সালাম তোমায় মা...
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:১২:৪৪ রাত
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমিয় বাণী- “কোন কালে একা হয়নি ক' জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্ণী নারী”। ইসলামী আন্দোলনের পথ কোন কালে কোন যূগেই ফুল বিছানো ছিল না। তাওহীদের দাওয়াত আগমনের সাথে সাথেই এ দাওয়াত গ্রহনকারীদের কাছে স্পষ্ট ছিল যে, সংগ্রাম আর কুরবানীই এ দাওয়াতের মূল মন্ত্র। তাইতো খাব্বাব খুবাইব আম্মারদের পাশাপাশি জীবন উৎসর্গ করেছেন হযরত সুমাইয়া (রা) এর মত মায়েরাও। জীবনের সকল শক্তি দিয়ে বাতিলের হুঙ্কারকে স্তব্ধ করে উচ্চারণ করেছেন ‘লা শারীকাল্লাহর দাওয়াত। যে মিছিল হেরার গুহা থেকে শুরু হয়েছিল সে মিছিল কিয়ামত অবধি চলবে। রসুলূল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন- الجهاد ماض إلى يوم القيامة- অর্থাৎ “কিয়ামত পর্যন্তই বাতিলের বিরুদ্ধে জিহাদ তথা সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।”
কবি আল মাহমুদ এর ভাষায়-
“আমাদের এ মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে
আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে,
শত সংঘাতের মধ্যে এ কাফেলায় এসে দাঁড়িয়েছি।
কে প্রশ্ন করে আমরা কোথায় যাবো ?
আমরা তো বলেছি আমাদের যাত্রা অনন্ত কালের।
উদয় ও অস্তের ক্লান্তি আমাদের কোন দিনই বিহ্বল করতে পারেনি।”
গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৮ জন মহিলা নেত্রীকে গ্রেফতার করেছে বাকশালী পুলিশ। মিডিয়ার সামনে তাদের সম্পর্কে ডিসি বিপ্লব কুমার যে বর্ণনা দিয়েছে তাতে সত্যি গর্বে বুকটা ভরে গেছে। শরীরের লোমকূপগুলো নিজের অজান্তেই দাঁড়িয়ে গেছে। নিজের অলক্ষ্যেই মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে- “আল্লাহু আকবার”।
কি তাদের অপরাধ? কেন গ্রেফতার করা হলো এই পর্দানশীন নারীদের? কেনই বা তাদের বিরুদ্ধে এক দুই নয়, ৭ দিন রিমান্ডের আবেদন করা হলো? কেন কোন যুক্তিতে মিথ্যা অজুহাতে আটক এসব নারীদের আদালত জামিনে মুক্তি না দিয়ে উপরন্তু ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলো? আসুন জানার চেষ্টা করি সেই অপরাধের ফিরিস্তি।
প্রথমত: পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দাবি করেছে তাদেরকে নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিডিয়াগুলোও ঢালাওভাবে তাই প্রচার করেছে। প্রশ্ন থেকে যায় নাশকতা আসলে কাকে বলে? কোন একটা বাসায় ২০-৩০ জন একত্রিত হলেই কি নাশকতা হয়ে যায়? অথচ এই মিডিয়া এবং পুলিশই গতকাল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী মেয়রের গুলিতে সাংবাদিক নিহতের ঘটনাকে নাশকতা না বলে দলীয় কোন্দল বলে চালিয়ে দিয়েছে!
দ্বিতীয়ত: কি দিয়ে তারা কিভাবে নাশকতা করেছে? জবাবে বিপ্লব কুমার জানিয়েছে “ওই বাসা তল্লাশি করে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের উদ্দেশে লেখা ৫০টি লিফলেট, ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের জনকল্যাণমুখী আদর্শ সরকার গঠনে নিয়মতান্ত্রিক অন্দোলনের’ ৬৫টি লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতের বিভিন্ন সংগঠনের মাসিক রিপোর্টের পূরণকৃত ৩০টি ও অপূরণকৃত ১৫টি ফরম, বায়তুল মালের একটি রসিদ বইসহ আরো মালামাল জব্দ করা হয়েছে।”
প্রশ্ন হচ্ছে এগুলোর কোনটা দিয়ে নাশকতা করা যায়? জামায়াতের লিফলেট কাছে থাকা কেন অন্যায় হবে? জামায়াত কি নিষিদ্ধঘোষিত কোন জঙ্গি সংগঠন? জামায়াত শুধু নয়, জামায়াতের অনুসরণে এখন অনেক রাজনৈতিক সংগঠনই মাসিক রিপোর্ট রক্ষনাবেক্ষণ করে। সব রাজনৈতিক সংগঠনই অর্থ সংগ্রহ করে। যারা হিসেবের স্বচ্ছতা রক্ষা করেন তারা নিয়মিত রসিদ বইও সংরক্ষণ করেন। সুতরাং কিভাবে প্রমাণিত হয় যে, তারা নাশকতা বা নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন? নাকি দেশে রাজনীতি করাই আজকাল নাশকতা! যদি তাই হয় তবে রাজনীতির নামে আওয়ামী নেতারা সারাদেশে যে শটগানের মহড়া প্রদর্শন করে চলেছে সেগুলো কি? কুষ্টিয়ার আওয়ামী নেত্রী আখি সেলোয়ারের মধ্যে একে-৪৭ নিয়ে ঘুরলেও না নাশকতা হয় না! জামায়াতের পর্দানশীন নারীরা লিফলেট বিতরণ করলেও নাশকতা?
তৃতীয়ত: জামায়াতের এই গ্রেফতারকৃত নারী নেত্রীদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে বিপ্লব কুমার জানিয়েছে আটককৃতদের মধ্যে নাকি বেশ কয়েকেজন যুদ্ধাপরাধীর স্বজন রয়েছেন। বিশাল অপরাধ তো! অবৈধ দখলদার আওয়ামী সরকার যে মিথ্যা অজুহাতে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধী তকমা দিয়ে হত্যা করেছে তা জাতির নিকট স্পষ্ট। তারপরেও যদি তাদেরকে মূল অপরাধী হিসেবেও ধরি, তাতে তাদের স্বজনদের অপরাধ কোথায়? একজনের অপরাধের দায় কোন আইনের মাধ্যমে তার স্বজনদের ওপর চাপানো যায়?
পরিশেষে, কুমার সাহেব আটককৃত জামায়াত নেত্রীদের যে পরিচয় মিডিয়ার সামনে দিয়েছে তাতে গর্বে আমার বুকটা অনেক বেশী প্রশস্ত হয়ে গেছে। ভাবতেও ভালো লাগছে এই ভেবে যে, আমিও একজন জামায়াত নেত্রীর সন্তান। জাময়াত নেত্রীদের পরিচয় দিতে গিয়ে কুমার সাহেব বলেছেন “গ্রেপ্তার হওয়া নারীদের সবাই উচ্চশিক্ষিত। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ডাক্তারসহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত।” আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো পুলিশ দরজা নক করার পর দরজা খুলে দিলে পুলিশ ঐ নারী নেত্রীদের নামাজরত অবস্থায় দেখতে পায়। এবং প্রায় আধাঘন্টা তারা অপেক্ষা করে নামাজ শেষ হওয়ার পর গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
ভাবতে গেলেও গা শিউরে ওঠে! অমন বিপদ মুহুর্তেও আমার মায়েরা আল্লাহকে ভুলে যাননি! বরং বিপদ নিশ্চিত হওয়ার পর তারা পরম করুনাময়ের প্রতি আরো বেশি আস্থাশীল হয়েছেন। নফল নামাজান্তে ফরিয়াদ করেছেন বিশ্ব প্রতিপালকের দরবারে।
তাই আমাদের মায়েদের জন্য আমরা গর্বিত। গর্বিত এই ভেবে যে, আমরা এই মায়েদের উদরেই জন্মলাভ করেছি। আমরা পরম সৌভাগ্যবান। বিপদ আপদ তো আসবেই। এসব জেনেই তো আমরা পথ চলি। আল্লাহ তায়ালা বলেন “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা, জান ও মাল এবং ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। (হে নবী!) আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।”(সূরা আল বাক্বারাহ: ১৫৫) আমরা নিজেদেরকে সে সুসংবাদের অধিকারী মনে করি। জালিমের জুলুম, হিংসুকের হিংসা কিংবা দুষ্কৃতিকারীর ষড়যন্ত্র, কোনকিছুই আমাদের এ পথ থেকে বিন্দুমাত্র সরিয়ে দিতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
সালাম তোমায় মা! আমরা তোমাদের সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করি।
বিষয়: রাজনীতি
৮৬৮০৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তোমাদের ভালোবাসি আল্লাহ সোবাহানাহুওয়াতালার পথে আছো বলে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন