তিস্তায় পানি আসেনি, সরকারের পাতানো ফাঁদে বিএনপি
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল জাব্বার s ২৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৫৬:৪৮ রাত
তিস্তার ব্যারেজের পয়েন্টে ৩০০ কিউসেক এরও কম পানি আছে। কর্তৃপক্ষ জনগনকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়ার জন্য প্রধান ৪৪ টি গেট ও আরওয়ানটি গেটটি বন্ধ করে দিয়েই তিস্তার ৩০০ কিউসেক পানিই সিএইচআরএর ৮ টি গেট দিয়ে প্রধান ক্যানেলে পানি ঢুকিয়ে দিয়েছে। একারনে প্রধান ক্যানেলের ১০ কিলোমিটার এলাকায় সামান্য পানি দেখা যাচ্ছে। এই পানিটিকেই কর্তৃপক্ষ তিস্তায় পানি এসেছে বলে প্রচার করছে। তিনি জানান, ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিকদের ওই পানি টুকুই তারা দেখাচ্ছে। আর বিএনপিও সরকার তথা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে তিস্তায় পানি এসেছে বলে প্রচারনা চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেক সাংবাদিকরা সেই পানি এবং রিজারভারের পানির ছবি দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিস্তায় পানি আসার বিষয়টি তুলে ধরছে। কিন্তু কেউই তিস্তা ব্যারেজের নীচে যে একফোটা পানিও নেই সেটি বলছে না। প্রবীন এই সাংবাদিক বলেন, কোনভাবেই তিস্তায় পানি নেই।
তিস্তা ব্যারেজের উজানে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, তিস্তা নদীতে কোন পানি আসে নি। দেড় মাস আগেও যেমন পানি ছিল এখনও তেকমনই আছে। নদী থেকে বালুর উত্তাপ আরও বাড়ছে। তিস্তায় পানি বৃদ্ধির যে বর্ণনা পানি উন্নয়ন বোর্ড দিয়েছে তা মিথ্যা ভিত্তিহীন। আর বিএনপি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য নিয়ে যেভাবে লাফালাফি করেছে তা নজীর বিহীন। তিস্তায় আমরা পানি চাই। পানি উন্নয়ন বোড পরিকল্পিতভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে তিস্তায় পানির ব্যপারে আইওয়াশ করেছে দাবি এই ইউপি চেয়ারম্যানের।
তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের দক্ষিন সোনাখুলি টিটুএসওয়ানটি সেচ ক্যানেলের পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান জানান, ক্যানেলে পানি এসেছে বলে সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড মিথ্যাচার করেছে। আরওয়ানটি বন্ধ করে দিয়ে তিস্তার ভুগর্ভস্থ যে পানিটুকু ছিল ছেড়ে দেয়ায় প্রধান ক্যানেলে কিছুক্ষণের জন্য পানি দেখা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রধান ক্যানেলে পানি ছেড়ে দেয়ার পরপরই সাংবাদিকরা সেই পানিকে স্রোত হিসেবে টেলিভিশনে দেখিয়েছে। অন্যরা সেই পানিটুকু নিয়েই লেখালেখি করেছে। তারা একবারের জন্য ব্যারেজের নীচ কিংবা আশেপাশের ক্যানেলে পানি আছে কিনা তা অনুসন্ধান করে নি।
তিনি জানান, বিএনপির নেতারাও তাদের আন্দোলনের সফলতা হিসেবে সেই পানির বিষয়টি নিয়ে গর্ব করে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছে। তারা একটুও তলিয়ে দেখলো না বিষয়টি। তিনি বলেন, দুখের বিষয় হলো আজ বুধবারও আমি নিজেই আমার জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়েছে। অথচ গতবছরসহ আগের বছরগুলোতে এই ক্যানেলের পানি দিয়েই পুরো আবাদ সেরেছিলাম। ওই এলাকার ক্যানেলের পাশে বাড়ি আব্দুল লতিফের পুত্র এইচএসসি পরীক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বুধবার দুপুরে জানান, ৩ মাস থেকে এই ক্যানেলে কোন পানি নেই। তিস্তা ক্যানেলে পানি না থাকলেও টিভিতে আমরা পানি দেখার বিষয়টি আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। সাংবাদিকরা এতদিন তিস্তায় পানি নিয়ে যে লেখালেখি করেছে। এতে সবাই সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে পানি উন্নয়ণ বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবিকেই কেন মিডিয়া এত হাইলাইট করলো বিষয়টি বোধগম্য নয়।
রংপুরের খলেয়া ইউনিয়নের স্লুইচগেট উত্তর গ্রামের তিস্তা সেচ ক্যানেল সংলগ্ন পূর্বদিকে বাড়ি কৃষক নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার রাত ৯ টায় এ প্রতিবেদককে জানান, সেচ ক্যানেলে কোন পানি নাই। ভারত পানি ছেড়ে দেয়ার কথাটি মিথ্যা ও বানোয়াট।
শলেয়াশাহ এলাকার কৃষক লুবা মিয়া রাত ৯ টা ৫ মিনিটে জানান, পানির অভাবে আমাদের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আমাদের ক্যানেলে কোন পানি নেই। আমরা পানি পানি বলে মারা যাচ্ছি। আর মির্জা ফখরুল পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের কথা শুনে সরকারের সাথে তালে তাল মিলিয়ে বলে দিলেন ভারত পানি ছেড়েছে। এটা সঠিক নয়। ক্যানেলে কোন পানি নেই। আমরা পানি চাই।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তিস্তা ডালিয়া আতিকুর রহমান জানান, মঙ্গলবার একটু পানি বেশী পাচ্ছি। তবে কি পরিমান সেটি তিনি প্রথমে বলতে ইতস্ততাবোধ করলেও পরে বলেন ৩ হাজার কিউসেক। কিন্তু কিভাবে সেই পানি আসলো তার কোন তথ্য দিতে পারেন নি তিনি গণমাধ্যমকে।
রিভারাইন পিপলস এর সিনেটর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে দুই থেকে আড়াই হাজার কিউসেক পানি থাকলে প্রকল্পের প্রধান খালসহ মাখা খালগুলোতে পানি থাকা কথা। আর তিস্তার উজানেও সামান্য হলেও পানি থাকা কথা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩ হাজার ৬০০ কিউসেক পানির কথা বললেও বাস্তবে তা কেউ দেখতো পেলো না। নদী ও প্রধান এবং ক্যানেলে পানি নেই। শুধু লংমার্চ তিস্তা ব্যারেজ যাওয়ার আগেই বিএনপি নেতারা দেখতে পেলো। এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন গণমাধ্যমও বিষয়টি যাছাই না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের ইন্টারভিউ এবং ব্যারেজের সিএইচআর এ পরিকল্পিতভাবে ছেড়ে দেয়ার সময় স্রোত এবং ক্যানেলের রিজারভারে পানি দেখিয়ে তিস্তা অববাহিকার মানুষদের জন্য কি ম্যাসেস দিলো তা বোধগম্য নয়। তবে তিনি বলেন, তিস্তা লংমার্চ ইস্যুতে দেশের বৃহত্তম দল বিএনপিকে আওয়ামীলীগ ও বর্তমান সরকার এই কর্মকান্ডের মাধ্যমে ঘোল খিলিয়ে প্রমাণ করেছে রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের কাছে বিএনপি নস্যি। তিনি বলেন, তিস্তা নিয়ে কোন রাজনৈতিক খেলা তিস্তা পাড়ের মানুষ বরদশাত করবে না। ন্যায্য হিস্যার মাধ্যমে তিস্তায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, ক্যানেলের প্রথম ফেজের আওতাধীন জমিতে পানি দেয়া নিশ্চিত করা এবং দ্বিতীয় প্রকল্প চালু করার ব্যপারে সরকারকে বাস্তবমুখি উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে পানির জন্যই যুদ্ধ করতে হবে তিস্তা পারের মানুষদের। সেটি ক্ষমতায় থাকা অথবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উম্মুখ হয়ে থাকা কোন পক্ষের জন্যই শুভকর হবে না।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন