সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ও সম্প্রসারণবাদী ভারতের মূল লক্ষ্য
লিখেছেন লিখেছেন বিনীত তারেকুল ইসলাম ২৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:৩১:৪২ বিকাল
আবারো সীমান্তে বিএসএফে'র প্রাণঘাতী বুলেটে বিনা বিচারে খুন হলো আরো এক বাংলাদেশি। ফেলানীর কথা আমরা কখনোই ভুলতে পারব না। আমাদের অগোচরে আরো শত শত ফেলানী- ভারতীয় হানাদার বাহিনীর (বিএসএফ) হিংস্র ও অন্যায্য হামলায় নিহত, আহত এবং নিরীহ অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গু, হতদরিদ্র হচ্ছেন। এর পেছনের মূল কারণ কী? এভাবে ফেলানীদের তথা বাংলাদেশিদের সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে ভারত কী বার্তা দিতে চায় বাংলাদেশিদের? এখন এটা বোঝা বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ফেলানী হত্যাকাণ্ডের সুবিচারের দাবিতে, সীমান্তে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং ফেলানী হত্যার বিচারের নামে তামাশা ও প্রহসনের বিরুদ্ধে সমগ্র বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেছিল। ভারত পৃষ্ঠপোষিত আওয়ামী দালালদের নতজানুতার কারণে তাতে বিশেষ কোনো ফল হয়নি। এখন নরেন্দ্র মোদির সরকারও যদি বাংলাদেশিদের ক্ষোভ ও অন্তদার্হ অনুধাবন করে তাদের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তনীতি না পাল্টায়- তাহলে সেটা খুবই দু:খজনক হবে।
তবে ভারতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এভাবে সহস্র ফেলানীদের সীমান্তে বর্বরভাবে খুন করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ওপর দখলদারি ও আধিপত্যবাদী প্রভাব বিস্তার করতে চায় ভারত। বাংলাদেশিদের আতঙ্কিত ও ভীতির মধ্যে রাখতে চায় ভারত; যাতে করে গায়ের জোরে বাংলাদেশের বুক চিরে নদ-নদী, খালবিল বন্ধ করে দিয়ে রাস্তা বানানোর ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনার বিরুদ্ধে যেন বাংলাদেশিরা প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। করিডোর-টেলিকরিডোর, বিনা ফি‘তে ট্রানজিট প্রদান, মংলা বন্দর ব্যবহার ইত্যাদি ভারতের অন্যায় আবদার পূরণের পথে যেন বাংলাদেশিরা ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস না পায়। এছাড়া সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর বিএসএফ’র নির্মম সিরিজ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য হলো, নখদন্তহীন বিডিআর (বর্তমান পরিবর্তিত নাম বিজিবি) বাহিনীর নতমুখিতা যাচাই করা। শেখহাসিনা বিডিআরকে বিলুপ্ত করার পর বর্তমান ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার বিজিবিকে টেস্ট করা।
আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে ভারত এতদিনে নিজেকে যোগ্য করে তুলেছে। সেই দাম্ভিকতা ও আত্মম্ভরিতার দরুন ভারতের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের উদ্ভব ঘটেছে। তাদের সাম্রাজ্যবাদী দর্শনের অন্যতম নীতি হলো তারা আমেরিকার স্টাইলে এ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করবে এবং তার চারপাশের ছোটো ও কিঞ্চিৎ দুর্বল দেশগুলোর ওপর পূর্ণ আধিপত্য কায়েম করার জন্য সেসব দেশগুলোতে বহুমুখী আগ্রাসনচালিয়ে যেতে থাকবে। যেন সেই দেশগুলো কোনোভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। কারণ পাছে কেউ আবার ভারতের জন্য বিষফোঁড়ারূপে আবির্ভূত হয়ে যায় কিনা। আর সে কারণেই ভারত বাংলাদেশের সাথে আগ্রাসী ও বৈমাত্রেয়সুলভ আচরণ করে থাকে। বিশেষত বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ যে ভারতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তা সবারই জানা। তাছাড়া সময়ান্তরে রৌমারী এবং পদুয়াতে আম বিডিআর বাহিনীর (পরিবর্তিত নাম বিজিবি) কাছে পরাক্রমশালী ভারতের প্রতিরক্ষাবাহিনী বেদম মার খেয়ে পরাজিত হয়েছিল। তারপর ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বার্মাকেও আমরা পরাজিত করেছিলাম। এসব কারণেই ভারত বাংলাদেশকে এক কথায় সবদিক থেকে নুইয়ে রাখতে চায়। শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত বিডিআরকে ভয় পেতো ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী বিএসএফ। কারণ এই বিডিআরই আগে বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত উত্তেজনা ও ভারতীয় দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিএসএফের সাথে সফলভাবে লড়াই করেছিল। তাই এবার ভারতের ক্রীড়নক শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আমাদের গর্ব সীমান্তরক্ষী বিডিআর বাহিনীকে বিকলাঙ্গ ও নখদন্তহীন করে তোলার জন্য বিডিআর বিদ্রোহের নাটকের আড়ালে এদেশের অর্ধশতাধিক প্রথম সারির মেধাবী ও চৌকস সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে। এমনকি বিডিআর বিদ্রোহের সময় শেখ হাসিনাকে সহায়তার নামে ভারতের সরকার মিলিটারি পর্যন্ত পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশপ্রেমিক জনগণের তীব্র বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি। কার্যত এভাবে সুপরিকল্পিতভাবে ভারতের স্বার্থে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা স্তম্ভকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত মনে করে বাংলাদেশ যতই উন্নতি লাভ করবে, সেটা তাদের জন্য ততই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই ভারত সুকৌশলে সব ধরনের আগ্রাসী নীতি প্রয়োগ করে থাকে বাংলাদেশকে ঘিরে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া এবং বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশীদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। কিন্তু অন্যদিকে চীন সবসময়ই অরুণাচলকে নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি করে, পাকিস্তানও কাশ্মীরকে নিয়ে নানা সমস্যা বাঁধায়। অথচ দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেসব ব্যাপারে চীন ও পাকিস্তানকে কিছুই বলতে সাহস পায় না। এর মানে দাঁড়ালো, অন্তত দুর্বল বাংলাদেশকে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বড় দাদগিরিসুলভ আচরণ ও ভাব নির্লজ্জভাবে চরিতার্থ করারই নামান্তর। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, সাবেক স্বাধীন দেশ হায়দরাবাদ ও
সিকিমকে যেভাবে সুকৌশলে প্রথমে প্রতিরক্ষা করে পরবর্তীতে ভারতীয় সেনাবাহিনী দখল করে নিয়েছিল; ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশকে দখল করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। সুতরাং বর্তমানে সমগ্র দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিদের দল-মত নির্বিশেষে সকলকে দেশ রক্ষার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রসারণবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত ও তার কায়েমী স্বার্থান্বেষী দোসরদের বিরুদ্ধে এখনই গর্জে ওঠার সময়।
বিষয়: বিবিধ
১১৮২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন