একটি জুতোর কাহিনী

লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ০৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:০৩:৩৩ রাত



আমি জুতো। আমাকে মানুষ পায়ের নিচে রাখে। আমার খুব কষ্ট হয়। তবুও এখন কিছুটা গা সওয়া হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যেও আবার জাত-পাত আছে। কিছু জুতো আছে কম দামী। তারা যেখানে সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। দরজার বাইরে মালিকের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। আর কিছু জুতো আছে বেশি দামী। তারা অনেক সুন্দর সুন্দর ঘরেও প্রবেশ করতে পারে। আসলে ঘরে প্রবেশের ব্যাপারে তারতম্য করার বিষয়টা আমাদের জাত-পাতের কারণে হয় নাকি ঘরের আইন কানুনের কারণে হয় তা নিয়ে আমাদের মধ্যেও মতভেদ আছে। এ নিয়ে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নাই। যে বিষয়টি না বললে নয় তাহলো সারা জীবন মনে রাখার মত একটি ঘটনা আমার জীবনে ঘটেছে। তাহলো আমি প্রেসিডেন্ট বুশের গাল স্পর্শ করার মত সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। তা করতে পেরেছিলাম সাংবাদিক জাইদির সাহায্যে। জাইদিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তার কারণে সারা দুনিয়ায় আমার কদর বেড়ে গেল। মিডিয়ায় আমাকে দেখানো হল। আমাকে নিয়ে সারা দুনিয়া তোলপাড় হল। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস মিডিয়াতে চলল আমাকে নিয়ে আলোচনা। কত যে খুশি লেগেছিল আমার, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমার দাম উঠলো লাখ লাখ ডলার। সারা দুনিয়ায় আমার নাম আর জাইদির নাম ছড়িয়ে পড়ল। আমার কারণে জাইদির একটু সমস্যা হলেও সারা দুনিয়ার মানুষ তাঁকে বাহবা দিল। এমনকি এক মিশরি সুন্দরি তাঁকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেল। এসব কিছুর জন্য আমার খুব গর্ব হয়। বলতে গেলে সারা দুনিয়ায় আমি নাম করে ফেললাম।

তবে অনেকেই আবার এটাকে অর্থাৎ আমি জুতা হয়ে দুনিয়ার সব চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান মানুষের গাল স্পর্শ করাটাকে অনেকেই একটু বাঁকা চোখে দেখে। তারা বলে এটা নাকি আমার দুর্ভাগ্য। নামী দামী মানুষের গাল স্পর্শ করা নাকি আমার সাজে না। এতে নাকি তাদের মান-সম্মানে আঘাত লাগে। এই কথা শুনে আমি মনে খুব কষ্ট পাই। আমি কিন্তু তাদের কথা মানতে নারাজ। আমি তাদেরকে বলি যে, বাংলাদেশেওতো অনেক বার মন্ত্রীদের আর নেতাদের গাল স্পর্শ করেছিল কিছু জিতো। সেই জুতাগুলোকে তো সেখানকার মানুষ খারাপ বলে না। সেখানে তো মানুষ সেই জুতাগুলোকে নিয়ে একপ্রকার গর্ব করে। বলা হয় যে উচিত কাজ করেছিস বেটা, বেঁছে থাক। তাহলে আমাকে খারাপ বলবে কেন?

নিন্দুকেরা যে যুক্তি দেয় তা আসলে কোনো যুক্তিই নয়। তারা বলে মিডিয়ায় দেখানো হলেই কেও সৌভাগ্যবান হয়ে যায় না। তারা নাস্তিক ব্লগারদের উপমা দিয়ে থাকে। তাদেরকে মিডিয়ায় বিজ্ঞানমনস্ক উপাধি দিলেও তারা কি সৌভাগ্যবান হয়ে যায়? তাদেরকে দুর্ভাগাই বলে সাধারণ মানুষ। একইভাবে যেসব জুতো নাকি নেতাদের গাল বা মাথা স্পর্শ করে তারাও নাকি নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান বলে দাবী করতে পারে না। তাদের আরও একটি যুক্তি হলো, জুতো তো ছুড়ে মারা হয় অসৎ ব্যক্তিদের প্রতি সাধারণ মানুষদের রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। তাহলে অসৎ মানুষের গাল স্পর্শ করে কেও সৌভাগ্যবান হয়ে যাবে তাতো যুক্তিসঙ্গত নয়।

যুক্তি তেমন বেশি খারাপ না। তবুও আমরা জুতোর জাতি যেহেতু সবসময় পায়ের তলায় থাকি, হঠাত করে বড় বড় নেতাদের মাথায় বা গালে উঠতে পারলে সেটা আমাদের জন্য ক্ষণিকের তরে হলেও খুশি বয়ে আনে বৈকি? যে যাই বলুক, আমি কিন্তু মহা খুশি এবং এটাই আমার জীবনের সব চেয়ে স্মরণীয় ঘটনা।

বিষয়: বিবিধ

১৪১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364952
০৮ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৬:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : এমন স্মরনীয় ঘটনা ইতিহেসেও যায়গা পেতে পারে, এমন কি গিনেস বুকে গিয়েও আরও সুনাম অর্জন করতে পারে৷
মজা পেলাম৷ ধন্যবাদ৷
365005
০৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:৫৫
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : যে যত কথাই বলুক, আপনি কিন্তু আমাদের কাছে স্টার।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File