নামে আছে কামে নাই, পাত্র আছে মধু নাই

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০১:৪৭:৪২ রাত



০১। মাথামোটা জোটের রাজনীতি শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। ৪ দলীয় জোট গঠনের পর থেকে তাদের সাফল্য ও অবস্থানে শঙ্কিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। সময়ের ব্যবধানে এরশাদের অংশগ্রহনে তার নাম হয় মহাজোট। এদের মধ্যে শুধু বামরাই আছে ১১ দল। যার মধ্যে বেশকিছু দলের শুধু ব্যানার আছে লোক নেই। দেশের রামপন্থী ও বামপন্থীদের নিয়ে গঠিত এই জোট হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেহারা পরিবর্তন হতে শুরু করে। হামলা-ভাংচুর আর সহিংসতা দখল করে নেয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্থান। স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী (এক সময়ের গণবাহিনী) জাসদ আর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে চলতে শুরু করে নৈরাজ্য। আর এতে নেতৃত্ব দেয় হাজি সেলিম, শামীম ওসমান, জয়নাল হাজারীর মত সন্ত্রাসের গডফাদাররা।

০২। এরপর সময়ের পরিবর্তনে ৪ দলীয় জোটও রাজনৈতিক ময়দানে রাম-বামদের মহাজোটের বিপরীতে টিকে থাকতে এবং আওয়ামী সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণে বিরক্ত হয়ে বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৮ দলীয় জোট। যা বর্তমানে ২০ দলীয় জোট হিসেবে পরিচিত। ১৪ দলীয় জোটে যেমন আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দুঃখজনকভাবে ২০ দলীয় জোটেও বিএনপি-জামায়াতকে বাদ দিলে অন্যান্য দলের প্রতিনিধিত্ব খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকরই হয়ে ওঠে। আর ঠিক এই কারণেই দুটি জোটই হাস্যকর একটা রূপ ধারণ করেছে। যাকে বলে মাথামোটা জোট।

০৩। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারাদেশের মানুষ আজ উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত এবং যথেষ্ট বিরক্ত। চলমান সংকটের সমাধান কিভাবে হতে পারে তা কারো কাছে স্পষ্ট নয়। একদিকে সরকারের দমন-পীড়ন আর মিথ্যাচারের রাজনীতির যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে জনগণ। অন্যদিকে বিরোধী দলের সরকার বিরোধী আন্দোলনেও কোন আশার দিক তারা দেখতে পাচ্ছে না। আর তাই নাভিশ্বাস উঠেছে প্রতিটি জনপদে। যদি বলি সরকার কেন এমনটি করছে? তাহলে এ প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজা। আর তা হলো, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মাধ্যমে বিরোধী দলসমূহকে অকার্যকর দলে পরিণত করে (তাদের ঘোষণা অনুযায়ী) ২০৪১ সাল পর্যন্ত একচেটিয়া শাসন করতে চায় তারা। আর এর মাধ্যমে এদেশ থেকে বিশেষ করে উদীয়মান ইসলামপন্থী শক্তিকে চিরতরে নির্মূল করতে চায়। তবে যদি প্রশ্ন করেন এতবেশী জনসমর্থন থাকার পরেও বিরোধী জোট কেন সফলতার মুখ দেখছে না? তাহলে এর জবাব এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন।

# ২০০৯ সালে মইন-ফখরুদ্দীনের পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী সরকার বিরোধী মত ও গণমাধ্যমের উপর যে নির্যাতন নীপিড়ন করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোন সরকার তা করতে পারেনি।

# গুম-খুনের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধী মতকে এভাবে কোনকালে এই দেশে কেউ দমন-পীড়ন চালায়নি।

# স্বেচ্ছাচারিতার দিক থেকেও এই সরকার বিশ্বের যে কোন স্বৈরাচারের সাথে প্রতিযোগিতায় অপেক্ষাকৃত এগিয়ে।

# জনমতের প্রতি এই সরকারের নূন্যতম শ্রদ্ধা-ভক্তি নেই।

ভাবছেন এসব কারণেই শুধু সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না? তা ঠিক নয়। আরও কিছু বাস্তব সমস্যা ২০ দলীয় জোটের মধ্যেও বিদ্যমান। যা সমাধান করতে পারলে আমি মনে করি জনসমর্থনহীন এই সরকারের পতন হওয়া কোন ব্যাপারই না।

০৪। নামে আছে কামে নাই, পাত্র আছে মধু নাই :

হ্যাঁ, ২০ দলীয় জোটের বর্তমান অবস্থা এখন এমনই। নামে ২০ দলীয় জোট হলেও মাঠে বিএনপি-জামায়াত ছাড়া অন্য কোন দলের কোন অবস্থান নেই। এমনকি যে দলের নেতৃত্বে এই জোট, সেই বিএনপিরই অনেক নেতা রণহুংকার দিচ্ছেন দেশের বাইরে থেকে। নামে বিশ দলীয় জোট হলেও বিশ দলের ব্যানারে মিছিল দেখা যায় খুবই কম। জেলা পর্যায়ে দেখা গেলেও রাজধানীতে তা বিরল। আর তাই রাজধানীতে ধরাশায়ী ভঙ্গিতে চলছে আন্দোলন। ঝটিকা মিছিল কিংবা পিকেটিং করে সাময়িক আতঙ্ক সৃষ্টি করা গেলেও, আন্দোলনের মূল চাহিদা পূরণের ধারে কাছেও ঘেষা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন? এর একটাই উত্তর তা হলো, ২০ দলীয় জোট নামে হলেও কার্যত তাদের মধ্যে জোটবদ্ধ কোন আন্দোলন নেই। জোট হলেও কার্যত তাদের মিছিল হচ্ছে আলাদা আলাদা। ফলে বিশেষ করে বিএনপির সুবিধাবাদী কিছু নেতৃত্বের পক্ষে আন্দোলনের পুকুরে দুধ না দিয়ে পানি দিতে দেখা যাচ্ছে। তাই আন্দোলনও রাজধানীতে জোরদার করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি, স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পূর্বে যেমন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করা হয়েছিল, বর্তমান সময়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে তেমন কোন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দৃশ্যমান নয়। আর তাই বর্তমান অবৈধ সরকার বিরোধী আন্দোলন আসলেই অবৈধ সরকার হটানোর আন্দোলন কি-না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। যদি একসাথে আন্দোলন নাই করা যায়, যদি এক ব্যানারে নাই দাড়ানো যায়, তবে এই মাথামোটা জোট গঠনের দরকার কি? আসল কথা হলো স্বৈরাচার সরকারের পুলিশ দমন পীড়নের সুযোগ পাচ্ছে রাজধানীতে বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন না থাকাতে। তাই অনেকেই আজকাল বলছে - ‘রাজধানীতে ২০ দল নামে আছে কামে নাই’।

বিষয়: বিবিধ

১০৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File