মিয়ানমারের আয়লান, সভ্যতা কোথায়?
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৭:০৭ রাত
আয়লান কুর্দি। সিরিয়ার এই শিশু ঝড় তুলেছিল বিশ্বজুড়ে। নাড়া দিয়েছিল বিশ্বের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে। আয়লান কুর্দির নাম জানা গিয়েছিল। কারণ ভাগ্যাহত এই শিশুর বাবা-মা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। মিডিয়ার কাছে বলতে পেরেছিলেন ওর নাম আয়লান। ও আমাদেরই সন্তান। কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বর্বরোচিত নিষ্ঠুরতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে নাফ নদী অতিক্রম করতে গিয়েও প্রাণে বাঁচতে পারেননি নাফ নদীর তীরে পড়ে থাকা অজ্ঞাত এই মুসলিম শিশুর বাবা-মা। তাই ওর নাম কেউ জানে না। সোশ্যাল মিডিয়ার ওর নাম মিয়ানমারের আয়লান। কেউবা আয়লান কুর্দির নামের সাথে মিলিয়ে তাকে ডাকছেন আয়লান রোহিঙ্গা বলে।
শুধু এই শিশুটিই নয়। এপর্যন্ত এভাবে বেশ কয়েকটি শিশুর লাশ নাম নদীর তীরে ভেসে এসেছে। কতজন ভেসে উদার বঙ্গোপসাগরে স্থান নিয়েছে তা বলা মুশকিল। জানা গেছে, সোমবার সকালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীর টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদীমুরার বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে একটি নৌকা ডুবে যায়। এ ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়। এক নারীসহ দুইজনকে উদ্ধার করা গেলেও নারী এবং শিশুসহ অন্তত ৩০ রোহিঙ্গা এখনো নিখোঁজ। অনেকেই বলছে, নদী অতিক্রমকালে মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ গুলি করে পুরো পরিবারসহ শিশুটিকেও হত্যা করে। পরে লাশ ভেসে ওঠে। যদিও ছবিতে এই শিশুটির গায়ে কোনো রক্ত বা গুলির দাগ দেখা যায়নি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি ছবিতে এরকমই আরও কিছু শিশুর ছবি পাওয়া যাচ্ছে। যে শিশুদের লাশগুলো রক্তাক্ত, গুলিবিদ্ধ। Arakan News Agency - ANA English এর ফেসবুক পাতায় মিলেছে এসব ভাগ্যাহত আয়লানদের ছবি।
সভ্যতার উৎকর্ষতার সাথে সাথে মানুষ দিন দিন কতটা অসভ্য হয়ে উঠেছে তা এই ছবিগুলো প্রমাণ দিচ্ছে প্রতিদিন। শুধুমাত্র মুসলমান পরিচয়ের কারণে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে মুসলিম জনপদগুলো হয়ে উঠছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উন্মুক্ত প্লেগ্রাউন্ড। প্রতিটি আয়লান যেন চিৎকার করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিচ্ছে ‘মুসলমানের মানবাধিকার থাকতে নেই’। বিশ্বজুড়ে এত এত মানবাধিকার সংস্থা, এত এত আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘ কিংবা ওআইসি কেউই মূলত মানবাধিকার রক্ষায় উপযূক্ত ভূমিকার পালন করছে না। করতে পারছে না। মানুষ যদি না বাঁচে, মানবাধিকার যদি রক্ষা করা না যায়, মানুষ হিসেবে যদি দুনিয়ার বুকে বসবাসের অধিকার না থাকে, তবে কিসের এত সংস্থা? কি প্রয়োজন এদের?
যূগ যূগ ধরে চলা বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব, অত্যাচার, নিপীড়ন আর হত্যাযজ্ঞ থেকে শিক্ষা নিয়ে আজ মিয়ানমারের মত একটি অখ্যাত উগ্রবাদী রাষ্ট্রও মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানোর সাহস পাচ্ছে। মুসলমানদের অনৈক্য আর ভ্রাতৃঘাতী অবস্থানের সুযোগ নিয়ে মানবতা লঙ্ঘনের নগ্ন প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদী রাষ্ট্রগুলো। কোন কোন দেশে গো-হত্যার চেয়ে মুসলমানহত্যা এখন অনেক বেশী সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু হুশ ফেরেনি বিশ্বের মুসলমানদের। সভ্যতার নামে পৃথিবীর বাহ্যিক যে রূপ আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে তার ভিত্তি মূলত রচিত হয়েছে মুসলমানদের রক্তের ওপর। সভ্যতার নামে তাই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অসভ্যতা আর অমানবিকতার নগ্ন প্রতিযোগিতা। যে প্রতিযোগিতায় পিষ্ট হচ্ছে প্রতিদিন আয়লানের মত অগণিত শিশু।
[ভিডিও দেখুন]
বিষয়: আন্তর্জাতিক
৩৩৩১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সভ্যতার কবর অনেক আগেই রচিত হয়েছে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন