সলিমুল্লাহ সাহেবরে লইয়া আমার বিশেষ বয়ান
লিখেছেন লিখেছেন বিনীত তারেকুল ইসলাম ৩০ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:১৩:২৪ সন্ধ্যা
ফরহাদ মজহারের বগলের পশম ধরিয়া টান না মারিলে সলিমুল্লাহ সাহেবের উদরের ওদন হজম হয় না বলিয়াই মনে হয় আমার। সম্প্রতি তিনি তাহার ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্রচিন্তা’ শীর্ষক কলামে ফরহাদ মজহারকে ‘দক্ষিণপন্থী কোর্টে’ কোনোপ্রকার বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থায় না গিয়া এক্কেবারে চাপার জোরে গুঁতা মারিয়া ঠেলিয়া ফালাইয়া দিয়াছেন। ইহাতে আমার হাসির ব্যাপক উদ্রেক হইয়াছে বটে।
যাহাই হউক, ফরহাদ মজহার বস্তুতপক্ষে রাষ্ট্র, রাজনীতি ও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা স্বীকার করিয়া অত্যন্ত বিচক্ষণতার সহিত বাংলাদেশে ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতির বাস্তবতা, উত্থান ও প্রভাবকে নির্বোধের মতন সরাসরি উপেক্ষা বা অবজ্ঞা না করিয়া ক্রমশ পর্যালোচনা তথা ক্রিটিসিজমের দ্বারা যুক্তি ও চিন্তার নিরিখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে আগাইতে চাহেন। কিন্তু সমস্যা হইতেছে তাহাদেরকে নিয়া, যাহারা (ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবসায়ী বুদ্ধিজীবীকুল) ফরহাদ মজহারের এই যৌক্তিক চিন্তাচর্চার ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক হিউমিলিয়েশন, প্রতিহিংসা ও স্বার্থবাজিতার দরুন প্রায় এতিমের মতন তাঁহার পশ্চাদের জামা ধরিয়া টান মারিতে বড়ই তৃপ্তিবোধ করেন। ইহাই সম্ভবত তাহাদের বিশেষত সলিমুল্লাহ খানের এখনকার বুদ্ধিজীবিতার অন্যতম উপাদান বা লক্ষণ হইয়া দাঁড়াইতেছে বলা যায়। ধর্ম তাহাদের নিকট এখন পরিত্যক্ত কিংবা আফিমের মতো হইয়া উঠিয়াছে, কেননা তাহারা ভালো করিয়াই জানেন, ধর্মের দ্বার ঘেঁষিলে ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লইয়া ব্যবসা করা এইদেশে মুশকিল হইয়া দাঁড়ায়। সলিমুল্লাহ খান বলিতেছেন, “আমার ভাবিতে সাধ হয়, আহমদ ছফা যদি ২০০১ সালে হঠাৎ পরলোকগমন না করিতেন, আজো জীবনধারণ করিতেন, ফরহাদ মজহার সম্পর্কে এতদিনে কি যে বলিতেন! মজহার যে 'চরম দক্ষিণপন্থি' হইয়া উঠিয়াছেন তাহা কি আকস্মিক? মনে হয় না। আহমদ ছফার বিখ্যাত সাক্ষাৎকারে তাহারও একটা ইশারা আছে। তিনি বলিতেছিলেন, 'কিন্তু, আমি যেটা ভয় পাচ্ছি এখানে পলিটিক্সটা যখন টোটাল রাইটিস্ট অরবিটের মধ্যে চলে যায় সেখানে অন্য কারও ভবিষ্যৎ থাকে না, চরম দক্ষিণপন্থিদের ছাড়া।' আহমদ ছফার আশঙ্কা ছিল, 'মৌলবাদীরাই তাদের আকাঙ্ক্ষাটা পূর্ণ করবে।' কারণ সরকার আর বিরোধী দল সবাই- 'সকলে মিলে এরা চরম দক্ষিণপন্থি কোর্টের মধ্যে পলিটিক্সটা ঢুকিয়ে দিয়েছে।' ”
তো এখন কথা হইতেছে যে, ‘সকলে মিলে এরা চরম দক্ষিণপন্থী কোর্টের মধ্যে পলিটিক্সটা ঢুকিয়ে দিয়েছে’-এখানে আহমদ ছফা যাহাদের কথা বলিতেছেন তাহারা কি অদ্যাবধি ফরহাদ মজহারের মতো চিন্তা করিতেছেন বলিয়া মনে হয়? ফরহাদ মজহারকে উহাদের দলে অর্থাৎ দক্ষিণপন্থীদের দলে ভিড়াইয়া তিনি কী বলিতে চাহেন তাহা স্পষ্ট করিয়া কহেন নাই। কিংবা ফরহাদ মজহার কীরূপ চিন্তাধারার ফলে ‘চরম দক্ষিণপন্থী’ হইয়া উঠিলেন-সেই ব্যাপারে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক অভিমত তাহার নিকট হইতে পাইলাম না।
যাহাই হউক, অন্য প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ খান লিখিয়াছেন, ‘আমি যদি সাক্ষাৎকারটি লইতাম তো জিজ্ঞাসা করিতাম, কেন, আমরা তো বিএনপি তৈয়ার করিয়াছি। অনুমান করি, আহমদ ছফা বলিতেন, না, বিএনপি আওয়ামী লীগের বিকল্প হয় নাই। অন্যরকম- আরও অতীতমুখী নতুন একটা সংস্করণ হইয়াছে মাত্র। তিনি হয়তো বলিতেন, মুসলিম লীগ পাকিস্তান সৃষ্টি করিয়াছিল, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ গড়িয়াছে। আর বিএনপি বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাইতে চাহিতেছে। ইহাকে ভিন্নরকমের রাজনীতি বলা মুশকিল। বলা বাহুল্য, আহমদ ছফা কথাটা আমার কল্পনা অনুসারে বলেন নাই। তিনি যাহা বলিয়াছেন তাহা এই রকম : আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেরই কালচার বা সংস্কৃতি হইতেছে গণতান্ত্রিক চিন্তার শত্রু, 'সরাসরি সামন্ততান্ত্রিক চিন্তার একটা প্রকাশ।' ” --বলাবাহুল্য যদি আহমদ ছফা সলিমুল্লাহ খানের মতো বুদ্ধির ব্যবসা করিতেন তাহা হইলে তাঁহার নিকট হইতে এমন প্রগলভ চিন্তা আশা করা যাইত। কিন্তু আহমদ ছফা বুদ্ধির ব্যবসা করেন নাই। আহমদ ছফা জানিতেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হইবার পর এবং এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর নির্বাচনী গণতন্ত্রে রূপান্তরিত বাংলাদেশের পক্ষে কার্যত আর পাকিস্তানী শাসনামলে ফিরিয়া যাইবার কোনো অবকাশ নাই। এমনকি বিএনপি-জামাতের পক্ষে যে তাহা কস্মিনকালেই সম্ভবপর নহে- তাহা গত ৪২ বছর ধরিয়া প্রমাণিত হইয়াছে। সুতরাং এখনো সেই ‘পাকিস্তান বানাইবার’ ধুয়া তুলিবার মানে কার্যত বিএনপি-জামাতের বিপক্ষে আওয়ামী প্রপাগান্ডা চারতার্থ করারই নামান্তর। যাহা হউক, আমার প্রকৃত সমঝদার বন্ধুদিগকে আর কিছু বলিবার প্রয়োজন বোধ করিতেছি না। আর হ্যাঁ, আহমদ ছফাকে ‘মহাত্মা’ বলিবারও কোনো প্রয়োজন দেখিতেছি না। তবে আমার মনে হইতেছে, গান্ধীজির উপাধি সম্ভবত সলিমুল্লাহ খানকে ভীষণ আলোড়িত করিয়া তোলে। তজ্জন্যই বুঝি তিনি আহমদ ছফাকে মহাত্মা বানাইয়া ছাড়িয়াছেন।
বিষয়: বিবিধ
২০৭১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফরহাদ মাযহার নিজেই একবার একটি বই নিয়ে আহম ছফাকে বলেছিলেন ছফা বিএনপির দালাল হয়ে গিয়েছে।আহমদ ছফার ভাতিজার লিখা ছফামৃত বইতে এর উ্ল্লেখ্য আছে। তবে আজকাল সলিমুল্লাহ খান কি ভাবছেন বুঝা দায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন