কওমি সনদের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং নিতে হবে, তবে হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না

লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৬:১১:২০ সকাল



কওমি মাদ্রাসা সরকারের কোনো অনুদান না নিয়েও এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে অবদান রেখেছে তা স্বাধীনতার পর থেকে সরকারী চেষ্টার চেয়ে অনেক বেশি। এর প্রমাণ মিলবে গ্রামাঞ্চলে। দেশের অধিকাংশ মানুষ অন্তত প্রাথমিক শিক্ষাটা পেয়েছেন কোনো না কোনো মক্তবে। যে মক্তবের শিক্ষক ছিলেন এক বা একাধিক কওমি আলেম। মসজিদের ইমাম ও মক্তবের শিক্ষকের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে কেও বড় কওমি মাদ্রাসায় গিয়েছেন, আর কেও গিয়েছেন স্কুলে। অক্ষর জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করেও যে ফল পাচ্ছে না সেখানে কওমি মাদ্রাসা বিনা পয়সায় কোটি কোটি মানুষকে অক্ষর জ্ঞান দিয়েছে। আর লাখ লাখ আলেম তৈরি করেছে, যাদেরকে সমাজে সম্মানের চোখে দেখা হয়। লাখ লাখ মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন কওমি মাদ্রাসা থেকে তৈরি হয়েছে। যাদেরকে এক বেলা খানা খাওয়াতে পারা গ্রামের মানুষ এখনো নিজেদের সৌভাগ্য বলে মনে করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আলেম সমাজ কোনো ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত নয়।

তবে বাংলাদেশের মিডিয়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে আলেম ওলামাদেরকে সন্ত্রাসের মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। এটা সেক্যুলাররা ইচ্ছাকৃতভাবেই করছে। উদ্দেশ্য এদেশের স্বাধীনতা ধ্বংস করে বিদেশীদের কাছ থেকে তাদের তাঁবেদারির বিনিময় অর্জন করা। এরা সরকারি মদদও পাচ্ছে। পুলিশ দিয়ে নিরীহ নিরপরাধ আলেম ওলামাদেরকে ইসলামী বই পড়ার অপরাধে গ্রেফতার করে প্রচার করা হচ্ছে জিহাদি বই অথবা জঙ্গি বই। এই অবস্থা চলতে থাকলে আলেম ওলামাদের সম্মান মানুষের অন্তর থেকে বের হয়ে যাবে। তখন দীনি শিক্ষা ও ইসলামী রীতিনীতি আইন করে বন্ধ করে দিলেও প্রতিবাদ করার মানুষ থাকবে না।

মিডিয়ার মিথ্যা অপপ্রচার, সরকারের আলেম ওলামাদের হয়রানী ও সনদের স্বীকৃতি না থাকার কারণে মানুষ তাদের সন্তানদেরকে কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে ভয় পাবে। অনেক মানুষ ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও শুধু স্বীকৃতি না থাকার কারণে কওমি মাদ্রাসায় নিজেদের সন্তানকে ভর্তি না করে আলিয়াতে ভর্তি করাচ্ছে। আলিয়া থেকে এক সময় কিছু ভাল আলেম তৈরি হয়েছেন ঠিকই। তবে তা ছিল হাতে গোনা। সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে সেটা এখন প্রায় স্কুলে পরিণত হয়েছে।

সরকারি স্বীকৃতি না থাকার কারণে কওমি আলেম ওলামাগণের মেধা ও জ্ঞান থেকে রাষ্ট্র যথাযথ উপকৃত হতে পারছে না। দেশ ও জাতির যতটা তারা উপকার করতে পারতেন তাও পারছেন না। এমনকি নিজ দেশে প্রবাসীর মত হয়ে গেছে এখন তাদের অবস্থা। সরকারি চাকরি তো পাচ্ছেনই না অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও তারা চাকরি পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। বিদেশের কোনও স্কুল কলেজেও ভর্তির সুযোগ অথবা বড় কোনো কোম্পানিতেও তারা চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এরকম হাজার হাজার অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন শুধু স্বীকৃতির অভাবে।

এইসব কারণে কওমি সনদের স্বীকৃতি রাষ্ট্র থেকে আদায় করা এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে গেছে। জরুরি হয়ে গেছে তা মানার পরেও অনেকে বিভিন্ন দ্বিধার মধ্যে আছেন। এদের মধ্যে কেও ভাবছেন আমরা এখন খুব ভাল আছি। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানো আমাদের কাজ নয়। আর আমরা এখন বেকারও নই। এদেরকে আপাতত কিছু বুঝানোর ক্ষমতা আমার নাই। তাদেরকে শুধু এতটুকু বলব যে আপনারা আপনাদের মত জিকিরে ফিকিরে থাকুন, আর আমাদের জন্য একটু দোয়া করুন। বাকিদের মধ্যে এক দল আছেন যারা মনে করেন যে, যে সরকার আলেম ওলামাদেরকে হয়রানী করছে, জঙ্গিবাদের মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম তুলে দিয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি করেছে তারা কওমিকে সনদ দেবে কেন? নিশ্চয় খারাপ উদ্দেশ্যে দেবে। সেটা নেয়ার চেয়ে না নেয়াই ভাল। এটা নিলে কওমির অবস্থাও আলিয়ার মত হবে।

তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, আপনার কথার প্রথম অংশ আমি একশত ভাগ বিশ্বাস করি। অর্থাৎ এই সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতি দিতে চাইলে তার পেছনে খারাপ উদ্দেশ্য থাকবে। হ্যাঁ থাকবে। তাতে কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু কথা হলো তারা তাদের ইচ্ছে মত আমাদের স্বীকৃতি দেয়ার কে? তারা তো সরকার। আমরা জনগণ। সরকার তাই করতে বাধ্য যা জনগণ চায়। আমরা সরকার থেকে নয়, রাষ্ট্র থেকে স্বীকৃতি নেব। সরকার আর রাষ্ট্রের মধ্যে ফারাক আছে। সরকার পরিবর্তন হয়, রাষ্ট্র পরিবর্তন হয় না। এই সরকার কওমির স্বীকৃতি যেভাবে দিতে চাইবে আমরা তো সেইভাবে নেব না। আমরা এমনভাবে কওমির স্বীকৃতি নেব যাতে কওমির স্বাতন্ত্রিকতা,গুনাগুণ ও ঐতিহ্য ঠিক থাকে এবং ভবিষ্যতেও বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করে কওমি মাদ্রাসাকে কেও ধ্বংস করার কোনো সুযোগ না পায়। যেভাবে দেওবন্দ মাদ্রাসা ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিয়েছে আমরাও ঠিক সেভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেব। এক চুলও যেন এদিক সেদিক না হয়। এখন অনেকেই বলবেন সেভাবে স্বীকৃতি কি এই সরকার দেবে? উত্তরে বলব খুশিতে দেবে না তা ঠিক আছে, তবে দিতে বাধ্য হবে। কীভাবে?

এই প্রশ্নের উত্তরের আগে আলেম ওলামাগণ এর এই স্বীকৃতির বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা দরকার। ভারত ও পাকিস্তানে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি কীভাবে দেয়া হয়েছে আর নেয়া হয়েছে তা স্বচক্ষে দেখে আসা দরকার। দেশের সমস্ত বড় বড় মাদ্রাসার আলেম ওলামাগণ সব বিষয়ে এক হতে না পারলেও কাছাকাছি চলে আসা দরকার। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড সবগুলো ভেঙ্গে একটা করে নেয়া জরুরি নয়। স্কুল কলেজের জন্য দেশে যদি দশটা শিক্ষাবোর্ড থাকতে পারে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ৫ টি থাকলে সমস্যা হবার কথা নয়।

কওমি সনদের স্বীকৃতি কারো দয়ার দান নয়। এটা কওমি ওয়ালাদের অধিকার। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। এদেশে এখনো সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ শক্তির চেয়ে কওমি ওয়ালাদের শক্তি অনেক অনেক বেশি। তাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য রয়েছে। এর প্রমাণ? সরকারী অনুদান ছাড়া যুগ যুগ ধরে চলে আসা কওমি মাদ্রাসাগুলোর সগৌরবে উপস্থিতি।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377203
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:৩৪
কাহাফ লিখেছেন : "লেখা তা দুইবার হয়েগেছে! অনুগ্রহ করে এডিট করে দিন!"

সময়ের অপরিহার্য্য দাবী ক্বাওমী সনদের স্বীকৃতি! বাংলাদেশে মুসলিমদের বর্তমান দুরাবস্থার জন্যে ক্বাওমী আলেম ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট লোকদের অনৈক্য আর স্বার্থবাদি চিন্তা অনেকাংশেই দায়ী!
একরোখা মনোভাব আর অপরকে তাচ্ছিল্য করার অভ্যাস ক্বাওমীরা ছেড়ে দিলে অনেক কিছুই করা সম্ভব!
ক্বাওমী সনদের স্বীকৃতি চাই অবিলম্বে!!!
377214
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১১:৪৭
নকীব কম্পিউটার লিখেছেন : ধন্যবাদ, ভাল লাগল। আশা করি নিয়মিত লিখবেন।

২বার পেস্ট হয়ে গেছে। এডিট করুন।

সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে সেটা এখন প্রায় স্কুলে পরিণত হয়েছে আখলাক বা চরিত্রগত দিক থেকে। জ্ঞান অর্জনের দিক থেকে নয়।
377230
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কওমি মাদ্রাসার স্বিকৃতি বিশেষ প্রয়োজন নয় বলেই মনে হয়। কারন এই স্বিকৃতির নামে সরকার তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। আর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার বিষয়ে আরো উদার হওয়া উচিত। কেবল পুরান ধ্যানধারনা নিয়ে পড়ে থাকা ঠিক নয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File