যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে ২৭ জন কাফনের কাপড় নিয়ে ফিরলেন!
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ১১ জুলাই, ২০১৫, ০২:০৩:৩৪ রাত
আল্লাহ রব্বুল আলামীন ধনীদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। সাথে সাথে আমাদের প্রিয় রাসূল স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, এটি দরিদ্রের প্রতি ধনীর করুণা নয়, বরং তা দরিদ্রের অধিকার। রমজানে যেকোনো ইবাদতের সওয়াব অন্য সময়ের সত্তর গুণ। এ কারণে এ সময়টাতে ধর্মপ্রাণ সামর্থ্যবানদের দান খয়রাতের প্রবণতাও বাড়ে। কারণ এ সময়ে দান-সাদকা কিংবা যাকাত আদায় করলে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সাওয়াব অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু যাকাতের নামে দেশে যা চলছে তা রীতিমতো লজ্জাজনক। অনেকে তো শুধু নাম কামানোর জন্যই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করেন। এতে যে আন্তরিকতার ছিঁটেফোঁটা নেই তা যাকাতে পণ্য ক্রয় ও বণ্টনের প্রক্রিয়া দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এসব লোক দেখানো বা নাম কামানোর প্রতিযোগিতায় প্রায়ই হতভাগ্য দরিদ্রদের জীবন দিতে দেখা যায়। ময়মনসিংহে গতকাল যা ঘটে গেল তা মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য যেমন লজ্জার তেমনটাই অপমানের। যাকাত নিতে গিয়ে প্রান দিতে হয়েছে ২৭ জন আদম সন্তানের।
যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল ২০০৫ সালে গাইবান্ধা জেলা শহরে। নাহিদ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুস্থদের মধ্যে যাকাতের শাড়ি বিতরণের ঘোষণা দেয়া হয়। নির্ধারিত দিনে ভোরে ওই প্রতিষ্ঠানে গেটের সামনে জড়ো হয় কয়েক হাজার অসহায় নারী। গেট খোলার সময় হুড়োহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কিতে নিহত হয় ৩৭ জন। আর সর্বশেষ বরিশাল নগরীর কাঠপট্টি রোডে খান অ্যান্ড সন্স গ্রুপের মালিকের বাসভবনে ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই যাকাতের কাপড় বিতরণের সময় পদদলিত হয়ে ২০ জন আহত হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর দু’জনের মৃত্যু হয়। ১৯৮০ সাল থেকে আমাদের দেশে প্রায় প্রতি বছরই কম-বেশি এমন লজ্জাষ্কর ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু কেন এমনটি হয়? বলতে গেলে বড়লোকের যাকাত আজকাল গরিবের সঙ্গে প্রতারণা, ইবাদতের নামে রিয়া।
কোথা থেকে এলো রিলিফ স্টাইলে যাকাতের নামে এই শাড়ি লুঙ্গি বিতরণের মত কাজ? যাকাত কি কোন ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচী? সত্যিকারে খুলুসিয়াতের সাথে যাকাত আদায় করলে তো অতি গোপনে অভাবী তথা দরিদ্রের বাড়িতে তা পৌছে দেয়ার কথা। কারণ, যাকাত ধনীর অন্যান্য দান-সাদকার মত বিষয় না। এটি গরীবের অধিকার। অন্যান্য দান-সাদকা ঐচ্ছিক। আর যাকাত কে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন। অথচ সেই যাকাতের নাম করে দেয়া হচ্ছে নিম্নমানের কাপড়। যাকাতের কাপড় বলতে কোনো কাপড় নাই। যারা যাকাতের নিম্নমানের কাপড় গরীব মানুষকে দিচ্ছে তারা কি আসলে প্রতারণা করছে না? অথচ পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “কস্মিনকালেও তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন”(সুরা আল ইমরান, আয়াত: ৯২)।’
যাকাতের নামে যে কাপড় দান করা হচ্ছে তা দিয়ে মানুষের কোনো ধরনের উপকার হয় না। সমাজের মানুষকে আত্মনির্ভরশীল ও সাবলম্বী করাই যাকাত আদায়ের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সমাজ থেকে দারিদ্র দূর করা ও অসহায় মানুষের প্রয়োজন মিটানো হলো যাকাতের উদ্দেশ্য। কিন্তু যাকাত কি সে উদ্দেশ্য সামনে রেখে দেয়া হচ্ছে? যদি তা না হয়ে থাকে আর লোক দেখানোর মত ঘৃণ্য চিন্তা মাথায় রেখে যাকাত দেয়া হয়, তবে তা দ্বারা সওয়াব অর্জন তো হবেই না উল্টো গুনাহের পাল্লা ভারী হতে বাধ্য।
বর্তমানে যাকাতের কাপড় প্রদান রীতিমত একটা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়ে গেছে। কারণ দেশে যাকাত প্রদানকারীর চেয়ে গ্রহীতাই বেশি। তাই কথিত যাকাতের কাপড় নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায় কার আগে কে নেবে। যার জন্য ঘটে নানা রকম দুর্ঘটনা, সামান্য একটা নিম্নমানের কাপড়ের জন্য ঝরে যায় মূল্যবান প্রাণ।
কোন ইবাদত করার পূর্বে আগেই ইবাদতকারীকে নিয়ত পরিশুদ্ধ করে নিতে হয়। যাকাত দাতা ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন রিয়া তথা প্রদর্শনেচ্ছাকে দমন করে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই যাকাত আদায় করেন। ঐরকম ইবাদাত করেই কি লাভ যা মহান রব্বুল আলামীন কবুল করেন না?
বিষয়: বিবিধ
২০৪৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন