মিসর বনাম আরব বসন্ত
লিখেছেন লিখেছেন বিনীত তারেকুল ইসলাম ২০ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:১৭:৪৭ রাত
দৈনিক সংবাদ১৯৯২ সালে আলজেরিয়ায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত দল ইসলামিক সালভেশন ফ্রন্টকে ক্ষমতায় যেতে না দিয়ে সে দেশের সেনাবাহিনী ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এর পরিণতিতে দেশটি এক দশকেরও বেশি সময়ের জন্য গৃহযুদ্ধে পতিত হয়। তবে মিসরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দল মুসলিম ব্রাদারহুডের ভাগ্য ভালো যে, সুদীর্ঘ ছয় দশক ধরে রাজনৈতিক ইসলামের পক্ষে লড়াই-সংগ্রামের অব্যাহত প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারির বিপ্লবের বদৌলতে অন্ততপক্ষে তারা এক বছরের জন্য হলেও ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করতে পেরেছে। গণতন্ত্রসম্মতভাবে তাদের ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে না দিয়ে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করেছে সে দেশের দোর্দ- প্রতাপশালী সেনাবাহিনী। মুসলিম ব্রাদারহুড রাজপথ আঁকড়ে ধরে আছে। তারা সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকার করে না, প্রেসিডেন্ট পদে মুরসির পুনর্বহালই এখন তাদের প্রধান দাবি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের সেই পুরনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত-সংঘর্ষ আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। রাজপথে বিক্ষোভরত ব্রাদারহুড ও তার সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনী সিরিজ গণহত্যা পরিচালনা করছে। তাহলে কি বলতে হয় মিসরের বিপ্লব ব্যর্থ হতে চলেছে? নাকি পশ্চিমাদের তথাকথিত গণতন্ত্র নামক গোলকধাঁধায় পর্যবসিত হয়েছে? শুধু মিসর নয়, আরব বসন্তের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘ স্বৈরশাসনে জর্জরিত কয়েকটি দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কি আসলেই কোন ইতিবাচক গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে দেশগুলোকে নিয়ে যাবে? নাকি সবই পশ্চিমা কারসাজিতে ভুল হতে বাধ্য? আরব বসন্তের ধাক্কায় মধ্যপ্রাচ্যে বিচ্ছিন্নভাবে যে কয়েকটি দেশের (তুরস্ক, তিউনিসিয়া, লিবিয়া) গণতান্ত্রিক ভাব ধারায় রূপান্তর ঘটেছিল, সেসব দেশ আবার ইদানীংকালে আরব বসন্তের হাওয়া ফুরোতে না ফুরোতেই অনভিপ্রেত ও অস্বাভাবিকভাবে গণবিক্ষোভে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। এ কথা বলা অমূলক হবে না যে, বিদ্যমান কঠিন বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে মার্কিন পরাশক্তিই মধ্যপ্রাচ্যের হালঅবস্থা বা ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মূল নিয়ামক। পূর্বেকার মতো তারাই সবকিছু প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করছে তাদের গৃহীত নতুন মধ্যপ্রাচ্য নীতির মাধ্যমে। আরব বসন্তের শুভ সূচনায় দেশগুলোতে ইসলামী দলগুলো নির্বাচনী গণতন্ত্রের মাধ্যমে একের পর এক বিজয়ী হতে থাকে। স্বাভাবিকভাবে এটি মার্কিন বা পশ্চিমা শক্তির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় তাদের নিজেদের পূর্বপরিকল্পিত প্রজেক্ট 'আরব স্প্রিং' তথা আরব গণজাগরণ এখন উল্টো তাদের জন্যই বুমেরাং হয়ে ঠেকল। আরব স্প্রিংকে আমেরিকার পূর্বপরিকল্পিত একটি প্রজেক্ট বলায় অনেকে হয়তো চমকে যাবেন। কিন্তু যারা আমেরিকার অলাভজনক এনজিও সংস্থা র্যান্ড করপোরেশনের তৎপরতা ও তাদের গবেষণাগুলো নিয়মিত নজরে রাখেন তাদের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার।
পশ্চিমা মিডিয়া জগত কর্তৃক আরব গণজাগরণের নাম দেয়া হয়েছিল 'আরব স্প্রিং'। পশ্চিমা মিডিয়ার দেখাদেখি সর্বত্র এই আরব গণজাগরণকে স্বতস্ফূর্ত বা স্বতোৎসারিত বলা হয়েছে। ভাবনার বিষয় হলো এই কথাটিই বা কতটা যুক্তিসম্মত। আরব বসন্তের আগ পর্যন্ত যখন মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরাচারী দেশগুলোর শাসকদের দুধকলা দিয়ে আমেরিকা নিজের তেল স্বার্থের জন্য দীর্ঘ সময় পুষে ছিল, তখন গণজাগরণের কোন নূ্যনতম লক্ষণও দেখা দেয়নি; কিন্তু হঠাৎ করেই মধ্যপ্রাচ্যে একি বিস্ময়কর গণজাগরণ বিস্ফোরিত হয় স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্বৈরাচারী দেশে সেই গণজাগরণ ছড়িয়ে পড়ে। কেউ এটাকে বলল আরবের বুকে দীর্ঘকাল ঘুমিয়ে থাকা ইসলামী জাগরণ আবার কেউ বা বলল গণতন্ত্রের প্রতি আরব জনগণের তীব্র আশা-আকাঙ্ক্ষার জাগরণ। এতটা সাদাকালো চোখে বিষয়টিকে দেখলে ঘটনার গভীরে পৌঁছা সম্ভব হবে না। র্যান্ড করপোরেশন হলো আমেরিকার একটি অলাভজনক এনজিও প্রতিষ্ঠান এবং এর কাজ হলো আমেরিকার সমরনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, কৌশলী ও অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণী বা থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে গবেষণা করা। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত তর্কবিতর্কের মাধ্যমে যেকোন ধরনের মার্কিন নীতি বা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই প্রতিষ্ঠানই মধ্যপ্রাচ্যে নতুনভাবে আমেরিকার তেলপ্রাপ্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থ রক্ষার্থে আমেরিকাকে কৃত্রিম গণজাগরণ সৃষ্টির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বেছে বেছে কয়েকটি স্বৈরাচারী দেশের শাসকের পতন ঘটিয়ে সেখানে লিবারেল ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে আমেরিকার প্রতি বন্ধুবৎসল মডারেট মুসলিম নেটওয়ার্ক তৈরি করার নতুন মধ্যপ্রাচ্য নীতি ঠিক করে দেয়। এ বিষয়ে বিশিষ্ট চিন্তক ও গবেষক গৌতম দাস লিখেছেন, 'মুসলমান প্রধান দেশগুলোতে কথিত 'স্বৈরাচারী' শাসক চলতে দেয়ার অর্থ এটা আল-কায়দার ঘাঁটি হওয়ার জন্য পটেনশিয়াল হবে। কারণ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনগণের ন্যায্য ক্ষোভ-বিক্ষোভকে পুঁজি করে আল-কায়দা নিজের রাজনীতির ন্যায্যতা জোগাড় করে ফেলবে। ফলে স্বৈরাচার রাখার আমেরিকান রাষ্ট্রের জন্য পটেনশিয়াল থ্রেট। তাই এনজিওর মাধ্যমে লিবার্টি, ফ্রিডমের আওয়াজ শিখিয়ে এক পপুলার আপরাইজিং তবে নিয়ন্ত্রিত রেখে স্বৈরাচারকে সরিয়ে দিয়ে একটা লিবারেল ইসলামী সরকার কায়েম করতে হবে। আর এর ভিতর দিয়ে আমেরিকার প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন মডারেট ইসলামি নেটওয়ার্ক গড়ে নিতে হবে। এটাই আরব স্প্রিং।' তবে কথা হচ্ছে, আমেরিকার এই নতুন মধ্যপ্রাচ্য নীতি তথা আরব স্প্রিংয়ের ফলাফল তাদের পক্ষে আসবে কি আসবে না সেটি সম্পর্কে তারা ছিল অনিশ্চিত। র্যান্ড করপোরেশনের গবেষণা রিপোর্টগুলোতে এ ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা দেয়া ছিল না। বেশ ঝুঁকি নিয়েই আমেরিকা প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, আরব স্প্রিংয়ের মাধ্যমে র্যান্ডের বাছাইকৃত দেশগুলোতে তাদের অভীষ্ট মোতাবেক লিবারেল ইসলামী সরকার কায়েম সম্ভব হয়নি। তুরস্ক, তিউনিসিয়া, লিবিয়া কিংবা মিসরে যেই ইসলামী দলগুলো নির্বাচনী গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, সেই দলগুলোর একটিও কিন্তু তাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী প্রকৃত লিবারেল বা মডারেট ইসলামপন্থি সরকার হয়ে ওঠেনি। বরং দলগুলো মডারেট বা লিবারেল সরকার হওয়ার আড়ালে ধীরে ধীরে সংবিধানে ইসলামী শরিয়া সংযোজন এবং নিজ দেশের উদারপন্থি ও সেক্যুলার শিবিরের শিকড়গুলো কৌশলে একে একে কেটে দিচ্ছিল। তবে সেই দলগুলোর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমেরিকা বা র্যান্ড করপোরেশন যে ওয়াকিবহাল ছিল না এমন নয়; কিন্তু তারা পাশাপাশি এটাও আশা করেছিল যে, নির্বাচনী গণতন্ত্রের মাধ্যমে তাদের বশংবদ সেক্যুলার ও উদারপন্থিরাও হয়তো ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাদের হতাশ করে দিয়ে দেশগুলোতে একের পর এক ইসলামপন্থি দলগুলো ক্ষমতায়িত হয়েছে। তাই এখন আমেরিকা দেশগুলোতে সদ্য গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়া ইসলামপন্থি সরকারগুলোর বিরুদ্ধে কৃত্রিম গণবিক্ষোভ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এবং সেনাবাহিনীকে উসকানি মেরে তাদের পতন ঘটানোর নতুন কৌশল এঁটেছে। যেটা আমরা সর্বসম্প্রতি দেখছি তিউনিসিয়া, তুরস্ক ও লিবিয়ায়। এসব দেশে এই কৌশল এখনো প্রক্রিয়াধীন তবে মিসরের প্রেসিডেন্ট ড. মুরসি ও তার দল মুসলিম ব্রাদারহুড দুর্ভাগ্যজনকভাবে অল্পতেই ফেঁসে গেছেন। ২০১১ সালে ২৫ জানুয়ারির বিপ্লবের বদৌলতে জনগণের ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর সে দেশের মার্কিন বশংবদ সেনাবাহিনী না চাইলেও শেষাবধি জনগণের চাপে ব্রাদারহুডকে ক্ষমতায় যেতে দিতে বাধ্য হয়েছে। মুরসি ও তার দল ব্রাদারহুড ক্ষমতায় গেলেও এক বছরের মধ্যে কখনোই স্বাধীনভাবে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেনি। ক্ষমতার ভরকেন্দ্রগুলো কার্যত থেকে গিয়েছিল সেনাবাহিনীর হাতে। এদিক থেকে মিসরের রাজনীতি ও পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে উক্ত দেশগুলো থেকে ভিন্ন ছিল। তাই মিসরে এত সহজে অভ্যুত্থান হওয়া এবং সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার ঘৃণ্য কূটকৌশল সফল হতে পেরেছে। সফল হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় ও আঞ্চলিক রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর শাসকদের স্বার্থের কোয়ালিশন। আরব বসন্তের ভয়ে এখনো ভীতির মধ্যে আছে এই রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর শাসকরা। তাই মিসরে যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিদ্যমান থাকে তাহলে তাদের দেশের জনগণেরও স্বৈরাচারবিরোধী ও গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম প্রবল হয়ে উঠতে পারে। এই ভয়ে তারা এতটাই তটস্থ ছিল যে, মিসরের সেনাবাহিনীর এই অন্যায্য অভ্যুত্থানকে বিলম্ব না করে সরাসরি নির্লজ্জের মতো সমর্থন করেছে। এটাই ইঙ্গ-মার্কিন ইহুদি চক্রকে দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে দিয়েছে।
২০১১ সালে মুরসি গণভোটে বিজয়ী হলে পশ্চিমারা বাহ্যিকভাবে তাকে অভ্যর্থনা জানালেও প্রকৃতপক্ষে তারা এটা মেনে নিতে পারেনি। তাদের মেনে না নেয়ার সঙ্গত কারণ অবশ্যই রয়েছে। এ ব্যাপারে র্যান্ড করপোরেশনের 'সিভিল ডেমোক্রেটিক ইসলাম' রিপোর্টটি অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য। এই গবেষণা রিপোর্টটিতে র্যান্ড তার নিজের পছন্দসই একটি ইসলাম চায় অর্থাৎ মডারেট ইসলাম। একজন মুসলমানকে র্যান্ডের দৃষ্টিতে মডারেট হতে হবে। কোন মুসলমানকে র্যাডিক্যাল বা মৌলবাদী হওয়া চলবে না। এমনকি আরব বসন্তের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের বাছাইকৃত দেশগুলোতে স্বৈরাচার পরবর্তী গণতান্ত্রিক নির্বাচনে যদি ইসলামপন্থি দল বিজয়ী হয় তাহলে সেই বিজয়ী দলকে অবশ্যই লিবারেল বা মডারেট ইসলামী সরকার হতে হবে। তারা চায়, একটি ইসলামী দলকে তাদের মতো করে অর্থাৎ পাশ্চাত্যের ঐতিহ্যের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হতে হবে। র্যান্ডের উক্ত রিপোর্টটিতে আছে, A commitment to democracy as understood in the liberal western tradition.-অর্থাৎ গণতন্ত্রমনা বলতে সেই গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল হতে হবে, উদারনৈতিক পশ্চিমা ঐতিহ্য বলতে যা বুঝায়।’ এখানে স্পষ্ট যে, ইসলামিক ধাঁচের গণতন্ত্রকে তারা মডারেট মনে করে না; পাশ্চাত্যের তথাকথিত লিবারেল গণতন্ত্রই তাদের কাছে মূলত গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত। এছাড়া তারা আরো পরিষ্কার করে বলেছে, `Support for democracy implies opposition to the concept of the Islamic state’-অর্থাৎ গণতন্ত্রের সমর্থক বলতে বোঝানো হচ্ছে ইসলামিক রাষ্ট্রের ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধী হতে হবে।’ তার মানে মডারেট মুসলিম মাত্রই এমন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী যা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার ঘোর বিরোধী হবে। এরপর তারা বলছে, `It follows from the above that for a group to declare itself democratic, in the sense of favouring elections as the vehicle for establishing government as in the case of the present Egyptian Muslim Brotherhood not enough.’-অর্থাৎ কোনো দল নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক দল বলে দাবি করার অধিকার রাখবে না- যদি গণতন্ত্রকে তারা নিছক ক্ষমতায় আরোহণ ও সরকার গঠনের মাধ্যম মনে করে। যেমন মিসরের বর্তমান ইখওয়ানুল মুসলিমীন বা মুসলিম ব্রাদারহুড।’ এমনকি র্যান্ড কর্পোরেশনের রিপোর্টটি মনে করে,`The dividing line between moderate Muslims and radical Islamist is whether Sharia should apply’-অর্থাৎ চরমপন্থী তথা সত্যিকার মুসলিম ও মডারেট র্যান্ড মুসলিমদের মধ্যে আসল পার্থক্য হলো শরিয়া আইন চাওয়া আর না চাওয়া।’ কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালে মুসলিম ব্রাদারহুড মিসরে ইসলামি শরিয়াভিত্তিক নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে তা গণভোটের মাধ্যমে পাসও করেছে। সুতরাং মুসলিম ব্রাদারহুড গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে মিসরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি আরব রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন থাকাটা নিশ্চয়ই আমেরিকাসহ পাশ্চাত্য শিবিরের দুঃখবোধের কারণ হওয়াই স্বাভাবিক। সেজন্যই বুঝি আমেরিকা বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে মুরসিকে উৎখাত করার জন্য সেই শুরু থেকেই প্রচুর অর্থকড়ি দিয়েছে মুরসিবিরোধী রাজনীতিকদের। তুরস্ক ও তিউনিসিয়ার ইসলামপন্থি দল ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পরই তাদের সেনাবাহিনীর লাগাম তারা ভালোভাবেই টেনে ধরেছে। তাই আমেরিকার নতুন কৌশল সেখানে এখনো সফলতার মুখ দেখতে পায়নি। এক্ষেত্রে মুরসির প্রধান ব্যর্থতা ছিল মিসরের সেনাবাহিনীর লাগাম কার্যকরভাবে টেনে ধরতে না পারা। তিনি যে কম চেষ্টা করেছেন এমন নয়; কিন্তু মিসরের সেনাবাহিনী সে দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক দিক থেকে এতটাই শক্তিশালী ও ক্ষমতাপুষ্ট ছিল যে তার পক্ষে আসলে সফল হওয়া মোটেই সম্ভব ছিল না। তুরস্ক, তিউনিসিয়া এ দিক থেকে সফল হওয়ায় আমেরিকার ধূর্ত কৌশল এখনো সেখানে হালে পানি পাচ্ছে না। আমেরিকার সঙ্গে তাদের খেলাটা খুব জমজমাটভাবেই চলছে মনে হচ্ছে, দেখা যাক কে জেতে আর কে হারে।
[লেখক : কবি ও কলামিস্ট]
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন