মিতু মরিয়া প্রমাণ করিলেন: ছাত্রশিবিরের সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক নাই

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ১০ জুন, ২০১৬, ০৩:১৪:১৮ রাত



দেশে আজকাল কোন তদন্ত লাগেনা। ওইসব তদন্ত ফদন্তের ধারও কেউ ধারে না। কোন একটা অঘটন ঘটলে যদি তথাকথিত আইএস দায় স্বীকার করে তো ভাল কথা। অন্যথায় জামায়াত-শিবির কিংবা বিএনপি-জামায়াতের উপর দোষ চাপাতে পারলেই কেল্লা ফতে। আর কোন তদন্তের তখন প্রয়োজনই হয়না।

আইনের শাসন আর মানবাধিকারের এই দূরাবস্থা যারা তৈরী করেছেন বাবুল আকতার তাদের সহকর্মী। তবে তিনি সাহসিকতা দেখিয়ে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছিন। পেয়েছেন সরকারী বেসরকারী অনেক সম্মাননা ও পদক। পুলিশ বাহিনী আর রক্ষীবাহিনী কখনই এক ছিলো না। মিডিয়ার অবাধ প্রবাহের এই যুগে যেহেতু রক্ষীবাহিনীর আদলে আরও একটি সন্ত্রাসীবাহিনী তৈরী করা কষ্টসাধ্য, তাই ধীরে ধীরে পুলিশ বাহিনীকেই রক্ষীবাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে সুকৌশলে। তাতে এক খরচে দুই কাজ হচ্ছে। ফল ঘরে তুলছে অনির্বাচিত অবৈধ সরকার। আর তাদের এই গোলামীর স্বীকৃতি স্বরূপ পুলিশ বেতন-ভাতা পাচ্ছে দ্বি-গুন। আর গ্রেফতার বাণিজ্য, অপহরণ বাণিজ্যের অবাধ সুযোগ তো আছেই।

রমরমা এই বাণিজ্যের সুযোগ নিয়েছে পার্শ্ববর্তী তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র। তারা অর্থ, হাতিয়ার, বুদ্ধি সবকিছু দিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গিবাদ। কারণ, দেশের অভ্যন্তরীন পরিবেশ খারাপ করে অবৈধ জনসমর্থনহীন সরকারকে চাপে রাখতে পারলেই ইচ্ছামত আদায় করে নেয়া যাবে নিজেদের স্বার্থ। আর এর মাধ্যমে তারা ইতোমধ্যেই ট্রানজিট, ইন্টারনেট ব্যন্ডউইথ, চাকরির বাজার, পণ্যের বাজার আরও অনেককিছু দখল করতে সামর্থ হয়েছে।

দাদাবাবুদের স্বার্থে তাই আমাদেরই মিডিয়া ও পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলেছে নানা বাহারী নামের জঙ্গি সংগঠন। এদের কেউ বাংলাটিম, কেউ হিন্দিটিম, কেউ আইএস, কেউ জেএমবি, কেউবা হুজি। এরা বিভিন্নভাবে দায় স্বীকারও করে। কিন্তু ঘটনা, অঘটন কিংবা দুর্ঘটনা ঘটার পরে এদের খুব অল্প স্ংখ্যকই গ্রেফতার হয়। পরিচয় প্রকাশ হয় খুবই অল্প সংখ্যকের। “ঝোলের লাউ আর অম্বলের কদু”র মত করে গণগ্রেফতার চালানো হয় দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের উপর।



এইতো মাত্র ক’দিন পূর্বের কথা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্যাহত শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। জঙ্গি হামলায় নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীন শিক্ষক অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী। আর এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত না করেই গ্রেফতার করা হয় মরণঘাতি ‘থ্যালাসেমিয়ায়’ আক্রান্ত মেধাবী ছাত্র হাফিজুর রহমানকে। তার অপরাধ তিনি ছাত্রশিবিরের সদস্যপ্রার্থী ছিলেন। গ্রেফতারের সময়ে নিজের দূরারোগ্য ব্যাধির কথা জানিয়ে আকুতি জানিয়েও রেহাই মেলেনি। রিমান্ডের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অকালেই প্রাণ বিসর্জন দিতে বাধ্য হয় হাফিজ। কিন্তু সেদিন হাফিজ জীবন দিয়েও প্রমাণ করতে পারেননি যে, ছাত্রশিবিরের সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক নাই

এর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিউল ইসলাম লিলনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর দায় স্বীকার করে আইএস। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করে জামায়াত শিবিরের বেশকিছু নেতা-কর্মী। যাদের মধ্যে একজন কলেজের অধ্যক্ষও ছিলেন। অথচ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করে র্যাব। র্যাব ঢাকা ও রাজশাহী শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দোষীদের গ্রেফতার করে। মূল পরিকল্পনাকারীসহ খুনিদের কয়েকজন যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী। এদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, রামদা ও হাঁসুয়া উদ্ধার করে র্যাব। জানা যায়, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে পরিকল্পিতভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলনকে খুন করা হয়। গ্রেফতার ছয়জনকে র্যা ব সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেন, ''পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার সেকশন অফিসার। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল তার সঙ্গে 'অসৌজন্যমূলক আচরণ' করেন এবং এর জের ধরে তাকে হত্যা করার কথা গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছেন।"

অথচ আওয়ামী পুলিশ এ হত্যাকান্ডের পর কোনপ্রকার তদন্ত না করেই দায় চাপায় জামায়াত-শিবিরের ওপর। গ্রেফতার করে কলেজের অধ্যক্ষসহ বেশ কিছু জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। রিমান্ডের নামে চালায় অকথ্য নির্যাতন। দালাল মিডিয়া আর পুলিশ একাট্টা হয়ে সাজায় আনসারুল্লাহ জঙ্গি নাটক।

কিন্তু এসব মিথ্যাচারের পরও তখনও পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি যে, ছাত্রশিবিরের সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক নাই

সবশেষে গত ৫ জুন একইভাবে জীবন দিলেন খ্যাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। আদরের সন্তানকে স্কুলে পৌছে দিতে গিয়ে সন্ত্রাসীর গুলি আর ধারালো অস্ত্রের কাছে থেমে যেতে হয়েছে চিরদিনের জন্য। ফুলের মত ফুটফুটে দু’টি সন্তান রেখে চলে যেতে হয়েছে না ফেরার দেশে। নিরাপরাধ এই নারীর হত্যাকান্ডে যখন সারাদেশের মানুষ গুমরে কাঁদছে, তখনও থেমে থাকেনি প্রশাসনের পোষাকে আবৃত দুর্বৃত্তরা। হত্যাকান্ডের মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জামায়াত-শিবিরকে জড়িয়ে বক্তব্য দেয় নগর পুলিশের উপকমিশনার পরিতোষ ঘোষ। এরপরের কাহিনী আরও ঘৃণ্য। হাটহাজারী উপজেলার ‘মূসাবিয়ার মাজার’এর খাদেম আবু নসর গুন্নুকে গ্রেফতার করে মিতুর খুনী ও “সাবেক শিবিরকর্মী” বলে চালিয়ে দেয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য।



মিডিয়াও এই খবর পাওয়ার সাথে সাথে কোন যাচাই বাছাই ছাড়াই ভট্টাচার্যের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে জোরেশোরে “শিবিরকর্মী” বলে বলে প্রচার করতে শুরু করে।

কিন্তু আগের ঘটনাগুলোর মতই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। মুসাবিয়ার মাজারের একপক্ষের নিকট থেকে ৩০ লক্ষ টাকা ঘুষ খেয়ে গুন্নুকে ফাঁসিয়ে দেয়ার খবর বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসে পুলিশের ন্যাক্কারজনক নাটকের আসল খবর। আদালতেও প্রশ্নবিদ্ধ হয় কথিত ‘শিবিরকর্মী’ গুন্নুর গ্রেফতার। অমীমাংসিত থেকে যায় অনেক প্রশ্নের উত্তর। আর সেগুলো হলো –

• কেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য সময়মত মাহিরকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যায়নি?

• নিহত মিতুকে ও আশেপাশের ফ্ল্যাটের লোকদের কে মিথ্যা এসএমএস করেছিল?

• নিহত মিতুর মোবাইল ফোনটি কিভাবে গচ্ছা গেল?

• কেন পুলিশের সিসি ক্যামেরাগুলো অচল ছিলো?

• কেন যথাসময়ে পুলিশ শহর থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলো বন্ধ করতে পারেনি?

• পার্শ্ববর্তী কালিমন্দিরের ক্যামেরায় স্পষ্ট ফুটেজ থাকার কথা, কিন্তু কে বা কারা সেই ভিডিও ডিলিট করলো?

• পুলিশের বেষ্টনী ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়েই কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত ভিডিও ফুটেজ মোবাইল ফোন গায়েব হয়ে গেল?



এত এত প্রশ্ন থাকার পরেও পুলিশের নাটকের আসল ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় এতটুকু নিশ্চিত হওয়াই যায় যে, এ ঘটনার সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম সম্পর্কও নেই। পুলিশের ধাপ্পাবাজি আর দালাল মিডিয়ার ভেলকিবাজিকে ছাপিয়ে যে সত্য বেরিয়ে এসেছে তা বোধকরি কোন কিছু দিয়েই ঢেকে ফেলা সম্ভব নয়। বাবুল আকতার আর তার মা-হারা সন্তানেরা সঠিক তদন্ত আর আসল দোষীদের বিচার কোনদিন চোখে দেখতে পারবে কিনা জানিনা। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথের ‘কাদম্বিনীর’ মত ‘মাহমুদা খানম মিতু’ মরিয়া প্রমাণ করিলেন – ‘ছাত্রশিবিরের সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক নাই’

বিষয়: বিবিধ

২৯১৭০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371581
১০ জুন ২০১৬ রাত ০৩:৩১
ইরফান ভাই লিখেছেন : অবৈধ সরকার "ফুলিশের অবৈধ বাণিজ্য মন্ত্রী" এবং "জঙ্গী তথ্য মন্ত্রী" নামক দুইটি মন্ত্রনালয় খুললে অবাক হব না।তবে আপনার শিরোনামের সাথে একমত।
১০ জুন ২০১৬ রাত ০৩:৩৯
308356
স্বপ্নচারী মাঝি লিখেছেন : ধন্যবাদ
371582
১০ জুন ২০১৬ রাত ০৪:১৪
শেখের পোলা লিখেছেন : জঙ্গী খুনী কোন কিছুতেই তাদের কিছু এসে যায়না। তাদের উদ্দেশ্য পথের কাঁটার সমূলে বিনাশ। কিন্তু তাদের কে বলেদেবে যে, জামাত শবিরকে কোন ভাবেই নির্মূল করা যাবে না। ধন্যবাদ।
371584
১০ জুন ২০১৬ রাত ০৪:৫১
কুয়েত থেকে লিখেছেন : পুলিশের বেষ্টনী ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়েই কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত ভিডিও ফুটেজ মোবাইল ফোন গায়েব ..?? ভালো লাগলো অনেক অনেক ধন্যবাদ
371604
১০ জুন ২০১৬ সকাল ১১:০২
হতভাগা লিখেছেন : পুলিশের লোকের আপনজনের উপর ঘটনা ঘটেছে , দেখা যাক পুলিশ এটাকে কিভাবে ডিল করে ।

সঠিকভাবে না করলে এরকম ঘটনা যে কাউরই উপরে ঘটতে পারে ।
371668
১১ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:৪৫
আকবার১ লিখেছেন : জামাত শিবিরের নেতাদের ফাঁসি দিচ্ছে।
জামাত শিবিরের গায়ে "জঙ্গী" লেপন করছে।


মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File