বাংলাদেশের মুসলিম প্রধান সমাজে শিরকের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:৫৫:২২ রাত



সংস্কৃতির অর্থ: বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ড ও পরিণতির আলোকে গড়ে ওঠা মানুষের সুষ্ঠু ও সুনিয়ন্ত্রিত বিশুদ্ধ জীবনাচারকেই প্রকৃত অর্থে ‘সংস্কৃতি’ বলা হয়। এর বাইরে সবকিছুই অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার। এই অপসংস্কৃতি সামাজিক ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, ধর্মীয় ক্ষেত্রে এমনকি বলা চলে যে, জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কমবেশী দানা বেঁধে আছে। যার অনেকগুলি আমদানিকৃত, অনেকগুলি চাপানো এবং বাকীটা আমাদের আবিষ্কৃত প্রথা, নব্য জাহেলিয়াত, কুসংস্কার অথবা নষ্টামি।

এগুলির কিছু নমুনা দেওয়া যেতে পারে। যেমন-

(১) ধর্মীয় সংস্কৃতি : কোন শুভ কাজের শুরুতে মীলাদ। কেউ মারা গেলে মীলাদ, কুলখানি, চেহলাম। সুন্নাতে খাৎনা অনুষ্ঠান, আখেরী চাহারশাম্বা পালন, বড় পীর আব্দুল কাদের জীলানীর ওফাত দিবস ফাতেহায়ে ইয়াযদহম এই সাথে বিভিন্ন পীর ও ধর্মীয় নেতার জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বা ওরস পালন ইত্যাদি। ধর্মের নামে এগুলি চালু হ’লেও এগুলির পিছনে ধর্মের কোন সমর্থন নেই। যদিও অনেকে ভাবেন যে, এসব হ’ল ইসলামী সংস্কৃতির অংশ।

একইভাবে রয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় ও উপজাতীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠানাদি, যা তাদের সংস্কৃতির অংশ বলে অভিহিত হয়।

(২) অর্থনৈতিক সংস্কৃতি : হালখাতা, জুন ক্লোজিং ইত্যাদি

(৩) রাজনৈতিক সংস্কৃতি : বিভিন্ন দিবস পালন, ছবি টাঙানো, মূর্তি, প্রতিকৃতি, কবর, মিনার, ভাস্কর্য, বেদী, সৌধ নির্মাণ ও সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন, অফিসে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছবি টাঙানো, সঙ্গীত গেয়ে ক্লাসে প্রবেশ করা ইত্যাদি।

(৪) আমদানীকৃত সংস্কৃতি : যেমন আন্তর্জাতিক ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে, থার্টি ফার্স্ট নাইট,আধুনিকতার নামে নানাবিধ ফ্যাশন ও নগ্ন সংস্কৃতির নীল দংশন এবং আকাশ সংস্কৃতির অবাধ ও হিংস্র আগ্রাসন।

(৫) চাপানো সংস্কৃতি : জন্মদিনে কেক কাটা, মঙ্গলঘট বা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা নিবেদন, খেলা-ধূলার বাণিজ্যিক সংস্কৃতি, নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা ও নাচ-গানের সংস্কৃতি।

(৬) সামাজিক সংস্কৃতি : পলান্ন উৎসব, বৃষ্টি আনার জন্য ব্যাঙের বিবাহ দান, কাদা মাখা অনুষ্ঠান ইত্যাদি। নবান্ন উৎসব, বর্ষবরণ, বর্ষাবরণ, বসন্তবরণ, চৈত্রসংক্রান্তি, জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী, বিবাহ বার্ষিকী, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ইত্যাদি।

কথিত বাঙালি সংস্কৃতি:

আমরা এদেশেই গ্রামে জন্মেছি, এদেশেই বড় হয়েছি। হিন্দু-মুসলমান মিলিত যে গ্রাম ছোট বেলায় দেখেছি, সেই গ্রাম আজও দেখছি। মুরববীরা বলতেন, মুসলমানদের মেলায় যেতে নেই। কেউ গেলেও লুকিয়ে-চুরিয়ে যেত। বাড়ী এসে ভয়ে মুখ খুলতো না। অথচ আমরা জন্ম থেকেই বাঙ্গলাভাষী, আজও বাংলাভাষী। কিন্তু সংস্কৃতিতে ছিলাম তখনও মুসলমান, এখনও মুসলমান। হিন্দুরা ‘নমস্কার’ দিত। আমরা ‘আদাব’ বলতাম। কিন্তু পাল্টা নমস্কার বলতাম না। তারা ‘জল’ খেত। আমরা ‘পানি’ খেতাম। ওরা শুকর পালন করত ও তার মাংস খেত, আমরা ছাগল-গরু পালতাম ও তার মাংস খেতাম। ওরা ধুতি পরত, আমরা লুঙ্গি-পায়জামা পরতাম। ওরা পৈতা গলায় দিত, মাথায় টিকি রাখত। ওদের মেয়েরা মাথায় সিঁদুর দিত ও হাতে শাখা পরত। ওদের বিয়েতে কত যে নাচগান। আমাদের মধ্যে এসব ছিল না। তারা মাসী-পিসী, কাকা-কাকী, বাবা-মামা বলত। আমরা খালা-ফুফু, চাচা-চাচী, আববা-মামু বলতাম। তারা ভগবানকে ডাকত ও মূর্তিকে পূজা দিত। আমরা আল্লাহকে ডাকতাম ও মসজিদে সিজদা করতাম। তারা তাদের পূজার সময় ঢোল-বাদ্য বাজাত ও উলুধ্বনি করত। আমরা আমাদের ছালাতের সময় আযান দিতাম ও মসজিদে জামা‘আতে যেতাম। তাদের সাথে আমাদের খুবই সুসম্পর্ক ছিল। আজও আছে। আমরা উভয় সম্প্রদায় একই গ্রামে শত শত বছর ধরে বসবাস করছি পরস্পরে আত্মীয়ের মত। উভয় সম্প্রদায় বাংলা ভাষায় কথা বলি। কিন্তু আমাদের উভয়ের সংস্কৃতি পৃথক। এ পার্থক্যের ভিত্তি হ’ল আক্বীদা। আমাদের আক্বীদায় রয়েছে তাওহীদ। তাদের আক্বীদায় রয়েছে শিরক। দুই আক্বীদার ভিত্তিতে দুই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ফলে এই পার্থক্য ভাষায়, পোষাকে, সামাজিকতায় সর্বত্র ফুটে উঠেছে। তাইতো মুশরিক কবি গেয়েছেন, ‘এসো হে বৈশাখ! দুর্বলেরে রক্ষা কর, দুর্জনেরে হানো’। অথচ মুসলমানের আক্বীদামতে বৈশাখের কোন ক্ষমতা নেই। সকল ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হাতে। অতএব বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলে পৃথক কোন সংস্কৃতির অস্তিত্ব কোন কালে ছিল না।

তারপরও যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও পাশবিক কামনা চরিতার্থ করতে অশ্লীল মেলামেশার উৎসব ও “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” বলে কথিত বাঙালি সংস্কৃতির নামে এক উদ্ভট, সংকর ও জগাখিচুরি সংস্কৃতির প্রচলনের চেষ্টা চালায় তাদের সুদুর প্রসারী লক্ষ্যই হল দেশের শিক্ষা ও প্রকৃত সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে বিজাতীয় প্রভূর এজেন্ডা বাস্তবায়ন। পাশাপাশি এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী মহল ও বস্ত্তবাদী নাস্তিক বুদ্ধিজীবীদের দূরদর্শী নীল নকশার অংশ মাত্র। স্বাধীনতা বিরোধী এজন্য যে, এরা এদিন বাঙ্গালী সংস্কৃতির নামে নানাবিধ মূর্তি ও মুখোশ বানিয়ে রাস্তায় মিছিলে নামে। যার মাধ্যমে তারা ভারতের মূর্তিপূজারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে এবং এপার বাংলা ওপার বাংলার মেল বন্ধনের জন্য গদগদ চিত্ত হয়ে বাগাড়ম্বর করে। তারা কথিত বাঙ্গালী চেতনার বুলি আওড়িয়ে ১৯৪৭ সালে বঙ্গমাতার ব্যবচ্ছিন্ন দু’টি অঙ্গকে পুনরায় জোড়া লাগাতে চায়। কৌশলে দেশকে ভারতের সাথে মিলিয়ে বিলীন করে দিতে চায়।

বাংলা সনের উৎপত্তি:

রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে ফসলী সনের ১ম দিন হিসাবে ১লা বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষের সূচনা হয় সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫ খৃঃ) নির্দেশে গবেষক, জ্যোতির্বিদ ফতেহ উল্লাহ সিরাজীর মাধ্যমে আকবরের সিংহাসনারোহণের বছর ৯৬৩ হিজরীর ২রা রবীউছ ছানী মোতাবেক ১৫৫৬ খৃষ্টাব্দের ১৪ই এপ্রিল ১লা বৈশাখ শুক্রবার হ’তে।

নববর্ষ পালনের উদ্দেশ্য:

১. ফসলী সনের ১ম দিন হওয়ায় এবং ব্যবসায়ী শ্রেণীর হালখাতার দিন হওয়ায় শহরে-গ্রামে এ সময় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হ’ত।

২. এ দিনটিতে দা, বটি, খোন্তা, কোদাল, লাঙ্গল, জোয়াল, গরুর গাড়ীর চাকা, পিড়ে, চৌকি, মাটির হাড়ি-পাতিল, কাঁসার থালা-বাটি-জগ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মেলা বসত। ফলে এ দিনটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের তারিখ হিসাবে উৎসবের চরিত্র ধারণ করত। এর পিছনে কোন সংস্কৃতি বা চেতনা কাজ করত না। বরং অর্থনৈতিক কারণই ছিল মুখ্য।

কিন্তু মুসলিম সম্রাট দ্বারা প্রবর্তিত হওয়ায় এবং হিজরী সনের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলা সনের পরিবর্তে শকাব্দ ব্যবহার করে আসছে। ফলে শকাব্দের চৈত্র মাস ৩১ দিনে হওয়ার কারণে তাদের পহেলা বৈশাখ আমাদের ১ দিন পরে হয়ে থাকে। অভিন্ন বাঙ্গালী সংস্কৃতির প্রবক্তারা এখন কী বলবেন?

কবি আবদুল হাই শিকদার তার এক বক্তৃতায় বলেন, আজ যে পহেলা বৈশাখ নিয়ে এতো সব আয়োজন, এতো উৎসব করা হচ্ছে কই বাংলা সনের যিনি আবিস্কারক-জনক সেই ফতেহ উল্লাহ সিরাজীকে তো কেউ স্মরণ করেন না। তার এই আবিস্কারের ধন্যবাদ প্রদানমূলক কোনো সভার তো আয়োজন করা হয় না। যেই মানুষটি না হলে বাংলা সনের জন্ম হতো না তার নাম কেউ নেয় না কিন্তু বাংলা সনের দরদে সারাদিন উৎসবে কাটে। গণেশ হিন্দুদের দেবতা। কিন্তু আমি একজন মুসলামান হয়ে পহেলা বৈশাখে আমার কাধে গণেশ নিয়ে কীভাবে দৌড়াই- এটা কি আমাকে মানায়? এইটা কি শোভন হয়? পহেলা বৈশাখে আমার কাধে গণেশ উঠলো কিন্তু আমার ফতেহ উল্লাহ সিরাজী কোথায় গেল, কোথায় গেল আমাদের মীর মোশাররফ হোসেন, ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ?

নববর্ষ ও শিরকের সম্পর্ক

১.সূর্য দেবতার পূজা/বন্দনা:

ঘটা করে পহেলা বৈশাখের শুরু-ই করা হয় কুফরী ও শিরকের মতো আচার পালনের মাধ্যমে। রমনা বটমূলে সূর্য ওঠার সাথে সমবেত কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়া হয়। বাহ! ফজরের সালাতের পরিবর্তে ছেলেমেয়ে একসাথে বসে সংগীতের মাধ্যমে দিন শুরু করেন। কপালে লাল টিপ, সিথিতে সিঁদুর দেয়া মেয়েরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি সহ ধুতি-পাঞ্জাবী পরা ছেলেদের হাত ধরে শহরময় ঘুরে বেড়ান। দ্বীন ইসলামে 'পর্দা' নামে যে একটি বিষয় আছে – সেদিন বুঝার কোন উপায় থাকে না। মানুষের ভক্তি ও ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির সাথে আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীন “ক্লাসিকাল ট্রিক” বলা চলে। আল্লাহ বলেন,

‘তাঁর অন্যতম নিদর্শন হ’ল রাত্রি, দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্য বা চন্দ্রকে সিজদা কর না। বরং সেই আল্লাহকে সিজদা কর, যিনি এদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে তাঁরই ইবাদত করে থাক’ (হামীম সাজদাহ ৩৭)।

২. নতুন বছরের সাথে মানুষের কল্যাণের সম্পর্ক মনে করা:

নতুন বছর নতুন কল্যাণ, পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি – এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান এই দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ তাৎপর্য নেই। আর তাই তো ইসলামে হিজরী নববর্ষ পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। না কুরআনে এর কোন নির্দেশ এসেছে, না হাদীসে এর প্রতি কোন উৎসাহ দেয়া হয়েছে । শুভ ও অশুভ বলে কোন দিন বা রাত্রি নেই। আল্লাহ বলেন,

তোমরা কাল-কে গালি দিয়ো না, আমিই কালের সৃষ্টিকর্তা। আমিই দিন ও রাতের আবর্তন-বিবর্তন ঘটিয়ে থাকি’ (মুয়াত্তা, মিশ, হা/২২)। অতএব কোন দিবসকে নয়, বরং দিবসের মালিক আল্লাহকে মেনে চলা ও তাঁর প্রেরিত বিধানকে জাতীয় জীবনের সর্বত্র বাস্তবায়িত করাই কর্তব্য

৩. জীবজন্তু রাক্ষস-খোক্কসের মুখোশ ও প্রতিকৃতির আড়ালে বস্তুবাদ ও বিবর্তনবাদের প্রচার:

বর্ষবরণ নাস্তিক বস্ত্তবাদীদের কারসাজি এজন্য যে, এরা আদম (আঃ)-কে মানুষের আদি পিতা ও প্রথম নবী হিসাবে বিশ্বাস করে না। এরা মানুষকে পৃথক সৃষ্টি নয়, বরং বানরের বংশধর ও হনুমানের উদ্বর্তিত রূপ বলতে চায়। ১লা বৈশাখে বানর, হনুমান, সাপ-পেঁচা ইত্যাদির মূর্তি ও মুখোশ বানিয়ে রাস্তায় প্রদক্ষিণ করার মাধ্যমে ওরা এদেশের মানুষের ঈমানী চেতনা ভুলিয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদী ও নাস্তিক্যবাদী চেতনার অনুসারী বানাতে চায়।

৪. কুপ্রথা, কুসংস্কার বা শিরকী সংস্কৃতি ছড়িয়ে পরিচ্ছন্ন মুসলিম সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা:

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ বরণ ও তথাকথিত বাঙ্গালী চেতনার নামে প্রচারিত পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতির আগাগোড়া হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠানের নকল বা ফটোকপি। গণেশ পূজার ‘মঙ্গল যাত্রা’ ও রথযাত্রা থেকে নেওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা, ‘চৈত্র সংক্রান্তি পূজা’ থেকে নেওয়া চৈত্রসংক্রান্তি, হিন্দু-বৌদ্ধদের ‘উল্কি পূজা’ থেকে নেওয়া উল্কি আল্পনা উৎসব, বিভিন্ন হিংস্র-অহিংস্র জীব-জন্তু পূজা থেকে নেওয়া রাক্ষস-খোক্কসের মুখোশ ও পশু-পাখীর প্রতিমা নিয়ে উৎসব শোভাযাত্রা, হিন্দুদের ‘আশ্বিনে রান্না কার্তিকে খাওয়া’ প্রথার আদলে চৈত্রের শেষদিনে রান্না করা অন্নে জল ঢেলে পহেলা বৈশাখের সকালে পান্তা খাওয়ার প্রথা এবং পুজোর অপরিহার্য আইটেম ঢোল-তবলা, কুলা ও হিন্দু রমণীর লাল সিঁদুরের অবিকল লাল টিপ-পুজোর লেবাস শাদা শাড়ী ইত্যাদি হল পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রধান উপাদান!! বিভিন্ন জীবজন্তুর মূর্তি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মুখে উল্কি আঁকা এবং নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণসহ সকল অনৈসলামিকতা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ঈমান-আক্বীদা বিরোধী ভিনদেশী হিন্দুত্ববাদি সাংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে।

অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন ধর্মের মানুষের (ধর্মীয় আচারের) অনুকরণ বা সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। -সুনানে আবু দাঊদ

৫. দেবদেবী, তাদের কল্পিত বাহন, রাক্ষষ খোক্কস ও জীবজন্তুর কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা:

নতুন বছরের প্রথম দিন বাঘ-ভাল্লুক, সাপ, বিচ্ছু, কুমির ও বিভিন্ন দেব-দেবীর বড় বড় মূর্তি, ছবি ও মুখোশ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে যে র্যালি বের করা হয়, এখানে কার কাছে নতুন বছরের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হচ্ছে? অথচ ভাল-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল সব কিছুই আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। তাছাড়া যেসব পশু-পাখী নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, তাও এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। কেননা হিন্দু জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস মোতাবেক পেঁচা মঙ্গলের প্রতীক ও লক্ষীর বাহন, ইঁদুর গণেশের বাহন, হনুমান রামের বাহন, হাঁস স্বরসতীর বাহন, সিংহ দূর্গার বাহন, গাভী রামের সহযাত্রী, সূর্য দেবতার প্রতীক ও ময়ূর কার্তিকের বাহন।

মুসলমানের উৎসব :

উৎসব অনুষ্ঠান যে প্রতিটি জাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, এর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কার ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে। আর সেটা হল আমাদের ঈদ।’ এছাড়া আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি বললেন, ‘এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম।’ রাসূল্লাল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এ দিনগুলোর পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদের উত্তম কিছু দিন দিয়েছেন: কুরবানীর ঈদ ও রোযার ঈদ ”। (সূনান আবু দাউদ) এ হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে অমুসলিমদের অনুসরণে যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা হয়েছে।

জীবন থেকে একটি বছর খসে পড়ার মহামূল্যবান ক্ষণে আত্ম জিজ্ঞাসা না করে ফুর্তি করা প্রকারান্তরে পরকালকে ভুলে বসা। আল্লাহকে না ডেকে মুশরিকদের মতো হাস্যকর ভাবে বৈশাখকে ডাকতে থাকা। যার ফলে প্রতিবছরই বৈশাখ আগমন করে কাল বৈশাখের ঝড় নিয়ে। বৈশাখকে আমরা না ডাকলেও সে আসবে। তবুও বৈশাখের রবকে না ডেকে অযথা বৈশাখকে ডাকার ফলে প্রতি বছরই বৈশাখ আসে কাল বৈশাখীর ঝড় নিয়ে! আল্লাহ আমাদের সুবোধ দান করুন। আমীন

সূত্র:

http://www.quraneralo.com/banglanewyear/

http://www.bdnow.net/blog/blogdetail/detail/4086/dolon/75711#.VwzfwNR974Z

https://goo.gl/lPgwZm

http://bn.mtnews24.com/islam/65517/---------#sthash.zZzJLywh.dpuf

http://goo.gl/5tGIVm

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2016/04/06/330612#.Vwz7r9R974Z

বিষয়: বিবিধ

২১০৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

365659
১৩ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৯:১৫
আকবার১ লিখেছেন : এক্সচেললেনট
এ পার্থক্যের ভিত্তি হ’ল আক্বীদা। আমাদের আক্বীদায় রয়েছে তাওহীদ। তাদের আক্বীদায় রয়েছে শিরক। দুই আক্বীদার ভিত্তিতে দুই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
365661
১৩ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৯:৩৮
চেতনাবিলাস লিখেছেন : চমৎকার দলিল ভিত্তিক লেখা! পড়ে অনেক বিষয় জানা হলো। আপনাকে ধন্যবাদ |
365688
১৪ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২:৩৩
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আপনার যতটা লেখা পড়েছি, কেবলই মুগ্ধ হয়েছি।
আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File