সাবিরা শিখিয়ে যায় অনেক কিছু
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ২৬ মে, ২০১৬, ০১:৩৮:৪৬ রাত
প্রথম যখন ‘ক্যালেন্ডার গার্ল’ শব্দটি শুনেছিলাম বেশ অবাক হয়েছিলাম। ভেবে পাচ্ছিলাম না এটা কি ধরণের শব্দ। ক্যালেন্ডারের সাথে বালিকার কি সম্পর্ক থাকতে পারে! পরে যখন বুঝতে পারলাম তখন অবাক হয়েছি এই ভেবে মানবাধিকার কি নারীদের থাকতে নেই! তারা কি ক্যালেন্ডার হওয়ার যোগ্য হয়ে গেছে!
মডেল, ক্যালেন্ডার গার্ল, নায়িকা, অভিনেত্রী, স্টার, সুপারস্টার ইত্যাদী নানা বাহারী নামে ডাকা হলেও মূলত এ সবকিছুই যে পুজিবাদী সমাজের ভোগবাদী লালসার সৃষ্টি তা বুঝতে খুব বেশী মেধা খরচের প্রয়োজন হয় না। আবেদনময়ী, লাস্যময়ী, বিশ্বসুন্দরী, নানান কুরুচীপূর্ণ ট্যাগ যুক্ত করে অশালীন অঙ্গভঙ্গিকে ‘সাহসী’ বলে প্রচার করে মূলত নারীভোগের রাস্তাই পরিস্কার করা হয়ে থাকে।
ইদানিংকালে তাই মুখ খুলতে শুরু করেছে উদীয়মান বেশ কয়েকজন মডেল ও অভিনেত্রী। কথা বলতে শুরু করেছেন মিডিয়া জগতের অন্ধগলি নিয়ে। ‘গিভ এন্ড টেক’ পরিভাষা নিয়ে। কিন্তু তাতে কি! অর্থ বিত্তের মোহ আর শারীরিক চাহিদার ফাঁদে পা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত হাজারো তরুণ-তরুণী। প্রগতির নামে নিজেদের ছুড়ে দিচ্ছে লালসার অগ্নিকুন্ডে।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে কথিত এইসব মডেল আর তারকাদের আত্মহত্যার ঘটনা কম নয়। নিজেকে গ্ল্যামার হিসেবে পরিচিত করতে গিয়ে এদের অধিকাংশই বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে নতুবা জীবনের এই সাময়িক নোংরা আনন্দ লাভ করতে গিয়ে হতাশ হয়ে এ পথটাই তাদের বেছে নিতে হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই দোষটা শুধুমাত্র নারীদের দিতে নারাজ। কারণ আমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতাটি সমর্থন করি, যেখানে তিনি বলেছেন- “অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ-পুত্র হয়, অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়!”
তথাকথিত আধুনিকতা আর বখে যাওয়া নষ্ট সংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে অবগাহন করতে গিয়ে আজ পুরো জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ধর্মকে অবজ্ঞা করে পর্দাকে দূরে ঠেলে দিয়ে পশ্চিমা নগ্ন সংস্কৃতিকে আকড়ে ধরতে গিয়ে আজ আমাদের সমাজে আমাদের মধ্য থেকেই গড়ে উঠেছে সাবিরা, তিন্নি, রাহা, মিতা নূর, ডলি আনোয়ার এর মত আরো অনেকেই। অনেকে আবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে নামেমাত্র জীবন নিয়ে বেঁচে আছেন। আর এসবের নেপথ্যের কারণ বিশ্লেষণ করলে যা পাওয়া যায় তা হলো - প্রেম, পরকীয়া, অবৈধ অনিয়ন্ত্রিত শারীরিক সম্পর্ক।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ইউরোপ আমেরিকা কিংবা পার্শ্ববর্তী ভারতেও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে শুধু এই অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে। যে জাতি যত প্রগতির নামে নোংরামিতে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে, সে জাতি ততটাই আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজটিকে সমাধানের রাস্তা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। আর তাই দেখা যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর তুলনায় অন্যান্য দেশগুলোতে আত্মহত্যা, খুন-খারাবি কিংবা অপরাধপ্রবণতা অনেকগুনে বেশি।
সাবিরা, তিন্নি, রাহা আর মিতা নূরের মত তরুণীরা তাই আমাদের অনেক বড় বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা, অধিকার আর প্রগতির নামে যাচ্ছেতাই জীবন যাপন যে সুখের সন্ধান দিতে পারে না তা আমাদের বারবার বলে যাচ্ছে। লাগামহীন জীবন যাপনের মাধ্যমে অশ্লীলতা আর বিকৃত সংস্কৃতির চর্চা যে কতখানি ভয়ানক তা জাতীয়ভাবে উপলব্ধি করার সময় এসেছে।
সেইসাথে মহান রব্বুল আলামীনের এই বাণীটিও স্মরণ রাখা দরকার - ‘যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’(সূরা নুর : ১৯)। রাসূলে আকরাম (স) বলেছেন: “যখন কোন সম্প্রদায়ে বা কোন জনপদে সূদ ও ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে, তারা নিজেরা আল্লাহর শাস্তিকে অবধারিত করে নিবে” (মুসনাদে আহমাদ)
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৭৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্যক্তিগতভাবে আমি এই দোষটা শুধুমাত্র নারীদের দিতে নারাজ। কারণ আমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতাটি সমর্থন করি, যেখানে তিনি বলেছেন- “অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ-পুত্র হয়, অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়!”
অসাধারণ অনুভুতি ও শাণিত বিশ্লেষণ মাশাআল্ললাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন