লেখকের কর্তব্য, শিল্পসেচতনতা ও ভাষার পুষ্টি সাধন
লিখেছেন লিখেছেন বিনীত তারেকুল ইসলাম ২২ জুলাই, ২০১৬, ১১:৫৩:৫৯ রাত
লেখকদের চিন্তা ও শিল্পবোধ যত প্রগতিশীল হয়, ভাষাও ততটুকু প্রগতিশীল হয়। চিন্তা ও শিল্পচর্চার সাধনা ব্যতীত ভাষাকে শিল্পিত ও পরিশীলিত করা সম্ভব নয়। চিন্তা ও শিল্পরুচির অভিপ্রকাশের ভেতর দিয়ে এবং একইসাথে অবশ্যম্ভাবীরূপে দায়িত্বশীল লেখকদের সাধনাসঞ্জাত শব্দ ও বাক্যখেলা, সৃজনশীলতা, অভিজাতপ্রবণতা, শিল্পসচেতনতা, শিল্পগুণ ও ভাবমাধুর্য ইত্যাদি একটি ভাষার উচ্চ ও উন্নত শিল্পকাঠামো নির্মাণে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। তাই বিষয়টি এমন নয় যে, ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পরিপুষ্ট ও উন্নত হয়। এজন্য ভাষার সবচে বড় চাহিদা হচ্ছে, শিল্পসম্ভার ও ভাবদগ্ধতা। শিল্পসম্ভার ও ভাবদগ্ধতা হচ্ছে ভাষার আভিজাত্য গঠনের শ্রেয় উপাদান। আর এগুলোর যোগান দেয় লেখকগণ। তাই বিশেষত লেখালেখির মহলে লেখকদের দায়িত্ব অপরিসীম। তারা যে শুধু লেখার জন্যই লিখবে তা নয়, পাশাপাশি ভাষার উত্তম নির্মাণকাজ ও এর শ্রী বৃদ্ধির জন্য তারা উত্তরোত্তর প্রচেষ্টা ও সাধনায় ব্রতী হবেন- এটাও সম্যক কাঙ্ক্ষিত। এই বিষয়টি একজন লেখকের জন্য প্রণিধানযোগ্য বটে।
‘ভাষা’ একজন লেখকের কাছে ভাবপ্রকাশের মাধ্যম বাদেও বিশেষভাবে একটা শিল্প। একজন লেখকের উচ্চ শিল্পিত ও পরিশীলিত ভাষা তার পাঠকদের শিল্পরুচি ঋদ্ধ করে তোলে। এজন্য লেখক মাত্রেরই কর্তব্য হলো, তার চিন্তাভাবনা প্রকাশের সাথে সাথে তার নিজের ভাষাকে মননশীলতায় ও শিল্পবোধে ক্রমাগত উন্নীত করা। এজন্য তাকে সমগ্র বিশ্বসাহিত্যের মহান মহান সৃষ্টিকর্মগুলো পাঠপূর্বক সেসবের শিল্পজাত আকরসমূহ যথাসম্ভব অবধারণের প্রয়াস নিতে হবে। অন্যথায় একজন লেখক কখনোই সমৃদ্ধ হতে পারবে না। নিজে সমৃদ্ধ না হলে অন্যকে সমৃদ্ধ করা যায়না। তাই বিশ্বসাহিত্য পাঠে তার একাগ্র নিষ্ঠা ও সচেতনতা সর্বাগ্রে শিরোধার্য। শুধু পাঠ করাই সমাপ্তি নয়, একইসাথে বুদ্ধির প্রখরতা, বিচারক্ষমতা, বিশ্লেষণী চিন্তাশক্তি ও সমৃদ্ধ বিষয়সমূহের ধারণশক্তি ইত্যাদির বিদ্যমানতাও অনস্বীকার্য।
সাধারণভাবে বললে, ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, সেটা অবশ্য সাধারণ জনতার তরফে; তবে একজন লেখকের ভাবপ্রকাশ তদ্রুপ নয়। এক্ষেত্রে ভাষার পুষ্টি ও বিকাশ সাধনে তার অনেক কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে। একজন লেখককে তার ভাষার ব্যাপারে সবসময় ব্যতিক্রমধর্মী শব্দমালা, গঠনভঙ্গি ও প্রগতিশীলতা অর্জনে প্রয়াসমান থাকতে হয়। চুনসুরকি ও রঙ লেপন করে যেভাবে একটি সদ্য নির্মিত ভবনের শ্রী বৃদ্ধি করা হয়, ঠিক সেভাবে ভাষার শ্রী বৃদ্ধি ও কারুকাজের জন্য শিল্পসম্ভার ও ভাবদগ্ধতা অপরিহার্য। মোদ্দা কথায়, লালিত শিল্পসম্ভার ও ভাবদগ্ধতার আঞ্জাম দেবে লেখকগণ। তাই এ কথা বলা সঙ্গত যে, লেখকরা হচ্ছেন ভাষার স্থপতি। ভাষার শিল্পসৌধ তো তারাই নির্মাণ করেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৫২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন