গুলশান হত্যাকাণ্ড: তরুণ প্রজন্মকে ধর্মহীন করার দ্বিতীয় পদক্ষেপ
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ১৮ জুলাই, ২০১৬, ০২:০৫:১৫ দুপুর
চিকিৎসার জন্য সাধারণত চিকিৎসকগণ রোগীকে খাওয়ার ট্যাবলেট দিয়ে থাকেন। যা রোগীর অন্ত্র থেকে অন্যান্য খাদ্য উপাদানের সাথে ধীরে ধীরে শরীরের শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এতে যদি কাজ না হয় অথবা চিকিৎসক যদি আরও দ্রুত ফলাফল আশা করেন, তখন তিনি শিরায় ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। যাতে ঐ ঔষধ তথা মেডিসিন আরও দ্রুত শরীরের সব শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে যায়। এবং এতে অনেকটা তাৎক্ষনিক ফলাফলও পাওয়া যায়। দুঃখ প্রকাশ করছি এজন্য যে আমি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র নই। বলতে পারেন বিজ্ঞানের বারান্দা দিয়েও হাঁটার সৌভাগ্য হয়নি। তবে জীবনে অসুস্থ রোগীদের শুশ্রুষা করার এবং পাশে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে বেশ। আর সে অভিজ্ঞতা থেকেই উপরের কথাগুলো লেখা।
শাহবাগে কথিত গণজাগরণের নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যানারসর্বস্ব কিছু নাস্তিক আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধর্মদ্রোহিতা ও ধর্মহীনতার ট্যাবলেট খাওয়ানোর ব্যর্থচেষ্টা চালায়। কিন্তু অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে বিবেকবান ধর্মপরায়ণ জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়ে যায় তাদের নেপথ্যে থাকা নাস্তিক্যবাদী ভয়াল চেহারা। ফলে সচেতন তরুণ সমাজকে এক প্রকার জোর করেও গেলানো সম্ভব হলোনা ধর্মহীনতার সেই তেতো ট্যাবলেট। বলা যায় এক প্রকার ব্যর্থ প্রজেক্ট। কিন্তু তাতে একদমই দমে যায়নি রাম-বামদের সম্মিলিত এই কুচক্র।
ইনিয়ে বিনিয়ে বিভিন্নভাবে পুশ করতে থাকে জঙ্গিবাদ নামক বিভিন্ন পাওয়ারের ইনজেকশন। যার অন্যতম একটি হাই পাওয়ার ইনজেকশন ছিল গুলশান হত্যাকাণ্ড। এর টার্গেট ছিল বহুমুখী। তবে প্রধানতম টার্গেট দু’টি।
এক. জঙ্গি হামলার ভয়াবহতা দেখিয়ে তথাকথিত মুক্তমনা নামধারীদের উপর জনমনে যে ঘৃণা জন্মেছে তার থেকে কিছুটা নমনীয় পর্যায়ে এনে সহানুভূতি আদায়।
দুই. ইসলাম ও জঙ্গিবাদকে একাকার করে দিয়ে জনসাধারণকে ধর্মহীনতার দিকে আহ্বান।
চলুন এবার মিলিয়ে দেখা যাক। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোট যখনই আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে, তখনই রাম-বামদের মদদপুষ্ট অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সরকার আইএস আইএস বলে চিৎকার করে গলা ফাটিয়েছে। ‘র’ আর ডিজিএফআই এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে আনসারুল্লাহ, আল্লাহর দল, হিযবুত, বাং-লাটিম, হিন্দি টিম এর মত নানা নামে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয় কথিত জঙ্গি সংগঠন। আর মিডিয়ার সামনে এসে ডিবির মনিরুলের স্বভাবসুলভ হাসি আর পুলিশের গোপালি অফিসারদের সাজানো গল্পগুলো তো সবার একপ্রকার মুখস্ত। সাজানো এসব গল্পের সুযোগ নেয় উগ্র জঙ্গিরা। কুপিয়ে, গুলি করে নিত্য নতুন নৃশংসতার চর্চা করে তারা। আর সে সুযোগ নিয়ে নাস্তিক্যবাদীরা সারাবিশ্বের মানুষের কাছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে জানিয়েছে এদেশে ভিন্নমতের মানুষদের মোল্লারা কেটে টুকরো করে ফেলছে। ধর্ম পালনের নামে জঙ্গিবাদ চলছে। আরও কত কি!
সুশীল নামক কুশীলবরা পত্রিকার কলামে টেলিভিশনের টক-শোতে ইচ্ছামত ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। নিন্দিত করে তুলেছে ইসলামী অনুশাসনকে। এমন একটি পরিবেশের সৃষ্টি করতে চেয়েছে যেন মানুষ ধর্মপ্রাণ কাউকে দেখলেই কপালে ভাঁজ ফেলতে বাধ্য হয়। যে জিহাদ মুসলিম উম্মাহর রক্ষাকবচ, পরিস্থিতি এমন করেছে যেন জিহাদ নাম শুনেই যেন আঁতকে ওঠে। ইসলাম নাম শোনার সাথে সাথে যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে চকচকে চাপাতি। মাদ্রাসা, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, আলেম ওলামার নাম শুনলে যেন আজরাইলের কথা মনে পড়ে যায়। আর সত্য উদঘাটনের বদলে ধর্মপ্রাণ ছাত্র সমাজের উপর ব্লেম চাপাতে কমজোর পুলিশ বাহিনী হয়ে ওঠে সিদ্ধহস্ত। কুরআন, হাদীস আর ইসলামী সাহিত্যের বই-পত্রকে তারা জিহাদী বই বলে চালিয়ে দিয়েছে প্রতিনিয়ত।
আর দ্বিতীয় পদক্ষেপটি আরো অনেক গভীর, অনেক বেশি সুদূরপ্রসারী। যা গুলশানের নৃশংস হামলার পর ভালোভাবে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। গুলশান হামলায় দেখা যায় যেসব জঙ্গী এই নৃশংস কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেছে তারা সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য হওয়ার সুবাদে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যাদের অধিকাংশই স্কলাস্টিকা, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক ও এআইইউবির শিক্ষার্থী। রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার সন্তান, জায়ান্ট ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী মিডিয়ার মালিকের নাতি। আর এসব দেখে দেশবাসীর চক্ষু চড়ক গাছে উঠতে বাধ্য হয়েছে। কারণ রাম-বাম পন্থী নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠীর সুদীর্ঘ মিথ্যা প্রচারণা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। স্পষ্ট হয়ে যায় মাদ্রাসা মসজিদ ও ইসলামী জীবনাচরণ বিরোধী তাদের সকল মিথ্যাচারের মুখোশ। তবে এতকিছুর পরেও হাল ছাড়েনি নাস্তিক্যবাদী দালাল মিডিয়া। এ নৃশংস হামলাকে পুঁজি করে তারা ধর্মবিদ্বেষ বৃদ্ধি করার দ্বিতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ইনিয়ে বিনিয়ে মিডিয়াগুলো শুরু করে ভিন্ন প্রচারণা। অনেকটা এরকম - ‘আপনার সন্তান কি নামাজ পড়ছে? আগে না পড়লেও নতুন করে কি নামাজী হয়ে যাচ্ছে? নিয়মিত কুরআন-হাদীস পড়ছে? শ্রদ্ধা কাপুরদের সাথে নাচানাচি চালিয়ে যাচ্ছে? নাকি বন্ধ করে দিয়েছে? নাকি কখনোই কাপুরদের সংস্পর্শে যায়নি! ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে এমন কোন বন্ধুর সাথে কি চলাফেরা বেড়েছে?’ তাহলে ধরেই নিন আপনার সন্তান জঙ্গি হতে চলেছে!
বাহ! দারুণ ইনজেকশন। এবং যথেষ্ট দ্রুত ফলাফল দিতে শুরু করেছে এই মরণ সূচ। জাতিকে ধর্মবিমুখ করে তোলার মত এরচেয়ে মোক্ষম কোন অস্ত্র থাকতে পারে বলে আমার জানা নেই। কারণ যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে ন্যূনতম ঘাটাঘাটি করেন তাদের কাছে স্পষ্ট যে, সারাবিশ্বে ইসলামের নাম ব্যবহার করে যেসব জঙ্গিবাদী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তা পশ্চিমা ইহুদী খ্রীষ্টান চক্রের পর্যাপ্ত মদদ ও রসদেই গড়ে উঠেছে। উদ্দেশ্য এখানে স্পষ্ট। আর তা হলো- মুসলমানদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধেই দাঁড় করিয়ে দেয়া। ইসলাম বিরোধী অপপ্রচারের নিত্য নতুন ক্ষেত্র তৈরী করা। আর পশ্চিমাদের ইসলামের প্রতি ঝোঁক রোধ করতে ইসলামফোবিয়া সৃষ্টি করা।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর বাংলাদেশেও সেই ইনজেকশন গত ১ জুলাই গুলশানে পুশ করা হলো। কুটনীতিক পাড়ার মত ভিআইপি জোনে, যেখানে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কয়েক শত সদস্য সার্বক্ষনিক নজর রাখে। বিদেশীদের আবাস ও কর্মস্থল হওয়ায় সেখানে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা চক্রের চলাচলও কম নয়। আর প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্টসহ বিভিন্ন বাহিনীর নজরদারি দেশের যেকোন এলাকার চেয়ে এখানে বেশি। কিন্তু এতকিছু ভেদ করে কিভাবে সেখানে হাতে গোনা কয়েকজন সন্ত্রাসী সেখানে হামলা চালাতে পারে এমন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন দেশবাসীর থেকেই যাবে।
ধর্মদ্রোহীগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণায় কান দিয়ে যদি আমাদের অভিভাবক মহল পরিবার থেকেই সন্তানকে ধর্ম পালনে বাধা দিতে শুরু করেন, তবে তাদের বলে রাখছি - ‘বৃদ্ধাশ্রমে দু’জনের জন্য দু’টি সিট শক্তি সামর্থ থাকতেই বরাদ্দ করে রাইখেন। ভুলে গেলে চলবে না যে, ধর্মই এখনও পর্যন্ত আমাদের পরিবার ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
২২৬৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর বাস্তবধর্মী তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ।
গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন