কেন কাদের মোল্লা ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ভি চিহ্ন দেখাতে গেলেন?
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ০২ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৪:৫৫:২১ বিকাল
হঠাৎ করেই কলামিস্ট হয়ে ওঠা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ গোলাম মওলা রনি জামায়াত শিবিরের সমালোচনা করে একটি কলাম লিখেছেন। তবে জামায়াত যে তার নিজ দলের মত অসহিষ্ণু নয় তা নিশ্চিত হয়েই তিনি এমনটি লিখেছেন। অন্যথায় তারেক রহমানের মত মানহানির মামলায় জর্জরিত হয়ে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হতো। যাই হোক মনে হলো জামায়াত সম্পর্কে তার কিছু ভূল ধারনা রয়েছে। যার অপনোদন তথা খোলাসা হওয়া খুবই জরুরী।
প্রথমত: তিনি বাম মিডিয়ার গড়া বিভিন্ন মনগড়া কল্পকাহিনীর উপর নির্ভর করে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, জামায়াতের জনপ্রিয়তা দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রথম কথা হচ্ছে জামায়াতের জনপ্রিয়তা যদি কমেই থাকবে তাহলে উনি কি নিয়ে চিন্তিত হয়ে জামায়াতের সমালোচনা করতে কলম হাতে তুলে নিলেন? আর কি দিয়েই বা তিনি পরিমাপ করলেন যে, জামায়াতের জনপ্রিয়তা কমছে? জামায়াতের জনপ্রিয়তা কমেছে নাকি বেড়েছে তা দেখার জন্য প্রয়োজন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে ইতোমধ্যেই তার পূর্বাভাস জানান দিয়েছে তারা।
দ্বিতীয়ত: তিনি আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছেন যে, জামায়াত নেতারা অহংকার হয়ে উঠেছিলেন। আর তাই তাদের একের পর এক পতন ঘটছে। তিনি লিখেছেন - “আমি এখনো ভেবে পাই না কেন কাদের মোল্লা ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ভি চিহ্ন দেখাতে গেলেন? গোলাম আযম সারা জীবন চুপচাপ থাকলেন, কোনো দিন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিলেন না বা দুই কলম লিখলেন না সেই তিনি হঠাৎ ২০১০ সালে এসে দম্ভ করলেন কেন? টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে বললেন, '৭১-এ তিনি সঠিক ছিলেন, '৭১ নিয়ে তার কোনো অনুতাপ নেই, তার কিছু হবে না, কেউ তার কিছু করতে পারবে না! আমি জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে বলব, গ্রেফতার হওয়ার আগে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের কথাবার্তা, হম্বিতম্বি এবং অহংকারমূলক আচরণ মূল্যায়ন করার জন্য। তারা কি সরকারকে প্রভোক করেনি তাদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য?”
জনাব রনি, যেহেতু কারাগারে জামায়াত নেতাদের সাথে আপনার থাকার সুযোগ হয়েছে সেহেতু আপনার ভালো করেই জানা উচিত ছিল জামায়াত নেতারা কত সহজ সরল জীবন যাপন করে থাকেন। আর কতটা অমায়িক আচরণের অধিকারী তারা। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাসেম আলী কে নিয়ে লেখা আপনার পৃথক দুটি কলামে তা অনেকাংশেই উঠে এসেছে। আপনি হয়তো নিজেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান মনে করে থাকতে পারেন। তবে আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, জামায়াত নেতাদের ঐসব কর্মকান্ড কখনই অহংকার প্রদর্শণের জন্য ছিল না। বরং তাদের বিচক্ষনতা ও দূরদর্শীতার বাস্তব প্রমাণ আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। শহীদ কাদের মোল্লা বিগত এক বছর আগে শহীদ হলেও ইসলামী আন্দোলনের পথে তিনি যেদিন থেকে এসেছেন, সেদিন থেকেই শাহাদাতের মৃত্যু ছিল তার কামনা। আর আপনি মনে করছেন যে, ‘ভি’ চিহ্ন প্রদর্শণ না করলে তার মৃত্যুদণ্ড হতো না? অবশ্যই হতো। কারণ, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড না দিলে সরকার শাহবাগে কথিত গণজাগরনের ধোঁয়া তুলতে পারত না। আর শাহবাগ না হলে আইন সংশোধনের কোন ইস্যু তারা পেত না। ‘ভি’ চিহ্ন এখানে মুখ্য ছিল না, মুখ্য ছিল তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। যদি তাই না হবে, তাহলে আপনার প্রিয় ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা কিসের ভিত্তিতে এ দণ্ড দিয়েছিলেন? যেখানে কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’জন ব্যক্তি। সেখানে যাবজ্জীবনই বা কিভাবে হয়? আর শহীদ মোল্লা কেন যে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছেন সেটি আপনার বুঝে আসার কথা নয়। তাই যদি বুঝতেন তাহলে একবার হলেও ভেবে দেখতেন মৃ্ত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে কেন কিভাবে তার সহধর্মিনীও একইভঙ্গিতে বিজয় চিহ্ন প্রদর্শণ করেছিলেন। কেন মৃ্ত্যুদণ্ডের রায় শুনে একই ভঙ্গিতে মীর কাসেম আলী ‘ভি’ চিহ্ন প্রদর্শণ করেছেন?
বলেছেন অধ্যাপক গোলাম আযম কেন মিডিয়ার সামনে একাত্তরে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে গেলেন? আপনার জেনে রাখা উচিত অধ্যাপক গোলাম আযমের মত একজন দূরদর্শী নেতৃত্ব বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। আপনি হয়তো ভাবছেন এই কথা গুলো না বললে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হতো না। কিন্তু গোলাম আযম কিংবা আলী আহসান মুজাহিদরা জানতেন, আজ হোক কাল হোক বামদের উস্কানীতে আওয়ামী লীগ একদিন তাদেরকে এই প্রহসনের মঞ্চে উপস্থাপন করবেই। আর তাই তারা যথেষ্ট সময় হাতে রেখেই জাতির কাছে নিজেদের তৎকালীন তাদের যৌক্তিক অবস্থান তুলে ধরেছেন নির্দ্বিধায়। আর সত্যকে স্বীকার করে নিতেই বা এত কষ্ট কেন আপনাদের? বুকে হাত দিয়ে অথবা চোখ বন্ধ করে নিজের বিবেকের কাছেই প্রশ্ন করে দেখুন না, আসলেই আওয়ামী সরকার গোলাম আযমকে কিছু করতে পেরেছে কি-না?
আপনার জন্য আমার ছোট্ট একটি পরামর্শ। আর তা হলো, জামায়াত নেতারা কতখানি দূরদর্শী কিংবা অদূরদর্শী তা জানার জন্য তাদের রচিত বইগুলো একবার হলেও পড়ে দেখবেন। আশা করি পরবর্তীতে তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় তা আপনাকে সহযোগিতা করবে। আর জামায়াত বিরোধী আপনার এ সমালোচনা যেন বন্ধ না হয়ে যায়। কারণ, জামায়াতে ইসলামী তার সমালোচনাকারীদের একান্ত বন্ধু মনে করে। আর তাই বাংলাদেশে একমাত্র তাদের দলেই সংশোধনের উদ্দেশ্যে সমালোচনার রেওয়াজ চালু আছে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন