আরব-সংস্কৃতি মানেই কি ইসলামী সংস্কৃতি? : ইসলামী সংস্কৃতি আর আরব-সংস্কৃতি এক জিনিস নয়, দুটোই কিন্তু আলাদা
লিখেছেন লিখেছেন বিনীত তারেকুল ইসলাম ০৭ মে, ২০১৪, ০১:৩৭:৩৫ দুপুর
ইসলামের একটা বিশেষ সহজাত গুণ হলো, পৃথিবীর যেকোনো স্থানিকতার সাথে খুব সহজেই নিজেকে অভিযোজিত করতে সক্ষম। যা অন্যান্য ধর্মে বিরল। ইসলাম বাহ্যিকভাবে আরব সংস্কৃতির কিছুটা ধারণ করে, যেটা হিস্টোরিক্যাল ইনহ্যারেন্টলি সে পেয়েছে। আবার আরব জাতীয়তাবাদ, আরব রাজতন্ত্র ইত্যাদিকে ইসলাম সমর্থন করে না। এখানে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, ইসলাম ততক্ষণ পর্যন্ত স্থানিকতাকে সুযোগ দেবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার আদর্শের গোড়ায় আঘাত না লাগবে। উদাহরণস্বরূপ, এই জনপদে ইসলাম খুব সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। বাঙালি কালচার তথা এই জনপদের লোকাচার ও জীবনাচারকে সে বিরোধ না হওয়া অবধি মেনে নিচ্ছে, কিন্তু পৌত্তলিকতা তথা প্রতিমাপূজা বা ভাস্কর্যপ্রেমকে সে অ্যাক্সেপ্ট করবে না। ইদানীংকালের নয়া ফেনোমেনা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া বৈশাখবাদ তথা মঙ্গলশোভাযাত্রা, মশালমিছিল, মোমবাতি প্রজ্বলন ইত্যাদি পৌত্তলিকধর্মী সংস্কৃতির সাথে সে আপসহীন। পক্ষান্তরে এসব ব্যতীত আমাদের এখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি: বাংলা নববর্ষ উদযাপন, স্বাধীনতা দিবস, মাতৃভাষা দিবস ইত্যাদি জাতীয় উৎসবকে ইসলাম 'অনুমোদন' দেয়, তবে শহীদ মিনার, স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধে নৈবেদ্য বা পূজার স্টাইলে ফুল দেওয়ার মতো জাহেলিয়াত এবং নববর্ষ উদযাপনের নামে বেলেল্লাপনা ও অশ্লীল উদ্দামতাকে সমর্থন করে না ইসলাম। উত্সবের নামে অত্যুত্সবের চর্চা তথা যথেচ্ছাচার এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও তমদ্দুনের সাথে সাংঘর্ষিক এমন বিজাতীয় কৃষ্টির অনুপ্রবেশ ইসলাম অনুমোদন করে না। তার মানে কি ইসলাম উদার নয়, অবশ্যই উদার। ইসলাম তার একত্ববাদ ও নিরাকারের ধারণা সমুন্নত রাখার জন্যই সে এসব জাহেলিয়াতকে মেনে নেবে না। এটা তার আদর্শিক লড়াই এবং চ্যালেঞ্জ। এখানে সে নিরাপস। সত্য যে, ইসলাম আধুনিক সভ্যতার সু-অভিজ্ঞতাগুলোকে উপেক্ষা করে না, এক্ষেত্রে সে অ্যাকোমোডেটিভ। এমনকি আধুনিক সভ্যতার যেসব মেগা প্রকল্প নিয়ে পশ্চিমারা কাজ করে থাকে, সে সবেও ইসলাম তার নিজস্ব ফাংশন নিয়ে হাজির হতে চায়, তবে নিজের তাওহীদি চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। তাওহীদের আদর্শের জায়গায় সে একচুলও ছাড় দেবে না। এইজন্যই বিশ্বে মুসলমানদের এত অধপতনের পরও ইসলাম টিকে আছে স্বমহিমায়, তার অবিমিশ্র আদর্শের জোরেই। এ এক বিস্ময়কর আদর্শিক চেতনা -যা কেয়ামত তক দেদীপ্যমান। ইসলাম তাই আরবকেন্দ্রিক নয়, ইসলাম বিশ্বমানবতার। আর বিশ্বমানবতা শুধু আরবের সম্পত্তিও নয়। বিশ্বমানবতার রক্ষক কেবল ইসলাম। মানবিক অধিকারের লড়াইয়ের জায়গায় ইসলাম বিশ্বায়িত। যেহেতু জাগতিক কর্তব্যের ক্ষেত্রে মজলুমের অধিকার রক্ষার জন্যই ইসলাম, তাহলে মজলুম তো শুধু আরবে নয়, বিশ্বের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মজলুমের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। সুতরাং ইসলাম আরব সংস্কৃতিকেন্দ্রিক -এটা অনেকেরই নিতান্ত ভুল ধারণা। তাই সবদিক বিবেচনায় এটা সহজেই অনুধাবনযোগ্য যে, আরবসংস্কৃতি এক জিনিস, আর ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিও আলাদা -স্বীয় চৈতন্য ও আদর্শের কেন্দ্রে।
বি. দ্র: আমার এই পোস্টের সাথে সমন্বিত আমার পূর্বের আরেকটি পোস্টের লিঙ্ক : . ইসলামের নিরাকার ধারণা ও সাকার বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি . ইসলামী সংস্কৃতি বনাম স্থানিক সংস্কৃতি
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্য বলেছেন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন