একজন শিল্পমন্ত্রীর ফাঁসি এবং...
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ০৯ মে, ২০১৬, ০৮:৫৯:৫৭ রাত
রুপকথার গল্প মনে হলেও এটাই বাস্তব যে, আমাদের দেশটাকে যারা নতুন করে গড়ার চেষ্টা করেছেন, গাদ্দার জাতি হিসেবে আমরা তাদের কাউকেই বাঁচতে দেইনি। অথবা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করতে দেইনি। স্বাধীনতা লাভ করার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই যে জাতির অবিসংবাদিত নেতা আক্ষেপ করে বলেছিলেন “সবাই পায় সোনার খনি, আমি পাইলাম চোরের খনি” ঠিক সে দেশের জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দুই দুইটি মন্ত্রনালয় পরিচালনা করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন ১টি টাকা দুর্নীতি না করেও এদেশে মন্ত্রনালয় পরিচালনা করা যায়।
কথাগুলো যখন লিখছি তখন কষ্টে বুকটা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এইতো আজই এক পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম বাংলাদেশের লবনশিল্পের করুণ অবস্থা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেশের মত ছোট্ট এই দেশটিকে বিশাল সমুদ্র দিয়েছেন। আর সমুদ্র যে কত বড় নেয়ামত তা বিস্তারিত লিখে পাঠকের সময়ক্ষেপন করতে চাই না। সেই সমুদ্র থেকেই আমাদের দেশের লবনচাষীরা প্রাকৃতিক উপায়ে লবন উৎপাদন করে আসছে যুগের পর যুগ। এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ আজ সেই লবন শিল্প বন্দী হয়ে পড়েছে ভারতের চক্রান্তের জালে। খবরের কাগজ বলছে “মাঠে পড়ে আছে ৫ লাখ মেট্রিক টন অবিক্রীত লবণ, বিপর্যস্ত স্বনির্ভর শিল্প।”
খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জকেন্দ্রিক পরিতোষ গংদের ‘সিক্সমিল সিন্ডিকেট’ সরকারকে ভুল বুঝিয়ে এবং দেশে কৃত্রিম লবণ সংকট দেখিয়ে ভারত থেকে লবণ আমদানি করে আসছিল প্রতিবছর। এতে নিজেরা লাভবান হলেও দেশের স্বনির্ভর লবণ খাতকে বিপর্যস্ত করে রাখে চিহ্নিত চক্রটি।
লবণ ব্যবসায়ী কাজী আবুল মাসুদ জানান, সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে কক্সবাজারের লবণ শিল্পকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে একটি চিহ্নিত চক্র। নারায়ণগঞ্জের পরিতোষ কান্তি সাহা সিন্ডিকেট করে দেশের একমাত্র লাভজনক খাতকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে আরো বড় ৫টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এই পরিতোষ কান্তি সাহারা আজ নতুন নয়। আমাদের দাদা পরদাদাদের শোষণ করে জমিদারি পরিচালনা করে কলকাতায় অট্টালিকা নির্মাণের প্রতিযোগিতার ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। এদেশে তখন থেকেই ব্যবসায়িক অঙ্গনে দাদা বাবুদের জয়জয়কার। দেশের সকল সরকারকে কখনো বৃদ্ধাঙ্গুলি আর কখনো মূলা দেখিয়ে তারা সবসময় বাজার নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেছে।
কিন্তু এ অবস্থার জন্য দায় কার? যে সরকার ভারত থেকে লবন আমদানির সুযোগ দেয়, সে সরকার কি জানে না যে, এতে দেশের কৃষক, শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে? শুধু লবনই নয় গতবছরে দেশের বেশ কয়েকটি বৃহৎ সুগারমিলে কোটি কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত রয়ে গেছে একই কারণে। গতবছর পঞ্চগড় চিনিকলে ৪০ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত ছিল। দেশের প্রায় প্রতিটি চিনি কলের আজ প্রায় একই অবস্থা। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আখ ছেড়ে ক্ষতিকর তামাক চাষে উৎসাহী হচ্ছে কৃষক। এসব লোকসানের কোন ব্যাখ্যা কি অবৈধ সরকারের শিল্পমন্ত্রী বা কৃষিমন্ত্রীর কাছে আছে??
এবার চলুন দেখে আসা যাক মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পরিচালিত শিল্প মন্ত্রনালয়ের অবস্থা। যে চিনি ও লবন শিল্প আজ কোটি কোটি টাকা লোকসান দিয়ে হুমকির মুখে নিপতিত। শুধু সেই দুটো সেক্টরে মাওলানা নিজামীর অবদান ছিল নিম্নরূপ:
=> বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের [বিএসএফআইসি] দীর্ঘ ১৭ বছরের মধ্যে ২০০৫-২০০৬ আখ মাড়াই মওসুমে দ্বিতীয় বারের মতো প্রায় ৭০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
=> দেশে মোট সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন লবণের চাহিদা থাকলেও বিগত ২০০৫-২০০৬ উৎপাদন মওসুমে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড।
মাওলানা নিজামী কৃষি নির্ভর শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি কৃষি নির্ভর শিল্প গড়ে তোলা ও উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। তার সময়েই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী কৃষি মেলা করা হতো, যার মাধ্যমে কৃষকরা অনুপ্রেরণা পেতো, ব্যবসায়ীরা কৃষি নির্ভর শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত হতো।
তার সময়ে দেশের শিল্পখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন শিল্পনীতি ২০০৫ প্রণয়ন করা হয়। দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের দ্রুত বিকাশের জন্য পৃথক এসএমই নীতি-কৌশল ২০০৫ গ্রহণ করা হয়। তার সময়ই শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি শতকরা ১০ দশমিক ৪৫ ভাগে উন্নীত হয়। ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল শতকরা ৫.৪৮ভাগ, যা ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে শতকরা ১০ দশমিক ৪৫ ভাগে উন্নীত হয়।
তিনি উদ্যোগ নিয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) বন্ধ হয়ে যাওয়া কস্টিক কোরিন প্লান্ট, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস, রংপুর সুগার মিলস্ পুনরায় চালু করেন।
তার উদ্যোগেই ঢাকা মহানগরীর পরিবেশ উন্নয়নের জন্য হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পকে সাভারে স্থানান্তরের জন্য গড়ে তোলা হয় চামড়া শিল্পনগরী।
বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। ৮৫শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। তাই কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ছুটে বেরিয়েছেন দিন-রাত। ন্যায়পরায়নতার মডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন সমগ্র জাতির সামনে। কিন্তু গাদ্দারের জাতি তাকে মিথ্যা মামলার আর ঠুনকো অভিযোগে হত্যার পায়তারা প্রায় সমাপ্ত করেছে। যে জাতি তার সৎ নেতৃত্বকে মিথ্যাচারে জর্জরিত করে হত্যা করতে পারে, তাদের ভাগ্যে কি আছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
বিষয়: রাজনীতি
৬৫৭০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাক আললাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন