটা জানতে চাইবেন ?
নাকি একজন মুসলমান হয়ে সে আল্লাহর বিধান কিভাবে পালন করেছে সেটা জানতে চাইবে ?
একজন মুসলমান হিসেবে আমার ধর্ম ইসলাম আমার কাছে সবার আগে । আমার সংষ্কৃতি যদি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবে সেটা অবশ্যই পরিতাজ্য ।
কারণ পরকালে এই শিরকীয়/কুফরীয় সংষ্কৃতি পালনের শাস্তি থেকে এইসব চেতনাবাজেরা আমাকে আল্লাহর মাইর থেকে বাঁচাতে আসবে না । নিজেরাও থাকবে মহা ফাঁপড়ে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন