ড. মাসুদ আমরা আনন্দিত, আপনাকে এবারও ভারত যেতে হলো না...
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:২০:৫১ সন্ধ্যা
রাত ৮ টা বেজে গেছে। কর্মজীবি মানুষেরা তখন যে যার নীড়ে ফেরার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। প্রতিযোগিতা বলছি এ কারণে, ঢাকা শহরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেয়ে নিরাপদে ফিরে আসাটা ইদানিংকালে বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে গেছে। ট্র্যাফিক জ্যাম, ছিনতাইকারী, পাড়ার মাস্তান থেকে শুরু করে কালো পোষাকের র্যা ব, সাদা পোষাকের পুলিশ কিংবা পোশাকধারী পুলিশ। কেউ ছাড় দিতে চায় না জনগণ নামক এই আজব চিড়িয়াদের।
এমনই এক নষ্ট সময়ে শত শত মিথ্যা মামলায় জামিন পেয়ে হাইকোর্ট থেকে আর কোন মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও হয়রানি করা হবেনা মর্মে নিশ্চয়তা পেয়ে আপনি বের হয়েছিলেন কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠ থেকে। বুকভরা আশা ছিল দীর্ঘ ১৯ মাস পরে ঘরে ফিরবেন। পরম মমতায় জড়িয়ে ধরবেন আদরের নামিরা আর নুমায়েরকে। ওরাও প্রস্তুত ছিল বাবার জন্য। মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে ওরা বাবার জন্য কেক কিনেছিল। কিন্তু আপনার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। জড়িয়ে ধরা হয়নি নামিরা-নুমায়েরকে। কেক ভেসে গেছে নামিরার বেদনাশ্রুতে। আর যিনি বিগত ১৯ মাস বুকে পাথর বেঁধে পরম মমতায় সংসারটি আগলে রেখেছেন তাকে সালামটি দেয়ারও সৌভাগ্য হলনা। টানা দ্বিতীয়বার নাম্বারহীন কালো গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অজানা গন্তব্যে।
জানেন? আপনার তাকদীরটা কত ভালো! গতানুগতিকভাবেই ওরা আপনাকে তুলে নিয়ে অস্বীকার করেছে। মিথ্যায় ওদের জন্ম, তাই মিথ্যা বলতে ওদের গলা কাঁপে না। স্রেফ জানিয়েছে তারা কাউকেই নাকি তুলে আনেনি। হয়তো আপনাকে নিয়ে তারা কোন গভীর চক্রান্তও করেছিল। কারণ ততক্ষণে তারা নিজেদের অন্যায় সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিফহাল। কিন্তু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক তাদের সে গভীর চক্রান্ত শুরুতেই বিনাশ করে দিয়েছেন।
প্রথমত: তারা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে বিশেষ কোন গোষ্ঠির অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত হয়ে আদালত অবমাননা করেছে। দ্বিতীয়ত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে। দেশে সাদা পোষাকের পুলিশ বা র্যাবের পরিচয়ে গুম-খুন বেড়ে যাওয়ায় সর্বমহল থেকে নিন্দার জেরে ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিকআপসহ সব ধরনের হালকা যানবাহনে যানবাহনে কালো, রঙিন, মার্কারি ও অস্বচ্ছ গ্লাস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
পরে অবশ্য গুম খু্ন অব্যাহত রাখার সুবিধার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরই এক সংশোধিত আদেশ অনুযায়ী ৫৫ হাজার প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও জিপের কালো গ্লাস রাখার বৈধতা দেয়া হয়, শুধু যেসব গাড়ির সামনের উইন্ডশিল্ড, দুই পাশের জানালা ও পেছনের কাচ ফ্যাক্টরিতে নির্মিত হয়ে সংযোজিত (বিল্ট-ইন) অবস্থায় এদেশে এসেছে সেসব গাড়ির জন্য।
তৃতীয়ত: সরকারি গাড়ি অথচ সেই গাড়িতে নম্বর ছিল না।
এতগুলো আইন লঙ্ঘন করে ওরকম একটি কালো গ্লাস বিশিষ্ট কালো রঙের গাড়িতে করে আপনাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় কোন একজন বিবেকবান সাংবাদিক নিজের শাহাদাত আঙ্গুলকে আর দমিয়ে রাখতে পারেননি। একটি মাত্র ক্লিকেই উঠে আসে সেই গুম নাটকের দৃশ্য। ধরা পড়ে যায় নিজেদের বিবেক বিক্রি করে দেয়া কিছু কুলাঙ্গারের চেহারা। তাই অস্বীকার করেও সুবিধা করতে না পেরে দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা মিথ্যাচারের নাটক করে আবার সেই আদালতেই ফেরত দিয়েছে তারা।
আদালতও তাদের জিজ্ঞাসা করার সাহস দেখায়নি যে, কেন আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও গুম করার চেষ্টা করা হয়েছিল? কারণ, সে জানে এ প্রশ্ন করলে শুধু চাকরিটাই হারাতে হবে না। রাতের আঁধারে ওই ম্যাজিস্ট্রেটকেও ইলিয়াস আলীর ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে।
আল্লাহ ভালো জানেন কি ছিল তাদের চক্রান্ত। তবে দেশের বর্তমান পরিবেশ বলে, যথাসময়ে ছবিটি না প্রকাশ পেলে বেশ কিছুদিন পর আপনাকেও সুখরঞ্জন বালীর মত ভারতের কোন কারাগারে অথবা বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের মত মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে ভারতের কোন হাসপাতালে খোঁজ মিলতে পারত।
যদিও দেশের দালাল মিডিয়াগুলো আপনাকে অপহরণের ছবি বা খবর প্রচার করেনি। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে আপনাকে আবারও আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর তাতেই আমরা আজ আনন্দিত।
এদেশে মানসিক বিকারগ্রস্ত নাস্তিক কিংবা বিকৃত রুচীর সমকামীদের জন্য মিডিয়ার যতটুকু দরদ আছে, তার ছিটেফোটাও যদি মেধাবী, সৎ, দক্ষ, খোদাভীরু ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের জন্য থাকতো, তাহলে ভারত আজ আমাদের এই স্বাধীন দেশটি নিয়ে পুতুলনাচের আসর জমাতে পারতো না। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে কোন দালাল ও লুটেরা রাজনীতিবিদ ভারতের বা অন্য কোন দেশের তাবেদারী করে দেশের জনগণের বারোটা বাজাতে পারতো না।
আপনাকে সান্তনা দেয়ার মত ভাষা আমাদের নেই। তাই আজ আপনাকে আমরা মহান রব্বুল আলামীনের জিম্মায় দিয়ে রাখলাম। তিনিই উত্তম হেফাজতকারী।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৭৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন