ডঃ জাকির নায়েক সম্পর্কে খারাপ শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ নয়
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ১০ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:৫৪:৩৪ বিকাল
ইদানীং ফেসবুকে ডঃ জাকির নায়েক সম্পর্কে বিভিন্ন খারাপ শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি তাকে ইহুদির দালাল পর্যন্ত বলা হচ্ছে। যা উচিৎ নয়। ভিন্ন মত থাকতেই পারে। ভিন্ন মত ইসলামী শরিয়তের একটি সুন্দর রূপ। যদিও আহলে হাদিসেরা মনে করে যে ফিকহের কারণে ভিন্ন মত হচ্ছে, সহীহ হাদিস মত আমল করলে ভিন্ন মত হবে না। আহলে হাদিসের এই ধারণা সঠিক নয়। জাকির নায়েক সাহেবও এই ধারণাটি পোষণ করেন। তবে তিনি আহলে হাদিস সমর্থন করেন না। তা তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন। আমাদের অনেক ভাই তাকে আহলে হাদিস মনে করে বিভিন্ন খারাপ শব্দ ব্যবহার করে থাকেন।
জাকির নায়েক সাহেবের কিছু সমস্যা আছে ঠিকই। তাই বলে তাকে গালাগালি করা উচিৎ নয়। তার সমস্যাগুলো তেমন মারাত্মক নয়। এরকম ছোটখাটো সমস্যা ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে আগেও হয়েছে। ইমামদের মধ্যে হয়েছে। সেটা ইসলামের একটি সুন্দর রূপ। তাই বলে আমি জাকির নায়েককে আলেম বা ইমাম বলছি তাও নয়। আবার তাকে আলেম বা ইমাম বলতে নিষেধ করছি তাও নয়। আমি বুঝাতে চাচ্ছি তার যেসব কথার কারণে আমরা অনেকেই তাকে বিভিন্ন খারাপ উপাধি দিচ্ছি, সেরকম কথা তার আগেও অনেক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, এবং তাদেরকে আমরা সম্মানের চোখেই দেখছি। জাকির নায়েক সাহেবও সেই সব ওলামায়ে কেরামের কথা থেকেই যে কোনো একটি মতকে সমর্থন দিচ্ছেন।
জাকির নায়েক এর স্মরণশক্তি মা শা আল্লাহ ভাল। আল্লাহ তাকে আরো বেশি স্মরণশক্তি দিন। তার এই স্মরণশক্তি দেখে যারা মনে করছেন তার মত আলেম দেওবন্দি ওলায়ে কেরামদের মধ্যে নাই, তারা আপাতত এই পোষ্ট থেকে দূরে থাকতে পারেন। স্মরণশক্তি এক জিনিস আর ইজতিহাদের জ্ঞান ও ফিকহের জ্ঞান আলাদা জিনিস। কোনো ব্যক্তি শুধু হাফেজে কোরান। আলেম নন। ভাল হাফেজ তিনি। তাই বলে কি তাকে ফিকহের আলোচনাতে স্থান দেয়া হবে? না হবে না। তাকে ফকহের আলোচনায় স্থান দেয়ার কথা ভাবা যেমন বোকামী, একইভাবে জাকির নায়েকের স্মরণশক্তির কারণে তার মত আলেম আর কেও নাই বলাও সেরকম বোকামী।
যা বলছিলাম, জাকির নায়েক ভাল একজন দায়ী। তার দ্বারা দীনের কাজ হচ্ছে। তবে তার যেসব কথাবার্তার কারণে আমাদের মধ্যে কেও কেও তাকে খারাপ উপাধি দিচ্ছেন, সেই সব কথাবার্তার মধ্যে অধিকাংশই এমন যা তার আগেও অনেক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন। আর কিছু আছে যা তিনি বলেননি তবে না জেনে তার কথা বলে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। আর কিছু আছে যা ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আর কিছু আসলেই ভুল আছে। তবে তা কাফের বা দালাল হয়ে যাওয়ার মত ভুল নয়। যেসব কথার কারণে তাকে গালি দেয়া হচ্ছে তার মধ্যে দুই একটি আলোচনা করছি।
১। তিনি হিন্দুদের দেবতা রামকে আল্লাহর নবী বলেছেন। (রাম নাকি কৃষ্ণ তা ঠিক মনে পড়ছে না। হয়ত দুই জনই যাইহোক)
আসলে তিনি রামকে নবী বলেননি। এক ব্যক্তি তার কাছে জিজ্ঞেস করেছিল যে রাম আল্লাহর নবী কিনা? তিনি উত্তরে বলেছেন। কোরানে শুধু ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ আছে। আরো অনেক নবী আছেন যাদের নাম কোরানে উল্লেখ নাই। রামের নামও উল্লেখ নাই। হতে পারে তিনি আল্লাহর নবী ছিলেন, আবার হতে পারে তিনি নবী ছিলেন না।
এখানে দোষের কী দেখলেন? যেহেতু অনেক নবী এমন আছেন যাদের নাম কোরানে আসেনি। তাদের মধ্যে একজন রাম থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। এই কথাকে যদি বলা হয় যে জাকির নায়েক রামকে আল্লাহর নবী বলেছেন, তাহলে তা মিথ্যা বলা হবে না? তিনি বলেছেন, হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। এতে দোষের কিছু নাই বলে আমি মনে করি। আপনাকে যদি একই প্রশ্ন করা হয়, আপনি কী উত্তর দিবেন? বলবেন, যে না না রাম আল্লাহর নবী হতে পারে না। তাহলে আপনাকে প্রশ্ন করা হবে কীভাবে বললেন যে হতে পারে না? আপনি কি সমস্ত নবীর নাম জানেন? আবার যদি বলেন হ্যাঁ রাম আল্লাহর নবী ছিলেন, তাহলে প্রশ্ন আসবে, কীভাবে জানলেন? আপনি কি সব নবীর নাম জানেন? যেহেতু সব নবীর নাম জানা নাই। তাই বলতেই হবে যে হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এর জন্য তাকে গালি দেয়ার কোনো দরকার নাই।
২/ ব্রম্মা হিন্দুদের দেবী। ব্রম্মা শব্দের অর্থ রব। কেও যদি রব অর্থে আল্লাহকে ব্রম্মা ডাকে তাহলে ডাকতে পারে। তবে শর্ত হলো ব্রম্মার যেরকম হাত পা বানানো হয় আল্লাহকে সেরকম মনে করা যাবে না। সুরা এখলাসের মধ্যে আল্লাহর যে সিফত বলা হয়েছে সেরকম মেনেই যদি আল্লাহকে ব্রম্মা নামে ডাকেন তাহলে ডাকতে পারবেন।
এই কথার কারণে অনেকে জাকির নায়েক সাহেবকে গালি দিয়ে থাকেন। আসলে এই কথাটি এমন নয় যে তাকে গালি দিতে হবে। কারণ আল্লাহর যেসমস্ত নাম হাদিসে উল্লেখ আছে সেগুলো ছাড়া অন্য নামে ডাকা যাবে কিনা তা একটি ইখতেলাফি মাসালা। কোনো আলেম বলেছেন ডাকা যাবে। যেমন খোদা। প্রভু। দয়াময়। কবি বলেছেন, হে খোদা দয়াময় রহমান ও রহীম। হে বিরাট হে মহান হে অনন্ত অসীম। এই দুই লাইন কবিতায় আল্লাহকে এমন অনেক শব্দ দিয়ে ডাকা হয়েছে যা আল্লাহর নাম বলে হাদিসে উল্লেখ নাই। যেমন খোদা, দয়াময়, বিরাট, মহান, অনন্ত, অসীম।
ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে যারা মনে করেন আল্লাহকে তার নির্দিষ্ট নাম ছাড়া অন্য নামে ডাকা যাবে না, তাদের মতে উপরোক্ত কবিতা না জায়েজ। এর জন্য কিন্তু কবি কাফের হয়ে যায়নি। আবার যেসব ওলামাদের মতে জায়েজ তাদের মতে ব্রম্মাও জায়েজ হবে উল্লেখিত শর্তে। তাহলে সমস্যা কী?
ফেসবুক ও ব্লগে বিভিন্ন গালাগালি দালাল ফালাল দেখতে খুব খারাপ লাগে। অনেকে বিকৃত ছবিও ব্যবহার করেন। ওলামায়ে কেরাম ও দীনের দায়ীদের জন্য তা শোভনীয় নয়। তাই এই লেখাটা লিখলাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দীনের খেদমত করার তাওফীক দিন।
আহলে হাদিসের ভাইয়েরা আমার এই লেখা আপনাদের পক্ষে ব্যবহার করবেন না। যদি করেন তাহলে কাটছাঁট করবেন না। জাকির নায়েক আহলে হাদিস পছন্দ করেন না তা আমি লেখাতেই উল্লেখ করেছি। ইউটিউবে তার প্রমাণ আছে।
আরো কিছু বিষয় আছে, তা হয়ত পরে বলা যাবে, হয়ত যাবে না। আল্লাহ তাওফীক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
২১৪৮ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথম সময় জাকির নায়েক সবার কাছে জনপ্রিয় ছিলো যখন
উইলিয়াম ক্যাম্পব্যাল
রবি শংকর
প্যস্ট্রো রুকুনীদ্দিন হ্যানরীসহ আরো নানা ইসলামীবিদ্বেষীদের কথার জবাব দিচ্ছিলো তখন ভালো ছিলো
যখন জানতে পারছে জাকির নায়েক মূহাম্মদ সঃ কে নূরের তৈরী মনে করেন না ,তিনি মূহাম্মদ সঃ কে গায়েব জানার অধিকারী মনে করেন না তখন লাগলো তার পিছনে সুন্নী নামের বেরলভীরা।
যখন তিনি বললেন নির্দিষ্ট কোনো মাযহাব মানা নয় কোরআন ও সহীহ হাদীস মেনে চলতে হবে
যখন জানতে পারছে তিনি বুকের উপর হাত বাঁধেন রফউল ইদান করেন বৈঠকে শাহাদাত আঙ্গুল নারান
তখন লাগছে মাযহাবের লোকেরা
আপনি বললেন আহলে হাদীসরা ফিকহের বিরুদ্ধে এই ভ্রান্ত কথা আপনাকে কে বলছে সহীহ হাদীসের আলোকে যে ফিকহ শাস্ত্র আছে আপনি বোধ হয় সেটা জানেন না।
আর কিছু লোক ইসলামকে পাঞ্জাবী টুপি তে সীমাবদ্ধ করেছে
সীমাবদ্ধ করেছে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারে
সীমাবদ্ধ করেছে মিলাদ কিয়াম ও বিদাতে
আপনি ব্রহ্মা বলেছেন৷ ওটা ব্রহ্ম হবে৷ যার মানে সৃষ্টিকর্তা, শব্দটি সংষ্কৃত৷ যদি আল্লাহর জন্য এটি অচল হয় তবে আমাদের সৃষ্টিকর্তা শব্দটিও অচল৷ অর্থ একই ভাষা আলাদা৷
আল্লাহ বলেছেন যে তিনি প্রতি জাতির ভিতর নবী পাঠিয়েছেন৷ তাহলে ভারত জাতির জন্যও নবী এসেছেন৷ কোথায় তিনি? হয়তোবা হিন্দুদের কোন অবতারের মাঝেই তিনি বা তেনারা আছেন৷কোরআনের দুই জায়গায় এমন ইশারা আছে যা গৌতম বুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ অনেক বিখ্যাত তাফসীরকার বলেছেন৷ এখন আমরা বৌদ্ধদের বা খ্রীষ্টানদের দেখে বা তাদের কিতাব দেখে কি তাদের মুসলমান বলতে পারি, না যীশুকে ঈশা আঃ মানতে পারি? পারিনা৷ পারি এ জন্য যে কোরআন ঈশা আঃএর যে পরিচয় দেয় তাতে যীশু ফিট হন৷অতএব, জাকির নায়েকের রামকে নবী হিসাবে 'হতেও পারে আবার নাও পারে' বলা মোটেও দোষনীয় নয়৷যাদের তার বিষয়ে চুলাকানী আছে তারা তার অনুষ্ঠানে ওপেন প্রশ্ন করে জবাব চাইতে বা তাকে বাংলা দেশে এনে ডিবেটে বসতে পারেন৷ ধন্যবাদ৷
আর হ্যাঁ আমি আপনার চেয়েও কম জানি। তবে যে বলবে রাম তার সাথে যাম এর মধ্যে আমি নাই। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে ভাল লাগলে বা মুখরোচক হলেই সেদিকে দৌঁড়ানোর অভ্যাস আমার নাই।
খুব সুন্দর বলেছেন!!
আসলে আমাদের মন মানসিকতা দিন দিন এতো নিচে নেমে যাচ্ছে যা বলের মত ন্য!!
পারিবারিকভাবেও আদব-কায়দা রুচিবোধ শিক্ষা বোধ হয় উঠেই গেছে!!
তা না হলে একজন মানুষ কিভাবে অন্যের জন্য ঐসব শব্দ প্রয়োগ করতে পারে- আদি তাকে "রুচিশীল" "আদবকায়দাওয়ালা" বলতে হয়?
পারিবারিক তথা প্রাথমিক সুশিক্ষার অভাবেই আজ এ দুর্দশা!!
বিনীত
জাযাকাল্লাহ খায়ের
বিনীত
জাকির নায়েকের কুফরী মতবাদ -Allama Nurul Islam Olipuri
আমার নানাপীরসাহেব কি বলেন শুনুন। এখানেই আপনি বুঝবেন কেন আপনি আবেগতাড়িত হয়ে গেছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন