অনলাইনে মিথ্যা প্রচার করলে কি গুনাহ হবে?
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০২:৩৫:৫৮ রাত
চলার পথে বলার তালে খেলার ছলে অনেক সময় আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি। তাই অবলীলায় মিথ্যা বলি। ভাবছি একটু মজা করলাম এই আর কি! কিন্তু এটা আদৌ কতটুকু গ্রহণযোগ্য? হোক শরীয়তে কিংবা সমাজে?
রসুলুল্লাহ (স) মিথ্যাকে সকল পাপের জননী আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে তার সত্যপন্থী বান্দাদের সাথী হতে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর আর সত্যবাদীদের শামিল হও।’ (সূরা তাওবা, আয়াত ১১৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
عليكم بالصدق، فإن الصدق يهدي إلى البر وإن البر يهدي إلى الجنة، وإن الرجل يصدق ويتحرى الصدق حتى يكتب عند الله صديقا
‘তোমরা সত্যকে অবলম্বন কর। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকে, একপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়।’
এটা হাদীসের প্রথম অংশ, দ্বিতীয় অংশ-
وإياكم والكذب، فإن الكذب يهدي إلى الفجور، وإن الفجور يهدي إلى النار، وإن الرجل يكذب ويتحرى الكذب حتى يكتب عند الله كذابا.
‘আর মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কারণ মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬০৭)
অনলাইনে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে একটা অসুস্থতা বেশ প্রচলিত আছে। সেটা হলো লাইক, কমেন্ট কিংবা ফলোয়ার বাড়ানোর আশায় একশ্রেণির মানুষ নিয়মিত মিথ্যার চাষাবাদ করে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কেউ প্রতাড়িত হয়। আর কেউ মিথ্যা তথ্যটাকেই জনম জনম ধরে সত্য বলে বিশ্বাস করে। এসব যারা করেন তাদের অনেকেই ইচ্ছাকৃত এই মিথ্যাচার ছড়ায়। কেউ কেউ মনে করে মজা করলাম, এতে আর এমন কি!
কিন্তু রাসূলে আকরাম (স) বলেন- “তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক, কারণ মিথ্যা ঈমানের পরিপন্থী।” (আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ২৬১১৫)
প্রিয় বন্ধু, একটু খেয়াল করলেই দেখবেন ধর্মীয় মূল্যবোধ ব্যবহার করে আপনার আশেপাশে অনেকেই এই মিথ্যার চাষাবাদ করে। কিন্তু আপনি আমি তাকে এই মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকার জন্য সতর্ক করছি না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় - কেউ একজন ফলোয়ার/লাইক/কমেন্ট বাড়ানোর নেশায় ইন্টারনেট সার্চ করে একটি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত শিশুর ছবি পোস্ট করে বলল ‘এই শিশুটি গতকাল দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে। কেউ আমি না বলে যাবেন না”। এধরণের পোস্টে দেখা যায় জনগণ হাজার হাজার কমেন্ট করেছে ‘আমিন’ বলে। হাজার হাজার মানুষ শেয়ার করেছে নিজেদের প্রোফাইলে। আর লাইকের সংখ্যা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক মানুষ একবারের জন্যও ভেবে দেখলো না যে, আদৌ গতকাল এই ঘটনাটি কোথাও ঘটেছে কিনা! যদি ঘটনাটা ঘটেও থাকে তবে ‘আমিন’ বলে লাভ কি? ‘আমিন’ শব্দের অর্থ কবুল হোক। এখানে কবুল হওয়ার কি আছে? আপনি বরং তার সুস্থতা কামনা করে দোয়া করলেই ভালো করতেন।
সেলিব্রেটি হওয়ার নেশায় একশ্রেণির কুচক্রী বিশেষ করে ফেসবুকে অসত্য, মিথ্যা, গুজব ও বানোয়াট খবর প্রচার করে। কিন্তু এটি যে জঘন্য অন্যায় তারা বুঝতে চায় না। প্রতিটি সচেতন মুমীনের উচিত খবরের সত্যতা নিরূপন করেই সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা। মহান রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনুল কারীমের সুরা আর হুজুরাতের ৬ নং আয়াতে ইরশাদ করেন- “হে ঈমান গ্রহণকারীগণ, যদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ। এমন যেন না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।”
আবুহুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : মুনাফেকদের নিদর্শন তিনটি : কথা বলার সময় মিথ্যা বলা, ওয়াদা করে ভঙ্গ করা এবং আমানতের মধ্যে খেয়ানত করা। (বুখারী, মুসলিম)
হাফস বিন আসেম থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ব্যক্তির মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনবে তাই বলবে। (মুসলিম)
অনলাইন হোক আর অফলাইন হোক, মিথ্যা সকল জায়গাতেই মিথ্যা। মিথ্যা মজা করে বলারও সুযোগ নেই। ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : আমি রসিকতা করি ঠিক, তবে সত্য ব্যতীত কখনো মিথ্যা বলি না। (তাবরানি, সহীহ আল-জামে)।
বিষয়: সাহিত্য
১২৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন