বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও চিন্তার সংকট: একটি সমূহ পর্যালোনা
লিখেছেন লিখেছেন বিনীত তারেকুল ইসলাম ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:১৮:৫৮ দুপুর
আমি বাংলাদেশের প্রচলিত গতানুগতিক বিবদমান কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি যেমন আস্থাহীন, তেমনি সেগুলোর অকার্যকর ও বিরাজনীতিকরণ ভূমিকার ফলে সৃষ্ট দ্বি-মেরুকেন্দ্রিক উগ্র জাতীয়তাবাদী জিগিরপ্রসূত উভয় ধারার নোংরা রাজনৈতিক প্রবঞ্চনার প্রবল বিরোধীও। এমনকি প্রকারান্তরে ছদ্মবেশী পেটিবুর্জোয়া সংস্কৃতির ধারক বাহক অধিকাংশ সো-কল্ড আদর্শচ্যুত বামপন্থী-সমাজতন্ত্রীদের রাজনীতির প্রতিও আমি যারপরনাই বীতশ্রদ্ধ ও বিরক্ত। এছাড়া এদেশের সেকুলার রাজনীতির কথা যদি বলি, ব্যক্তি সেকুলার হতে পারে তাতে আমার আপত্তি বা সমস্যা নেই। এমনকি নৈঃরাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সেকুলারিজম বা এথিজম নিয়েও আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু সেকুলারিজমের দিক থেকে ফ্যাসাদ বা সমস্যার কারণটা বস্তুত তার রাষ্ট্রনৈতিক বা রাজনৈতিক রূপ। এক্ষেত্রে সেকুলাররা প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে দাঁড় করাতে গিয়ে খোদ রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই একটি একক নতুন ধর্মতন্ত্র বা ধর্মতত্ত্বে পরিণত করে, সেটাকেও রিলিজিয়ন বা ধর্মের মতোই মহা পবিত্র জ্ঞান করে এর রক্ষণাবেক্ষণেও তারা প্রকারান্তরে যথেষ্ট মৌলবাদী হয়ে পড়ে। তখন তথাকথিত প্রগতিশীলতার বাতাবরণে বাই ডিফল্ট জন্ম হয় এক নয়া প্রতিক্রিয়াশীল ফ্যানাটিসিজম ও ফান্ডামেন্টালিজমের। স্বয়ং আধুনিক রাষ্ট্রই তখন এক চরম কর্তৃত্ববাদী খলিফায় আবির্ভূত হয়, ফলত সময়ান্তরে আধুনিক শোষণ ও জুলুমতন্ত্র হয়ে পড়ে তার অবলম্বন ও হাতিয়ার। বেলা শেষে আধুনিক জালিম পরিচয়ে তার আবির্ভাব। আর পৃথিবীতে সেকুলার রাজনীতির ইতিহাস কিন্তু তা-ই বলে। বাংলাদেশের প্রচলিত সেকুলার রাজনীতিও তার বিপ্রতীপ ধর্মব্যবসায়ীদের মতোই কর্পোরেট মানসিকতায় ঊর্দ্বাহু। উভয় মেরুর রাজনৈতিক তৎপরতা যতটা না সেকুলারিজমের বা ধর্মীয় পরিবেশের অনুকূল, বরং তার চেয়েও বেশি পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়ন এবং বহুজাতিক কোম্পানি ও বহুপক্ষীয় কর্পোরেশনের স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। মূলত দেশের সিভিল সোসাইটিই হচ্ছে সেকুলার রাজনীতির নিয়ামক। তাই এটা তাদের সুবিধাবাদী রাজনীতি বা স্ট্যান্টবাজির নামান্তর বৈ কিছু নয়।
অন্যদিকে, যারা অবান্তর আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্বে তর্কে-বিতর্কে লিপ্ত, কিংবা অমুক দল তমুক দল, ডান-বাম, মস্কোপন্থী-দক্ষিণপন্থী ইত্যাকার মতবিভাজন ও রেষারেষিতে ব্যাপৃত, তাদের সবার প্রতি এই আহ্বান: আসুন, সকল প্রকার বিভেদ ও বিদ্বেষপ্রসূত Sophistry/Sophism পরিহার করে আমরা সবাই দেশ ও গণমানুষের পক্ষে কথা বলি ও কাজ করি। সমকালীন সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ফ্যাসিবাদ, দলীয়করণ ও অবাধ পুঁজিতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হই ও এককাতারে রুখে দাঁড়াই। আজকে এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে হলে দল-মত নির্বিশেষে একটি ঐক্যবদ্ধ ও একক অখন্ড রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের জাতীয় জনসমাজের পুনর্গঠন ও পুনঃনির্মাণ একটি অনিবার্য ও অপরিহার্য জাতীয় কর্তব্য– যা এই রাষ্ট্রের নাগরিক ও মানবিক অধিকারসচেতন রাজনৈতিক অধিবাসী হিসেবে আমাদের এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের চিন্তা-ভাবনা-কর্মে ইতিবাচক পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন আনা সময়ের অতি মূল্যবান দাবি। সবার আগে যাবতীয় রকমফের গোঁড়ামি, প্রেজুডিস ও মনের সংকীর্ণতা পরিহার করা আমাদের জন্য অতীব জরুরি। উদারচেতা, সহনশীল ও পরমতসহিষ্ণু হওয়ার কোনো বিকল্প নেই, এতেই চূড়ান্ত শান্তি নিহিত। একইসাথে সাম্রাজ্যবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী ও আধিপত্যবাদী পরাশক্তিসমূহের দাসানুদাস ও নিশানবরদার মিডিয়া মোড়লদের প্রপাগান্ডা ও অপতৎপরতা প্রত্যাখ্যান করে এবং জিঘাংসু বশংবদ রাষ্ট্রশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এই চরম ক্রান্তিকালে বুক ফুলিয়ে দুটো হক কথা বলার অধিকার রক্ষা এবং এর পক্ষে সাহস জাগানো ও যুগানোর প্রয়াসে ব্রতী হওয়াও আমাদের জন্য সম্যক জরুরি। সম্প্রতি আমেরিকার নব নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতির উদগিরণ ঘটিয়েছে মার্কিন সমাজে, সেটা আমেরিকার কয়েক শ’ বছরের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা তাদের ঐতিহ্যবাহী উদারপন্থী মূল্যবোধ ও সমৃদ্ধ সভ্যতাকে কালিমাযুক্ত করেছে। ট্রাম্পের উসকানিমূলক বিভক্তি ও বিদ্বেষের রাজনৈতিক মেরুকরণ আজ আমেরিকান জনগণের সুদীর্ঘ ঐক্যভিত্তিক সমাজব্যবস্থার ভিত্তি ভেঙে দেওয়ার উপক্রম করে তুলেছে। প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ট্রাম্পের অনাকাঙ্ক্ষিত বিজয়ের প্রেক্ষাপটে আমেরিকার ২৫’টির মতো রাজ্যে এখন ট্রাম্পবিরোধীরা ‘you are not our President’-সম্বলিত প্লেকার্ড হাতে একযোগে তুমুল বিক্ষোভ, আন্দোলন ও অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে এর জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে। এরপর উগ্র কট্টর ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী ট্রাম্প-সমর্থকরাও হয়ত খুবশীঘ্রই পাল্টা ঠেকাও আন্দোলনে নামবে। উভয়পক্ষ মুখোমুখি হলে শেষাবধি কী যে ঘটবে তা আল্লাহ মালুম। এসব অনাসৃষ্টি ও দুরাচার শুধুমাত্র ট্রাম্পের উগ্র জাতীয়তাবাদী নীতি ও অসহিষ্ণু আচরণের ফলেই সংঘটিত হচ্ছে। সুতরাং আমাদেরকে এখনই সতর্ক হতে হবে। আমাদের দেশ ও দেশের মানুষ যেন সবসময় ইউনাইটেড থাকে, সেই দিকে নজর রাখা জরুরি। ‘যত মত তত পথ’। উদারতান্ত্রিক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে মতান্তর ও মতভিন্নতা থাকবেই, তদুপরি একে অপরের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীলতা ও সহিষ্ণুতা যেন সবসময় বজায় থাকে।
এছাড়া বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক শূন্যতা ও দেউলিয়াত্বের জায়গা থেকে আমরা উত্তরণের কোনো না কোনো পথ চাইলে অবশ্যই খুঁজে পেতে পারি। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্যের বৃত্ত ভেঙে আমরা এখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনধারার ‘ভাগ করো শাসন করো’ নীতিতে গণতান্ত্রিক লেবাসে আধুনিক নব্য ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছি এইদেশে; সুতরাং এর পরিণতিতে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে প্রতিষ্ঠিত ও টিকে থাকার সুযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আজকের এই পরাক্রম বাস্তব সত্য বা পরিস্থিতি অস্বীকারের কোনো অবকাশ নেই।
যদি আমরা জাতীয় ঐক্য পরিগঠনকল্পে বিদ্যমান জাতিগত বিভাজিত মেরুকরণ দূরীকরণে অবিলম্বে কোনো সম্মিলিত রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে আমাদের বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত সকল রাজনৈতিক প্রয়াস ও তৎপরতা বিশ বাঁও জলে অচিরেই পতিত হবে। তাই জাতীয় পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে আন্তঃসংলাপ, সমঝোতা, ঐক্য ও সহনশীলতা সৃষ্টির সর্বব্যাপী কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ সর্বোচ্চ করণীয় বলে আমরা মনে করি। আর এসবের পুরো দায়-দায়িত্ব আমাদের রাজনীতিকদের। এর বাইরে বিদেশি পরাশক্তিগুলোও চাইলে পারে বিশেষ প্রভাবক ভূমিকা পালন করতে, কিন্তু নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করা, নাকি পরাশক্তিদের সহায়তায় সেটা হোক? কোনটা বেশি সম্মানজনক- সেটা আমাদের রাজনীতিকরাই শুধু বুঝলে হয়। এছাড়া এর বাইরে বিপ্লবী রাজনীতির চিন্তা ও তৎপরতার কথা যদি বলতে হয়, তাহলে আমি বলবো, আদতে প্রচলিত ভেকধারী নির্বাচনবাদী গণতন্ত্র দিয়ে কোনো কাজের কাজ হবে না শেষতক। বিপ্লবী রাজনীতির শর্তানুযায়ী এই জনপদের অধিবাসী জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক আকাক্সক্ষার প্রতিফলনশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং প্রধানত অখণ্ড রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের জাতীয় চরিত্র গঠন তথা গণশক্তির বিকাশের পথকে সুগম করার সাংবিধানিক প্রয়োগবাদী রাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন জরুরি। এর বাইরে আর কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করি না। তবে এই কাজ অ্যাক্টিভিস্ট ও চিন্তাশীল তরুণপ্রজন্মের ঐক্যভিত্তিক গণমুখী রাজনৈতিক লড়াই ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। বিপ্লবী রাজনীতির কথা এখানে বললাম। এর কোনো স্থিরকৃত বা নির্দিষ্ট সংজ্ঞায়নকে আমি অবান্তর মনে করি। কেননা আমার মতে, বিপ্লবী রাজনীতির কোনো জাত নেই; কিন্তু তার তো একটা বিষয় আছে, কী সেটা? দেশকালভেদে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের বিভিন্নতায় বিপ্লবী রাজনীতির ধরন ও কৌশল অভিন্ন নয়, কিন্তু তার মধ্যে একটা রেডিক্যাল ভাব ও লড়াকু বৈশিষ্ট্য থাকবে। সেই রেডিক্যাল ভাব ও লড়াকু বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তার নিজস্ব কৌশল ও ধরনের প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় তার সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ণায়িত হয়। এখানে বিপ্লবী রাজনীতির ধরন বা কৌশল দেশকালভেদে ও পরিস্থিতি বিবেচনায় হতে পারে সশস্ত্র পন্থা, কিংবা হতে পারে শান্তিপ্রিয় বা রক্তস্নাত গণ-আন্দোলন বা অভুত্থান। সবচে বড় কথা হলো, বিপ্লবী রাজনীতিকে গণমুখী তথা পপুলার আপরাইজিং হতে হয়, নাহলে তার বৈপ্লবিক ভূমিকার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এজন্যই বললাম, দেশকালভেদে পরিস্থিতি অনুযায়ী স্থানিক গণচেতনার আলোকে বিপ্লবী রাজনীতিকে তার ধরন ও কৌশল নির্ধারণ করতে হয়। এক কথায়, প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সংস্কার, প্রথাসিদ্ধতা, রীতিনীতি ও শাসনকাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন ও গুণগত রূপান্তর ঘটানোই হলো বিপ্লবী রাজনীতির মূল সাধনা।
যাই হোক, বাংলাদেশে ইসলাম-ভাবাপন্ন আমজনতার পলিটিক্যাল ভাবনার জায়গায় গোষ্ঠীগত ফেনোমেনার বাইরে আর কোনো জনসম্মিলিত একক চিন্তা বা প্রপঞ্চ এখনো হাজির হয়নি। গতানুগতিক বদ্ধমূল গণ্ডিতেই এখনো পড়ে আছে। আম পাবলিকের এহেন বদ্ধমূল ধ্যানধারণা দিয়ে তো আসলে সমাজ আগায় না কিম্বা সামাজিক চিন্তাকাঠামোর উন্নয়নও অসম্ভব। আর সমাজ না আগালে রাষ্ট্রই বা কীভাবে আগাবে। তাছাড়া এদেশে বুদ্ধিজীবিতার যা অষ্টরম্ভা দশা, দলবৃত্তি ও দালালির বাইরে এখনো পাবলিকের আস্থাভাজন কোনো বুদ্ধিজীবিতা গড়ে ওঠেনি, যদিও প্রচেষ্টা লক্ষণীয় কিন্তু সময়সাপেক্ষ। তথাকথিত সুশীল সমাজ তো আরো আগেই চরিত্রহীন হয়ে পড়েছে। এদের বুদ্ধিবৃত্তিক চরিত্র ও চিন্তার পরিশুদ্ধি অনিবার্য, এক্ষেত্রে তারা যত তাড়াতাড়ি মনোযোগী হবেন ততই মঙ্গল।
আর ইসলামবিষয়ক আলাপে বিশেষত এখানকার সো-কল্ড সেকুলারদের টেবিলে মৌলবাদ, যুদ্ধাপরাধ, জামাতপ্রসঙ্গ ও জঙ্গিবাদ ইত্যাদির বাইরে ইসলামকে বুঝার আর কোনো প্রতিপাদ্য আমলে নেওয়া হয়না। ফলত তাদের একরৈখিক ও বর্ণবাদী সঙ্কীর্ণমনা দৃষ্টিভঙ্গিসঞ্জাত আলাপ-আলোচনার একটা নেতিবাচক প্রভাব জনপ্রিয় মিডিয়াসমূহের মারফত আম পাবলিকের ধ্যান-ধারণায় স্থিত হয়। তাই পাবলিক সেটাই বিশ্বাস করে এবং সেইরূপে তাদের পলিটিক্যাল ভাবনায় ইসলামের বুঝ ঐ গোষ্ঠীগত কাঠামোবদ্ধ ঘেরাটোপেই পতিত হয়।
ইসলামপন্থী হতে হলে কি জামাতি বা হেফাজতি হতে হবে? জামাত বা হেফাজত মানেই ইসলাম- এমন ফ্যালাসিও অস্বস্তিকর। আম পাবলিকের চিন্তা ও চেতনায় বিশেষ গোষ্ঠীগত বা দলবৃত্তীয় চিন্তাকাঠামোর অধীনে ইসলামকে ভাবার বিপদ উপলব্ধি হওয়া একান্ত জরুরি, যতদ্রুত সম্ভব। বস্তুতপক্ষে জামাতি ও হেফাজতি ডগমার বাইরে এবং জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ প্রসঙ্গের বাইরে সোশিও-পলিটিক্যাল ভাবনায় ইসলাম নিজেই আসলে কী এবং সমাজ ও রাষ্ট্রভাবনায় তার নিজস্ব প্রস্তাবনা কী- সেই বিষয়ক নানান ডিসকোর্স হাজির করা দরকার, যদি আমরা বিদ্যমান এই স্যুডো ইসলাম-বুঝকে প্রশ্ন করতে চাই এবং একইসাথে সেকুলারদের ইসলামবিষয়ক স্যুডো-ভাবনাচিন্তাকে ঝেড়ে ফেলতে চাই।
চিন্তা, ধর্ম, সংবিধান, রাজনীতি ও রাষ্ট্র– সবই হলো মানুষের কল্যাণের জন্য, মানবতার জন্য এবং অবশ্যই স্বদেশের ও বিশ্বশান্তির পরম স্বার্থে। মূলত মানুষের, মানবতার ও মানবাধিকারের ইস্যুবহির্ভূত বেহুদা ধর্মের নামে কিম্বা ব্যক্তিপূজার আদলে কায়েমী স্বার্থের রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবিতা- এসব এখন আর পাবলিক খায় না। এদেশের গতানুগতিক প্রথাগত নোংরা রাজনৈতিকতা ও বুদ্ধিজীবিতা এখন খোদ সর্বস্তরের গণমানুষ কর্তৃক প্রকাশ্যেই প্রত্যাখ্যাত। সুতরাং আমাদের চিন্তা, বুদ্ধি ও কর্মের অনিবার্য পুনঃনিরীক্ষণ ও তদনুযায়ী পুনর্বিন্যাসপূর্বক এই মুহূর্তে রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবিতার চর্চা উভয়ের উদ্দেশ ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত রাজনৈতিক গণক্ষমতা, গণঐক্য ও গণশক্তির উদ্বোধন ঘটানো। জনকল্যাণবান্ধব চিন্তাশীলতা-বুদ্ধিজীবিতার উন্নয়নে ও উত্তরোত্তর প্রসারণে মনোসংযোগী হলেই কেবল আমরা বর্তমান সময়ের মূল জাতীয় সংকট কাটিয়ে ওঠার পথ সুগম করতে পারবো বলে আমার ধারণা, অন্যথায় বিভক্তি-বিদ্বেষ-কোপাকুপি-হামাহামির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা সুদূর পরাহত হয়েই থাকবে।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন