একজন আয়েশা আখতারের স্বগোতক্তি : নারীবাদি আন্দোলনের আসল চেহারা

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ১৬ মে, ২০১৪, ১১:৪৮:৪৪ সকাল





আমাদের দেশে নারী অধিকারের নামে যুগ যুগ ধরে আন্দোলন করে আসছে প্রায় ডজন খানেক নারীবাদী সংগঠন। নারীবাদি আন্দোলনের কথা বললেও আসলেই তারা নারীবাদি কি-না তা নিয়ে সচেতন মহলে বেশ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। তারপরেও অন্তত মাঝে মাঝে রাস্তা ঘাটে দু-একটা সভা-সমাবেশ, মিছিল বা মানব বন্ধন করতে তো দেখা যায়, তাই তো অনেক কিছু। কিন্তু আপত্তির বিষয় হলো তাদেরকে যেসব ইস্যুতে আন্দোলন করতে দেখা যায় তার অধিকাংশই জনগুরুত্বহীন, অপ্রয়োজনীয়, এককথায় অনর্থকও বটে। সমাজে নারীদের অধিকার খর্ব হলে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠে কথা বলতে খুব কমই দেখা যায়। উদাহরণ স্বরূপ চট্টগ্রামের দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গতকাল ঘটে যাওয়া এক নির্মম ঘটনার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আয়েশা আখতার নাম্নী এক নয় মাসের অন্ত:স্বত্তা ভদ্র মহিলা ঐ আদালতে গিয়েছিলেন তারই মত আরেকজন নারীর পাশে দাঁড়াতে। মহিলাটি তার বাসার কাজের বুয়া। ৬ সন্তানের জননী। মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যাওয়ায় তার জন্য জামিনের ব্যবস্থা করতে আদালত পাড়ায় গিয়েছিলেন এই আয়েশা আখতার। আয়েশা আখতার পারতেন অন্য ৫ জন শহুরে মানুষের মত বিষয়টিতে কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ না করতে। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় এই অসহায় নারীর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন নিজের দূর্বল আশাবাদী দু’টি হাত। কিন্তু কে জানত এ হাত বাড়াতে গিয়ে তিনি বিচারকের মহান আসনে আসীন এক নরপশুর আক্রমনের শিকার হয়ে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবেন ?

জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় আয়েশা আখতার একটি স্বগোতক্তি করেছিলেন। আর এ উক্তি একটি খুবই সাধারণ মজলুমের উক্তি। যা আমাদের দেশে সচারচারই আমরা অত্যাচারীতের মুখ থেকে শুনে থাকি। কখনওবা তার সাথে থাকে একটি দীর্ঘশ্বাস। আয়েশা আখতার বলেছিলেন, 'যারা মিথ্যা মামলা দিয়ে এ অসহায় নারীকে জেল খাটাচ্ছে তাদের বিচার আল্লাহ করবে'।

কিন্তু তার এ উক্তি ভালভাবে অনুধাবন না করেই ফেরাউনি কায়দায় রহমত আলী নামক এক পাষন্ড ম্যাজিস্ট্রেট তাকে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে কাঠগড়ায় দাড়িয়ে রাখার আদেশ দেয়। বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকেন এই নয় মাসের অন্ত:স্বত্তা মহিলা। একপর্যায়ে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। অবশেষে এক হৃদয়বান আইনজীবি দুইশত টাকা জামানত দিয়ে ছাড়িয়ে নেন তাকে। হতাশার বিষয় হচ্ছে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সেই তথাকথিত নারীবাদিরা মুখ খোলেননি। এমনকি আর মুখ না খোলারই সম্ভাবনা বেশি। কারণ ওরা মূলত নারীবাদি নয়, ওরা স্বার্থবাদী। ওরা কোন ইস্যুতে আন্দোলনে নামার আগে ভালভাবে অনুধাবন করে নেয় যে, সেখানে আসলেই তাদের কোন স্বার্থ জড়িত আছে কি-না। যদি নিজেদের অথবা তাদের পরিচালনাকারী ভিনদেশী প্রভূদের স্বার্থ খুঁজে পায় তবেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে তাদের সে আন্দোলনগুলো সবার কাছে লোক দেখানো ও প্রাণহীন ই মনে হয়। আর এটাই এদের আসল চেহারা।





আয়েশা আখতারের সাথে ঘটে যাওয়া এ দু:খজনক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কেউ কোনো আন্দোলন করবে কিনা জানি না। কিন্তু বিশ্বাস করি, যে আরশের মালিকের কাছে তিনি বিচার চেয়েছেন, তার বিচার থেকে কেউই রেহাই পাবে না।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

222246
১৬ মে ২০১৪ দুপুর ১২:২৮
আহ জীবন লিখেছেন : এ যেন অন্য রকম জীবন স্বার্থের কাছে বন্দী মন।

ওগুলা নারিবাদি না ভোগবাদী।
222250
১৬ মে ২০১৪ দুপুর ০২:১৮
স্বপ্নচারী মাঝি লিখেছেন : আসলেই ওরা ভোগবাদী
222286
১৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
থার্ড আই লিখেছেন : এই ঘটনা মর্মান্তিক। কিন্তু এর জন্য নারীবাদীদের দায়ী করছেন কেন ? এর জন্য তো পুরুষ ই দায়ী।
নারী অধিকার এর আন্দোলন কারী রা হয়তো এঘটনা জানেন ই না। না যেনে কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া ঠিকনা।
222288
১৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:০২
Mujahid Billah লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম! আমার এই ছোট্ট
ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
222320
১৬ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
স্বপ্নচারী মাঝি লিখেছেন : নারীবাদি দাবীও করবেন আবার নারীদের দুঃখ দূর্দশার খবরও রাখবেন না তা কি করে হয় ? আর ওরা এমন বলেই তো এভাবে লিখেছি জনাব। তাদের সাথে বিশেষ কোন শত্রুতা নেই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File