সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাষ্ট্রের তামাশা ও উদাসীনতাই মূলত দায়ী : হেফাজতে ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন বিনীত তারেকুল ইসলাম ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:৩০:৪২ রাত
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ
কেন্দ্রীয় কার্যালয়, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
তারিখ : ২১.১২.২০১৪
(নয়া দিগন্ত)শেলা নদীতে দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া ফার্নেল অয়েলবাহী ট্যাঙ্কার থেকে তেল ছড়িয়ে গিয়ে বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপর্যয়ের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ আজ এক যৌথ বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন। বিপর্যয় রোধে সরকারের উদাসীনতায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং ঐ এলাকার ওলামায়ে কেরাম ও সকল হেফাজত কর্মীকে বিপর্যয় রোধের জন্য স্থানীয়ভাবে যথাযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সকল ইতিবাচক উদ্যোগে আন্তরিকভাবে শরিক হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়া সুন্দরবন এলাকার বিপদগ্রস্ত সকল প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক জৌলুস রক্ষায় আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
হেফাজতের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, দেশে অনাচার-সন্ত্রাস-খুন-ব্যভিচার-পাপাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অত্যধিক বিস্তার এবং মানুষ কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক না চলে আখেরাতের কথা ভুলে বস্তুবাদী চেতনায় গা ভাসিয়ে দেওয়ার কারণে চারিদিকে দুর্ভোগ ও গজবের আলামত দেখা যাচ্ছে। যতদিন সমাজ ও রাষ্ট্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (স.) দেখানো সুপথে পরিচালিত না হবে, ততদিন মানুষ আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে নানা ধরনের গজব ও দুর্যোগে নিপতিত হবে। আজকে এদেশের শাসক ও জনগণের ইসলামের বিধিনিষেধ না মেনে চলা এবং তাদের সীমাহীন ভুলের কারণেই সুন্দরবনের এই পরিবেশ বিপর্যয় সংঘটিত হয়েছে।
আল্লামা আহমদ শফী বলেন, শেলা নদীতে একটি দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া ফার্নেল অয়েলবাহী ট্যাঙ্কার থেকে বিষাক্ত তেল ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে স্মরণকালের ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। দায়দায়িত্বহীনভাবে আল্লাহর সৃষ্টি সকল প্রাণ ও প্রাণীর জীবনের জন্য বিষাক্ত এই তেল বহনকারী ত্রুটিযুক্ত জাহাজ বনের ভিতর দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে চলাচল করানো হচ্ছিল। কেবল মুনাফা লাভ ও ক্ষমতার লোভেই এরা প্ররোচিত হয়েছে। আল্লাহর নেয়ামতকে অবজ্ঞা করার এই কান্ড দেখে আমরা শঙ্কিত এবং মর্মাহত। এই ছড়িয়ে পড়া তেল নদী ও উপকূলীয় এলাকাকে দূষিত করেছে এবং আল্লার সৃষ্টি সকল প্রাণ ও প্রাণীর জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে। সুন্দরবন অঞ্চলের সামগ্রিক প্রাণবৈচিত্র্যের মরণাপন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, সেখানকার জেলেসহ স্থানীয় অন্যান্য বাসিন্দাদের জীবিকার পথও রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিরল জাতের বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মৃত্যু ছাড়াও সামনে আরো ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। যার আগাম অনুমান ও মূল্যায়নও রীতিমতো অসম্ভব। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত জলজ প্রাণীদের করুণ মৃত্যুর খবরও আমাদেরকে ব্যথিত করেছে।
আল্লামা আহমদ শফী আরো বলেন, প্রাণ-পরিবেশ ও প্রকৃতি মহান আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি। প্রতিটি প্রাণের জন্য উপযুক্ত বসতি ও সকল প্রাণের হেফাজত নিশ্চিত করেই আল্লাহ দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন- যা মানবজাতির জন্য বিস্ময়কর নেয়ামত। তিনি বলেন, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের হেফাজত করাই মুমিন মুসলমানদের কর্তব্য। পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস করা ইসলামবিরোধী কাজ। সকল প্রাণের ও মানুষের রিজিকের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট প্রাণ-পরিবেশ ও প্রকৃতির হেফাজত নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সকলের বিশেষত মুসলিমদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
হেফাজতের মহাসচিব হাফেজ আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, নফসের তাড়নায় লোভী মানুষেরা দুনিয়া ধ্বংস করার যে-সভ্যতা জারি রেখেছে, তার কারণেই এই ভয়াবহ দুর্যোগ। সুন্দরবন বিপর্যয়ের ঘটনা এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও আলোড়িত হচ্ছে; কেননা আমাদের সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি গর্বিত অংশীদার। অথচ সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা বা পরিকল্পনা নেই। এক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় চেতনাও দুর্বল। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
তিনি বলেন, এহেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে সঠিক করণীয় ভূমিকা অনুপস্থিত। দুর্ঘটনায় ট্যাঙ্কার ডুবে যাওয়ার পরপরই যদি তেল না ছড়ানোর ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে প্রাণ ও পরিবেশ বিপর্যয় অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেত। কিন্তু অতীতের মতো প্রত্যেকটি দুর্ঘটনায় সরকারের দায়িত্বহীনতা এবং উদাসীনতা প্রকাশের ফলে সুন্দরবনের বিপর্যয় রোধের ক্ষেত্রেও দ্রুত সময়োচিত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ‘সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না’ দাবি করে নৌ-মন্ত্রীর দেয়া বিতর্কিত মন্তব্যে আমরা বিস্মিত এবং ক্ষিপ্ত হয়েছি। সুন্দরবনের মর্মান্তিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাষ্ট্রের তামাশা ও উদাসীনতাই মূলত দায়ী বলে আমরা মনে করি।
মহাসচিব আরো বলেন, মানুষ কতটা নির্বোধ ও উদাসীন হলে পরিবেশবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে পারে- যার প্রমাণ সুন্দরবন-বিপর্যয়। আজকে সারা দুনিয়া যেখানে পরিবেশ রক্ষায় একাট্টা, সেখানে আমাদের মহা মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবনের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে আমরা যারপরনাই উদাসীন। আজ সুন্দরবনে এই ধরনের পরিবেশবিরোধী ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেও আমরা অপারগতা দেখাচ্ছি। আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক নেয়ামত- শুধু যথেচ্ছাচার ভোগ ও মুনাফার জন্য নয়। ইসলামে এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে দিক-নির্দেশনা রয়েছে। মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ে যদি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আল্লাহর ভয়াবহ গজব থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই মুসলিমদের, এমনকি অমুসলিম বা অন্যান্য সকলের করণীয় ও কর্তব্য পালন করা একান্ত জরুরি। এ ব্যাপারে সময় থাকতেই আমাদেরকে অবশ্যই হুঁশিয়ার হতে হবে। ধর্ম-বর্ণ-রাষ্ট্র-নাগরিক নির্বিশেষে সবাইকে ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদেরকে আল্লাহর দেয়া নেয়ামত সুন্দরবনকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একসাথে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২২১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ
সংগঠন দূর্বল ও ভীরু হলে যা হয়
যাহোক ,শুধু অনলাইনে সীমাবদ্ধ না থেকে মাঠেও নামতে হবে ।ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন