রানা প্লাজা ট্রাজেডির এক বছর, একটি বিলাসী জীবন
লিখেছেন লিখেছেন ভোরের শিশির ২৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:১২:০৪ দুপুর
ঢাকার সাভারে ধসে পড়া আলোচিত রানা প্লাজা ভবনের করুণ ঘটনার সঙ্গে উঠে আসে তার নাম। তবে এখন আর ‘করুণ’ চোখে তাকানোর মতো জীবন নয় তার। যথারীতি বিলাসবহুল জীবন। আট মাসের কম সময়েও জীবন এতো বদলে যায়! দামি গাড়িতে চড়ছেন রেশমা। থাকেন রাজধানীর গুলশানের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। আধুনিকতায় ভরা জীবন তার। সমাজের উঁচু তলার মানুষরা আছেন তার বন্ধু, স্বজন, শুভাকাঙ্খী, পরিচিতজনের তালিকায়। চাকরি করছেন ঢাকার পাঁচতারা হোটেল ওয়েস্টিনে। সামাজিক অবস্থানও তার অকল্পনীয় পর্যায়ে। খেয়ে, না খেয়ে যে রেশমাকে সকালে ঘুম থেকে জেগে দৌড়াতো হতো গা সেই রেশমার এখন অনটন নেই। যেই রেশমা চিনতেন কমদামি কিছু লিপিস্টিক, টিপ, সেই রেশমা এখন জানেন দেশি, বিদেশি সব মদের নাম। যেই রেশমা গ্রাম্য মেলা থেকে কিনতেন কানের দোল, মানহীন কাচের রেশমি চুরি,
এখন তার চাই জগতখ্যাত ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র সবমিলিয়ে রেশমা এখন বিস্ময়ের নাম! গত বছরের ২৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে আটটার দিকে রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। বিশ্বের ইতিহাসে ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনার একটি হিসেবে চিহ্ণিত হয়েছে ভয়াবহ ওই ভবনধস। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের রেশমা রানা প্লাজার ভবনের একটি গার্মেন্টে কাজ করতেন। ভবনটি ধসের ১৭ দিন পর ১০ মে ধ্বংসাবশেষ থেকে তিনি উদ্ধার হন। এ ঘটনা সারাবিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এমন ঘটনায় বাংলাদেশসহ পুরো দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ বিমোহিত হয়ে পড়েন। একটি জীবনের জয়গানে তারা ভুলে যান রানা প্লাজা ভবন ধসে ১১২৭টি তাজা প্রাণের লাশ হয়ে যাওয়ার দুঃখ! সর্বত্র চলে হই-হুল্লোড়। শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও রেশমার সংবাদকে গুরুত্ব দেয়। বাহবা কুড়ায় সরকার! তবে রেশমাকে নিয়ে দেশ, বিদেশে সরকারকে বেশ হোঁচটও খেতে হয়। গত ২৩ জুন দৈনিক আমার দেশ’র অনলাইন সংস্করণে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়, ‘রানা প্লাজা ট্রাজেডি: রেশমা উদ্ধার নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য’ শিরোনামে। আমার দেশ’র প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর প্রথম দিনই ভবনের ভেতর থেকে আহত অবস্থায় বের হন রেশমা। তাকেই আবার কথিত ১৭ দিন পর উদ্ধার করা হয়।…
রেশমা উদ্ধারের কাহিনী ছিল একটি সাজানো নাটক।’আমার দেশ’র পর লন্ডনের ডেইলি মিররও একই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তবে প্রতিবেদন দুটির প্রতিবাদ জানানো হয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। কিছু দিন আগে দায়িত্ব পাওয়া সেনাবাহিনী ওই কর্মকর্তাকে পদন্নোতি।
ও দেওয়া হয় সরকার এর পক্ষ থেকে।
বিষয়: বিবিধ
১২০৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
√√ ক্ষয়ক্ষতিঃ
নিহত - ১১৩৪ জন,
আহত - প্রায় আড়াই হাজার,
নিখোঁজ - ৩৩২ জন,
স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ - কয়েকশো।
[এটা সরকারি হিসেব,বেসরকারিভাবে আরো বেশি দাবি করা হয়। ]
√√ অসংগতিঃ
একটি বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেব মতে, আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৫৮% ঋণগ্রস্ত,৩৭.৬% এর নিজস্ব কোন সম্পত্তি নেই এবং ৯২.৮% শ্রমিকের কোন সঞ্চিত অর্থই নেই!
অথচ এই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমাকৃত ১২৭ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২২ কোটি ১৩ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি টাকা বিতরণ তো দূরের কথা,কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছে তারই সঠিক হদিস মিলছে না!
বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের সরকারী-বেসরকারীভাবে সঠিক পুনর্বাসনের কথা থাকলেও, একবছর পেরিয়ে যাবার পরে আজো এক হাজার ৫৮ জন শ্রমিকের কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি।
√√ রহস্যঃ
একাই ৩০ জন আহত শ্রমিক উদ্ধারকারী বাবু অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হলে, মেডিকেলের বারান্দায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হবার দু'দিন পরে মেডিকেলের একটি তালাবন্ধ বারান্দা থেকে বাবুর লাশ উদ্ধার করা হয়।
√√ পাগলামি ও নির্লজ্জ মিথ্যাচারঃ
সবকিছুর মাঝে বিরোধীদলের ষড়যন্ত্র খোঁজা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা বিবিসিকে বলেন, "মৌলবাদী বিএনপি হরতাল সমর্থকরা বিল্ডিংয়ের পিলার ধরে নাড়াচাড়া করার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।"
এরপরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিএনএন-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রানাপ্লাজার মালিক রানা আওয়ামীলীগের কেউ না বলে দাবি করে সাংবাদিক আমানপোরের কাছে ব্যাঙ্গমির শিকার হন এবং এই সাক্ষাৎকারে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে আমানপোরের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে সারাবিশ্বের সামনে দেশের মাথা হেট করেন।
√√ নাটকঃ রানাপ্লাজার উদ্ধারকাজের ব্যর্থতা ও ৫ মে হেফাজতের উপরে চালানো গণহত্যা আড়াল করতে দেশবাসী ও মিডিয়ার দৃষ্টি অন্যত্র সরানোর জন্য ঘটনার ১৭ দিন পরে ১০ মে রানাপ্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমা নামে এক গার্মেন্টস কর্মীকে জীবন্ত উদ্ধার করার নাটক সাজানো হয়।
হয়েছিলেন ১,১৩৫ জন পোশাক
শ্রমিক৷ গুরুতর আহত এক হাজারেরও
বেশি৷ আহতদের অনেকে আজও
আতঙ্কগ্রস্ত৷ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ
পাননি ক্ষতিগ্রস্তরাও৷
গোলাপী বেগম (৩০) কাজ করতেন
আটতলা রানা প্লাজার চারতলায়,
একটি গার্মেন্টস কারখানায় ৷ ভবন
ধসের তিন দিন পর তাঁকে উদ্ধার
করা হয়৷ তাঁর ডান হাত, ডান পা-সহ
শরীরের একাংশ অবশ হয়ে গেছে৷ গত
রবিবার তিনি তাঁর এক আত্মীয়ের
সহায়তায় রানা প্লাজার
সামনে আসেন৷ তখনই কথা হয় তাঁর
সঙ্গে৷
গোলাপী বেগম জানান, এখন আর
তাঁর কোনো চিকিত্সা হচ্ছে না৷
চিকিত্সা খরচ আর ক্ষতিপূরণ বাবদ
তিনি মোট দেড় লাখ
টাকা পেয়েছেন৷ মোহাম্মদ
আমিনুল এবং রাজ্জাকেরও একই
অবস্থা৷ তাঁরা এখন আর কাজ
করতে পারেন না৷ ঐ ঘটনার পর তিন-
তিনটি পোশাক কারখানায় কাজ
নিয়েছিলেন৷ কিন্তু
কোনোটাতেই তিন দিনের
বেশি কাজ করতে পারেননি৷
ভয়ে হাত-পা কাঁপছিল৷ তাঁরাও সব
মিলিয়ে দেড় লাখ টাকার
বেশি সহায়তা পাননি৷
রহিমা হেম তাঁর নিহত
মেয়ে রীমা আক্তারের
ক্ষতিপূরণের জন্য ঘুরছেন৷
তিনি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল
থেকে এ পর্যন্ত দেড় লাখ
টাকা পেয়েছেন৷
অন্যদিকে ফেরদৌসি বেগম এখনও
তাঁর ছেলে মহিদুলের খোঁজ পাননি৷
ডিএনএ পরীক্ষাও হয়নি তাঁর৷ সব
মিলিয়ে রানা প্লাজা ধসে নিহতদের
পরিবার এবং আহতদের মধ্যে এখন চরম
হতাশা৷ এক বছরেও
কোনো প্রতিশ্রুতিরই তেমন
বাস্তবায়ন হয়নি৷
মন্তব্য করতে লগইন করুন