বিপ্লবের জন্য চাই দরাজ কন্ঠ

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৮:৫২ রাত



একটি অনিবার্য বিপ্লবের কথা বলছি। যে বিপ্লবটি এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য প্রয়োজন। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই একটি বিপ্লবের প্রয়োজন। দেশের বর্তমান অবস্থার কথা বর্ণনা করার মত নয়। এখানে সরকার জনগণের নয়, জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত নয়, জনগণের জন্য গঠিত নয়। তাই এখানে শোষণের যাঁতাকলে প্রতিদিন পিষ্ট হয় বাবুল মাতব্বর, বিশ্বজিৎ কিংবা লাঞ্ছিত হয় গণমানুষের বিবেক। এখানে রাজনীতির কোনো আদর্শ নেই। আদর্শ গড়ে উঠলে হয় নিখোঁজ, গুম। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে হয় ক্রসফায়ারের নামে খুন। এখানে আদর্শ দমন করা হয় পেশীর বলে। এখানে আদর্শের প্রতিযোগীতা নেই, আছে পেশীর লড়াই। তাই দিকে দিকে এই জুলুম থেকে মুক্তির জন্য নিরীহ জনগণের নাভিশ্বাসের শব্দ কানে ভাসে। শব্দ তরঙ্গে ভেসে বেড়ায় নির্যাতিতের করুণ আহাজারি। বঞ্চিত নিপীড়িতের ক্রন্দনধ্বনির আওয়াজ বাতাস ভারী করে তুলছে প্রতি মূহুর্তে। কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে ডুঁকরে কাদছে মানবতা। আর এসবের মাঝ থেকে যেন ভেসে আসছে এক যুগান্তকারী বিপ্লবের আহ্বান। স্বাধিকারের কাতর আঁকুতি।

কিন্তু কিভাবে আসবে এ বিপ্লব? কিভাবে মিলবে জনতার মুক্তি? এর সঠিক জবাব বলতে গেলে নেই। তবে দুটি ব্যাপার এখানে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যা ব্যতীত বিপ্লব সংগঠন আমার মতে অসম্ভব। তার প্রথমটি হলো সংঘবদ্ধ একদল জনশক্তি। আর দ্বিতীয়টি হলো অনন্য নেতৃত্ব।

জনশক্তি: যে জনশক্তি নিয়ে বিপ্লব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা যায় তারা হবেন- সৎ, ন্যায়পরায়ন, নীতির প্রশ্নে আপোসহীন, আনুগত্যের মডেল, সংঘবদ্ধ, পরস্পরের প্রতি রহমদীল, কাঙ্ক্ষিত বিপ্লবের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ধৈর্যশীল, তীক্ষ্ণ মেধা সম্পন্ন ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয়ী।

নেতৃত্ব: বিপ্লব সম্পাদনে যারা নেতৃত্ব দিবেন তারা হবেন বিনয়ী, সৎ, নীতিবান, খোদাভীরু (ইসলামী বিপ্লবের ক্ষেত্রে), আদর্শবান, চরিত্রবান, দৃঢ়চেতা, আত্মবিশ্বাসী, মিষ্টভাষী, দক্ষ, প্রত্যুতপন্নমতি, নিষ্ঠাবান ও প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গকারী।

তবে এতসব গুনাবলী থাকার পরেও কিছু কারণে বিপ্লব বিলম্বিত হতে পারে। অথবা কাছে এসেও হাতছাড়া হতে পারে। আর তা হলো নেতৃত্ব নির্বাচনের স্বচ্ছতা। ও নেতৃত্বের বাহ্যিক কিছু যোগ্যতা।

প্রথমত: নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি বিন্দুমাত্রও অস্বচ্ছতা থাকে সে ক্ষেত্রে বিপ্লব বিলম্বিত হতে পারে। কারণ এমন কিছু ঘটলে আনুগত্যকারী কর্মীরা আদর্শচ্যুত হতে দ্বিধাবোধ করে না। আবার অনেক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী আস্থা সঙ্কটে ভূগে নিস্ক্রীয় হয়ে পড়ে। সুসংহত ঐক্য বিভক্তির রূপ নেয়। দূর্বল হতে শুরু করে আদর্শিক চেতনা লালনকারীদের পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধন। আঞ্চলিকতা, স্বজনপ্রীতি, বিলাসিতা স্থান দখল করে নেয় অনন্য নেতৃত্বের। ফলে কাঙ্ক্ষিত বিপ্লবের পথে অগ্রসর হওয়া অনিশ্চিত হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত: কিছু বাহ্যিক যোগ্যতা না থাকলে একজন নেতা নেতা হয়ে ওঠেন না। আদর্শবাদী সংগঠনে নেতৃত্ব দিতে গেলে যদিও এটি তেমন বাধা নয়। তবুও একথা কেউ অস্বীকারও করতে পারবে না যে, নেতৃত্বের বাহ্যিক কিছু বৈশিষ্ট্যেরও প্রয়োজন আছে।

০১: যে নেতৃত্ব আসলে বিপ্লব ঘটাতে চায় তাকে অবশ্যই স্পষ্টভাষী, বাকপটু ও প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপনের যোগ্যতা থাকা উচিত। কথা বলার ক্ষেত্রে যদি আঞ্চলিক প্রভাবমূক্ত চলিত ভাষায় উপস্থাপনে দূর্বলতা বক্তাকে গ্রাস করে অর্থাৎ সুন্দরভাবে কথা বলতে ব্যর্থ হয় তবে সে বক্তব্য বিবৃতি দলীয় কর্মীদের মাঝে আবেদন সৃষ্টি করতে এবং বিপ্লব বিরোধীদের মধ্যে প্রভাব সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়। কখনও কখনও তা হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কারণ রসূলুল্লাহ স: এর হাদীস অনুযায়ী “মানুষের কথা যাদুর মত আকর্ষণ করতে পারে।” আর বিপ্লবের আন্দোলনে বিশেষত সামনে থেকে নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তি যদি যে যাদু সৃষ্টিতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় তবে সে বিপ্লব আলোর মুখ দেখা অসম্ভব। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত বিপ্লব সংঘঠিত হয়েছে সেসব বিপ্লবের সামনে থেকে নেতৃত্বদানকারী প্রত্যেকেই অন্তত একজন ভালো বক্তা ছিলেন।

০২. চলাফেরা আমল-আখলাকে শালীন, মার্জিত ও কেতাদুরস্ত হওয়া চাই। কারণ এসব বৈশিষ্ট্য খুব সহজেই আম-জনতাকে আকৃষ্ট করে। অলস প্রকৃতির, অমার্জিত ও বিশৃংখল জীবন যাপনে অভ্যস্ত ব্যক্তি নেতা হতে পারে। কিন্তু তার নেতৃত্ব যে ব্যর্থ হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা প্রকৃতির নিয়ম।

০৩. সবশেষে বলবো মিতব্যয়ীতা ও আমানতদারীতা প্রসঙ্গে। যিনি বিপ্লব সৃষ্টি করতে চান তিনি অপচয় করতে পারেন না। একজন বিপ্লবীর মাথায় কখনো বিলাসী জীবন যাপনের চিন্তা স্থান লাভের সুযোগ নেই। যদি ঘুনাক্ষরেও এমন চিন্তা মাথায় বাসা বাঁধে, তবে নিশ্চিত বলা যায় তার বিপ্লবের স্বপ্ন আকাশ কুসুম স্বপ্নে পরিণত হবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের এক বিপ্লব অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এ বিপ্লবে যারা নেতৃত্ব দিবেন আমার এ ক্ষুদ্র লেখাটি তাদের উদ্দেশ্যে। এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত চাহিদা বা প্রাপ্তির কিছু নেই। অনিবার্য বিপ্লবের জন্য যাদের নেতৃত্ব অনিবার্য হয়ে উঠেছে তাদেরকে এ ক্ষুদ্র কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করাই আমার উদ্দেশ্য। একটি দরাজ কন্ঠের অন্বেষায় আমার এ লেখা। যে দরাজ কন্ঠের জন্য আজ বাংলা নির্যাতিত জনপদের মানুষেরা বলছে - “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের জালিমের জনপদ থেকে উদ্ধার করুন। আপনি আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাঠান” -সূরা আন নিসা : ১৭৫

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358768
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৫:০৬
শেখের পোলা লিখেছেন : সঠিক কথা৷ ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File