সৃষ্টির খেলা ও বিশ্বাসের পার্থক্য

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ০৩ অক্টোবর, ২০১৬, ০৭:০১:২৮ সন্ধ্যা



শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। জ্ঞান আর বিবেকবোধের কারণেই তার এই শ্রেষ্ঠত্ব। শারীরিক দিক থেকে অন্যান্য অনেক প্রাণীর চেয়ে ঢের দূর্বল করে সৃষ্টি করা হলেও জ্ঞান, বুদ্ধি আর বিবেকবোধের দিক থেকে মহান রব্বুল আলামীন অনেক বেশী এগিয়ে রেখেছেন মানুষকে। আর সে যেন তার দূর্বলতা ভুলে না যায়, কিংবা তার সৃষ্টি রহস্য ভুলে না যায় সেজন্য মহান রব্বুল আলামীন বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন- “আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করি নি? (মুরসালাতঃ ২০)

মায়ের গর্ভে সুরক্ষিত অবস্থায় অত্যন্ত দূর্বল দেহের মানুষ দুনিয়ায় ভুমিষ্ট হয়ে জ্ঞান-বুদ্ধিতে একটু একটু করে বেরে ওঠে। হাটি হাটি পা পা করে চলতে শেখে এই নশ্বর দুনিয়ার বুকে। তখন মাথায় চিন্তা আসে কে তাকে সৃষ্টি করলো? নাকি সে প্রাকৃতিক নিয়মেই সৃষ্টি? কেন তাকে সৃষ্টি করা হলো? নাকি তাকে সৃষ্টির পেছনে কারোই কোন উদ্দেশ্য নেই? স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দা পেরিয়ে সে হাজারো চিন্তার গলিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে। জড়বাদী গলি, নাস্তিক্যবাদী গলি, বস্ত্তবাদী গলি, যুক্তিবাদী গলি, ধর্ম নিরপেক্ষ গলি, অদৃষ্টবাদী গলি, মুক্তবুদ্ধি গলি আর কত কি! যার হৃদয়ে বিশ্বাসের বীজ লুকায়িত থাকে সে অনায়াসেই পেয়ে যায় সরল-সঠিক পথের সন্ধান। অবিশ্বাসীদের একটি দল দেব-দেবী আর প্রাণ-প্রকৃতির মাঝে খুঁজে ফেরে প্রভূর সন্ধান। আর জীবনের অংক মেলাতে ব্যর্থ নাস্তিক্যবাদীরা জীবন নাট্যের শেষাংশে এসে সবেমাত্র ভাবতে শুরু করে “দুনিয়ার কোনকিছুই অনর্থক অযাচিতভাবে সৃষ্টি হয়নি। হয়তো এসবের পেছনে অনেক বড় উদ্দেশ্য রয়ে গেছে।” কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে তার এ উপলব্ধি তার জন্য হতাশা ছাড়া আর কিছুই কুড়ায় না।

আধুনিকতার নামে আজকাল তরুন প্রজন্মের একটি বিপথগামী অংশ জোর গলায় বলার চেষ্টা করছে যে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। কিন্তু এর বাস্তবতা কতখানি তা বিবেকবান মাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন। প্রথমত: ধর্মীয় আচার আচরণ পালন ও উদযাপনের ক্ষেত্রে ইসলামে কঠোর এবং সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এক আল্লাহর বন্দেগী ছাড়া সেখানে শিরক ও বিদয়াতের কোনই স্থান নেই। বরং মহান রব্বুল আলামীন ঘোষণা করেছেন - “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা তার সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্য সকল গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন”(সুরা নিসা: ৪৮)। তিনি আরো সতর্ক করে বলেন- “নিশ্চয়ই যে আল্লাহ’র সাথে শিরক করবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।”(সূরা মায়িদাহ: ৭২)

প্রগতি আর মুক্তবুদ্ধির চর্চার কথা বলে কিংবা অতিমাত্রায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখাতে গিয়ে যারা শিরকে আকন্ঠ নিমজ্জমান ধর্মের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের শামিল হন এই বলে যে, ‘ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে নয়, সম্প্রীতি রক্ষার জন্যই সেখানে যাচ্ছি’ তাদের জন্য উপরোল্লিখিত আয়াত দুটির মধ্যে স্পষ্ট হুশিয়ারী রয়েছে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে আমাদের সম্প্রীতির ইতিহাস দীর্ঘদিনের। তাই বলে কি তারা আমাদের ঈদ কিংবা কুরবানীতে আমাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক? কিংবা আদৌ কি তারা কখনো আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানসমূহে অংশগ্রহন করে? করে না। এর নাম সম্প্রীতি নয়, সর্বোচ্চ ধর্মীয় দেউলিয়াপনা বলা যেতে পারে।

তাছাড়া, কোন কাজে উপস্থিত হওয়ার আগে অন্তত সে কাজের যৌক্তিকতা ও ন্যুনতম গ্রহনযোগ্যতা থাকা চাই। আমাকে জ্ঞান ও চিন্তার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আমি এখন কোন পথে চলব? রাস্তা দিয়ে রথ যাচ্ছে। নিজেদের হাতে গড়া দেবমূর্তি নিয়ে মানুষ চলছে। সারাদিন পূজা দিয়ে এবার তাকে ডুবিয়ে দেবে। কি হলো এতে? কি পেলাম তাতে? কোন জবাব না পেয়ে কবি গেয়েছেন -

‘রথযাত্রা সমারোহ মহা ধূমধাম,

ভক্তেরা সব লুটিয়ে শির করিছে প্রণাম।

রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি।

মূর্তি ভাবে আমিই দেব হাসে অন্তর্যামী।’



এ কথাগুলো কোন প্রকার বিদ্বেষ থেকে বলছি না। আমার ধর্মবিশ্বাসের যৌক্তিকতা বোঝার জন্য বোঝানোর জন্য বলছি। নিজের ঈমানকে পরিশুদ্ধ রাখতে পারার মধ্যেই জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার হিসেব নিহিত রয়েছে। এক বালতি দুধ নিমিষেই খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়, যদি তার মধ্যে এক ফোঁটা মূত্র যুক্ত করা হয়। প্রগতিবাদের নাম দিয়ে নিজের জীবন ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে সামান্য পথ অগ্রসর হলেও পুরো পথচলাই ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, এ পথচলার সাথে বিশ্বাসের সম্পর্ক। আমি আমার রবের প্রতি জুলুম করে অন্যের হাতে তৈরী দেবতাকে প্রণাম করতে পারি না। এটা সম্পর্ক নয়, দেউলিয়াপনা। আর মহান রব্বুল আলামীন তো বলেই রেখেছেন - “নিশ্চয়ই শিরক একটি মস্ত বড় জুলুম (অন্যায়)”(সুরা লোকমান: ১৩)।

দুনিয়ার সামান্য উৎসব, আনন্দ আর মাস্তি করতে গিয়ে আখেরাতের মূলধন হারানোর মত বোকামী আর কিছু হতে পারে না। মহান রব্বুল আলামীনের মনোনীত একমাত্র জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের নির্দেশনা খুবই স্পষ্ট। এখানে গোঁজামিলের আশ্রয় নেয়ার কোন সূক্ষ্ম সুযোগও রাখা হয়নি। ইসলাম বলে দুনিয়ার এই জীবন তোমার শেষ জীবন নয়। তোমাকে তোমার কর্মের জন্য আখেরাতে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামীন হুশিয়ার করে বলেন – “হে মানুষ! ‘ভয় কর তোমরা সেই দিনকে, যেদিন তোমরা ফিরে আসবে আল্লাহর কাছে। অতঃপর প্রত্যেকেই তার কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’(সূরা আল বাক্বারাহ ২৮১)।

বিষয়: সাহিত্য

২০৩০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378240
০৩ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৮:৫১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


গোঁজামিল দিয়ে মুমিনের জীবন পরিচালনা করার কোনই সুযোগ নেই।


হৃদয়স্পর্শী লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File