ফেসবুকের দশকাহন
লিখেছেন লিখেছেন নাউন৯৯ ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৪৭:৩৬ রাত
লাইক করুন বা না করুন, ফেসবুকের বয়স ১০ বছর পার হয়ে গেল। অবশ্য আপনার আমার মত কোটি কোটি ইউজারের লাইক না হলে এ অবস্থানে আসতে পারত না ফেসবুক। তবে এখনও অনেকেই আছেন, যারা ফেসবুক লাইক করেন না আবার অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করতে করতে ক্লান্ত। ফেসবুকের ১০ বছর পূর্তিতে ফেসবুক নিয়ে বিশেষ ১০
তথ্য
চলুন ঘুরে আসি ২০০৪- র ফেসবুক তৈরির শুরুর সময় থেকে। ফেসবুক তৈরির পর থেকে এর নির্মাতা জাকারবার্গকে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে অনেকবার। অনেকেই বলেছেন, জুকারবার্গ ফেসবুকের নির্মাতাই নন, কিন্তু আদালতের রায়ে সে বিতর্ক এখন থেমে গেছে। যারা "দ্য সোশ্যাল নেট অয়ার্ক" সিনেমাটি দেখেছেন, তারা ফেসবুক নির্মান ও এর মালিকানা নিয়ে যুদ্ধ সম্পর্কে নিশ্চয় জানেন।
এখন স্বীকৃত যে, ২০০৪-এ হার্ভার্ডের ডরমেটরিতে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মার্ক জুকারবার্গ ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেভারিন, মস্কভিস, হিউজ প্রমুখ। ন্যাপস্টার প্রতিষ্ঠাটা শন পার্কারের পরামর্শে ফেসবুক থেকে "দ্য" বাদ দিয়ে শুধু ফেসবুক করা হয়। ফেসবুকের সদস্য প্রাথমিকভাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে সেটা বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ, আইভি লিগ এবং বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছড়ায়। আরও পরে এটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, হাইস্কুল এবং ১৩ বছর বা ততোধিক বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
[b]ইতিহাস[/b]
ফেসবুকের শুরুটা জুকারবার্গের জন্য মোটেও সুখকর ছিল না। ফেসবুক তৈরির আগে ফেসবুকের পুর্বসুরি সাইট ফেসম্যাস তৈরি করেছিলেন মার্ক। এতে তিনি হার্ভাডের শিক্ষার্থীদের ছবি ব্যবহার করেন। তিনি দুটি করে ছবি পাশাপাশি দেখান এবং শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে বলেন। এজন্য জুকারবার্গ হার্ভাডের সংরক্ষিত ডাটা হ্যাক করেছিলেন। অভিযোগ ওঠায় ফেসম্যাস বন্ধ করে বাধ্য হন তিনি। শুরু হয় নতুন সাইট "দ্য ফেসবুক ডট কম" তৈরির কাজ। যা আজকের ফেসবুক।
কোটিপতি কিন্তু ভিন্ন মানুষ জুকারবার্গ
হার্ভাডে পড়াশোনার আগে জুকারবার্গ মাইক্রোসফট এবং এওএল থেকে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ কোটিপতি হিসেবে যার নাম আসে তিনি ফেসবুক সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। কোটিপতি হলেও মার্ক তার ট্রেড মার্ক পোশাক হিসেবে ধূসর টাইপের পোশাক পরেন। এ ধরণের পোশাক পরার কারণ, তাকে অন্তত পোশাক নিয়ে কম চিন্তা করতে হয়। ফেসবুক ছাড়াও টুইটার ব্যবহার করেন জুকারবার্গ। কিন্তু ২০১২- এর পর থেকে আর কোন টুইট করেন নি তিনি। চিনা বান্ধবী প্রিসিলা চ্যান কে বিয়ে করেছিলেন তিনি। বিশ্বের দানশীল ব্যক্তিদের তালিকায়ও রয়েছে জুকারবার্গের নাম।
ফেসবুকের ভাগ- বাটোয়ারা
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ফেসবুকে বড় ধরণের বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়েছে। আর ঐ বিনিয়োগকারীরাও বর্তমানে ধনকুবের বনে গেছেন। ২০০৪-এ ফেসবুক প্রতিষ্ঠার সময় ন্যাপস্টারের মালিক শন পার্কার জুকারবার্গকে পেপালের প্রতিষ্ঠাটা পিটার থায়েলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। থায়েল ফেসবুকে পাঁচ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করে ১০.২ শতাংশ শেয়ার নিজের করে নেন। ফেসবুক কেনার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান শুরুতেই হাত বাড়িয়েছিল। কিন্তু বিক্রি করেন নি জুকারবার্গ। ২০০৬ এ ১ বিলিয়ন ডলারে ইয়াহু ফেসবুককে কিনতে চেয়েছিল। জুকারবার্গ ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে কাজে মনোযোগ দেন। সে সময় মাত্র ১০ লক্ষ মার্কিন ডলারের জন্য ফেসবুক-ইয়াহুর চুক্তি হয়নি। বর্তমানে ফেসবুকে জুকারবার্গের শেয়ার রয়েছে ২৮ শতাংশ, শন পার্কারের ৪ শতাংশ, মস্কোভিজের ৭.৬ আর সেভেরিনের ৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০০৭ সালে ২৪ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে ফেসবুকের ১.৬ শতাংশ শেয়ার কেনে মাইক্রোসফট।
ফেসবুকের কেনাকাটা
যুগের সাথে তাল মেলাতে ফেসবুকে পরিবতন এনেছেন জুকারবার্গ। ২০১২-তে একশো কোটি ডলারে কিনে নেন ফটো অ্যাপ্লিকেশন ইন্সত্রাগ্রাম। এখ পর্যন্ত মোট ৪৩ টি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কিনেছে ফেসবুক, যার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল হোয়াটস অ্যাপ। এটি কিনতে পাক্কা ১৯০০ কোটি ডলার খরচ করেছে ফেসবুক।
সবকিছুতেই লাইক
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে লাইক যুক্ত হয়। ওই লাইক আসার পর ফেসবুক আরও জনপ্রিয় হয়েছে। ফেসবুকে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চারশো কোটি লাইক দেন এর ইউজারেরা। লাইকের পাশাপাশি এখন ডিজলাইকের জন্যও দাবি করছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।
ফেসবুকের ব্যর্থতা
২০০৭ এ বিকন নামে একটি সেবা চালু করেছিল ফেসবুক।থার্ড সাইটে ব্যাবহার কারীকে ট্র্যাক করার ওই সেবাটি দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক। এছাড়া ফেসবুক ফোনের চেষ্টাতেও সফল হয় নি ফেসবুক।
ফেসবুক মৃত্যুশয্যায়
মার্কিন গবেষকেরা দাবি করেছেন, ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পালা শুরু হয়েছে। ১২০ কোটি ব্যবহারকারীর ফেসবুক আর হয়তো বেশিদিন তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে না। গবেষকদের ভবিষ্যৎবাণী যদি সত্যি হয়, ২০১৭ সাল নাগাদ ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ৮০ শতাংশ কমে যাবে এবং একসময় হারিয়েই যাবে জুকারবার্গের ফেসবুক। গবেষকেরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ফেসবুক শেয়ারের দাম বাড়লেও ২০১২ থেকে ফেসবুকের ডাটা ব্যবহার কমেছে। এ বছরের ডিসেম্বর নাগাদ ফেসবুকের ব্যবহার ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
ফেসবুকের সব একাউনট মানুষের নয়
বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২০ কোটিরও বেশি। কিন্তু ফেসবুকের যত একাউনট আছে, সব একাউনটধারীই কি মানুষ। প্রযুক্তি- গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইমাকেতার্সের গবেষকেরা হিসেব করে দেখেছেন, ফেসবুকে ১০ শতাংশের বেশি একাউনটের মালিক কোনও মানুষ নয়। ফেসবুকে ১০ কোটিরও বেশি প্রোফাইলের কোনটি পশু, বস্তু বা ব্র্যান্ডের নামে। আর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে তিন কোটি মানুষ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন।
ফেসবুকে জুকারবার্গ চতুর্থ
সবার আগে ফেসবুক ইউজ করেছেন কে? অনেকেই হয়তো ধারণা করেন যে, ফেসবুকের সহ- প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সিইও মার্ক জুকারবার্গ ছাড়া আর কে হবেন তিনি! কিন্তু ইউজারের তালিকায় জুকারবার্গ চতুর্থ। তা হলে তার আগে ফেসবুকে একাউনট খুলেছিলেন কে? আগের তিনটি একাউনট খোলা হয়েছিল ফেসবুক পরিক্ষামুলকভাবে চালানোর জন্য। প্রথম দশজন ফেসবুক ব্যবহারকারী সবাই ছিলেন মার্কের পরিচিত।
ফেসবুকে কাটানো সময়
ফেসবুক ব্যবহারকারী তরুণদের গড়ে ৩০০জন করে বন্ধু রয়েছে। আর ৭৫ জন তরুনের সাথে তার অভিভাবকেরা ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছেন। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা প্রতিমাসে গড়ে আট ঘণ্টা ফেসবুকেই কাটান।
বিষয়: বিবিধ
১২৪১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন