নাস্তিকতা, বেহায়াপনা ও আগামীর প্রজন্ম

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ১২ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৪৯:৪১ রাত



আস্তিক নাস্তিক বিতর্ক আমাদের দেশে বেশ পুরনো না হলেও বিশ্বের ইতিহাসে বেশ পুরনো। তবে কখনোই এই বিতর্ক চরমপন্থায় গিয়েছে কি-না আমার জানা নেই। যদিও ইদানিংকালে এই বিতর্কের অবসান ঘটছে চরমপন্থায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কেউ করছে বাড়াবাড়ি। আর কেউবা তা সহ্য করতে না পেরে তারচেয়েও উগ্রবাদি হয়ে উঠছে। সেক্যুলারিজমের সাথে বর্তমান প্রচলিত নাস্তিকতার কোন মিল খুঁজে পাই না। বিশ্বাস জিনিসটা সম্পূর্ণ একজন মানুষের নিজস্ব ব্যাপার। একেক জনের বিশ্বাস একেক রকম হতেই পারে। তাই বলে কারো বিশ্বাসকে গাল-মন্দ কিংবা কটুবাক্য ছুড়ে হেয় প্রতিপন্ন করাটা কতটুকু সুস্থ মস্তিষ্কের পরিচায়ক হতে পারে তা নিরূপনের দায়িত্ব পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিলাম। দার্শনিকদের মধ্যে যাদেরকে বিশ্বাস অবিশ্বাসের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করতে দেখেছি তাদের কারো উপস্থাপনার ভঙ্গিই আমার কাছে উগ্র বা ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনে হয়নি। কিন্তু এ কথা সত্য যে, একজন শিক্ষিত ও সামাজিক বোধসম্পন্ন মানুষ কখনও কোনো যুক্তিবাদী মানুষের মুখের ভাষাতে গালিগালাজ শুনতে চায় না, যুক্তি চায়। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। বর্তমানে যারা নাস্তিকতার কথা বলে তারা অধিকাংশই উগ্রতার পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বলে মনে হয়েছে। বিনা কারণে কারো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে টানাটানি করা কেমন সেক্যুলারিজম তা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। আপনি কোনো ধর্মে বিশ্বাস নাই করতে পারেন। তাই বলে অন্যের ধর্মকে যা খুশি তাই বলে অপমান করার অধিকার রাখেন না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, চলমান সময়ে নাস্তিকতা মূলত: ইসলাম বিদ্বেষে পরিণত হয়েছে। এদের কেউ কেউ কখনওবা অন্যান্য ধর্মের সমালোচনা করে থাকলেও মূলত: তাদের আক্রোশটা যেন ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে। যেটাকে পাশ্চাত্যে ইসলামফোবিয়ার ফলাফলও বলা যেতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কুরআন অবমাননা, কুরআন পুড়িয়ে দেয়া, রসুলুল্লাহ (স) এর অবমাননা, তাঁর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকা, তাঁকে নিয়ে আপত্তিকর চলচ্চিত্র নির্মান করাসহ নানাভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের হেয় করতে দেখা যায়। কিন্তু অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে এসব ব্যক্তি বা সংগঠনকে এ ধরণের ঘৃণ্য মাতামাতি করতে দেখা যায় না। সুতরাং, একটা নির্দিষ্ট জাতিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গালিগালাজ বা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কোন কাজ যদি চলতেই থাকে তবে সেই ধর্মবিশ্বাসের মানুষের মধ্য থেকে উগ্রবাদীর জন্ম নেয়া আমি অন্তত অস্বাভাবিক মনে করি না। তবে কেউ গালি দিলেই তার প্রতি উগ্রপন্থায় চড়াও হওয়াটাও ইসলামের শিক্ষা নয়। কিন্তু, কলমের খোঁচায় যারা এসব উগ্রবাদের জন্ম দিচ্ছে তাদের ভূমিকা নিয়ে একজন মুসলমান হিসেবে আমার যথেষ্ট আপত্তি আছে। কারণ, আমি কারো উদ্দেশ্যে জীবনে কখনও গালিগালাজ কিংবা কটুবাক্য ছুড়ে দেইনি। কারো ধর্মীয় গ্রন্থে অগ্নিসংযোগ করিনি। কারো ধর্মের সম্মানিত কাউকে নিয়ে কার্টুন অঙ্কন করিনি।

এবার আসুন দেখি কারা এই নাস্তিক? কি তাদের পরিচয়? কেমন তাদের জীবন চলার পথ? কেনইবা এরা নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকছে? আমাদের দেশে তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার, আহমদ শরীফ, কবীর চৌধুরীদের মত একদল ভীনদেশী দালাল চক্র একশ্রেণির উগ্র চরিত্রহীন যুব সমাজকে সর্বপ্রথম নাস্তিকতার নামে ধর্মদ্রোহীতার দীক্ষা দিয়েছে বলে সবাই জানে। পাশ্চাত্যের জীবনধারায় আকৃষ্ট গুটিকয়েক তরুণ-তরুণী সস্তা সেলিব্রেটি বনে যাওয়ার লালসায় এবং নিয়ন্ত্রনহীন জীবনযাপনের মানসে নাস্তিকতার নামে ধর্মদ্রোহীতার প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাশাপাশি গড়ে ওঠে ধর্মদ্রোহীদের গোপন নেটওয়ার্ক। আর এর মাধ্যমেই এরা ইন্টারনেটে ছড়াতে থাকে ধর্মীয় বিদ্বেষ। এদের জীবন চলার পথ তথা লাইফস্টাইল সম্পর্কে দেশের মানুষের তেমন কিছুই জানা ছিলো না। কিন্তু, শাহবাগ মুভমেন্টের পর থেকে প্রকাশিত হয়ে পড়ে এদের আসল চেহারা। এরপর একের পর এক যতজন নাস্তিক ব্লগার নিহত হয়েছে প্রত্যেকের মৃত্যুর পরেই বেরিয়ে এসেছে এদের লাগামহীন জীবন যাপনের দৃশ্য। যার সর্বশেষ উদাহরণ আশা মনি ও নিহত ব্লগার নিলয়ের সম্পর্ক। ঠিক একইভাবে অভিজিতের মৃত্যুর পরও জানা যায় তাদের লাগামহীন লাইফ স্টাইল। মদ, নারী আর অবৈধ মেলামেশার মধ্যে যারা মুক্তচিন্তার স্বাদ অন্বেষণ করে বেড়ায় তাদের মাঝে আরে বনের পশুর মাঝে পার্থক্য নিরূপণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। বনের পশুও তো জৈবিক চাহিদা পূরণ করে। তাদের বিয়ে করতে হয় না। সংসার গোছাতে হয় না। বলতে পারেন ওরাই প্রকৃত মুক্ত ও স্বাধীন। কিন্তু মানুষ হয়ে ওঠার জন্য তো আর ওভাবে জীবন যাপন করলে চলে না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ধর্মের কাছেই ফিরে আসতে হবে।

বর্তমানে আমাদের তরুণ সমাজকে ওই লাগামহীন জীবন যাপনের দিকেই আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নয় এমন তরুণদের সিংহভাগই নাম লেখাচ্ছে এই কথিত মুক্তমনাদের দলে। মিডিয়া দারূনভাবে তাদেরকে উৎসাহিত করছে এ পথে চলতে। আর এ গড্ডালিকা প্রবাহে যারা গা ভাসিয়ে দিচ্ছে তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করার ফুরসত যেন নেই। কিন্তু ভবিষ্যতকে তো আর অস্বীকার করলে চলে না। তাই ধর্মহীন হয়ে পড়ার আগেই অভিভাবকদের উচিত সন্তানকে ধার্মিক করে গড়ে তোলা। অন্যথায় আগামীর প্রজন্ম পশ্চিমা তরুণ সমাজের মতই হতাশায় নিমজ্জিত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধর্মহীন মানুষের মধ্যে মনুষত্ব্য থাকে না। থাকে না কোন মানবতা। তাই ওসব দেশে আজকাল বৃদ্ধাশ্রমের ছড়াছড়ি। মদের বোতল ওদের শান্তির আশ্রয়স্থল। সিঙ্গেল মাদার আর সিঙ্গেল ফাদার ফ্যামিলিতেই বেড়ে ওঠে ওদের শিশুরা...

বিষয়: বিবিধ

৫২৬৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

335522
১২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১০:৫৪
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
335525
১২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:১১
স্বপ্নচারী মাঝি লিখেছেন : ধন্যবাদ
335530
১২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:৪৯
শুভ কবি লিখেছেন : মাশাল্লাহ, ভালো লাগলো Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up
১৩ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৪:৫৭
277447
স্বপ্নচারী মাঝি লিখেছেন : Love Struck Love Struck
335552
১৩ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:১৬
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : নাস্তিকদেরকে মুক্তমনা নামে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের বাম মিড়িয়া। আগামী প্রজন্ম যদি বাম মিড়িয়ার উপর আস্থা আনে তবে আগামী প্রজন্মর জন্য আঁধার অপেক্ষা করছে!!

তবে তরুণ প্রজন্ম বোকা নয়।
335651
১৩ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:২৩
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : অনেক ভাল এবং সুন্দর পোস্ট...ধন্যবাদ,,

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File