নুপুর ও কাটা মুণ্ডু
লিখেছেন লিখেছেন মেহেদী জামান লিজন ১৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:৫৭:২৩ সকাল
আমার এই ঘটনা ২০০৯ সালের , তখন আমি এস এস সি পরিক্ষাথী । সারাদিন পড়ালেখা নিয়ে বাস্ত থাকি । বিকালবেলা একটু খেলাধুলা করার জন্য আমার বন্ধুদের সাথে মাঠে যাই । এটাই ছিল আমার মোটামোটি প্রতিদিনের একটা রুটিন । একদিন স্কুল থেকে দুপুর একটার দিকে ফিরি , বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেয়ে গুমাই , বিকাল চারটা দিকে আচমকা আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় । আমার মনে পড়ে খেলতে যেতে হবে । তাই তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে পরি । আর মাঠের দিকে রওনা হই । ওই দিনের বিকালের আবহাওয়া টা ছিল প্রতিদিনের চেয়ে একটু ভিন্ন । চারদিকে কেমন জানি শ্মশান শ্মশান ভাব ।
আমাদের মাঠের কাছেই একটি অনেক পুরাতন বটগাছ আছে । হঠাৎ বটগাছ এর কাছে গিয়ে আমি গাছের একটি শিকড়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম , আর দেখলাম গাছের নিচে কার যেন একটা অনেক সুন্দর নুপুর পড়ে আছে ।
নুপুরটা দেখতে এত সুন্দর যা কোন ভাবেই বলে প্রকাশ করা যাবে না । আমি অনেকক্ষণ ধরে এই অপরূপ নুপুরটি দেখছি । এই ভাবে অনেকসময় কেটে গেল । হঠাৎ করে কে যেন পিছন থেকে আমার পিঠে হাত দিল , কারো স্পশ পাওয়াই নুপুরের প্রতি আমার মোহটি কেটে গেল । পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার বন্ধু নিশাত ।
আরে নিশাত তুই এখানে , কি করিস ?
নিশাত বলল , না খেলতে এসেছিলাম । আজ কেও মাঠে আসেনি । তাই খেলা হয়নি , তোকে দেখে আসলাম । তা লিজন এখানে একা একা বসে বসে কি করছিস ?
আমি নিশাতকে গাছের নিচে পড়ে থাকা নূপুরটি দেখালাম , আর বললাম নিশাত দেখ কার যেন একটি নুপুর পড়ে আছে । নিশাত নুপুর টি দেখে হেসে দিল , আর নূপুরটি হাতে নিল । ও বলল যার ই হোক , এখন এটা এখানে ফেলে না রেখে বাড়িতে নিয়ে যা । যার নুপুর যে তোর কাছ থেকে খুজে নিয়ে যাবে ।
এই বলে নিশাত নুপুর টি আমার পকেটে ডুকিয়ে দিল । আমার যেন তখন কেমন জানি লাগল , ঠিক যেন বিদ্যুৎ প্রবাহের মত । যা হোক সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিল । তাই আর দেরি না করে বাসায় ফিরে আসলাম । আর বাসার এসে যখন ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম , তখন নিশাত এর দেয়া নুপুর এর কথা আমার মনে পড়ল । আমি আমার শাটের পকেট থেকে নূপুরটি বের করলাম । খুব অপুরুপ লাগচ্ছিল নূপুরটি । সেইদিন আর পড়তে ভালো লাগছিল না । তাই রাত নয়টার মাঝে রাতের খাবার খেয়ে গুমিয়ে গেলাম ।
হঠাৎ রাত একটার দিকে কিসের শব্দে যেন আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । লাইট জালালাম , বাইরে কিসের যেন খুব মিষ্টি শব্দ হচ্ছে । আমার কাছে মনে হল নুপুরে শব্দ । তাই আমি বিকালে পাওয়া নূপুরটি দেখতে আমার পড়ার টেবিল এর দিকে তাকাই , তাকিয়েই আমি অবাক হয়ে যাই আমার টেবিলে নিশাত এর দেয়া নূপুরটি নেই । কোথায় গেল নূপুরটি! এই ভাবে কিছুক্ষন সময় কেটে যাবার পর হঠাৎ কারেন্ট চলে যায় ।
তখন আমি সাত পাঁচ না ভেবে ঘুমিয়ে পরি । আবার রাত তিনটার দিকে আমার কাছে ওই একি নুপুরের শব্দ আমার কানে আসল । এই বার শব্দটি আমার খুব কাছে মনে হল । আমি ঘুম থেকে চোখ খুলে দেখতে পাই , কে যেন আমার রুমের ভিতর নুপুর পড়ে নাচছে । একটা মেয়ে সাদা জামা পরহিত । খুব অপরূপ লাগসে মেয়েটিকে । আমি যেন তার মায়ায় যেন জরিয়ে গেলাম । আমার কিছুই খেয়াল হচ্ছে না । আমি শুধু মেয়েটির নাচ দেখতেই লাগলাম ।
এক সময় মেয়েটি নাচতে নাচতে আমার ঘরের দরজা খুলে বাইরে চলে গেল , মেয়েটিকে আমার এত ভালো লাগছিল যে আমি নিজেকে সংযত না রেখে ওই মেয়েটির পিছু পিছু ছুটে চললাম । মেয়েটি আমার সামনে আর আমি ওর পিছনে । আমি বার বার চেষ্টা করছি মেয়েটির মুখটা একবার দেখতে , কিন্তু কোন ভাবেই সেটা হচ্ছিল না । এই ভাবে আমরা যেতে যেতে বিকালে আমি যে বটগাছের নিচে একটি নূপুর পেয়েছিলাম সেই গাছের নিচে চলে আসলাম ।
হঠাৎ কিসের সাথে যেন আচার খেয়ে আমি পড়ে যাই । পড়ে যেতেই আমি অবাক হয়ে যাই , আমি এই মধ্যরাতে এখানে কি করছি ? কেনইবা এখানে আসলাম , আমার তখন খুব ভয় লাগছিল , আর আমার চারপাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না । আমি নিচ থেকে উপরে উঠতে যাব , এ সময় মনে হল আমার পায়ের সাথে কি যেন আটকে আছে । আমি আমার পায়ের দিকে তাকাতেই দেখি আমার পায়ের কাছে একটা কাটা মুণ্ড পড়ে আছে । এ দেখে আমি ব্যাপক ভয় পেয়ে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যাই । এর পর আমি আর কিছুই জানি না । তিন দিন পর আমার জ্ঞান ফিরে , পরে আমি জানতে পারি আমাকে অজ্ঞান অবস্তায় বটগাছ এর নিচ থেকে এলাকাবাসী আমাকে উদ্ধার করে । অনেক ডাক্তার , কবিরাজের চিকিৎসায় আমি সুস্থ হয়ে উঠি ।
কিন্তু রাসেল ভাই , আমি সেদিন জানতে পারি আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের একটা খবর , আর সেটা হল আমার প্রিয় বন্ধু নিশাতের মৃত্যু । আমার বন্ধু নিশাতের মৃত্যু ছিল একটা অপমৃত্যু । নিশাতের লাশ পাওয়া যায় মুণ্ডবিহীন । আর এই ভাবেই নিশাত কে কবর দেয়া হয় । আমি তিনদিন অজ্ঞান থাকার মাঝেই ঘটে যাই এইসব কাহিনী । আর নিশাত এর দাফন কাপন এর কাজ । জীবনে কাছের এই মানুষ কে হারানুর কষ্ট আমি কোনদিন ভুলতে পারব না । এই ভাবে কিছুদিন কেটে যাবার পর আমি একদিন স্বপ্ন দেখলাম আমার প্রিয় বন্ধু নিশাতকে , সে খুব কষ্টে আছে , সে আমাকে বলছে আমাদের খেলার মাঠের কাছে যে বট গাছ আছে সেখানে একটি নুপুর আছে , সেই নূপুরটি এনে নিশাত তার কবরের পাশে রেখে যেতে বলছে । আমি চিতৎকার করে ঘুম থেকে উঠলাম , আর আমার পরিবারের সকলকে সমস্ত ঘটনা বললাম ।
আমি আমার পরিবার ও কবিরাজের পরামশে সকলকে নিয়ে সেই বটগাছের নিচে গেলাম , আর সেখানে একটা নুপুর পড়ে থাকতে দেখলাম । যে নূপুরটি আমি আগেও একবার এই জায়গা হতে পেয়েছিলাম । কবিরাজের পরামশে সেই নূপুরটি নিয়ে আমরা নিশাতের কবরের পাশে গেলাম , এবং তার কবরের পাশে কিছুটা গর্ত করে ওই নূপুরটি রেখে আসলাম ।
এর পরেরদিন আমি আবার স্বপ্ন দেখি , স্বপ্নে দেখতে পাই , ওই মেয়েটিকে , যে নিশাতের কবরের পাশে দাড়িয়ে আছে ।
আর হাতে একটা কাটা মুণ্ড । আর সেই মুণ্ডটি ওই মেয়েটি নিশাতের কবরের পাশে রেখেদিল । আর নাচতে নাচতে সে যেন হাওয়াই মিলিয়ে গেল । আমি সকালে এই ঘটনা আবার কবিরাজ কে বললে কবিরাজ বলল কিছুই হয়নি । আর কোন সমস্যা নেই । আর আমাকে আরও কিছুদিন কবিরাজি করল , এর পর এখনও পর্যন্ত আমার সাথে আর তেমন কিছুই হয়নি ।
এই ছিল আমার ঘটনা , আপনার কাছে আমার প্রশ্ন কেন এমন একটি অপমৃত্যুর সাক্ষী হলাম আমি । আমার বন্ধু নিশাতের কি ছিল অপরাধ ? কেন এই ভাবে জীবন দিতে হল আমার বন্ধুকে । আর কেন ই বা এই ঘটনা আমার সাথে ঘটল ?
বিষয়: বিবিধ
২৮৭১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন